টুকলিফাই মারাই আমাদের কাজ, চুরা ছেঁচা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।
এরপর আসলে আর বলা যায় না এটি একটি রাষ্ট্র ও পুলিশ কোন আইনশৃংখলা বাহীনি। বরং এট একটি মঘের মুল্লুক ও পুলিশ এখানে সংঘবদ্ধ সরকারী লাইসেন্স ধারী সন্ত্রাসী যার দেশটির সমস্ত সন্ত্রাসি, নৈরাজ্য, অপরাধের গুরু। বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের গত তিন দশকে পতনের চুড়ান্তে চলে এসেছে, পৃথিবীর সমস্ত পুলিশের ইতিহাসে বাংলার পুলিশের এই অভিজ্ঞার নজির নেই। যাহউক, চলুন মামুন হত্যাকান্ডের ভেতর দিয়ে আমরা বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাস বতমান ও ভবিষ্যতের একটা ধারনা নেই।
গ্রেপ্তারের পর বালু ব্যবসায়ী মোঃ মামুন ভূঁইয়াকে পরানো হয় হাতকড়া। তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে, গাড়ি চলতে থাকে থানার উদ্দেশ্যে, পথে পুলিশ আটক মামুনকে তুলে দেয় তার শত্রু সন্ত্রাসীদের হাতে। পুলিশের উপস্থিতিতেই মামুনকে আট দশজন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে, হাতে হ্যাডকাপ পরা অবস্থায় সন্ত্রাসীদের আঘাত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে, পুলিশ মামুন কে লাথি দিয়ে হিস্র সন্ত্রাসীদের সামনে ফেলে দেয়, মামুন বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে, পুলিশ আবার লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। সন্ত্রাসীরা হত্যা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আঘাত করে চলে। পুলিশ মৃত্যু নিশ্চত দেখে হ্যাডকাপ খুলে দেয়, অতপর গল্পটি পরিকল্পনা অনুযায় বাস্তবায়ন করে।
হাতকড়া খুলে লাশ সেখানেই ফেলে রাখে পুলিশ। নিষ্ঠুর এই ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায়। মো. মামুন কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের হোসেন আলী ভূঁইয়ার ছেলে। সংসারে মামুনের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেনের বক্তব্য হলো।
থানায় নিয়ে আসার পথে গ্রামবাসী মামুনকে ছিনিয়ে নেয় এবং কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, মামুনের সঙ্গে মুক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হেকিম ফরাজির একটি মারামারির ঘটনা ঘটে কিছু দিন পূর্বে। ওই ঘটনায় করা মামলায় জামিনে ছিলেন মামুন। মামুনের বিরুদ্ধে অপর আর একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কালীগঞ্জ থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নৃপেন চন্দ্র দে আরও তিনজন আনসার সদস্য নিয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বড়গাঁও বাজার এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করেন।
গ্রেপ্তারের পর বাজারের অনেক লোকের সামনেই তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে একটি অটোরিকশায় (গাজীপুর-ঠ-১১-৪৫৭৯) বসিয়ে থানার দিকে রওনা হন তাঁরা।
মামুনের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, থানায় যাওয়ার পথে উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের গোপাল মাস্টারের পুকুরের কাছে পৌঁছালে অটোরিকশাটি থেমে যায়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য হেকিম ফরাজি ও তাঁর ভাতিজা জাহাঙ্গীর ফরাজির নেতৃত্বে সাত-আটজন সন্ত্রাসী। মামুনকে তাঁদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। সন্ত্রাসীরা পুলিশের সামনেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামুনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই মামুনের হাতকড়া খুলে নেয় পুলিশ। অথচ পুলিশ ঘটনাটি প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে তেমন কোন আলামত নেই। কোন সদস্য সামান্য আঘাতও পায়নি।
পরে রাত ১২টার দিকে মামুনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কালীগঞ্জ থানার এসআই মুরাদ আলী শেখ মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মামুনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।
তাঁর মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গতকাল বুধবার গাজীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়।
ঐ দিকে কালীগঞ্জ থানার এসআই নৃপেন চন্দ্র দে দাবি করেন, তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মামুনকে গ্রেপ্তার করতে বড়গাঁও বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসেন। এসআই নৃপেনের মাথা খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন থানার ওসি মো. এনায়েত হোসেন।
তিনি দাবি করেন, ‘মামুন একটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে এসআই নৃপেন চন্দ্র দেসহ চারজন পুলিশ সদস্য মামুনকে বড়গাঁও বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে। থানায় নিয়ে আসার পথে রাত আটটার দিকে রামচন্দ্রপুরে অনেক লোক হামলা চালিয়ে মামুনকে ছিনিয়ে নেয়। রাতে অনেক লোক থাকায় কার না কার গায়ে গুলি লাগে, এই ভয়ে পুলিশ গুলি চালায়নি। পরে রাত ১২টার দিকে মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
’
গতকাল রামচন্দ্রপুর এলাকায় ঘটনাস্থলে গিয়ে কালীগঞ্জ থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁরা চিৎকার ও হইচইয়ের শব্দ শুনেছেন। তবে গ্রামবাসী কারও ওপর হামলা বা কাউকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়নি। এমন কোনো ঘটনাও তাঁরা শোনেননি। গতকাল সকালে তাঁরা জানতে পারেন, মামুন নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
