আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুপি গাইন ও বাঘা বাইন - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ভালো থেকো বন্ধুরা তোমরা গান গাইতে পার? আমি একজন লোকের কথা বলব, সে একটা গান গাইতে পারত। তার নাম ছিল গুপি কাইন,তার বাবার নাম ছিল কানু কাইন। তার একটা মুদীর দোকান ছিল। গুপি কিনা একটা গান গাইতে পারত, আর সে গ্রামের আর কেউ কিছু গাইতে পারত না, তাই তারা তাকে খাতির করে বলত গুপি ‘গাইন’। গুপি যদিও একটা বই গান জানত না, কিন্তু সেই একটা গান সে হুব ক’রেই গাইত; সেটা না গেয়ে সে তিলেকও থাকতে পারত না, তার দম আটকে আসত।

যখন সে ঘরে ব’সে গাইত, তখন তার বাবার দোকানের খদ্দের সব ছুটে পালাত। যখন সে মাঠে গিয়ে গান গাইত, তখন মাঠের যত গরু সব দড়ি ছিঁড়ে ভাগত। শেষে আর তার ভয়ে তার বাবার দোকানে খদ্দেরই আসে না, রাখালেরাও মাঠে গরু নিয়ে যেতে পারে না। তখন একদিন কানু কাইন তাকে এই বড় বাঁশ নিয়ে তাড়া করতে সে ছুটে মাঠে চ’লে গেল; সেখানে রাখালের দল লাঠি নিয়ে আসতে বনের ভিতর গিয়ে খুব ক’রে গলা ভাঁজতে লাগল। গুপিদের গ্রমের কাছেই আরেকটা গ্রামে একজন লোক থাকত, তার নাম ছিল পাঁচু পাইন।

পাঁচুর ছেলেটির বড্ড ঢোলক বাজাবার শখ ছিল। বাজাতে বাজাতে সে বিষম ঢুলতে থাকত, আর পা নাড়ত আর চোখ পাকাত, আর দাঁত খিঁচোত, আর ভ্রূকুটি করত। তার গ্রামের লোকেরা তা দেখে হাঁ ক’রে থাকত আর বলত, ‘আহা! আ-া-া!! অ-অ-অ-হ্-হ্-হ্!!!’ শেষে যখন ‘হাঃ, হাঃ, হা-হা!’ ব’লে বাঘের মত খেঁকিয়ে উঠত, তখন সকলে পালাবার ফাঁক না পেয়ে চিত্‍‌পাত হয়ে প’ড়ে যেত। তাই থেকে সকলে তাকে বলত ‘বাঘা বাইন। ’ তার এই বঘা নামই রটে গিয়েছিল; আসল নাম যে তার কি, তা কেউ জানত না।

বাঘা ঢোলক বাজাত আর রোজ একটা ক’রে ঢোলক ভাঙত। শেষে আর পাঁচু তার ঢোলকের পয়সা দিয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু বাঘর বাজনা বন্ধ হবে, তাও কি হয়? গ্রামের লোকেরা পাঁচুকে বলল, ‘তুমি না পার, নাহয় আমরাই সকলে চাঁদা ক’রে ঢোলকের পয়সাটা দি। আমাদের গ্রামে এমন একটা ওস্তাদ হয়েছে, তার বাজনাটা বন্ধ হয়ে যাবে!’ শেষে ঠিক হল যে গ্রামের সকলে চাঁদা ক’রে বাঘাকে একটা ঢোলক কিনে দেবে, আর সেই ঢোলকটি আর তার ছাউনি খুব মজবুত হবে, যাতে বাঘার হাতেও আর সেটা সহজে না ছেঁড়ে। সে যা ঢোলক হল! তার মুখ হল সাড়ে-তিন হাত চওড়া, আর ছাউনি মোষের চামড়ার।

বাঘা সেটা পেয়ে যার পর নাই খুশি হয়ে বললে, ‘আমি দাঁড়িয়ে বাজাব। ’ তখন থেকে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই ঢোলক লাঠি দিয়ে বাজায়। দেড় মাস দিনরাত বাজিয়েও বাঘা সেটাকে ছিঁড়তে পারল না। ততদিনে তার বাজনা শুনে শুনে তার বাপ মা পাগল হয়ে গেল, গ্রামের লোকের মাথা ঘুরতে লাগল। আর দিনকতক এইভাবে চললে কি হত বলা যায় না।

এর মধ্যে একদিন গ্রামের সকলে মিলে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে এসে বাঘাকে বললে, ‘লক্ষ্মী, দাদা! তোমাকে দশ হাঁড়ি মিঠাই দিচ্ছি, অন্য কোথাও চ’লে যাও, নইলে আমরা সবাই পাগল হয়ে যাব!’ বাঘা আর কী করে? তখন কাজেই তাকে অন্য একটা গ্রামে চলে যেতে হল। সেখানে দুদিন না থাকতে থাকতেই তোমরা গান গাইতে পার ? আমি একজন লোকের কথা বলব , সে একটা গান গাইতে পারত । তার নাম - - কাইন , তার বাবার নাম ছিল কানু কাইন । তার একটা মুদির দোকান ছিল । গুপি কিনা একটা গান গাইতে পারত , আর সে গ্রামের আর কেউ কিছু গাইতে পারত না , তাহ তারা তাকে খাতির করে বলত গ।

আ `গাইন । - । দিও একটা বই গান জানত না কন্ত সেই একটা গান সে খুব করেই গাইত । সেটা না গেষে এ তিলেকও থাকতে পাবত না তার দম আটকে আসত । ষখন সে ঘরে বসে গাইত , তখন তার বাবার দোকানের খদ্দের সব ছুটে পালাত ।

ষখন সে মাঠে গিষে গান গাইত , তখন মাঠের ষত গোরু সব দড়িছিঁড়ে ভাগত । শেষে আর তার ভষে তার বাবার দোকানে খদ্দেরই আসে না রাখালেরাও মাঠে গোরু নিষে যেতে পারে না । তখন একদিন কানু কাইন তাকে এই বড় বাঁশ নিষে তাড়া করতে সে ছুটে মাঠে চলে গেল । খোনে আখালে দল লা নষে আসতে বনের ভিতর গিয়ে খুব করে গলা ভাঁজতে লাগল । গুপিদের গ্রামের কাছেই আরেকটা গ্রামে একজন লোক থাকত , তার নাম ছিল পাচ পাইন ।

আচুর ছেলেটির বড্ড ঢোলক বাজাবার শখ ছিল । বাজাতে বাজাতে সে বিষম ঢুলতে থাকত , আর পা নাড়ত আর চোখ পাকাত , আর দাঁত খিঁচোত , আর ভ্রূকুটি করত । তার গ্রামের লোকেরা তা দেখে হা করে থাকত আর বলত `আহা ! । । ।

