আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নুরু ডাকাত ও কিশোর টিটুর কথা......

সাধারন মানুষ নুরু এক ডাকাতের নাম। '৭১-এ যুদ্ধের সময় তাকে ধরে মেরে ফেলতে গিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। প্রাণভিক্ষা চেয়ে বলেছিল 'আমাকে একবার বাঁচার সুযোগ দিন, দেখবেন আমি কেমন করে খান সেনা জবাই করি'। সেই নুরু জুটে গিয়েছিল নাসিরউদ্দিন ইউসুফের দলের সাথে। বেশ বড় দায়িত্বে অধিনায়ক এখন বাচ্চু তথা নাসিরউদ্দিন ইউসুফের উপর।

ক্র্যাক প্লাটুন ধরা পড়বার পর ঢাকাতে গেরিলা তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়েছিল কিছুটা। তাই ঢাকার উপকণ্ঠে তার দল এসেছে নতুন মিশনে। অধিনায়ক ছিল মানিক, বাচ্চু তার ডেপুটি। মানিকের মা বাচ্চুকে বলেছিল, "মানিক আমার একমাত্র ছেলে, তাকে একটু দেখে রেখ"। সেই অধিনায়ক মানিকই শহীদ হয় ভায়াডুবি অপারেশনে।

কথা রাখা হয়নি বাচ্চুর। এরপর থেকে বাচ্চুই পুরো দলটির দায়িত্বে। বহুমাত্রিক এই দলে আছে আরেক কিশোর। নাম টিটো। প্রচলিত যুদ্ধের ব্যাকরণ টিটোর অজানা।

মৃত্যু-ভয়; টিটোর কাছে সেটিও এক অপরিচিত শব্দ। যুদ্ধক্ষেত্রে এই দু'জিনিসের মিশ্রণ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বটে। তেরই ডিসেম্বর ১৯৭১। সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মার খেয়ে পাগলের মত ঢাকার দিকে পিছিয়ে আসছে পাকিস্তানীরা। পাকিস্তানের অন্যতন দুর্ধর্ষ রেজিমেন্টে ৩৩ পাঞ্জাবের একটি দলও ঢাকার দিকে আসছিলো ময়মনসিংহ রুট ধরে।

ক্লান্ত সৈন্যরা ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে আস্তে আস্তে। চোখে পরাজয়ের গ্লানি। এমনই মুহূর্তে তাদের এমব্যুশ করলো বাচ্চুর দল। সংখ্যা এবং শক্তিতে কম হলেও তারা দেশপ্রেমে অদম্য, বুকে হানাদার বধের দৃপ্ত প্রত্যয়। কিন্তু এতগুলো সৈন্য হাতের কাছে পেয়ে মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না সুবেদার মুহম্মদ আলী।

পুরো পাকিস্তানী দলটি এম্বুশে ঢোকার আগেই গুলি ছুঁড়লেন তিনি, হয়ে গেল হিসেবে গড়মিল। প্রথমে মার খেলেও আস্তে আস্তে নিজেদের সামলে নিতে লাগলো পাকিস্তানীরা, শুরু হল প্রাণপণ লড়াই। নুরু লড়ছে পূর্ণোদ্দমে। এরই মাঝে চিৎকার করে দলনেতা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ আদেশ দিলেন হানাদারদের মেশিনগানটি স্তব্ধ করে দিতে। কিন্তু কে জানতো বোকা টিটোই যে সেদিন চুপিসারে তার পাশে এসে তার পাশে অবস্থান নিয়েছিল।

লাফিয়ে উঠে সামনে বাড়তেই পাকিস্তানীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় টিটোর বুক। খানিকটা কেঁপে নিথর হয়ে পড়ে তার দেহ। টিটোর মৃত্যু যেন পাগল করে দিল নুরুকে। অবিশ্বাস্য গতিতে লাফিয়ে চললো সে, সেই ঘাতক এলএমজিম্যানের দিকে। মুহূর্তে সে হত্যা করলো তিনজন পাকিস্তানীকে।

এই সুযোগে টিটোর লাশ সরিয়ে আনল সহযোদ্ধারা। কিন্তু নুরু? সে এগিয়ে চলছে সামনে, একের পর এক শত্রু নিধনে। টিটোর স্থান হয়েছে সাভার ডেইরী ফার্মের সামনে সাড়ে তিন হাত মাটিতে। নুরু বেঁচে ফিরেছিল সেবার, এক পাঞ্জাব মেজরকে হত্যা করে তার টুপী উপহার দিয়েছিল নাসিরউদ্দীনকে। মেজর খালেদ বলেছিলেন, স্বাধীন দেশ মৃত গেরিলাদেরই ভালবাসে।

বাস্তবিক অর্থে হয়েছেও তাই। টিটো শহীদ হয়েছে, কিন্তু সেই নরু? সেই মুন্সী যে সারা রাত টিটোর লাশের কাছে বসে কুরআন খতম দিয়েছিল সেই বা গেল কোথায়? বেঁচে আছে - নাকি মরে বেঁচেছে, নাকি মৃত্যুর প্রতীক্ষায় আছে। কে জানে। যে দেশ টিটো,মানিকদের মত বীরদের প্রকৃত সম্মান দিতে জানেনা সেদেশে আর বীর জন্মাবে এমন দুরাশা আমরা করি কেমনে? -ফেসবুক থেকে নেয়া ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।