মামুনের বাবা হোসেন আলী কাজ করেন পার্শ্ববর্তী ঘোড়াশাল সার কারখানায়। তিনি বলেন, ‘মামুন দীর্ঘদিন বড়গাঁও বাজারে মুদির ব্যবসা করত। পাঁচ-ছয় মাস আগে ওই ব্যবসা ছেড়ে বালুর ব্যবসা শুরু করে। ওর ইচ্ছা ছিল বিদেশে যাবে। তার জন্য পাসপোর্টও করা হয়েছিল।
মামুনের ভাতিজা সাইদুল ইসলাম বলেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মামুন বর্তমান চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ওরফে তোরণের প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করেন। এতে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বড়গাঁও গ্রামে মামুনদের বাড়িতে চলছিল মাতম। দিনভর বাড়িতে ভিড় করেছিল গ্রামের লোকজন। শোকে পাথর হয়েছিলেন মা মোমেনা বেগম।
মামুনের স্ত্রী রেহেনা বেগম শিশু ছেলে ইমনকে বুকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন। বলছিলেন, ‘আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল, হেরে কুপিয়া মারল। এহন আমার পুলা-মাইয়্যা নিয়ে কই যামু। কেরা আমাগো দেখব। ’
মামুনের বড় ভাই নাজমুল ভূঁইয়া বলেন, ছয়-সাত মাস আগে একটি মুঠোফোন থেকে মামুনকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে কালীগঞ্জ থানায় তখন একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডিতে মুক্তারপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শরিফুলের পক্ষের লোক সাবেক ইউপি সদস্য হেকিম ফরাজিসহ কয়েকজনের নামও রয়েছে।
নাজমুল অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মামুনকে গ্রেপ্তার করায়। পরে মামুনকে তাদের হাতে তুলে দেয় পুলিশ এবং তাদের উপস্থিতিতে মামুনকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রামবাসী ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে বলে মিথ্যা গল্প রচনা করেছে পুলিশ।
মামুন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সাবেক ইউপির সদস্য হেকিম ফরাজি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমরা কেউ তাঁকে হত্যা করিনি। মামুন হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য মঙ্গলবার রাতেই কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি প্রথমআলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের বলেন, ‘কালীগঞ্জে গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হয়েছে। ’ ডাকাতির সংবাদ হিসেবে প্রচারের জন্য তিনি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে টাকাও দেন।
আলোচনা পর্ব, সবাইকে যৌক্তিক আলোচনায় লেখকের বিনীত আমন্ত্রন থাকলো।
ঘটনাটি বাইরে হলেও আমি এখানে ইচ্ছে করেই থানায় লিখেছি কারন, আমি আইন বুঝি ও জানি, এবং আইন বোঝালে বা উন্মুক্ত রাখলে রিক্সাওয়ালা, মুজুরও তা বুঝবে আর এই লেখার পাঠকেরা তো সব শিক্ষিত। পুলিশ কাস্টোডিতে নেয়া আর থানা হাজতে থাকা একই কথা, পুলিশ কাস্টডিতে থাকা একজন আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করতে হলে সেখানে ধস্তাধস্তি, গোলাগুলি উভয় পক্ষের হতাহত ও খুন জখম সহ অনেক কিছু হতে হবে। এটা না হলে ঐ পুলিশের চাকরী তো থাকবেই না, সাথে হত্যার সহোযগী হিসাবে ঐ পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলাও হবে, তা প্রতিটি পুলিশ ট্রেনিংয়ের প্রথম তালিম হিসেবে শিখে ও জানে। তাহলে ভাবুন এত বড় রিস্ক পুলিশ কখন নেবে ? হয়, না নিলে তার চাকরী থাকছে না এমন রাজনৈতিক চাপ অথবা বিশাল টাকায় মানুষ মারার বানিজ্য।
এখানে বিষয়টা কি হয়েছে ? পুলিশের কাছে মামুনের এ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছিল।
পুলিশ ভাবলো, এ্যারেস্ট করে কি লাভ। কোর্টে পাঠাতে হবে, আবার জামিনে বের হয়ে আসবে। তাই সরকারী লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসী বাহীনি (পুলিশ) থানায় বসে কমার্শিয়াল হত্যার মিটিং করে সুইটএ্যাবল সময়ে যে কাউকে ধরে এনে তার প্রতিপক্ষের হাতে হত্যা করার জন্য ফেলে রেখে টাকা গুনছে আর সিগরেট ফুকছে। বিষয়টা ভাবলে এরকমই।
মুক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হেকিম ফরাজির সাথে মামুনের ঝগড়া।
সাবেক চেয়ারম্যানেরও প্রতিপক্ষ। ওসি সাহেব ম্যামবারের সাথে যোগাযোগ করে। তার সাথে চুক্তি হয় দশ লক্ষ টাকা। মামুনকে ধরে এনে ফরাজির গ্রামের সামনে ছেড়ে দেয়া হবে। তাকে ওখানে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করবে।
ওসি সাহেব মামলা নিবেন উত্তেজিত গ্রামবাসী মামুনকে পুলিশের কাছথেকে ছিনিয়ে নেয়। অজ্ঞাত কয়েক শত লোক মামুনকে হত্যা করে।
খুব সুন্দর সিস্টেম। আসামী ধরে কাগজপত্র লিখে কোর্টে চালান দেয়ার চেয়ে অনেক সহজ, দশ লক্ষ টাকাও পাওয়া যায়। প্রতিটি এ্যারেস্টেই এরকম বানিজ্য করতে পারলে ভালো হতো।
গল্পটা আমি লিখলাম অনুমান করে। আর অনুমানের সংজ্ঞা হলো, জ্ঞাত বিষয়ের উপর অজ্ঞাত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করাকে অনুমান বলে। পুলিশ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা থেকে ঘটানাটি ইমাজিন করলাম, আপনার অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করুন দেখুন ব্যাতিক্রম পান কিনা ?
