আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
“জ্বি হুজুর মহাশয়” বলে শকুনের পিঠ চুলকে দেয় উকুনদের সর্দারনী। আরামে শকুনের ঘুম আসি আসি করছে। এবার তবে ঘুমের পালা। গোটা দুয়েক দোয়েল হজম করার পর পিঠ চুলকে যৌন কামনা চরিতার্থ করে , আরামে চোখ বুজে বাবুই পাখীর বাসায় স্বপ্ন চোখে এবার তবে ঘুম হোক।
ঐতিহাসিক এক মর্যাদায় সবুজ বৃক্ষে বাস করে অদ্ভুত সব কিচির মিচির পাখী। নিয়মিহীনভাবে নানা জাতের পাখীর অপরুপ রাত-দিন যায়। বাবুই পাখীর তাল গাছে বাসা বাঁধার নিয়ম নেই এই গল্পে, তাই বাবুই, দোয়েল শ্যামা,কাক অথবা কোকিল এই ছোট গাছের আস্তরনে স্বপ্ন বুনে। কত শিরোনামহীন গান তারা তাদের বৃক্ষের বাগলে বেঁধে রেখেছে। পাখীদের স্বপ্নপুরীতে তাই হয়ত কাঠঠোকরাও ঠোকর দেয় না।
সবুজ গাছের ঢালে বাসা বেঁধে বসে আছে অদ্ভুত এক শকুন। পাতায় বসত করা শকুনে উকুনরা শকুনের পা চাটার অধিকারে গাছে স্থান পেয়েছে। পা চাটা মানে কেবল জিহবা বের করে পায়ে ভিজিয়ে দেয়া না। পা চাটারও বেশ সুসংবদ্ধ একটি সংবিধান আছে। হঠাৎ করেই শকুনের ঘুম চটে গেল দুষ্টু চুড়ুইয়ের গানে।
ভীষন রেগে গিয়ে উকুন সর্দারনীকে ডাকলেন “কে যেন আমার চলার পথে বাঁধা দিচ্ছে, কিছু করুন”। সুযোগ পেলেই উকুনরা গু চাটতে পারে, এতো একেবারে হাত চাটার সুযোগ। ধরে আনা হল দুষ্টু চুড়ুইকে। জবাই করা হল একেবারে সযতনে, ধীরে ধীরে। নাহ শকুনের খাবারের ম্যানু হবার যোগ্যতা চুড়ুইয়ের নেই।
বরং নরম শরীরের খ্যাতির জন্য সান্ধকালীন ঘুমের বালিশ হতে পারে। হলও তাই। নাক ডেকেই চলেছে শকুন।
শকুনরা একেবারে হঠাৎ করে পাখীদের শাষক হয়নি। কবিদের ভাষায়তো বলা হয়েছে রাত পোহালেই পাখীরা শব্দ করে।
এত উচ্ছলতায় শকুন চেপে বসেছে পাখীদের স্বার্থহীন বনভোজনিক মেলামেশায়। কাক আগে বেশ কা কা করতো। ইদানীং একেবারে চুপ হয়ে ঘরে বসে আছে। আদুরে চুড়ুইর মৃত্যূতে বৃক্ষপাড়ায় ততক্ষনে শোকের মাতম উঠেছে। চুপচাপ কাকের কান্নার শব্দও বেশ কর্কশ।
ঐক্যের বড়াই করা কাক কেবল কর্কশ কান্নাই করতে পেরেছে সেদিন। কাকের দু ডানায় আশ্রয় নেয়া বাচ্চা দুটির চোখে বোকা ভয়ও ছিল। শালিক পরিবারের একমাত্র কণ্যা তখনও ঘরে ফেরেনি। মানুষের ভাগ্য ফেরি করা শালিক পরিবারের পত্নী মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে বসে ভাবছে “সন্তান যদি বাড়ী না ফেরে তবে মনুষ্য প্রজাতির সকল কুসংস্কার ভেঙ্গে যাবে”।
“যাক ভেঙ্গে, বেঁচে থেকেই বা কি লাভ” চেঁচিয়ে উঠলো শালিক পতি।
জড়াজড়ি করে কাঁধতে থাকে শালিক দম্পতি।
