একটা হাতি হঠাৎ লোকালয়ে এসে পড়লো।
হাতি আসছে! হাতি আসছে!! বলে ভয়ে সবাই ছুটতে লাগলো।
হাতিটাও তেড়ে আসছিল। খুব ক্ষুধার্ত। চারদিকে কেবল খাবার খুঁজছিল।
হাতির খাবার খোঁজা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। ভাবলো, এই বুঝি হাতিটা ধরে ফেললো, আর শুঁড় পেঁচিয়ে আছাড় মারলো। বন্য হাতি, পাগলা হাতি- কখন কি করে ফেলে তার কি ঠিক আছে?
তাইতো হাতি যেই না একদিকে যাচ্ছে অমনি সবাই পালাতে লাগলো। আবার আরেকদিকে যাচ্ছে, তারাও পালাতে লাগলো।
সবাই দিক বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছুটছে আর বলছে, হাতি আসছে, হাতি আসছে!
তাদের কথা শুনে হাতি না দেখেই অন্যরাও ছুটতে লাগলো।
রাস্তাঘাট সব খালি হয়ে গেলো।
হাতিও বেশ মজা পেলো।
সে আরো ভয় দেখাতে তেড়ে যেতে লাগলো।
কিন্তু একটা ছেলে ঠিক উল্টো কাজ করলো।
ছোট্ট ছেলে।
বেশ সাহসী। সে আর সবার মতো ছুটলো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো। সবাই কেন দৌঁড়াচ্ছে? হাতির কথা বলছে ওরা, হাতিই বা কোথায়?
ছেলেটা তো খুব ছোট। আগে কখনো হাতি দেখে নি।
তাই কৌতুহল নিয়ে হাতি খুঁজতে চারদিকে দেখতে লাগলো।
ঐ যে দূরে একটা বড় কি যেন আসছে। কি বড় বড় কান! পাগুলো এত্তো মোটা যেন গাছের গুড়ি! ও বাব্বা কী বড় নাক! এক্কেবারে পায়ের কাছে গিয়ে ঠেকছে। নাকের দু পাশে বড় বড় সাদা ঐ দুটো কী? পাথরের কোন চাকু নাকি? আরে এটাই কি হাতি? নাকটা কেন বার বার ওঠাচ্ছে আর নামাচ্ছে।
ছেলেটি অবাক হয়ে শুধু দেখতেই থাকলো।
হঠাৎ হাতিটার নজর পড়লো ছেলেটার দিকে। চমকে ওঠলো। এতটুকু পুঁচকে ছেলে ওকে ভয় পাচ্ছে না। সবাই ওকে দেখে ভয়ে পালাচ্ছে, আর ছেলেটা কিনা দাঁড়িয়ে আছে? বেশ অবাক হলো।
এবার হাতিটা ছেলেটার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো।
কিন্তু ছেলেটা দাঁড়িয়েই থাকলো। হাতি তখনো বেশ খানিকটা দূরেই।
হাতির কাণ্ড দেখে ছেলেটা অবাক হচ্ছিল, কেন ওর দিকে তেড়ে আসছে? কী করেছে ও?
আর হাতি খুব রেগে যাচ্ছিল, কেন ছেলেটা এখনো ওকে ভয় পাচ্ছে না?
ছেলেটা ওদের বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। দেখতে দেখতে হাতিটা খুব কাছে চলে এলো, ওকে প্রায় ধরে ফেলবে। ছেলেটা তখন দৌঁড়ে বাসায় ঢুকে গেলো।
হাতি ধরতেই পারলো না। তারপর বারান্দার রেলিং-এ দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো, আর হাতি কী করছে দেখতে লাগলো।
ছেলেটাকে হাসতে দেখে হাতির মেজাজ আরো গরম হয়ে চরমে ওঠলো। প্রচণ্ড আক্রোশে হাতি ফুশ করে শুঁড় দিয়ে রেলিং-এ একটা বাড়ি মারলো।
-ও আল্লাহ গো........।
চিৎকার দিয়ে ছেলেটা মেঝেতে পড়ে যায়। চিৎকার শুনে ওর আম্মু দৌঁড়ে এসে দেখেন, ছেলেটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
ভয় পেয়েছে, ভয় পেয়েছে!! হাতি খুশিতে আটখানা।
হাতি আবার চলতে থাকে। ওর খুব ক্ষিধে পেয়েছে।
খাবার খুঁজছে চারদিকে। কলাগাছ ওর খুব পছন্দের। খেতে খুব মজা পায়। কিন্তু কোথায় পাবে কলাগাছ? রাস্তার আশে-পাশে অনেক ঝোঁপ-ঝাড় আছে, তবে কলাগাছ নেই।
অনেকক্ষণ হেঁটে চললো হাতি।
খুব কান্ত। ক্ষুধায় পেট চৌচির। কোথাও কোন খাবার পাচ্ছে না। বসে পড়লো সে।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হাতি আবার ওঠে দাঁড়ায়।
খাবারের খোঁজে চলতে লাগলো।
কলাগাছ! কলাগাছ!! ঐযে একটা কলাগাছ দেখা যাচ্ছে!