। । অ-অ- অ-‌হ-‌হ-‌হ ! ! !' শেষে ষখন `হাঃ , হা হা-হা !' বলে বাঘে মতো খেকিষে উঠত , তখন সকলে পালাবার ফাঁক না পেয়ে চিত্‌পাত হে পড়ে ষেত । তাই থেকে সকলে তাকে বলত `আ। আ বাইন ।

' তার এই বাঘা নামই রটে গিষেছিল , আসল নাম যে তার কী , তা কেউ জানত না । বাঘা ঢোলক বাজাত আর রোজ একটা করে ঢোলক ভাঙত । শেষে পাচু আর ঢোলকের পয়সা দিয়ে উঠতে পারে । আ । আকন্ত বাঘাব বাজনা বন্ধ হবে তাও কী হ।

? গ্রামের লোকেরা পাচুকে বলল ,`তুমি না পার , আমরাই সকলে চাঁদা করে ঢোলকের পসাটা দিই । আমাদে গ্রামে এমন একটা ওআদ হয়েছে, তার বাজনাটা ব হয়ে ষাবে । ' শেষে ঠিক হল ষ গ্রামের সকলে চাঁদা করে বাঘাকে ঢোলক কিনে দেবে , আর সেই ঢোলকটি আর তার ছাউনি খুব মজবুত হবে , যাতে বাঘার হাতেও টো আর সহজে না ছেঁড়ে । ঢোলক হল ! তার মুখ হল সাড়ে তিন হাত চওড়া , আর ছাউনি মোষের চামডার । বাঘা সেটা পে।

এ ষার পর নাই খুশি হয়ে বলল , `আমি দাঁড়িয়ে বাজাব । ' তখন থেকে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়ি। এ। ইএ ঢোলক লাঠি দিষে বাজাষ । দেড় মাস দিনরাত বাজিয়েও বাঘা সেটাকে ছিঁড়তে পারল না ।

ততদিনে তার বাজনা শুনে শুনে তার বাপ মা পাগল হষে গেল , গ্রামের লোকের মাথা । উরতে লাগল । আর দিনকতক এইভ্রাবে চললে কী হত বলা যা না । এর মধ্যে একদিন গ্রামের সকলে মিলে মোটা লাঠি নিষে এসে বাঘাকে বলল , `লক্ষ্মী , দাদা ! তোমাকে দশ হা মিঠাই দিচ্ছি, অন্য কোথাও চলে যাও , নইলে আমরা সবাই পাগল হয়ে । আব ।

' বা। আ আর কী করে ? তখন কাজেই তাকে অন্য একটা গ্রামে চলে ষেতে হল । খোনে দুদিন না থাকতে থাকতেই সেখানকাব সকলে মিলে তাকে গ্রাম থেকে বার করে দিল । তারপর থেকে এ যেখানেই যায় , খোন থেকেই তাকে তাড়িষে দেয় । তখন এ করল কী , সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াষ , ক্ষুধার ম তার নিজের গ্রামে গিষে ঢোলক বাজাতে থাকে , আর গ্রামের লোক তাড়াতাড়ি তাকে কিছু খাবার দিএ দিআ করে বলে , `বাঁচলাম !' তারপর এমন হল যে আর কেউ তাকে খেতে দেষ না ।

আর তার ঢোলকের আওয়াজ শুনলেই আশপাশের সকল গ্রামের লোক লাঠি নিয়ে আসে । তখন বেচারা ভাবল , আর না মূর্খদের কাছে থাকার চেয়ে বনে চলে যাওয়াই ভালো । না হয় বাঘে খাবে , তবুও আমার বাজনা চলবে । - বলে বাঘা তার ঢোলকটিকে ঘাড়ে করে বনে চলে গেল । এখন বাঘার বেশ মজাই হয়েছে ।

। । আর কেউ তার বাজনা শুনে লাঠি নিয়ে আসে না আ বাঘে খাবে থাক , সে বনে বাঘ-ভালুক কিছু নেই । আছে খালি একটা ভয়ানক জানোয়ার , বাঘা আজও তাকে দেখতে পায়নি , শুধু দূর থেকে তার ডাক শুনে ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপে , আর ভাবে , `বাবা গো । ওটা এলেই তো ঢোলকসুদ্ধ আমাকে গিলে খাবে ! ভয়ানক জানোয়ার কিন্ত কেউ নয় , সে গুপি গাইন ।

বাঘা । এ ডাক শুনে কাঁপে , সে গুপির গলা ভাঁজা । আ। । ।

বাঘার বাজনা শুনতে পায় , আর বাঘারই মতো ভয়ে কাঁপে । শেষে একটু ভাবল , `এ বনে থাকলে কখন প্রাণটা যাবে তার চেয়ে এই বেলা এখান থকে পালাই । ' এই ভেবে গুপি চুপিচুপি বন থেকে বেরিযে পড়ল । বেরিয়েই দেখে আর একটা লোকও বিশাল ঢোল মাথায় করে সেই বনের ভিতব থেকে আসছে । তাকে দেখেই ভারি আশ্চর্য হয়ে গুপি জিজ্ঞাসা করল , `তুমি কে হে ?' বাঘা বলল , `আমি বাঘা বাইন , তুমি কে ?' বলল , `আমি গুপি গাইন , তুমি কোথায যাচ্ছ ?' বাঘা বলল , যেখানে জাযগা জোটে , সেইখানেই যাচ্ছি ।

গ্রামের লোকগুলো গাধা , গানবাজনা বাঝে না , ঢোলটি নিয়ে বনে চলে এসেছিলাম । তা ভাই, এখানে যে ভয়ংকর জানোয়ারের ডাক শুনেছি, তার সামনে পড়লে আর প্রাণটি থাকবে না । তাই পালিয়ে যাচ্ছি । ' - বলল , `তাই তো ! আমিও যে একটা জানোয়ারের ডাক শুনেই পালিয়ে যাচ্ছিলাম । বলো তো , তুমি জানোয়ারটাকে কোথায় বসে ডাকতে শুনেছিলে ?' বাঘা বলল , `বনের পূর্বধারে , বটগাছের তলায় ।