এই পর্যায় এসে চলুন পুলিশ ও নাগরীকের নিরাপত্তার বর্তমান চিত্রটি কিছু নিউজ ফ্লাসব্যাকে দেখে নেই।
*তারা জানান, যত্রতত্র লাশ পড়ে থাকে। এগুলো মাটিচাপা দেয়া হয়।
অনেক সময় টোকাইরা পশুর হাড় মনে করে বিক্রির জন্য মানুষের হাড় কুড়িয়ে নিয়ে যায়।
*মাঝে-মধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তরুণ-যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদের কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে, কেউ বা নিখোঁজই থেকে যাচ্ছে।
*তিনজনেরই হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনজনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
*লাশ পাওয়া যাচ্ছে নদী, খাল, ডোবায়। মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে গত মঙ্গলবার তিন জনের পচা লাশ পাওয়া যায়।
*ওয়ালিউল্লাহর পরিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে যে, তাদের ছেলেদের আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ করেছে। কিন্তু' র্যাব বাংলাদেশের পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে এই দুইজনকে আটকের অভিযোগ অস্বীকার করে।
*রাজনৈতিক কারণে বেশির ভাগ গুমের ঘটনা ঘটে।
আন্তর্জাতিক ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলোও এতে জড়িত।
*বাসটির কাছে ছোট একটি গাড়ি এসে থামে এবং সেটি থেকে ইউনিফর্ম পরিহিত সাত-আট ব্যক্তি নেমে আসেন। তারা নিজেদের আইনপ্রয়োগকারী বিশেষ বাহিনী র্যাব ও ডিবির সদস্য বলে পরিচয় দেন।
*আগে ড্রেস পরে নিয়ে গেছে, বিচারবহির্ভূত কিলিং হয়েছে, ক্রস ফায়ার হয়েছে। এখন অন্য ধরনের কিলিং হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপির যশোর জেলার একজন নেতাসহ মোট চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
*ওই স্থানের মাটি তোলার পর ওই যুবকের হাড়, জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি বেরিয়ে আসে।
*শামীমের স্ত্রী ঝর্ণা খানম বলেন, ‘আমরা তো অনেক দৌড়ালাম। শামীম বেঁচে আছে না মরে গেছে, এখন আমরা শুধু সেই তথ্যটা জানতে চাই। কিন্তু আমাদের মামলার কোনো গুরুত্বই নেই।
*বিরুলিয়ার বাসিন্দারা জানান, এর আগেও সেখানে এক যুবকের লাশ সিমেন্টের বস্তার সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। অজ্ঞাত ওই লাশের হাত পেছনে বাঁধা ছিল।
*মোহাম্মদপুর থানার কাছে সাদা পোশাকধারী লোকেরা তার গাড়ির গতিরোধ করেন। বন্দী করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। গাড়ির ভেতরের ‘বন্দিদশা' থেকে নাজমুল এক সহকর্মীকে শুধুই বলতে পারেন, ‘ভাই, আমাকে তো ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
' আর কোনো কথা বলতে পারেননি। উদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তার স্ত্রী ও অন্যরা থানা-পুলিশ র্যাবের কাছে যান। অসহায় পরিবারটির বুক ফাটা কান্নায় মন গলেনি তাদের। রাত না পোহালে কিছুই করার নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয় তারা। রাত পোহানোর পর নাজমুলের মৃতদেহ মেলে গাজীপুর চৌরাস্তার অদূরে।
*বেশ কিছুক্ষণ তল্লাশির পর পাওয়া গেলো একটি নতুন মাটি খোঁড়া গর্তের ঠিকানা। গর্ত খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো প্রায় অর্ধগলিত বিকৃত এক তরুণের মৃতদেহ।
*আইনি জটিলতার আশঙ্কায় এসব লাশ দেখেও পুলিশকে খবর দেয় না স্থানীয় বাসিন্দারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশকে জানিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় স্থানীয়রা লাশ মাটিতে পুঁতে রেখেছে।
*রাতে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে মানুষ।
একবার কেউ নিখোঁজ হলে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