হাতি প্রায় দৌঁড়ে কলাগাছটার নিকট চলে গেলো। এত ক্ষুধা আর যেন তর সইছে না।
হাতি শুঁড় দিয়ে যেই না কলাগাছটা পেঁচিয়ে ধরতে গিয়েছে, অমনি দেখে গাছটা হাওয়া।
কোথায় গেলো, কোথায় গেলো!! হাতি বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেলো।
গাছটা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না।
হতাশ হয়ে হাতি আবার চলতে লাগলো।
কিছুদূর যাওয়ার পর হাতি দেখে রাস্তার একপাশে দুটো কলাগাছ। আনন্দে মন ভরে গেলো। ভাবলো, এবার দুটো কলাগাছ ! আহ্ পেট ভরে খাবো ! কী মজা হবে !
আনন্দে লাফাতে লাফাতে গাছ দুটোকে ধরতে গেলো অমনি উধাও হয়ে গেলো।
কী হলো? কোথায় গেলো গাছ দুটো? আর কোথাও খুঁজে পেলো না।
আবার চলতে থাকে হাতি। ভাবছে আর ধীরে ধীরে চলছে। কেন এমন হচ্ছে? কোথায় পালিয়ে যাচ্ছে গাছগুলো।
হঠাৎ দেখে একটা কলাবাগান।
এবার এত খুশি না হলেও ভাবছে, কয়টা গাছ আর পালাতে পারবে? একটা না একটা আমি খেয়েই ফেলবো।
তারপর লাফ দিয়ে একটা গাছ ধরতে গেলো। না, ধরতে পারলো না। আবার অন্যটা। সেটাও না।
যে গাছই ধরতে গেলো সেটাই হাওয়া। এক সময় দেখলো পুরো বাগানই উধাও হয়ে গিয়েছে।
হাতি খুব ভয় পেলো। ক্ষুধায় অস্থির। কিন্তু খাবার না পেলে তো মরেই যাবে।
সে খুব চিন্তিত। ভাবছে, কেন এমন হচ্ছে?
হাতির মনে পড়ে গেলো ছেলেটার কথা। ছেলেটাকে ভয় দেখানোর কারণেই কি এমনটা হচ্ছে? হায় আল্লাহ! আমি কেন ওকে ভয় দেখালাম? খামাকাই ভয় দেখিয়েছি। ওর তো কোন দোষ ছিলো না। নাহ্! আর এমন করবো না।
আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও। আমি ওর বন্ধু হয়ে যাবো।
হাটতে লাগলো আর মনে মনে আফসোস করতে লাগলো হাতি। এমন সময় দেখে আরেকটি কলাবাগান। কী সুন্দর গাছগুলো।
কিন্তু হাতি এবার ভয় পাচ্ছে। যদি গাছগুলো পালিয়ে যায়, বাগানটা উধাও হয়ে যায়। ও একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে আর মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে।
হাতি আস্তে আস্তে একটা গাছকে শুঁড় দিয়ে পেঁচাতে গেলো। সত্যি সত্যি এবার গাছটা ধরে ফেললো।
পেট ভরে কলাগাছ খেয়ে এবার তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। খুব খুশি হয়ে শুকরিয়া আদায় করলো। আবার ছেলেটার কথা মনে পড়ে গেলো। হ্যাঁ, ছেলেটাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং বন্ধু বানাতে হবে।
হাতি হাটতে থাকে।
খুঁজতে থাকে ছেলেটার বাসা। একসময় পেয়ে যায়। তখন বিকেল হবে হবে। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে।
হাতি ছেলেটার বাসার সামনে বসে পড়ে।
এভাবে কিছু সময় কেটে যায়।