' বলল , `আচ্ছা , সে ষে আমারই গান শুনেছ ! সে কেন জানোয়ারেব ডাক হবে ? সেই জানোয়ারটা ডাকে বনেব পশ্চিম ধারে , হরতুকীতলায় বসে । ' বাঘা বলল ` সে তো আমার ঢোলকের আওয়াজ , আমি যে ওইখানে থাকতাম । ' এতক্ষণে তারা বুঝতে পারল যে , তারা তাদের নিজেদের গান আর বাজনা শুনেই ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল । তখন যে দুজনার হাসি ! অনেক হেসে তারপর গুপি বলল `ভাই, আমি যেমন গাইন তুমি তেমনি বাইন ! আমরা দুজনে জুটলে নিশ্চয় একটা কিছু করতে পারি । ' কথায় বাঘাক খুবই মত হল ।

কাজেই তারা খানিক কথাবার্তার পর ঠিক করল যে , তারা দুজনায় মিলে রাজামশাইকে গান শোনাতে যাবে । রাজামশাই ষে তাতে খুব খুশি হবেন , তাতে তো আর ভুলই নেই, -- অর্ধেক রাজ্য বা মেয়ের সঙ্গে বিয়েও দিয়ে ফেলতে পারেন । গুপির আর বাঘার মনে এখন খুবই আনদ , তারা রাজাকে গান শানাতে যাবে । দুজনে হাসতে হাসতে আর নাচতে নাচতে এক প্রকাণ্ড নদীর ধারে এসে উপস্থিত হল । সেই নদী পার হয়ে রাজবাড়ি যেতে হয় ।

নদীতে খেষা আছে, কিন্ত নেয়ে পয়সা চায় । বেচারারা বন থেকে এসেছে, পয়সা কোথায় পাবে ! তারা বলল , `ভাই আমাদের কাছে তো প। । সা-টয়সা নেই, আমরা না হষ তোমাদের গেয়ে বাজিএ শোনাব , আমাদের পার করে দাও । ' তাতে খেয়ার চড়নদারেরা খুব খুশি হয়ে নেয়েকে বলল , `আমরা চাঁদা করে এদের প।

সা দেব । । এদের তুলে নাও । ' ঝঘাব ঢোলটি দেখেই নেষেরও বাজনা শুনতে ভারি সাধ হয়েছিল , কাজেই সে এ কথায় আর কোনও আপত্তি করল না । গুপিকে আব বাঘাকে তুলে নিয়ে নৌকো ।

ছডে দেওয়া হল । নৌকো ভঝ লোক বসে বাজাবার জায়গা কোথায় হবে ? অনেক কষ্টে সকলের মাঝখানে খানিকটা জায়গা হতে হতে নৌকোও নদীর মাঝখানে এসে পড়ল । তাবপব খানিক একটু গুনগুনিয়ে গুপি গান ধরল , বাঘা তাব ঢোলকে লাঠি লাগাল , আর অমনি নৌকোসুদ্ধু সকল লোক বিযম চমকে গিয়ে গডাগড়ি আর জড়াজড়ি করে দিল নৌকোখানাকে উলটে । তখন তো হ্মব আবপদেব অস্ত নেই ভাআগ্যস বাঘার ঢোলকটি এত বড় ছিল , তাই আকডে ধরে দুজনার প্রাণরক্ষা হল । কিন্ত ভাদের রাজবাড়ি যাওয়া ঘটল না ।

তারা সারাদিন সেই নদীর স্রোতে ভেসে সদ্ধ্যাবেলায় এক ভীযণ বনের ভিতরে গিয়ে কূলে ঠকল । সে বনে দিনের বেলায় গলেই ভয়ে । । উডে যায় , রাত্রির তো আর কথাই নেই । তখন বাঘা বলল , `গুপিদা বড়ই তো বিযম দেখছি ! এখন কী কবি বলো তো ।

' গুপি বলল , `করব আর কী ? আমি গাইব , তুমি বাজাবে । নিতান্তই যখন বাঘে খাবে তখন আমাদের বিদ্যেটা তাকে না দেখিয়ে ছাড়ি কেন ?' বাঘা বলল , `ঠিক বলেছ দাদা । মবতে হয় তো ওস্তাদলোকের মতন মরি , পাড়াগেয়ে ভূতের মতো মরতে রাজি নই !' বনে দুজনায সেই ভিজা কাপড়েই আআ খুলে গান বাজনা শুরু করল । বাঘার ঢোলটি সেদিন কিনা ভিজে ছিল , তাইতে আওয়াজটি হয়েছিল যার পর নাই গম্ভীর । আর গুপিও ভাবছিল , এই তার শেয গান কাজেই তার গলার আওয়াজটিও খুব গম্ভীর হয়েছিল ।

সে গান কী জমাট হয়েছিল , সে আর কী বলব ? এক ঘণ্টা দুঘণ্টা করে দুপুর ঝত হয়ে গেল , তবু তাদের সে গান থামছে না । এমন সময় তাদের দুজনারই মনে হল , যেন চারিদিকে একটা কী কাণ্ড হচ্ছে । ঝাপসা ঝাপসা কালো কালো , এই বড় বড় কী যেন সব গাছের উপর থেকে উকি মাঝত লেগেছে ! তাদের চোখগুলো জ্বলছে, যেন আগুনের ভাঁটা । দাঁতগুলো বেরচ্ছে ষন মুলোব সার । তা দেখে তখনই আপনা হতে বাঘার বাজনা থেমে গল , তার সঙ্গে সঙ্গে দুজনাব হাত-পা গুটিয়ে , পিঠ বেঁকে , ঘাড় বসে , চোখ বেরিয়ে মুখ হা করে এল ।

তাদের গায়ে এমনি কাঁপুনি আষ দাঁতে এমনি ঠকঠকি ধরে গেল যে আর তাদের ছুটে পালাবাক জো রইল না । ভূতগুলি কিন্ত তাদের কিছু করল না । ভারা তাদের গানবাজনা শুনে ভারি খুশি হ। এ এসেছে, তাদের রাজার ছেলের বিয়েতে গুপি আর বাঘার বায়না করতে । গান থামতে তারা নাকিসুরে বলল , `থামলি কেন বাপ ? বাজা , বাজা , ঝজা !' কথায় গুপি আব বাঘার একটু সাহস হল ।

তারা ভাবল , `এ তো মন্দ মজা নয় , তবে একটু গেয়েই দেখি না । ' এই বলে যেই তারা আবার গান ধঝেছ, অমনি ভূতেরা একজন দুজন করে গাছ থেকে নেমে এসে তাদের ঘিরে নাচতে লাগল । - কাণ্ডকারখানা হষেছিল, সে কি না দেখলে বোঝবার জো আছে ! গুপি আর বাঘা তাদের জীবনে আর কখনও এমন সমজদারের দেখা পায়নি । সে রাত এমনি ভাবেই কেটে গেল । ভোর হলে তো আর ভূতেদের বাইরে থাকবার জো নেই, কাজেই তার একটু আগেই তারা বলল , `চল বাবা মোদের গোদার ব্যাটার বেতে ! তোদের খুশি করে দিব ।