শালিক পতির কথা যেন বিধাতা শুনেই ফেললেন। পরদিনই অবাঞ্চিত এক ঢালে পাওয়া গেল আদরের শালিক কণ্যাটির নিথর দেহ। এবার তারা আর জড়াজড়ি করে কাঁধলো না। নির্বাক হয়ে রইল।
উকুনরা এই ব্যাপারে বেশ বাতিব্যস্ত হয়ে ছিল। আশু সমাধানের অঙ্গিকার করে পাখপাখালীদের একটি সম্মলেনও করেছিল।
ঘুম ভেঙ্গেছে শকুনের। কিছু উকুন কেবল বিয়ারে চুমুক লাগিয়েছিল। কিন্তু শকুনের জেগে যাওয়ায় তা আপাতত পজ করে রাখতে হয়েছে।
আর যাই হোক শকুনের সামনে ন্যাংটো নাচা যায় কিন্তু বিয়ারে চুমুক অসম্ভব। উকুনদের নানা রকম পদ এবং মর্যাদা রয়েছে। ক্ষমতাবান এক উকুনকে ডেকে মাননীয় শকুন “বৃক্ষ পরিদর্শনের ইচ্ছা পোষন করলেন”
শকুনের ইচ্ছায় বৃক্ষে কম্পন আসে। হইহই রইরই পড়ে যায় পুরো বৃক্ষে। শকুনের আগমনে শাখায় শাখায় ঢালে ঢালে পাতায় পাতায় রঙ লাগে।
কেবল রঙ লাগে না পাখীদের মনে কিংবা দেহে। কর্কশ কন্ঠি কাক শকুনের আগমনের খবর শুনে মলত্যাগ করে দিল নিচে দাড়িয়ে প্রশ্রাব করা এক নেংটি কুকুরের গায়ে। “যা ব্যাটা উচিত শিক্ষা দিছে” বলে কাক তার ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু উপায় নেই, স্বয়ং শকুন আসছে আজ।
এমনিতেই শকুন কিংবা উকুনের যোগ্যতা নিয়ে যতই প্রশ্ন থাকুক তাদেরকে হাতের কাছে পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার।
কিন্তু আজ ঘটনা ভিন্ন। চড়ুইয়ের মৃত্যূর ভুত এখনও বৃক্ষের সকল পাখীর মাথায় খেলা করছে। তার সাথে অছে ছোট্ট শালিক কণ্যার মৃত্যূসংবাদ। সবুজবৃক্ষ যেন মৃত্যূ বৃক্ষ হয়ে গেছে। এর আগে দোয়েলের লাশ হয়ে শকুনের খাদ্যনালীতে প্রবেশ করার ঘটনা এখনও পাখী সমাজে জানাজানি হয়নি।
সাঁই সাঁই শব্দে উকুন সাগরেদ নিয়ে শকুন বেরিয়ে পড়েছে বৃক্ষদেশে। শকুনকে শ্রদ্ধার সাথে স্যালুট দেয়নি অপদার্থ বাবুই পাখী। সারা জীবন ঘর বানালেই কি চলবে। মহামান্যের পাওনা শ্রদ্ধাটুকুতো দিতে হবে। শ্রদ্ধা না দেয়ার অপরাধে কোন শাস্তি পেল না বাবুই পাখী।
কিন্তু একদিন পরেই বাবুই পাখী তার একটি পাঁ হারালো কোন এক অজানায় দূর্ঘটনায়।
শকুন এবং উকুনদের বৃক্ষ উন্নয়ন শীর্ষক মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হল সন্ধ্যার পর কোন পাখী কোন ক্রমেই গান গাইতে পারবে না। কারন সন্ধ্যার পর শকুন এবং উকুনদের লাল পানি পানে পাখীদের ন্যাকি সুরে গানে কিছুটা সমস্যা হয়। ক্ষমতা বলে নতুন করে করা হল পাখী অধিকার আইন নামের নতুন আইন। ।
