আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টির দেখা নেই; উপকূলীয় এলাকায় পানীয় জলের সংকট তুঙ্গে

সংবাদ কর্মী দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ার ফলে এবং পানিতে লবনাক্তের পরিমান অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের কোলঘেঁষা উপকূলীয় অঞ্চলের শিশু, নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কিশোরীসহ কয়েক লক্ষ মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। এমনকি গোসল, রান্না কিংবা কোন কিছু ধোঁয়ার জন্যও পানির ব্যবস্থা নেই, আর খাবার বিশুদ্ধ পানির কথাতো অনেক দূরে থাক। সারা অঞ্চল জুড়ে এখন যেন পানির জন্য হাহাকার চলছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত খুলনা জেলার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা, বাগেরহাট জেলার মংলা ও শরণখোলা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলা শ্যমনগর ও আশাশুনি উপজেলায় তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় এই জনপদের মানুষ বৃষ্টির পানি ধরে খেতে অভ্যস্ত।

নলকুপের বিশুদ্ধ পানি এই অঞ্চলের মানুষ কোনদিনই পায় না। সে কারণে হয় তাঁরা বৃষ্টির পানি পান করে নতুবা তাঁরা সংরক্ষিত পুকুরের পানি পান করে। তাদের হিসাব মতে, বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে প্রায় আশ্বিন মাস পর্যন্ত মানুষ সরাসরি বৃষ্টি পানি ধরে পান করে। আশ্বিন থেকে পৌস মাস পর্যন্ত তাঁরা মাইট বা রিজার্ভ কন্টেইনারে জমিয়ে রাখা পানি অথবা সংরক্ষিত পুকুরের পানি পান করে। পৌসের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখ পর্যন্ত এ অঞ্চলে চলে পানির সংকট।

তারপার মাঝে মাঝে বৃষ্টি শুরু হলে আবার তাদের পানি সংকট কেটে যায়। কিন্তু এবার দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির জন্য এ অঞ্চলের মানুষের এখন বাঁচা দায় হয়ে পড়েছে। কারো অজানা নয় আইলায় খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা উপজেলার এবং সাতক্ষীরা জেলা শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় ১৩টি ইউনিয়ন নোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। এতে প্রায় এক লক্ষ একর জমি জোয়ারের পানিতে নিয়মিত ডুবে থাকার ফলে সহায়সম্বল হারিয়ে এলাকার মানুষ আশ্রয় নেয় ভেড়িবাঁধের উপর। দুর্গত এলাকা থেকে স্বাধু পানির মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

গরু ছাগল নেই বললেই চলে। লবন পানি সইতে না পেরে গাছপালাগুলো মরে আইলা উপদ্রুত এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে স্বাধু পানির উৎসগুলোরও কোনটির লবণাক্ততা বেড়ে তা পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আবার কোনটির পানি শুকিয়ে দুষিত হয়ে গেছে অথবা সেই পুকুরের কর্দমাক্ত কাঁদায় এখন খেলা করছে শিশুরা। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলারও একই অবস্থা।

মোংলা উপজেলার চিলা, চাঁদপাই, সুন্দরবন ও মিঠাখালী ইউনিয়নের মানুষও বৃষ্টি পানি ধরে পান করতে অভ্যস্ত। সেখানকারও পানির উৎসগুলোও শুকিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাবে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কথা হয় খুলনার একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা শেখ জার্জিস উল্লাহর সাথে, যিনি দীর্ঘ দিন এই অঞ্চলের সুপেয় পানি ব্যাবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জানান, কিছু এনজিও তাদের সাধ্যমতো এই এলাকায় রিজার্ভ টেঙ্কি সরবরাহ করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমান খুবই অপ্রতুল।

আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনেক দিন বৃষ্টি না হওয়ার ফলে রিজার্ভ টেঙ্কির পানি শেষ হয়ে গেছে। ফলে মানুষ এখন মোংলা দিগরাজের পার থেকে ড্রাম ভরে পানি কিনে খাচ্ছি। কিন্তু এভাবে আর কত দিন। আর যার পানি কিনবার সামর্থ নাই তার কি অবস্থা! সে জন্যে দুষিত পানি পান করারয় ইতোমধ্যে মোংলা অঞ্চলে ডাইরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের কোলঘেঁষা উপকূলীয় এ অঞ্চলের জন্য বর্তমান সরকার সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধান করবে বলে সকলের প্রত্যাশা।

কারণ এবারের সুপেয় পানির সংকট বিছিন্ন বা নতুন কোন ঘটনা নয়। এছাড়া আইলা ও সিডরের পর প্রায় সব পুকুরগুলো এখনও পর্যন্ত অকেজ হয়ে আছে। কিন্তু প্রত্যেকবারই এই পরিস্থিতির শিকার হতে হয় এই জনপদের মানুষের। অপরদিকে আইলা দুর্গত এলাকায় সরকার ও কিছু এনজিও খাবার পানির ব্যবস্থা করলেও চাহিদার তুলনায় তা অরেক কম। এ প্রসঙ্গে কথা হয় দাকোপ উপজেলার লাউডোব ইউনিয়নের বাদামতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিয় রায়ের সাথে।

তাঁর ভাষায়, অনেক মানুষ নিরুপায় হয়ে নদীর নোনা জল পান করছে। কেউ কেউ আবার জলের তৃষ্ণা সহ্য করতে না পেরে নৌকায় যেয়ে নদী দিয়ে যাওয়া বার্জ বা স্টিমার থেকে চেয়ে মাঝে মাঝে জলের জোগার করছে। এছাড়া জানা যায় দাকোপ উপজেলার কামারখোলায় পঞ্চাশ পয়সা দরে পানির লিটার বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। মূল প্রতিবেদন --  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।