*রিপোর্টে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের একটি ব্রিজের নিচে অনেক দিন ধরে ভেসে আছে অজ্ঞাত পরিচয় একটি লাশ। স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে কচুরিপনা সরিয়ে লাশ দেখান। অনেক দিন পানিতে ভাসতে থাকায় লাশে পচন ধরেছে।
*র্যাবের পোশাকে, পুলিশের পোশাকে কিংবা সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সব সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে তারা এমন কাউকে ধরেনি কিংবা এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে তারা জানে না। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে এসব ঘটনায়।
*বিচারবহির্ভূত হত্যা বা গুমের অনেক ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় অভিজাত বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবকে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। সংস্থাগুলোর মতে, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মৃত্যু এবং নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা আছে এর মধ্যে।
অনেক ক্ষেত্রে কাউকে গুলি করে হত্যার পর বন্দুকযুদ্ধের গল্প ফাঁদা হচ্ছে।
*পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে গত দেড় মাসে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪৬৫টি। এর মধ্যে ৩৩৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৩ দিনে খুন হয়েছে ১২৯টি, ধর্ষণ ৪২টি। এর মধ্যে আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে খুন হয়েছে ১০ জন।
গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ জন করে খুন হচ্ছে।
*সংসদ ভবন চত্বরে এমপি হোস্টেলের তিনতলায় কয়েক দিন ধরেই লাশটা পড়ে ছিল। যখন উৎকট গন্ধ বের হতে থাকল, তখনই বিষয়টি ধরা পড়ল। গতকাল রোববার বিকেলে এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ব্লক থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর হাত বাঁধা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
অপমৃত্যু, গুম, হত্যা, ক্রসফায়ার, দুর্ঘটনায় দশ পনের জনের মৃত্যুর খবর আজ প্রতিদিনের ব্যাপার।
অজ পাড়া গা থেকে শুরু করে রাজধানীর সুরক্ষিত বাসা থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বেমালুম অস্বীকার করা হচ্ছে। কি ভিষন ভয়ংকর ব্যাপার। নাগরীকের নিরাপত্তার এরকম ভয়াবহ অবস্থা কোন গৃহযুদ্ধরত রাষ্ট্রেও গ্রহন যোগ্য না। বাতাসে কানপাতলে শোনা যায় আজম, আনসার, নাজমুল, করিম, শামীম, ইসমাইল, মাসুম, জসীমউদ্দীন, কালাম, বাশার, রহিম, ইস্রাফিল, সারোয়ার, আকতার, নূর মোহাম্মদ, আবদুল মান্নান, ইকবাল, জুয়েল, রাজীব, মিজানুর, সজল, ইমরান, মুকাদ্দাস, ওয়ালিউল্লাহ, সোহাগ, রফিকুল সহ আরও নাম না জানা অসংখ্য গুমের প্রেতাত্মাদের নিরবে, নিশব্দে এই নিষ্ঠুর পশুর সমাজকে অভিশাপ দিয়ে যাওয়ার আর্তচিৎকার।
অথচ দেখুন আইনশৃংখলা বাহিনীর যে কাউকে গ্রেতার বা ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষত্রে আমাদের দেশের প্রচলিত আইনেই ছিল, কোন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদা পোশাক কাউকে আটক করতে পারবে না।
এমন কি সাদা পোশাকের কোন গোয়েন্দা সংস্থাও কাউকে আটক করার সময় সাথে পোশাকধারী বাহিনী রাখতে হবে এবং নিজেদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কোথায় নেয়া হবে তা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি ও তার আত্মীয়দের জানাতে হবে এবং আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ আদালতে হাজির করতে হবে। এটা সভ্য দেশের প্রাথমিক পূর্শবর্ত, আজ থেকে ২০০ বছর আগে বৃটিশ আমলেই আইনটি করা হয়েছিল, যার উন্নত মোডিফিকেশন দূরে থাক কিভাবে এই আইনকে দেশের অন্য সকল আইন ও নীতিমালার তথৈবচ রাখা যায় তাই চেষ্টাই করেছি। দূঃখের বিষয় মানবতার মিনিমাম আইনগুলোও আমাদের কোন বাহিনী জানে না। সাধারন মানুষ তো প্রশ্নই ওঠেনা, কারন গত ৪১ বছর ধরে তাদের রাখা হয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ অবরুদ্ধ, অন্ধকার, মূর্খ করে।