' ঝল , `আমরা যে রাজবাড়ি ষাব !' ভূতেরা বলল , ` সে ষাবি এখন , আগে মোদের বাড়ি একটু গানবাজনা শুনিয়ে যা ! তোদের খুশি করে দিব ! কাজেই তখন তারা দুজনে ঢোল নিয়ে ভূতেদের বাডি চলল । সেখানে গানবাজনা ষা হল , স আর বলে কাজ নই । তারপর তাদের বিদাষ করবার সময় ভূতেরা বলল , তোরা কী চাস ?' বলল , `আমরা এই চাই । । আমরা যেন গেয়ে বাজিয়ে সকলকে খুশি করতে পারি ।

' ভূতেরা বলল , `তাই হবে , তোদের গানবাজনা শুনলে আর সে গান শেষ হওয়ার আগে কেউ সেখান থেকে উঠে । যতে পারবে না ! আর কী চাস ?' ঝ। ল , `আর এই চাই । আমাদের যেন খাওয়া-পরার কষ্ট না হষ । কথাঘ ভূতেবা তাদের একটি থলে দিঘে বলল , তোরা যখন যা খেতে বা পবতে চাস , এই থলের ভিতরে হাত দিলেই তা পাবি ।

আর কী চাস ?' বলল , `আর কী চাইব , তা তো বুঝতে পারছি না !' তখন ভূতেরা হাসতে হাসতে তাদের দুজনকে দুজোড়া জুতো এনে দিয়ে বলল , `এই জুতো পায়ে দিয়ে তোরা যেখানে যেতে চাইবি , অমনি সেখানে গিয়ে হাজির হবি । তখন তো আর কোনও ভাবনাই রইল না । গুপি আর বাঘা ভূতদের কাছে বিদায় হয়ে , সেই জুতো পায়ে দিয়েই বলল , `তবে আমরা । আ। রাজবাডি যাব !' অমনি সেই ভীযণ বন কোথায় যেন মিলিয়ে গেল আ গুপি আর বাঘা দেখল , তাঝ দুজনে একটা প্রকাণ্ড বাডির ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।

এত বড আর এমন সুন্দর বাডি তারা তাদের জীঝন কখনও দেখেনি । তারা তখনই বুঝতে পারল যে , এ বাজবাড়ি । - । । মধ্যে ভারি একটা মুশকিল হল ।

রাজবাডির ফটকে ষমদূতের মতো কতকগুলো দবোয়ান দাঁড়িয়ে ছিল ! তাঝ গুপি আব বাঘাকে সেই ঢোল নিয়ে আসতে দেখেই দাঁত খিঁটিয়ে বলল , `এইয়ো ! কাঁহা যাতা হ্যাষ ? আ। প থতমত খেয়ে বলল , বাবা , আমরা রাজামশাইকে গান শোনাতে এসেছি । ' তাতে দরোয়ানগুলো আরও বিযম চটে গিয়ে লাঠি দেখিঘে বলল , `ভাগো , আইযাসে । ' গুপিও তখন নাক সিঁটকিয়ে বলল , ইস আমরা তো রাজার কাছে যাবই । ' বলতেই অমনি সেই জুতোর গুণে , তারা তত্‌ক্ষণাত্ গিয়ে রাজামশায়ের সামনে উপস্থিত হল রাজবাড়ির অন্দরমহলে রাজামশাই ঘুমিয়ে আছেন , রানি তাঁর মাথার কাছে বসে তাঁকে হাওয়া করছেন , এমন সময় কথা নেই বার্তা নেই, গুপি আর বাঘা সেই সর্বনেশে ঢোল নিয়ে হঠাত্ গিয়ে উপস্থিত হল ।

জুতোর এমনি গুণ , দরজা জানালা সব বন্ধ ঝয়ছে, তাতে তাদের একটুও আটকায়নি । কিন্ত আসবার বেলা আটকাক , আর নাই আটকাক , আসবার পরে খুবই আটকাল । রানি তাদের দেখে বিষম ভয় পেয়ে , এক টিত্‌কার দিয়ে তখনই অজ্ঞান হয়ে গেলেন । রাজামশাই লাফিয়ে উঠে পাগলের মতো ছুটোছুটি করতে লাগলেন । রাজবাড়িময় হুলস্থলু পড়ে গেল ।

সিপাই সান্ত্রী সব খাড়া ঢাল নিয়ে ছুটে এল । বেগতিক দেখে গুপি আর বাঘার মাথায় গোল লেগে গেল । তারা যদি তখন শুধু বলে , `আমরা এখান থেকে অমুক জায়গায় চলে যাব' , তবেই তাদের জুতোর গুণে সকল ল্যাঠা চুকে যায় । কিন্ত সে কথা তাদের মনেই হল না । তারা গেল ছুটে পালাতে , আর দু-পা যেতে না যেতেই বেচারারা যে মারটা খেল ! জুতো , লাঠি , চাবুক কিল , চড় , কানমলা---কিছুই তাদের ঝকি রইল না ।

শেষে রাজামশাই হুকুম দিলেন , `ব্যাটাদের নিয়ে তিন দিন হাজতে ফেলে রাখো । তারপর বিচার করে , হষ এদের মাথা কাটব , না হয় কুত্তা দিয়ে খাওয়াব । ' হায় গুপি ! হা বাঘা ! বেচারারা এসেছিল রাজাকে গান শুনিয়ে কতই বকশিশ পাবে এবে , তার মধ্যে - বিপদ ? পোদারা তাদের হাত বেঁধে মারতে মারতে একটা অন্ধকার ঘবে নিয়ে ফেলে রাখল । খোনে পড়ে বেচারারা একদিন আর গাষের ব্যথায় নড়তেচড়তে পারল না । তাতে তেমন দুঃখ ছিল না বাঘার ঢোলটি ষে গেল , সেই হল সর্বনাশের কথা ! বাঘা বুক মাথা চাপড়িষে ভেউভেউ করে কাঁদছে, আর বলছে, `ও গুপিদা অ-অ ! আরে ও গুপিদা ! মার খেলাম , ।

যাবে , তাতে দুঃখ । দাদা , আমার ঢোলকটি গেল !' গুপির কিন্ত ততক্ষণে মাথা ঠাণ্ডা হষে এসেছে । সে বাঘার গায় মাথাষ হাত বুঝিয়ে বলল , `ভয় কী দাদা ? ঢোল গিয়েছে, জুতো আর থলে তো আছে । আমক নিতান্ত বেকুব , তাই এতগুলো মার খেলাম । যা হোক , যা হবার হষে গিষেছে, এখন ।

