আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স ৪১ বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের গনতন্ত্র এখনও মাতৃক্রোড়ে রয়ে গেছে । দুটি সামরিক শাসনামল ছিল গণতন্ত্রের চরম দুর্দিন । বাংলাদেশের জনগণ গনতন্ত্রপ্রেমী। আন্দোলনে জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে এ দেশে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হয়েছে।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিজয় তরান্বিত হয়েছিল প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে । গণতন্ত্রকে মহীরূহে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল বাংলাদেশের সকল রাজনীতিবিদ । সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গঠিত হয় অভিনব পন্থার তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি’ ৯১ তারিখে অনুষ্ঠিত সেই প্রথম নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবেই সম্পাদিত হয়, যদিও কারচুপির মৃদু অভিযোগ ছিল। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের উদ্ভাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এ ধরনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বেশ সুনাম অর্জন করে।
সংসদ ছিল সরকার ও বিরোধী দলের কার্যকর অংশগ্রহণে উজ্জীবিত । দেশ চলছিল অনেকটা সৌহার্দপূর্ণ গণতন্ত্রকে কেন্দ্র করে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের সেই সুসম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আবার প্রকট হয়ে ওঠে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতা লাভের প্রবল স্পৃহা । মাগুরার উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় অভিনব আবিস্কৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানভুক্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু রাখার আন্দোলন ।
ক্ষমতাসীন দল বিরোধীদলের সেই দাবীকে প্রত্যাখ্যান করে । শুরু হয় সরকার পতনের আন্দোলন আর সংসদ বর্জন । হরতাল, অবরোধ ও জ্বালাও-পোড়াও -এর বলয়ে ঢুকে পরে রাজনীতি । লাগাতার হরতালে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জনজীবন । নিরুপায় হয়ে সরকার বিরোধী দলকে সংসদে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশের আহ্বান জানালেও সাড়া দেয় না বিরোধী দল।
১৯৯৬ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলের অংশ গ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে আবার সরকার গঠন করে এবং উক্ত বছরেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল গৃহীত ও পাশ হয়।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতা হারায় বিএনপি । সুদীর্ঘ একুশ বছর পর আওয়ামীলীগ-এর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় । অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগন বি এন পিকে ক্ষমতার মসনদে বসায় । ক্ষমতায় আরোহণ করে জনগণের কাছে করা নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের কথা ভুলে যান আমাদের রাজনীতিবিদেরা।
তবে পুনরায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখতে তারা এতটুকু ভুল করে না । বি এন পি সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির চাকুরীর মেয়াদ ৬৭ বছর করে । শুরু হয় এম এ আজিজ এবং কে এম হাসান ইস্যু নিয়ে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগের আন্দোলন । দেশ আবার রাজনৈতিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠে । এ সুযোগে ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের দোহাই দিয়ে দুবছর ক্ষমতায় থাকে।
১/১১ পরিস্থিতির জন্য আমাদের কলুষিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিই দায়ী। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছে । এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের বক্তব্যকে অবজ্ঞা করছে সরকার। বি এন পি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নতুন সঙ্কট । সরকার এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
এই ইস্যুকে সামনে নিয়ে বিরোধীদল রাজপথ গরমে লিপ্ত হয়েছে । মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের জন্য আহ্বানের করেছেন। যদি সরকার এবং বিরোধীদল পারস্পারিক আলোচনার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু মীমাংসা করতে না পারে, তাহলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ অসীম তমশায় নিমজ্জিত হবে এটা বলাই বাহুল্য ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।