গণতন্ত্রের নামে ইজারাতান্ত্রের ইজারাদারেরা জনগণকে সবসময় তথ্য, জ্ঞান, শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে পুরো রাষ্ট্রটিই একটি অন্ধকার রাষ্ট্র বানিয়ে রেখেছে। আমরা শুধু মানি না আর সব হয়বরল লাগিয়ে রেখেছি।
যারা বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের বলবো, পুলিশ বাদ দিলালাম, একটা জায়গা দেখান, উন্নয়নের বেসিক উপাদান নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, কমিউনিকেশ, ব্যাংকিং থেকে শুরু করে কৃষি, কুটির শিল্প পর্যন্ত, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে স্বাস্থ, পরিবেশ, আইন শৃংখলা পর্যন্ত কোথাও এক ফোটা উন্নয়ন, পরিকল্পনা দেখাতে পারবেন ?আসলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকাল থেকে এড হকে রাষ্ট্রটি পরিচালিত হচ্ছে। গভীর ভাবে দেখলে হাজার বছরের পরাধীন বাঙালী লক্ষ বুকের রক্তে কেনা স্বাধীনতার অব্যহতি পরেই দেশটাকে আরও বেশি পরাধীন করেছে, পরাধীনতার সুপ্তবীজ এর সংবিধান রচনাতেই উপ্ত হয়েছে। স্বাধীনতা মানে দেশ আসলে সাধারন শয়তানের শাসন থেকে ঈবলিশের শাসনে এসেছে।
বলতে পারেন, উপমহাদেশে বাংলাদেশ নামক ভূক্ষন্ডটির জনগণ প্রকৃত পক্ষে আজও স্বাধীন হয়নি এক সময় বিদেশী শোষকরা শাসন করেছে ২০০ বছর, পরবর্তীতে তাদের বীর্জে উৎপন্ন শয়তান শাসন করেছে এ অঞ্চলের আজ পর্যন্ত। নব্বুইয়ে গণ আন্দোলনে তিনজোটের যেই রুপকল্প সামনে রেখে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার করে জনতা খালেদা আর হাসিনার হাতে দেশ তুলেদিয়ছিল গত বাইশ বছরে দেশের প্রতিটি অংঙ্গে পঁচন ধরিয়ে দিয়েছে এরা। রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি, গ্রাম শহর রাজধানী সমাজ পরিবার ঘর এমন কোন স্থান নেই যেখানে এই দুই নারীর রাজনীতি পৌছায় নাই। পুরো দেশটাকে আজ সর্বাঙ্গ কুষ্ঠরুগী বললেও কম বলা হয়ে যাবে। কেউ দেশটার জন্য কিছু করলো না, সবাই গণিমতের মাল হিসাবে দেশটাকে ভাগভাগ করে নেয়ার নিরন্তন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
রাজনীতিবিদ, সামরিক বাহীনী, আমলা কেউ দেশটাকে দেশ ভাবলো না। যেখানে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরীকে প্রকৃত বন্ধু ও দেশ মাতৃকার অতন্দ্র প্রহরী হওয়ার কথাছিল সিভিল ও মিলিটারি বুরোক্রেটদের। তাদের হওয়ার কথাছিল প্রফেশনাল প্যাট্রিয়ট কেননা তারা নাগরীকের টাকায় পেইড দেশপ্রেমিক। তারা ঠিক থাকলে সৃষ্টিকর্তা ছারা আর কেউ জনগণের তথা সমষ্টির তথা দেশের সামান্যতম ক্ষতি কারও করতে পারার কথা না। কিন্তু হয়নি কারন ডিভাইড এ্যান্ডরুল।
এদের পদে পদে ব্যাক্তিতে ব্যক্তিতে গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে সামরিকে বেসামরিকে ক্যাডারে ক্যাডারে অসংখ্য বহুভূজে জটিল জটিল সব ডিভাইড এ্যান্ড রুল। এর ভেতরেই একটি পুলিশ। এই প্যারাটি পাঠককে শুধু পুলিশের উপর সবদোষ চাপানো থেকে বিরত ও নিরপেক্ষ আলোচনার জন্য তুলে ধরা হলো।
জাপানে পুলিশের যেকোন অপারেশনে সাংবাদিক বাধ্যতামূলক। আমাদের এখানেও, পুলিশ কোথাও বের হলেই সাথে সাংবাদীক নেয়া বাধ্যতামূলক করা হউক।
অবশ্য এতেও ঝুকি আছে, পরে ঐ সাংবাদীককেও মেরে বলবে ক্রস ফায়ার। এখানে ঐ বালু ব্যবসায়ির বিষয়টা কি হলো, আমরা সবাই বুঝি বিশ্বাস করি কিন্তু মানি না। এটা একটা মঘের মুল্লুক !