ভিতর থেকে একটা মজা করে নিতে হবে । ' বাঘা এ কথাষ একটু শান্ত হষে বলল , `কী মজা হবে দাদা ?' গুপি বলল , `আগে তো খাবার মজাটা করে নিই, তারপর অন্য মজার কথা ভেবে দেখব এখন । ' বলে ভূতের দেওয়া থলির ভিতরে হাত দিষে বলল , `দাও তো দেখি , এক হাড়ি পোলাও । ' অমনি একটা সুগ যে বেরল ! তেমন । ।

রাজারাও সচরাচর খেতে পান না । আর সে কী বিশাল - টো থলির তির থেকে তুলে আনতে পারে ? ষা হোক , কোনওমতে সেটাকে বার করে এনে তারপর থলিকে বলল , `আজা , ব্যঞ্জন , চাটনি , মিঠাই, দই, রাবড়ি , শরবত । --শিগগির শিগগির দাও । ' দেখতে দেখতে খাবার জিনিসে আর সোনারুপোর বাসনে ঘর ভরে গেল । দুজন লোকে আর কত খাবে ? সে অপূর্ব খাবার খেষে তাদের গায়ের ব্যথা কোথায় চলে গেল তার আর ঠিক নেই ।

তখন বাঘা বলল , `দাদা , চলো এই বেলা এখান থেকে পালাই, নইলে শেষে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবে । ' গুপি বলল , `পাগল হয়েছ নাকি ? আমাদের এমন জুতো থাকতে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবে ? দেখাই যাক না , কী হয় । ' কথায় বাঘা খুব খুশি হল । সে বুঝতে পারল যে , গুপিদা একটা কিছু মজা করবে । দুদিন চলে গেল , আর একদিন পরেই রাজা তাদের বিচার করবেন ।

বিচারের দিন রাত থাকতে উঠে - থলের ভিতর হাত দিষে বলল , `আমাদের দুজনের রাজপোশাক চাই । ' বলতেই তার তির থেকে এমন সুন্দর পোশাক বেরল যে তেমন পোশাক কেউ তৈরি করতে পারে না । সেই পোশাক তারা দুজনে পরে তাদের পুরনো কাপড় আর বাসন কখানি পটুলি বেধে নিএ , জুতো পায় দিষে তারা বলল , `এখন আমরা মাঠে হাওয়া খেতে যাব । ' অমনি দেখে , রাজবাড়ির বাইরের প্রকাণ্ড মাঠে চলে এসেছে । সে মাঠের এক জাষগাষ তাদের পটুলিটি লুকিষে রেখে , তারা বেড়াতে বেড়াতে এসে রাজবাড়ির সামনে উপস্থিত হল ।

থেকে তাদের আসতে দেখেই রাজার লোক ছটে গিয়ে তাঁকে খবর দিয়েছিল যে , `মহারাজ , দুজন রাজা আসছেন । ' রাজাও তা শুনে তাঁর ফটকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন । বাঘা আর গুপি আসতেই তিনি তাদের যার পর নাই আদর দেখিয়ে বাড়ির ভিতর নিষে গেলেন । চমত্‌কার একটি ঘরে তাদের বাসা দেওয়া হল । কত চাকর , বামুন , পোদা , পাইক তাদের সেবাতে লেগে গেল তার অন্ত নেই ।

তারপর গুপি আর বাঘা হাত-পা ধুষে জলষোগ করে একটু ঠাণ্ডা হলেই রাজামশাই আবার তাদের খবর নিতে এলেন । তাদের পোশাক দেখে অবধিই তিনি ভেবে নিএছেন ষে , `না জানি এরা কত বড় রাজাই হবেন । ' তারপর শেষে ষখন তিনি গুপিকে জিজ্ঞাসা করলেন , `আপনারা কেন দেশের রাজা ?' তখন গুপি হাত জোড় করে তাঁকে বলল , `মহারাজ ! আমরা কি রাজা হতে পারি ? আমরা আপনার চাকর !' গুপি সত্য কথাই বলেছিল , কিন্ত বাজার তাতে বিশ্বাস হল না । তিনি ভাবলেন , `কী ভালো মানুয , । কমন নরম হযে কথা বলে ।

ষেমন বড় ঝজা তেমনি ভদ্রলোকও দেখছি । ' তিনি তখন আর বিশেঘ কিছু । আ বলে তাদের দুজনকে তাঁর সভায নিয়ে এলেন । সেখানে সেদিন সে দুটো লোকের বিচার হবে---তিনদি। আগে যারা গিয়ে তাঁর শাকর ঘবে ঢুকেছিল ।

বিচারেব সময উপস্থিত , আসামী দুটোকে আনতে পয়াদা গিষেছে, - আ আর । কাথায় পাবে ? এ তিন দিন তাদের ঘরে তালা বন্ধ ছিল , সই তালা খুলে দেখা হল , সেখানে কেউ নেই, খালি ঘব পড়ে আছে । তখন তো ভারি একটা ছুটোছুটি হাকাহাকি পড়ে গেল । দারোগামশাই বিযম । খপে গিয়ে পে।

আদাগুলোকে বকতে লাগলেন । পেয়াদারা হাত জোড় কবে বলল , `হজুর ! আমাদের কোনও কসুর নেই । আমরা তালা দিঘে ঝেখছিলাম , তার উপব আবার আগাগোড়া দরজার সামনে দাঁডিয়ে ছিলাম । ও দুটো তো মানুয ছিল না , ও দুটো ছিল ভূত ! নইলে ভিতর থকে কী করে পালাল ?' কথায় সকলেরই বিশ্বাস হল । বাজামশাইও প্রথমে দারোগার উপর ঝেগ তাঁকে কটেই ।

ফলতে গিয়েছিলেন । শেযে ওই কথা শুনে বললেন ,`ঠিক , ও দুটো নিশ্চয় ভূত । ' আমার ঘক ভো বন্ধ ছিল , তাব ভিতর এত বড ঢোল নিয়ে কী কবে ঢুকেছিল ?' শুনে সকলেই বলল , `হাঁ হা , ঠিক ঠিক , ও দুটো ভূত !' বলতে বলতেই তাদের শরীব শিউবে উঠল , বেয়ে ঘাম পড়তে লাগল । তখন তারা কঘার সেই ঢোলটির কথা মনে করে বলল , মহারাজ ! ভূতের ঢোল বড় সর্বনেশে জিনিস ! ওটাকে কখনও আপনার ঘরে রাখবেন না । ওটাকে এখনই পুডিয়ে ফেলুন ।