সুষ্ঠু ধারার পাখীর ব্যবহার সমৃদ্ধ করার জন্য শকুন তার উকুনদের নির্দেশ দিলেন যাতে করে এই আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। বৃক্ষের শাখা প্রশাখার ব্যাপ্তি এবং সবুজ পাতার উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করলেন শকুন। নিজে কৃতজ্ঞতায় নিজেকেই ধন্যবাদ জানালেন প্রকাশ্যে। উকুনরা আবার পেয়ে গেল গা চাটার সুযোগ। গা চাটা পর্ব শুরু হল ঠিক বসন্তে পহেলা দিনে।
বেশ আরাম করেই গান গাইছিল বসন্তের পাখীরা। উকুনরা একেবারে হামলে পড়লো। খুন হল দোয়েল,কোয়েলসহ বেশ কিছু পাখী।
আবার পাখী সমাজে কালো ব্যাজ ধারন। পাখীরা কেবল সুখের গান গাইতে জানে, স্বজন হারিয়ে শোকের গান তারা পারে না।
সংগীত জগতে এ বিরাট অভিশাপ। শকুন এবং উকুনরা ঠিকই আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসে আছে বৃক্ষের জলশাঘরে। প্রজাপতিকে নর্তকী বানিয়ে শরীরে সবটুকু সুধা ঢেলে দিচ্ছে উকুন সমাজের সামগ্রিক অংশ। বানরের কানের ময়লার কারনে পাখীদের শোক কিংবা শকুনদের উৎসবি গান কোনটাই তার কানে যাচ্ছে না। আপাতত সে মগঢালে উঠে কানের ময়লা সরানোর চেষ্টা করছে।
সুযোগ পেলে অবশ্য পাখী সমাজের শোক নিয়ে একটা দীর্ঘ বক্তিতা দেয়ার ইচ্চা আছে তার। আগে কানের ময়লা নিয়ে কারসাজি করাটা জরুরী। ময়লা পরিস্কার না হোক, অসহনীয় আরামটাতো পওয়া যাচ্ছে।
কাক প্রতিবারই কর্কশ কন্ঠে ধার দিয়ে আসে। ক্রমেই মরতে থাকা পাখীদের জন্য কাকের কর্কশ কন্ঠে হঠাৎ করেই বেজে উঠে।
বানর যখন কানে আঙ্গুল চালান করছে তখন পাখপাখালীরা ভয়ে অস্থির। বেঁচে থাকা পাখীরা ঘরের কোনায় কেবল চলে যাওয়া প্রিয়তমা অথবা প্রিয়তমের জন্য আর্তনাদ করা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না।
আজকে সূর্যটা বিশেষ কিছু দিচ্ছে না সেই একগেঁয়ে গরম ছাড়া। বৃক্ষ নাগরিকদের ঘুম ভাঙ্গলো কাকের কর্কশ কন্ঠের বিশ্রী স্লোগান শুনে। নাহ ! মিছিল ছিল না কেবল একা কন্ঠের স্লোগান ছিল।
“পশু শকুনের ফাঁসি চাই” “শকুন উকুন সবুজ বৃক্ষের বিষ” অথবা “শকুনদের মৃত্যূ হোক, বৃক্ষের জয় হোক” স্লোগানগুলো কাকদের দলে কয়েকটি পাখীকেও ভিড়িয়েছিল। কর্কশ কন্ঠে বার বার শকুনের নাম শোনার পর শকুনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। উকুনদের ডেকে নির্দেশ দেয়া হল।
উকুন সর্দারনী সামান্য বিচলিত। গোটা বৃক্ষের সবাই ক্ষেপে গিয়েছে।
সবুজ পাতাগুলো লাল হয়ে ফ্যাকাসে বর্ণে বর্ণিত। বৃক্ষের বাম পাশে শুকিয়ে যাওয়া ঢালে পড়ে আছে স্লোগান দেয়া রক্তাক্ত কাক। শকুন তখন পাশের বৃক্ষের রাজা মশাইয়ের সাথে সাবান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ব্যস্ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।