যা হউক বাংলাদেশে পুলিশ একটি গুরুতর রাষ্ট্রীয় সমস্যায় পরিনত হয়েছে। তাই পুলিশ নিয়ে আপনাদের ভিষন গভীর ভাবে ভাবতে হবে, কারন পুলিশ ছাড়া সমাজ বসবাসের অযোগ্য ত্রাশ আর সন্ত্রাশের স্বর্গরাজ্য।
একবার এক গ্রামের বুড়ি আদালতের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে জজ সাহেবের ন্যায় বিচার দেখে তাকে দারগা হওয়ার আশির্বাদ করেছিলেন।
পুলিশ নিয়ে এমন অসংখ্য প্রবাদ আছে। প্রবাদ হচ্ছে সময় ও অভিজ্ঞতা লব্ধ সার্টিফিকেট, বা প্রসংশাপত্র। আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশংসাপত্র পেতে দুই টাকা না লাগলেও প্রবাদের সত্যের উপর সত্য নাই, মানুষের জন্য অন্ত। পুলিশ নিয়ে আমাদের সমাজে এমন অজস্র প্রবাদ, গান, গল্প, ছরা আছে। আজও গ্রামের কোন পাড়ার সামনে দিয়ে কোন পুলিশের গাড়ি যাওয়ার সময় বাচ্চারা পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার দেয়, প্রশ্ন হলো কি অর্থে পুলিশ বলে ? আপনার চারপাশে ছোট শিশুদের একটু খেয়াল করলেই দেখবেন পুলিশ বিষয়টি কিভাবে যেন শিখে ফেলে, এবং খারাপ, ভয়, ভুত ইত্যাদী ক্যাটাগরিতে শিখছে।
তাহলে দেখেন পুলিশের প্রভাব আমাদের সমাজে এত গভীর ঢুকে গেছে যে এর তথ্য মানুষের রক্তেও ট্রান্সমিট হচ্ছে। কিছু তথ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জেনিটিক্যাললি ট্রাসমিট হয় তার মধ্যে আমাদের পুলিশ একটি। পুলিশে মত অপরিহার্য একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও বাংলাদেশ ভার্শন যে চারপাচ হাজার বছর আগের পুলিশ আইডিয়াটির মধ্যে নিৎকৃষ্টতম তার আলোচনা করতে নেচের অংশে আমন্ত্রন জানাব।
প্রাচীন গ্রীসে নগর রাজ্যে রাজার নিযুক্ত ম্যাজিষ্ট্রেটরা কৃতদাস'দের ব্যবহার করতো নগরের পুলিশিং কাজে। ম্যাজিষ্ট্রেট ও আদালতের সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য ক্রিতদাসদের ব্যবহারের ইতিহাস আরও অনেক সভ্যতায় পাওয়া যায়।
চৈনিক সভ্যতায় পুলিশং এর অস্তত্ব পাওয়া যায় অনেক পূর্ব থেকে। চীনে সে যুগে পুলিশ ব্যবস্থা অনেক ডেভলপ্ডও ছিল। স্থানীয় ম্যাজিষ্ট্রেট রাজার/সরকারের পক্ষে পারফেক্ট (ম্যাজিষ্ট্রেট) নিয়োগ দিতেন। সেই সময় চীনের পুলিশে নারী পুলিশের অস্তিত্ত্বও পাওয়া যায় যাদের মধ্যে অনেকের নাম আজও চাইনিজ পুলিশ বিভাগের কাছে গর্বের নাম। যেমন Lady Qu of Wuding. চিন থেকে এই সভ্যতা কোরিয়া ও জাপানে ছড়িয়ে পরে।
আধুনিক পুলিশের জন্মের খবর পাওয়া যায় বারশ শতকে স্পেনে, গ্রেন্ড ওফিসার্স ফর দ্যা কিংডম ফরাসি পুলিশের দায়িত্ব পালন করতো। The first police force in the modern sense was created by the government of King Louis XIV in 1667 to police the city of Paris, then the largest city in Europe.
বাংলাদেশে আমরা আজ যে পুলিশ দেখছি তার বয়স খুব একটা বেশি দিনের না। মাত্র ১৫১ বছর আগে ১৮৬১ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এ অঞ্চলে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল প্রণয়নের মাধ্যমে যাত্রা করে আমাদের বর্তমান পুলিশ। এ অঞ্চলে এর আগে ইউরোপ, চাইনিজের মত এত প্রাতিষ্ঠানিক রুপে পুলিশ না থাকলেও বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসেও পুলিশিং পাওয়া যাবে। তালুকদার, মাজমীদার, সামন্ত, রাজা, বাদশার অধিন লাঠিয়াল ও স্বসস্ত্র বাহিনী রুপে।
১৭৯২ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ বাংলা, বিহার, উড়িশ্যার জন্য পুলিশ রেগুলেশন জারী করলে জমিদারদের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রাখার বিধান রহিত হয়। আমাদের আগের গ্রেটার জেলা, মহকুমার আকারের একটি পুলিশ স্টেশন বা পিএস বা থানা ঘোষনা করা হয়। থানাগুলোর দায়িত্বে একজন দারোগা নিয়োগ করা হয়। তখন যোগাযোগ ও দূরত্বের কারনে দারোগাকে নিয়মিত বেতন দেয়া হত না বরং তাকে একটি চুক্তিতে দারগা নিয়োগ দেয়া হতো যে উদ্ধারকৃত চোরাই মালের দশ ভাগের একভাগ তাকে ভোগ করতে দেয়া হবে। আর একজন ডাকাত গ্রেফতার হলে দশ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হত।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিল্পবের অভিজ্ঞতায় ইংরেজরা বুঝে গেছিল সাদা চামড়ার সেনাবাহিনীর সাথে এ অঞ্চলের মানুষ দিয়ে একটা অস্ত্রধারী বাহিনী তৈরি করা দরকার যারা ভারতবাসীর সাথে মিশে থাকবে। সাহেবদের জী-হুজুর বাহিনী হবেন। তাই এদেশের অশিক্ষিত হোমড়া-চোমড়া, সবলদেহী যুবকদের নিয়ে তারা তৈরি করে এক খাকি-পোষাকের পুলিশ বাহিনী। বৃটিষদের এ অঞ্চল শাসনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল খাজনা আদায় করা ও কৃষক বিদ্রহ দমনের কাজে লাগা। এর রকম পাঁচ দশটি থানা এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছিল কালেক্টর, খাজনা আদায়ের দায়িত্ব ছিল এই কালেক্টরদের উপর।
কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায়ে পুলিশ বাহিনীই ছিল কালেক্টরের অন্যতম অস্ত্র। খাজনা আদায়ে ঐতিহ্যগত ভাবেই এ অঞ্চলের কৃষকেরা কখনও খরা, বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষের দোহাই দিয়ে। এ ক্ষেত্রে ইংরেজরা ছিলে আরও নিষ্ঠুর। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার এক কোটি লোক অনাহারে মৃত্যু বরণ করেছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এই দুর্ভিক্ষের বছরে ইংরেজদের খাজনা আদায় এক কানা কড়িও হ্রাস পায়নি।
তাদের হাতে পুলিশ ছিল, নিঃস্ব কৃষককে টেনে হেঁচড়ে সাহেবের সামনে হাজির করা বাংগালী পুলিশের জন্য ছিল হুকুমের ব্যাপার। হালের গরু বলেন, ক্ষেতের ফসল বলেন আর ভুখা কৃষকের যুবতী মেয়ে বলেন, সব কিছুই খাকি পোষাকের পুলিশ জওয়ানরা একটি হুকুমের বলে সাহেবের সামনে হাজির করতে পারত।
প্রতিষ্ঠার আদিকাল থেকেই ভারত বাংলার পুলিশ অত্যাচার, নির্যাতন, ঘুষ দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়। যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে স্থায়ী নেতিবাচক ভূমিকার ছাপ পড়ে গেছে। আজ পুলিশকে ভয় পায় না এমন লোক এদেশে নেই।
বাংলার জনগণকে অত্যাচারের মাধ্যমে খাজনা দিতে বাধ্য করা, সামান্য অপরাধে দেশীয় কাল চামড়া বলে নির্যাতন করা. স্বাধীকার আন্দোলনকারীদের নির্মম ভাবে দমন করা, অপরাধ কর্ম না করেও নির্দোষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কোন কাজটি পুলিশকে দিয়ে করানো হয় নি এর জন্ম লগ্ন থেকেই?রেগুলেশন অব ব্যাঙ্গল ১৮৬১ তে পুলিশকে অপরাধ দমন, অপরাধ প্রতিরোধ ও তা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আজ পুলিশের মুখ্য কাজ তথা আইন-শৃঙ্খলা রার্থ অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধী ও দুষ্কৃতকারীদের ধরে এনে বিচার-আদালতের সম্মুখীন করা। কিন্তু পিআরবি'র কোথাও পুলিশকে জনগণের বন্ধু হবার মত কিছু খুবই স্বাভাবিক ভাবেই ছিল না আজও নেই। নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের ক্ষমতার বাড়াবাড়ি, অসদাচারণ কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘণের প্রতিকার প্রাপ্তির কোন আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি এই আইনে ছিলন না ইংরেজদের সুবিদ্ধার্থেই, কারন পুলিশকে দিয়ে যা খুশি করাবে কিন্তু বিচার করা যাবে না।
পুলিশের এই ১৫১ বছরের ইতিহাস এর নিয়ন্ত্রনের উপর ভিত্তি করে দেখলে, দেখা যায় ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ছিল পুলিশের ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়।
দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানী ও স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পুলিশের দ্বিতীয় অধ্যায়। এর পর থেকে আজ ২০১২ সালের পুলিশ সম্পূর্ন নতুন, অচেনা শেষ অধ্যায়। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে অনুযায়ী তখন এখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসতেন বৃটেন থেকে বাকিরা বাঙালী কনস্টবল। তখন পুলিশের অফিসারদের নিয়ন্ত্রন সরাসরি কালেক্টর বা ডিস্ট্রিক ম্যাজিষ্ট্রেটের হাতে ছিল। সে সময়কার অনেক বেদনা দায়ক ঘটনার ইতিহাস থাকলেও গানের কথায়ও সেকালের তথ্য পাওয়া যায়, ইংরেজকালে হাটুর নিচে চাইলত গুলি, স্বাধীন দেশে ভাইয়ে ভাইয়ে উড়ায় মাথার খুলি।
পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমলের ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত পুলিশের নিয়ন্ত্রন বৃটিষ আমলের মত থাকলেও পুলিশকে সরকার যখন খুশি ব্যবহার করেছে। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশের অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের মত জেলা পুলিশ সুপার পদে সেনাবাহিনীর অফিসারদের ডেপুটেশন দেন, তখন যে আর্মির অফিসাররা প্রশ্ন তোলে, তারা পুলিশ সুপার হলে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছ থেকে এসিআর বা এনুয়াল কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট নিতে পারবে না (তাই তো, কিংস পার্টির সদস্যদের কন্ট্রলিং অথরিটি ডিএম হয় কিভাবে, ইগো বলে একটা বিষয় আছে না, দেশ জাতি যা হয় হউক, আগে চাই কমিউনিটি সুপ্রিমেসি)? আর তখন মার্শাল "ল" এ্যাডমিনিসট্রেটর এক আদেশের বলে যে, ডিসট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম)এর কাছ থেকে এসপি'দের এসিআর থেকে প্রত্যাহার করে নেয় আর সম্প্রতি বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ থেকে পৃথক হওয়ায় ডিসিদের আর থানা পরিদর্শন কোন মানে রাখে না। জেলা পুলিশের সাধারণ নিয়ন্ত্রণ এখনও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের হাতে আছে বললে ভুল হবে। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার পর ও ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের কোন পরিবর্তন না করার ফলে পুলিশের চেইন-অব-কমান্ড এ্যান্ড ব্যালেন্স বললে কিছু নেই। পুলিশ ভার্টিক্যাললী চিফঅব পুলিশ ছাড়া আর কোথাও কারো কাছে দায় বদ্ধ না।
মুক্ত বহঙ্গের মত পুলিশ। বর্তমানে যদি কোন ভাবে পুলিশের চেইন অব কমান্ড থাকে তবে তা সরাসরী যে রাজনৈতিক দলের সরকার তাদের উপর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে চালিত হয় যা মন্ত্রীর সাথে সংযুক্ত থাকে। এখানে পুলিশ তার আইনি দুর্বলতার জন্য যেমন পুলিশকে দিয়ে যা খুশি করাতে পারে তেমনি পুলিশ কৃতকর্মের নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ মাস্টার্স হ্যান্ডস স্টিক হতে ব্যস্ত থাকে। আইজিপি দৌড়ায় মন্ত্রীর দিকে আর সেকেন্ড অফিসার থানা সরকারী দলের সভাপতি।
এতিম এই বাহিনীটির কোন জনমূখি চেঞ্জ না করে সরকার ইচ্ছে মত পুলিশকে ব্যবহার করতে পারছে। সরকার ইচ্ছে করলে একই দিনের সকালে একজন, দুপুরে একজন, বিকেলে একজন, সন্ধা রাতে একজন, মধ্য রাতে একজন পুলিশ অফিসারকে পুলিশের প্রধান বানাতে পারেন। বাংলাদেশ পুলিশে কোন নীতির বালাই নেই। অন্য দিকে পুলিশ-প্রধান পদের আস্বাদ নিতে ঊর্ধ্বতন পদের কর্মকর্তাগণ সর্বদাই ক্ষমতাসীনদের তোষামোদে ব্যস্ত থাকেন। নিজ বিভাগের সুখ-দুঃখের বিনিময়ে, রাজনীতিবিদ ও তাদের চামচাদের খুশী করেন।
যে পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ হবে, অপরাধ দমন, নিয়ন্ত্রণ ও তদন্তকার্য পরিচালনা করেন, সেই পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যের নিয়োগ, বদলী, পদায়ন, শাস্তি-পুরস্কার বা তিরস্কারে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিবিদদের হাতে। আজিপিও জানেন না যে তার অধীন কোন জেলার এসপি কে হবেন কিংবা কখন কাকে প্রত্যাহার করা হবে। আর অধীনস্ত ইউনিট প্রধানদের পদায়ন, অপসারণে তার কোন কর্তৃত্ব নেই নেতার চাহিদার বাইরে। অন্য দিকে, অনেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদলী, শাস্তির ব্যাপারেও বাইরের হস্তক্ষেপ প্রচন্ড আকারে ধারণ করে। রাজনৈতিক লেজুড় বৃত্তি পুলিশ বিভাগের অফিসারদের স্বাভাবিক পরিণতি।
কিন্তু এই লেজুড় বৃত্তি কালক্রমে এত বেশী মহামারী রূপ ধারণ করে যে অনেক সাব-অর্ডিনেট কর্মকর্তা সুপিরিয়র কর্মকর্তাদের পুলিশ বিভাগ থেকে চিরতরে বিদায়ের কারণ হয়েও দাঁড়ান। পুলিশের এই অবস্থা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের পুলিশ বাহিনীতে আছে কি না, সন্দেহ আছে।
প্রকৃত পক্ষে আমাদের এই অঞ্চল বরাবরই আধুনিক যন্ত্রে ও তত্ত্বে, পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে অনেক পেছনে থেকেছে। ১৮৬১ সালে যখন ভারতে পুলিশ বাহিনীর প্রবর্তন করে, ১৮২৯ সালে ইংরেজরা তাদের নিজ বাসভূমে মেট্রোপলিটন পুলিশের মত আরও আধুনিক কনসেপ্ট ব্যবহার শুরু করে। ভারতের পুলিশকে পুরোপুরি ভাবে সরকারের তাবেদার করা হলেও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ ছিল সরকারের ভাল মন্দ কাজ-কর্মের দায়ভার থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন|আইনি কাঠাম।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।