' বাজামশাইও বললেন , `বাপ রে ! ভূতের ঢোল ঘরে রাখব ? এক্ষুনি ওটাকে এনে পোডাও ' - কথা বলা , অমনি বাঘা দুহাতে চোখ ঢেকে `হাউ-হাউ-হাউ-হাউ' করে কেঁদে গডাগডি দিতে লাগল ! সেদিন কঘাকে নিযে গুপিব কী মুশকিলই হয়েছিল । । ঢ়াল পোডাবার নাম শুনেই বাঘা কাঁদতে আরম্ভ কঝেছ, ঢোল এনে তাতে আগুন ধঝিয় দিলে না জানি । স কী কঝব । তখন , সেটা ।

য তাবই ঢোল , সে কথা কি আব বাঘা সামলে ঝখতে পাঝব ? কী সর্বনাশ ! আ। । । । ধঝ পডে প্রাণটাই হারাতে হয ।

গুপির বড়ই ইচ্ছা হচ্ছিল যে বাঘাকে নিয়ে ছুটে পালায় । কিন্ত তার তো আর জো নেই, সভায় বসবার সময যে সই জুতোগুলো পা থেকে খুলে ঝখা হয়েছে । এ। দকে কিন্ত বাঘার কাণ্ড দেখে সভাময় এক বিযম হুলস্থলু পড়ে গেছে । সবাই ভাবছে, বাঘার নিশ্চয একটা ভারী অসুখ হয়েছে, আর স বাঁচবে না ।

ঝজবাডির বদ্যিঠাকুর এসে বাঘার নাড়ী দেখে ষাব পর নাই গম্ভীরভাবে মাথা নাডলেন । বাঘাকে খুব করে জোলাপের ওষুধ খাইয়ে তার পেটে বেলেস্তারা লাগিয়ে দেওয়া হল । তারপব বদ্যিঠাকুর বললেন , `এতে যদি বদনা না সারে , তবে পিঠে আর একটা , তাতেও না সারলে দুপাশে আর দুটো । বলেস্তাঝ লাগাতে হবে । ' কথা শুনেই কঘার কান্না তত্‌ক্ষণাত্ থেমে গেল ।

তখন সকলে ভাবল যে , বদ্যিঠাকুর কী চমত্‌কার ওষুধই দিয়েছেন , দিতে দিতেই বেদনা সেরে গেছে । হোক , ঝঘা যখন দেখল যে তার কান্নাতে ঢোল পোড়াবার কথাটা চাপা পডে গেছে, তখন । সই বেলেস্তারার বেদনার ভিতরেই তার মনটা কতক ঠাণ্ডা হল । রাজামশাই তখন তাকে খুব যত্নের সঙ্গে তার ঘরে শুইয়ে ঝেখ এলেন । গুপি তার কাছে বসে তার বেলেস্তাঝয় হাওয়া করতে লাগল ।

তারপর সকলে ঘর থেকে চলে গেলে গুপি বাঘাকে বলল , `ছি ভাই, যেখানে সেখানে । ক এমন করে কাঁদতে আছে ? দেখ দেখি , এখন কী মুশকিলটা হল । ' বাঘা বলল , `আমি যদি না কাঁদতুম , তা হলে তো এতক্ষণে আমার ঢোলকটি পুড়িয়ে শেষ কবে দিত । । ।

নাহষ একটু জ্বলুনি সইতে হচ্ছে, কিন্ত আমার ঢোলকটা তো বেঁচে গেছে !' বাঘা আর গুপি এমন কতাবার্তা বলছে । এদিকে ঝজামশাই সভায় ফিরে এলে দারোগামশাই তা কানে কানে বললেন , `মহাবাজ , একটা কথা আছে, অনুমতি হয তো বলি । ' রাজা বললেন , `কী কথা ?' দারোগা বললেন , `মহারাজ , ওই যে লোকটা গড়াগডি দিয়ে কাঁদল , সে আর তার সঙ্গের ওই লোকটা , সেই দুহ আমি তাদের টিনতে পেরেছি । ' রাজা বললেন , `তাই তো হে, আমারও একটু যেন সেইরকম ঠেকছিল । তা হলে তো বড় মুশকিল দেখাছ ।

ঝলা তো এখন কী করা যায় ?' তখন এ কথা নিয়ে সভার মধ্যে ভারি একটা কানাকানি শুরু হল । কেউ বলল , ` রোজা ডাকো , ও দুটোকে তাড়িষে দিক । ' আর একজন বলল , রোজা যদি তাড়াতে না পারে , তখন তো সে দুটো । । আ গিয়ে একটা বিষম কিছু করতে পারে ।

তার চেয়ে কোনও বাত্রে ঘমেব ভিতরে ও দুটোকে পুড়িয়ে মারুন কথাটা সকলেরই খুব পছন্দ হল , কিন্ত এর মধ্যে একটা মুশকিল এই দেখা গেল যে , ভূতদের পোড়াতে গেলে রাজবাডিতেও তখন আগুন ধবে যতে পাবে । শষে অনেক যুত্তির পর এই স্থির হল যে , একটা বাগানবাড়িতে তাদেব বাসা দেওয়া হবে । বাগানবাড়ি পুড়ে গেলেও বিশেয ক্ষতি হবে না । রাজামশাই বললেন , সই ঢোলকটাকেও তা হলে সেই বাগানবাড়িত নিয়ে রাখা যাক , বাগানবাড়ি পোড়াবাব সময় একসঙ্গে সকল আপদ চুকে যাবে । ' বাগানবাডি যাবার কথা শুনে গুপি আর বাঘা খুব খুশি হল ।

তারা তো জানে না যে এর ভিতব কী ভয়ানক ফন্দি রয়েছে । তারা খালি ভাবল যে । ষশ আঝমে নিরিবিলি থাকা যাবে , সংগীতচর্চারও সুবিধা হতে পারে । জায়গাটি খুবই নিরিবিলি আর সুন্দর । বাডিটি কাঠের , কিন্ত দেখতে চমত্‌কার ।

সেখানে গিয়ে দেখতে দেখতে বাঘা ভালো হয়ে গেল । তখন গুপি তাকে বলল , `ভাই, আর এখানে থেকে কাজ কী ? চলো আমরা । । । থেকে চলে যাই ।

