বহু দিনের পুরানো ইচ্ছা, আহা আমি যদি বড় লেখক হতে পারতাম। সবাই আমাকে চিনতো জানতো, সম্মান করতো। এই ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য সেই মোতাবেক কাজ শুরু করে দিলাম........................প্রথমে একটা গল্প লেখলাম। গল্পের শুরুটা এইরকম
“এক দেশে এক রাজা ছিল, তার ছিল দুই রানী। দুয়ো রাণী, শুয়ো রাণী।
একই সঙ্গে তাদের বসবাস। দুই রাণীতে গলায় গলায় পিরিত। কিন্তু দুইজনের কারো সন্তান ছিলনা। অনেকদিন পরে দুয়ো রাণী সন্তান সম্ভবা হতেই শুরু হয়ে গেল শুয়ো রাণীর মনে অশান্তির উদ্রেগ হল। সে আর এখন দুয়ো রাণীকে আগের মত ভালবাসেনা।
মনে মনে অভিসম্পাত করতে থাকে। তার যে ভালবাসার কেউ নেই। রাজা এখন শুধুই দুয়ো রাণীকেই ভালবাসে। হঠাৎ একদিন কি হলো জানেন............এরপর কি লিখবো অনেক চিন্তা করেও কিছু লিখতে পারছিনা কেন? আমার কি লেখক হয়ে উঠা হবেনা। আমি কি তবে নোবেল, একুশে পদক, বাংলা একডেমি পদক কিছুই পাবনা।
ভাবতে ভাবতে কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। কি করা যায়, কি করা যায়, হাল ছেড়ে দিলেতো হবেনা আমাকে কিছু একটা করে দেখাতেই হবে নইলে যে আর মানিজ্জত থাকেনা। প্রতিদিন কাগজ-কলম নিয়ে বসে বসে ভাবি যদি কিছু মনে আসে। এমনি একদিন টিভিতে “নটবর নট আউট” দেখাচ্ছিল সেখানে কবি গুরু কবিতা লেখার জন্য এক উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলেকে বর দিয়েছেন কবিতা লেখার জন্য। আমিতো আর ঐ মেধাহীন, অকাল কুষ্মান্ডের মতো নই।
আমার মেধা আছে, ছোট বেলায় কত কবিতা ছড়া মনে মনে আওড়েছি। এখন চাইলেই লিখতে পারবো।
এখন থেকে আর গল্প লেখা নয় আমি কবিই হবো। সবাই আমি কবি নগেন বলে ডাকবে ভাবতেই ভাল লাগছে। অতঃপর কবিতা লেখার পালা।
শুরুটা বেশ ভালই হল, আমারও পছন্দ হয়েছে। আপনাদেরকেও বলছি একটু পড়ে দেখুন...............
“গাব গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
নদীর পানিতে ঢিল ছুড়ে
বাচ্চাটি যায় পালিয়ে।
একটু পর বুড়ো লোকটি এসে বলে
পাকা গাব কাচা গাব
পাকা গাব কাচা গাব
পাকা গাব কাচা গাব
পাকা গাব কাচা গাব
ক্ষুধা পেলে খায় সে চিবিয়ে।
জেলে এসে সাফ করে নিয়ে যায়
জালে দেবে ভিজিয়ে”।
অতি উতসাহি আমি হয়ে সরাসরি কবিতা পরিষদের কারো কাছে যাওয়ার কথা চিন্তা করলাম।
আমার কবিতা শুনে অবশ্যই আমাকে ও প্রতিভাকে সম্মান জানাবে। তাই চিন্তা করতেছি কিভাবে কার সাথে যোগাযোগ করবো। এরই মধ্যে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা। তাকে ডেকে কবিতাটা দেখালাম সে খুব সাহস দিলো চালিয়ে যা দোস্ত তোকে দিয়েই হবে। এই কবিতার জন্য একদিন তুই দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করবি।
সাথে সাথে আরও বললো তুই কবিতা লিখেই আমাকে দেখাবি, আমি তোর কবিতা পরে সত্যিই মুগ্ধ। যাওয়ার সময় বললো দোস্ত তুই এক কাজ কর তোর এই কবিতাটা ফেইসবুকে শেয়ার কর তাইলে দেখবি সবাই টাসকি খাইয়া যাইবো এই বলে সে হাটা ধরলো। আমি কিছুক্ষণ তার যাত্রা পথের দিকে চেয়ে থাকলাম আর মনে মনে বিড় বিড় করতে লাগলাম ছেলেটা ব্যপক বুদ্ধিমান ও যদি গোয়েন্দা কাহিনী লিখে খুব নাম করবে।
আমি অনেকক্ষণ এদিক সেদিক হাটা চলা করে বাসার পথে এগিয়ে চললাম। আজ আর কোন কবির সাথেই দেখা করা হলো না।
আমি বাসায় গিয়ে আরেকটা কবিতা লিখে ফেললাম। লেখাটা পড়েই নিজে নিজেই তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম। সাথে সাথেই বন্ধুকে ফোন করলাম, ঐ প্রান্ত থেকে হ্যালো বলতেই বললাম দোস্ত আরেকটা কবিতা লিখেছি শুনবি, সাথেই সাথেই আমার বন্ধু বলে উঠলো দোস্ত আমি ব্যস্ত আছি, তোকে দশ মিনিট পরে ফোন করবো বলেই ফোনটা রেখে দিল। দশ মিনিট, বিশ মিনিট, এক ঘন্টা চলে যায় বন্ধুতো আর ফোন করেনা শেষে বাধ্য হয়ে নিজেই ফোন করলাম ১২-১৩ বারের মত কিন্তু সেতো আর ফোন ধরেনা। যত বারই ফোন দেই সে কেটে দেয়।
আমি ওর আশা বাদ দিয়ে ফেইসবুকে আমার লেখা প্রথম কবিতাটা স্টেটাসে শেয়ার করে দিলাম। কি আশ্চর্য কেউ তো কমেন্ট দূরে থাক লাইকও দেয়না। আমার বন্ধু সংখা নিতান্তই কম নয় কারো ভাল লাগেনাই কবিতাটা?
পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই আজিজ মার্কেটের উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গেলাম। সিড়ির পাশেই চায়ের দোকানে দুই-তিন জন আমার পূর্ব পরিচিত বসে আছে কবি হিসেবে তাদের ভালই নামডাক আছে। আমি আমার কবিতাটা নিয়ে কথা বলতে যাব তখন চা নিয়ে আসতে বলল, আমি গিয়ে চা নিয়ে আসলাম।
কবিতাটা পড়ে পাশের জনকে বললো দেখতে। সে চায়ের চুমুকরত অবস্থায় দেখতে গিয়ে বিষম খেয়ে উঠলো। খানিক পর একটা গালি দিয়ে বলল তোর কবিতা লেখার দরকার নেই তুই বাজারে গিয়ে মাছ বেচা শুরু কর যাহ............আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম।
নাহ এভাবে আমার প্রতিভাবান কে বিকশিত হওয়ার আগেই ঝড়ে যেতে হবে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর চাই। আমাকে দমিয়ে রাখা যাবেনা, একিদন না একদিন আমার সঠিক মূল্যায়ন হবেই।
আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে সবাই তাক লেগে যায় তাই আমি গান লেখার দিকে মনযোগ দিলাম কিন্তু কিভাবে লিখবো তাইতো জানিনা। প্রথম কিছুদিন চেষ্টা করলাম সেইজন্য হারমোনিয়াম কিনে আনলাম। সকালে উঠে সারগাম বাজাতে ও গাইতে গিয়ে দেখলাম পাশের বাড়ির জানালা বন্ধ করে ফেলছে। পাশের ফ্ল্যাটের চাচা, বাড়ির মালিক বিরক্ত হয়ে ঝাড়ি দিয়ে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে গেছেন। নাহ আমাকে দিয়ে গান রচনাও অসম্ভব।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি আমার প্রতিভার সাক্ষর রখার জন্য কিন্তু সবদিক থেকেই ব্যর্থ হয়েই আমি আজ দেশের কর্ণধার। আমার নামের সামনে অনেক অনেক বিশেষণ যুক্ত করে কত বিদ্যান ব্যাক্তিরা প্রশংসা করে। আমাকে প্রত্যেক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করে নেয়।
এমনই এক অনুষ্ঠানে আমার কবিতা লেখার বাধাদান কারী বিশিষ্ট কবি ও আমি উপস্থিত দুজনেই মঞ্চে বসে আছি। আমার বলার যখন সময় হলো তখন আমি খুব মিষ্টি করে কিছু কথা বললাম।
দেশের উন্নয়ন-ব্যার্থতা নিয়ে বলা শেষে আমার লেখা প্রথম সেই কবিতাখানি সবাইকে পড়ে শোনালাম। আজ কেউ মন্দ বলেনি, আজ কেউ বিষম খায়নি, কেউ ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দেয়নি। অনুষ্ঠাস্থলের সকলে হাততালি দিতে দিতে হাত ব্যাথা বানিয়ে ফেলার জোগাড় অথচ থামার নাম নেই। একদিন যে আমার কবিতে পড়ে গালমন্দ করেছিল সে কিছুক্ষণ পর প্রশংসা করেছে বাংলাসাহিত্যের সমস্ত উপমা ব্যাবহার করে।
তার বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগেই আমি মঞ্চ থেকে নেমে আসি।
পেছনে থেকে আওয়াজ আসছে, সে বলেই যাচ্ছে মাননীয় প্রধান আতিথি আমাদের সকলের মধ্যমনি, হৃদয়ের টুকরা সংসদ অধিবেশনে জোগদানের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। রবি ঠাকুরের পরেই প্রতিভাবান, বাংলা সাহিত্যের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মঙ্গল হওক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।