বাবেল বা ব্যবিলনে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল মধ্য-এশিয়া থেকে আর্যগণ সে সভ্যতা বহন করে উপমহাদেশে নিয়ে আসে। আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম "বেদ"। তাই আর্য সভ্যতাকে বৈদিক সভ্যতাও বলা হয়ে থাকে। ধর্মগ্রন্থ বেদের চারটি খন্ড বা অংশ রয়েছে, যার একটি খন্ডের নাম আয়ুর্বেদ।
আয়ুর্বেদ এর আয়ু অর্থ জীবন আর বেদ অর্থ বিজ্ঞান।
অর্থাৎ যে বিজ্ঞানে মানুষের আয়ু বা জীবনী শক্তির উৎস, শক্তির ক্ষয় বা অপচয়, অপচয়ের কারণ এবং অপচয় হতে রক্ষা করে জীবনকে দীর্ঘায়িত ও সুস্থ রাখার জ্ঞান সম্পর্কে অবগত করায়, তাকেই আয়ুর্বেদ বলে।
আয়ুর্বেদ মতে পঞ্চভূত তথা ক্ষিতি, অপ, তেজঃ, মরুৎ ও ব্যোম এর সমন্বয়ে প্রকৃতি জড়, জীব ও উদ্ভিদ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্যের সৃষ্টি হলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া দেহে তিন প্রকার রস পদার্থের যথা- বায়ু, কফ ও পিত্ত কথা বলা হয়েছে।
আর বাবেল ও মিশরীয় সভ্যতা ইউনানে স্থানান্তরিত হয়ে বিভিন্ন মনীষীগণের মাধ্যমে চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।
আরবে ইসলামের আবির্ভাবের পর মুসলমানগণ যখন তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছিল তখন মুসলমানদের মাধ্যমে ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান এই উপমহাদেশে আসে। মুসলমানগন ১০০০ বছর উপমহাদেশ শাসন করে এবং এই সময়কালে আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সমানতালে গবেষণার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধণ করতে থাকে।
ইউনানী ও আয়ুর্বেদের শিক্ষার্থী বা এই বিজ্ঞানের সাথে জড়িত সকলকে একটি প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হতে হয়, তা হল ইউনানী ও আয়ুর্বেদের মধ্যে পার্থক্য কি??
এই প্রশ্নের প্রচলিত উত্তর হল- যাহা জল তাহাই পানি অর্থাৎ ইউনানী ও আয়ুর্বেদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আসলে কি তাই ?? ইতিহাস থেকে আমরা খুব সহজেই তিনটি পার্থক্য পেয়ে গিয়েছি...
১) চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎপত্তি মুলতঃ বাবেলে কিন্তু ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান ইউনানী চিকিৎসা নামকরন হয় গ্রীসের ইউনান নামক প্রদেশের নামে আর আয়ুর্বেদ হল আর্যদের ধর্মগ্রন্থের নাম।
২) আয়ুর্বেদ মতে পঞ্চভূত তথা ক্ষিতি, অপ, তেজঃ, মরুৎ ও ব্যোম এর সমন্বয়ে প্রকৃতি জড়, জীব ও উদ্ভিদ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে আর ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে বায়ু, পানি, আগুন, মাটি দ্বারা মানবদেহ গঠিত।
৩) আয়ুর্বেদ মতে, দেহে তিন প্রকার রস পদার্থ যথা- বায়ু, কফ ও পিত্ত রয়েছে আর ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে, দেহে চার প্রকার রস পদার্থ রয়েছে এরা হল-রক্ত, শ্লেষ্মা, পিত্ত ও অম্ল।
৪) ঔষধ প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এদের নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে।
৫) ভেষজ শোধনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-কানুন রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।