' বাঘা বলল , `দাদা , এমন সুন্দর জায়গাষ তো আর থাকতে পাব না , দুদিন এখানে রইলাম বা । আহা , আমার ঢোলকটি যদি থাকত !' সেদিন বাঘা বাডির এঘনওঘর ঘুরে বেড়াচ্ছে, গুপি বাগানের এক জায়গায় বসে গুনগুন করছে, এমন সময় হঠাত্ বাঘা ভষানক চ্যাঁচামেচি করে উঠল । তার সকল কথা বোঝা গেল না , খালি `ও গুপিদা ! ও গুপিদা !' ডাকটা খুবই শোনা ষেতে লাগল । গুপি তখন ছুটে এসে দেখল যে , বাঘা তার সেই ঢোলকটা মাথায় করে পাগলের মতো নাচছে, আর যা-তা আবোল-তাবোল বলতে বলতে `গুপিদা গুপিদা' বলে চ্যাঁচাচ্ছে । ঢোলক পেয়ে তার এত আনন্দ হয়েছে যে , সে আর কিছুতেই স্থির হতে পারছে না , গুছিয়ে কথাও বলতে পারছে না ।

এমনি করে প্রায় আধঘণ্টা চলে গেলে পর বাঘা একটু শান্ত হয়ে বলল , `গুপিদা , দেখছ কী ! এই ঘরে আমার ঢোলকটি---আর কী মজা------হাঃ হাঃ হাঃ বলে আবার সে মিনিট দশেক খুব নেচে নিল । তারপর স বলল , `দাদা , এত দুঃখের পর ঢোলকটি পেয়েছি, একটা গান গাও , একটু বাজিয়ে বলল , `এখন নয় ভাই, । বড্ড খিদে পেয়েছে । খাওয়াদাওয়ার পর রা। এ বারান্দায় বসে দুজনায় খুব করে গানবাজনা করা যাবে ।

রাজামশাই কিন্ত ঠিক করেছেন , সেই রারেই তাদের পুড়িয়ে মারবেন । দারোগার উপর হুকুম হষেছে যে সেদিন স্যার সমষ সেই বাগানবাড়িতে মস্ত ভোজের আষোজন করতে হবে । দারোগামশাই পাশ-ষাট জন লোক নিয়ে সেই ভোজে উপস্থিত থাকবেন । খাওয়াদাওয়ার পর গুপি আর বাঘা ঘুমিয়ে পড়লে তাঁবা সকলে মিলে একসঙ্গে ই কাঠের বাড়ির চারদিকে আগুন দিয়ে তাদের পালাবার । ।

বন্ধ করবেন । সেদিনকার খাওয়া বেশ ভালোমতোই হল । গুপি আর বাঘা ভাবল যে লোকজন চলে গেলেই তারা গানবাজনা আরম্ভ করবে । দারোগামশাই ভাবলেন ষ গুপি আর বাঘা ঘুমোলেই ঘরে আগুন দেবেন । তিনি তাদের ম পাড়াবার জন্য বড়ই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন ।

তাঁর ভাব দেখে যখন স্পষ্টই বোঝা । গল যে , তাক না ঘুমোলে তিনি সেখান থেকে যাবেন না , তখন গুপি বাঘাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় পড়ে নাক ডাকাতে লাগল । একটু পরেই গুপি আর বাঘা দেখল ঘে লোকজন সব চলে গেছে, আর কারও সাড়াশদ নেই । তারপয় আর একটু দেখে , যখন মনে হল যে ঝগান একেবারে খালি হয়ে গেছে, তখন তারা দুজনে বারান্দায় এসে ঢোল বাজিয়ে গান জুডে দিল । এদিকে দারোগামশাই তাঁর লোকদেয় বলে দিয়েছেন , ` তোরা প্রত্যেক দরজায় বেশ ভালো কবে আগুন ধরাবি , খবরদার , আগুন ভালো করে না ধঝল চলে যাসনি যেন !' তিনি নিজে গিয়েছেন সিঁড়িতে আগুন ধরাতে ।

আগুন বেশ ভালো মতোই ধঝেছ । দারোগামশাই ভাবছেন , `এই । বলা ছুটে পালাই' এমন সময় বাঘার ঢোল বেজে উঠল , গুপিও গান ধরে দিল । তখন আর দারোগামশাই বা তাঁর লাকদের কাঝ সেখান থেকে নডবাব জো রইল না , সকলকেই পুডে মবতে হল । ততক্ষণে গুপি আর বাঘাও আগুন দখতে পয়ে , তাদের জুতোর জোরে , তাদের ঢোল আর থলেটি নিয়ে সেখান থেকে চম্পট দিল ।

সেদিনকার আগুনে দারোগামশাই তো পুড়ে মারা গিয়েছিলেনই, তাঁর দলের অতি অল্প লোকই বেঁচেছিল । সেই লোকগুলো গিয়ে রাজামশাইকে এই ঘটনার খবর দিতে তাঁর মনে বড়ই ভয় হল । পরদিন আর দু চার জন লোক রাজসভায় এসে বলল য , তারা সেই আগুনের তামাশা দেখতে সখানে গিয়েছিল , তারা তখন ভারি আশ্চর্যরকমের গানবাজনা শুনেছে, আর ভূত দুটোকে শন্যে উড়ে পালাতে স্বচক্ষে দেখেছে । তখন যা রাজামশায়ের কাঁপুনি ! সেদিন তাঁর সভা করা হল না । তিনি তাড়াতাড়ি বাড়িব ভিতরে এসে ভূতের ভয়ে দরজা এঁটে লেপ মুডি দিয়ে শুয়ে রইলেন , এক মাসের ভিভরে আর বাইরে এলেন না ।

এদিকে গুপি আর বাঘা সেই আগুনের ভিতর থেকে পালিয়ে একেবারে তাদের বাড়ির কাছের সেই বনে এসে উপস্থিভ হয়েছে, যেখানে প্রথমে তাদের দেখা হয়েছিল । তাদের বড় ইচ্ছা যে এত ঘটনার পব একবার তাদের মাবাপকে দেখে যায় । বনে এসেই বাঘা বলল , `গুপিদা , এইখানে না তোমায় আমায় দেখা হয়েছিল ?' গুপি বলল , `হ্যাঁ !' বাঘা বলল , `তবে এমন জায়গায় এসে কী একটু গানবাজনা না করে চলে ষেতে আছে ?' গুপি বলল , `ঠিক বলেছ ভাই, তবে আর দেরি কেন ? এই বেলা আরম্ভ করে দাও । ' এই বলে তারা খুলে গানবাজনা করভে লাগল । মধ্যে এক আশ্চর্য ঘটনা হয়েছে ।

এক দল ডাকাত হাল্লাব ঝজার ভাণ্ডার লুটে , তর ছোট ছেলে দুটিকে সুদ্ধ চুরি করে নিয়ে পালিয়ে এসেছিল । রাজা অনেক সৈন্য নিয়ে তাদের পিছু পিছু প্রাণপণে ছুটেও ধরতে পারছিলেন না । গুপি আর বাঘা যখন গান ধরেছে ঠিক সেই সময়ে সেই ডাকাতগুলো সেই বনের তির দিয়ে যাচ্ছে । কিন্ত সে গান একবার শুনলে তো আর তার শেয অবধি না শুনে চলে যাবার জো নেই । কাজেই ডাকাতদের তখনই সেখানে দাঁড়াতে হল ।