প্রতিদিন বিকেলে ছেলেটি খেলতে বাইরে বের হয়। সেদিন বিকেলে বাইরে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতেই দেখে মস্ত বড় এক হাতি বসে আছে। ছেলেটা ভড়কে যায়। চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, হাতি.... হাতি....... আম্মু আম্মু দেখে যাও।
ওর আম্মু দৌঁড়ে এসে দেখেন দরজার সামনে বসে আসে এক বিরাট হাতি ।
-'আম্মু আম্মু, এ হাতিটা না ঐ হাতি। আম্মু হাতিটা আমি রেখে দেব। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ' ছেলেটি বলে ওঠে।
আম্মু হেসে ওঠেন। বলেন, দূর বোকা, হাতি কি আমরা পালতে পারবো? এটা তো বন্য হাতি। পোষা হাতি হলে একটা কথা ছিলো। আবার সেক্ষেত্রেও মাহুত লাগবে।
-আম্মু মাহুত কী।
-যে হাতি দেখাশুনা করে, হাতি চালায়, সেই মাহুত।
-আম্মু, তাহলে আমিই মাহুত হবো।
হো হো করে হেসে দিলেন আম্মু। বললেন, তুমি এতো ছোট যে কিভাবে তুমি ওকে চালাবে, পালবে। আর ওকে পোষই বা মানাবে কেমনে?
-নাহ, আমি পারবো।
দেখো, হাতিটা চুপচাপ বসে আছে। এখন আর ভয় দেখাচ্ছে না। দেখ দেখ আম্মু, আমি হাতিটা ধরছি। এ কথা বলে দৌঁড়ে ছেলেটি হাতির কাছে চলে যেতে লাগলো।
আম্মু ভয়ে আঁতকে ওঠে চিৎকার দিয়ে বললেন, না না যেও না...সোনামানিক।
তোমাকে লাথি মারবে, শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে মেরে ফেলবে।
আম্মুও দৌঁড়ে ওকে ধরতে গেলেন এবং ভীষণ ভয় পেলেন, যদি হাতিটা ওদের দুজনকেই শুঁড় দিয়ে আছাড় মারে।
ছেলেটা ঠিক ঠিক হাতির গায়ে হাত দেয়। কিন্তু হাতি কিছুই করে নি।
আম্মু ভয়ে শিহরিত।
ততক্ষণে আম্মু ওর হাত ধরে ফেলেন। ছেলেটা বলে, না না, ছাড়ো আম্মু- দেখলে আমাকে কিছুই করে নি।
আম্মুর কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে এবার হাতির শুঁঁড়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আম্মুও ওকে ধরতে শুঁড়ের সামনে চলে যান।
কী আশ্চার্য, হাতি কিছুই করে নি।
আম্মুর এবার ভয় কেটে যায়।
ছেলেটা শুঁড়ের ওপর হাত দেয়। হাতি আস্তে আস্তে মাথা তুলে ওকে দেখে।
-আম্মু, ও আমার বন্ধু।
-ঠিক আছে তাই হবে।
আম্মু বললেন।
-আম্মু ওকে আমি টেপা বলবো।
আম্মু হেসে দিলেন। বললেন, আচ্ছা।
ছেলেটি এবার হাতিটার দিকে ফিরে বলে, টেপা, টেপা!
টেপা মাথা তোলে।
ছেলেটা খুব খুশি হয়। বলে, টেপা তুমি আমার বন্ধু। আমার নাম সলিমুল্লাহ। তোমার পিঠে আমি চড়ে বেড়াবো। প্রতিদিন আসবে।
আচ্ছা?
টেপা শুঁড় উঁচু করে আবার নিচে নামায়। এতে ও রাজি আছে, তা-ই যেন বুঝালো।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এবার টেপা উঠে দাঁড়ালো আর ধীরে ধীরে চলে যেতে লাগলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।