সারা রাত্রের ভিতরে আর সে গানবাজনাও থামল না , আকাতদেরও সেখান থেকে যাওয়া ঘটল না । সকালে হাল্লার রাজা এসে অতি সহজেই তাদের ধরে ফেললেন । তারপর যখন তিনি জানলেন যে , গুপি আর বাঘার গানের গুণেই তিনি ডাকাত ধরতে পেরেছেন , তখন আর তাদের আদর দেখে কে ? রাজাকুমারেরাও বললেন , `বাবা , এমন আশ্চর্য গান আর কক্ষনো শোননি ; এদের সঙ্গে নিয়ে চলো । ' কাজেই রাজা গুপি আর বাঘাকে বললেন , ` তোমরা । ।

আ। সঙ্গে চলো ! তোমাদের পাঁচশো টাকা করে মাইনে হল । ' কথায় গুপি জোড়হাতে রাজামশাইকে নমস্বার করে বলল , `মহারাজ , দয়া করে আমাদের দুদিনের - দিতে আজ্ঞা হোক । আমরা আমাদের পিতা-মাতাকে দেখে তাঁদের অনুমতি নিয়ে আপনার । -।

। । গিয়ে উপস্থিত হব । ' রাজা বললেন , `আচ্ছা , এ দুদিন এই বনেই ঝিশাম করছি; তোমরা তামাদের মা-আপকে দেখে দুদিন পরে এইখানেই আমাদের পাবে । ' গুপিকে তাড়িয়ে অবধি তার বাবা তাব জন্য বড়ই দুঃখিত ছিল , কাজেই তাকে ফিরে আসতে দেখে তার হ্মনন্দ হল ।

কিন্ত বাঘা বেচাঝর ভাগ্যে সে সুখ মেলেনি । তার মাবাপ এর কয়েকদিন আগেই মারা । গয়েছিল । গ্রামেব লোকেরা তাকে ঢোল মাথায় কবে আসতে দেখেই বলল , `ওই বে ! সেই বাঘা ব্যাটা আবার আমাদের হাড় জ্বালিয়ে মাঝব ; মার ব্যাটাকে !' বাঘা বিনয় করে বলল , `আমি খালি আমার মা-আবাকে দেখতে এসেছি; দুদিন থেকেই চলে যাব , বাজাষ-টাজাব না । ' সে কথা কি তারা শোনে ? তারা খিঁচিয়ে তার মাবাপের মৃত্যুর কথা বলে এই বড় লাঠি নিয়ে তাকে মারতে এল ।

স প্রাণপণে ছুটে পালাতে পালাতে ই মেরে তার পা ভেঙে , মাথা ফাটিয়ে রত্তারত্তি কবে দিল । তাদের ঘরের দাওয়ায় বসে তাব বাপের সঙ্গে কথা বলছিল , এমন সময় সে দেখল যে বাঘা পাগলের মভো হয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছুটে আসছে । তার কাপড় ছিঁড়ে ফালি ফালি আর রত্তে লাল হয়ে গেছে । অমনি সে তাড়াতাড়ি বাঘার কাছে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞাসা কবল , `কী হয়েছে ? তোমার এ দশা কন ?' গুপিকে দেখেই বাঘা একগাল হেসে ফেলেছে । তারপর সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল , `দাদা , বড্ড বেঁচে এসেছি ! মুর্খগুলো আর একটু হলেই আমার ঢোলটি ভেঙে দিয়েছিল ! গুপিদের বাড়ি এসে গুপির ষত্নে আর তার মাবাপের আদরে বাঘার দুদিন যতটা সম্ভব সুখেই কাটল ।

দুদিন পরে গুপি তার মাবাপের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় বলে গেল , ` তোমরা তৈরি হয়ে থাকবে ; আমি আবার ছুটি পেলেই এসে তামাদের নিয়ে যাব । ' তারপর কয়েক মাস চলে গিয়েছে । গুপি আর বাঘা । । হাল্লার রাজার বাড়িতে পরম সুখে বাস করে ।

দেশ বিদেশে তাদের নাম রটে গিয়েছে---`এমন ওস্তাদ আর কখনও হয়নি , হবেও না । ' রাজামশাই তাদের আরি ভালোকসেন ; তাদের গান না শুনে একদিনও থাকতে পারেন না । নিজের দুঃখ সুখের কথা সব গুপির কাছে বলেন । একদিন গুপি দেখল রাজামশায়ের মুখখানি বড়ই মলিন । তিনি রমাগতই যেন কী ভাবছেন , ষেন তাঁর কোনও বিপদ হয়েছে ।

শেষে একবার তিনি গুপিকে বললেন , `গুপি , বড় মুশকিলে পডেছি, কী হবে জানি না । শুণ্ডির রাজা আমার রাজ্য কেড়ে নিতে আসছে । ' শুণ্ডির রাজা হচ্ছেন সেই তিনি যিনি গুপি আর বাঘাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন । তাঁ নাম শুনেই গুপির মনে একটা চমত্‌কার মতলব এল । সে তখন রাজামশাইকে বলল , `মহারাজ ! জন্য কোনও চিন্তা করবেন না ।

আপনার এই চাকরকে হুকুম দিন , আমি এ থেকে হাসির কাণ্ড করে দেব । ' । -। । হেসে বললেন , `গুপি , তুমি গাইয়ে বাজিয়ে মানুষ , ষুদ্ধের ধাক ধার না , তার কিছু বাঝও না ।

শুণ্ডির রাজার ভারী ফৌজ , আমি আক তার কিছু করতে পারি ?' গু। । প বলল , `মহারাজ , হুকুম পেলে একবার চো করে দেখতে পারি । ক্ষত তো কিছু হবে না । ' রাজা বললেন , ` তামার যা ইচ্ছা তাই তুম করতে পার ।

এ কথায় ষার পর নাই খুশি হয়ে বাঘাকে ডেকে পরামর্শ করতে লাগল । - বাঘা সেদিন অনেকক্ষণ ধরে পরামর্শ করেছিল । বাঘার তখন কতই উত্‌সাহ ! এ বলল , `দাদা , এবারে আমরা দুজনে মিলে একটা কিছু করবই করব । আমার শুধু এক কথায় একটু ভয় হচ্ছে; হঠাত্ - । আ নিয়ে পালাবার দরকার হয় , তবে হয়তো আমি জুতোর কথা ভুলে গিয়ে সাধারণ লোকের মতো কষে ছুট দিতে য।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।