আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : সে রাতে শহরে কোন পতিতা ছিল না

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। পনেরতম পেগ শেষ করে পিয়াল সাহেব আবার বোতলের দিকে তাকালেন। হুইস্কির বোতলে আরও বেশ কিছু আছে,পুরো রাতটাই চলবে। এভাবে একা একা ড্রিংকস করতে যদিও তার ভাল লাগছে না, তবে এই মাঝরাত্তিতে একা খাওয়াটাই ভাল। তার উপর তিনি সমাজের যদু মধু রাম সাম কেউ নন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই প্রথম দিকের মানুষ। আরেক পেগ গলায় ঢেলে দিলেন। মুখটা তিতো লাগছে। কাজের ছেলেটা হাঁসের মাংশ ভুনা করে দিয়েছে। হাঁসটা বেশ কচি ছিল।

নরম মাংশে একটা কামড় দিতে দিতে সেই কথায় মনে করলেন পিয়াল সাহেব। কচি সবকিছুই ভাল। সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখলেন সিগারেট আছে সবে একটা। সিগারেটটা এই মুহুর্তে খুব প্রয়োজনীয়। কাজের ছেলেটাকে হাঁক দিয়ে ডাকলেন পিয়াল সাহেব।

ছেলেটার নাম রতন। প্রথমবার কোন সাড়া শব্দ করল না। “রতন” বলে আবার হাঁক দিলেন। এবারও রতন চুপ। শেষ সিগারেট ধরাতে ধরাতে ভাবলেন রতনকে আজকেই সাইজ করা হবে।

রতনের ঘরে গিয়ে রতনকে লাথি দিয়ে জাগানো হল। রতনের বেঘোরে ঘুমে আচমকা আঘাত ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। উঠে বসে তার মনিবের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথায় কিছু ঢুকছে না। “কিরে খানকির পোলা কানে কি তুলা দিছস,ডাইকা গলা ফুলাইয়্যা ফালাইছি কানে যায় না? তবুও রতনের কোন বিকার নেই। কিছুক্ষন পর রতন সম্বিত ফিরে পেল “স্যার কি হইছে স্যার? -যা বাইরে গিয়া সিগারেট নিয়া আয়।

-এত রাইতে স্যার সিগারেট -যেখান থেইক্যা পারস আনবি,আর শোন আসার সময় জ্যানিফারের বাসায় যাইবি। ওরে নিয়ে আসবি বলবি স্যার বলছে জরুরী। মাগীটার ফোন বন্ধ,কই লাগাইতে গেছে….. নেশায় ডুবে খিস্তি দিতে মজা লাগে পিয়াল সাহেবের। জ্যানিফার ঢাকার আধুনিক পতিতাদের একজন। মাতাল মাতাল রাত মদের সাথে জ্যানিফার হলে পিয়ালের রাতটা মধুময় হবে বইকি।

এরকম মধুময় রাত পিয়াল সাহেবের অহরহ হয়। নিজের সন্তানহীন স্ত্রী চলে গিয়েছে বছর তিনেক হল। এই সময়টা পিয়াল সাহেবের সুখ কখনও জ্যানিফার, কখনও মনিকা কখনওবা সেক্সি তৃনা। আগেও যে তারা সুখ ছিল না, তা না। মূলত তাদের সুখের কারনেই পিয়াল সাহেবের স্ত্রীর চলে যাওয়া।

সেসময় পত্রিকাগুলো এ নিয়ে মুখরোচক খবর ছাপিয়েছিল। কাজের ছেলেটাকে বাইরে পাঠিয়ে আরেক পেগ হুইস্কি গলায় ঢেলে দিলেন পিয়াল সাহেব। না মাথাটা ঝিমঝিম করছে। এক ঘন্টা পর রতন ফোন দিল। জ্যানিফার নেই,কক্সবাজার গিয়েছে।

মাথা নষ্ট হবার জোগাড়। “তুই মনিকা,তৃনা,মলি যারে পাস তারে নিয়ে আয়” “আইচ্ছা” বলে ফোন কেটে দিল রতন। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কন্ট্রাক্ট নম্বরগুলো নাড়াচাড়া করছেন পিয়াল সাহেব। রুবীর নম্বরে ডায়াল করলেন। রুবী পিয়াল সাহেবের অফিসের রিসিপসনিষ্ট।

ঘুম জড়ানোর কন্ঠে রুবি “হ্যালো স্যার কোন সমস্যা”? -সমস্যার চৌদ্দপুরুষতো আমার বুকে,কি করছ? -ঘুমাচ্ছিলাম। -এই সুখের রাতে ঘুমের চেয়ে সুখ উত্তম বেরসিক চৌকিদারও মদ খেয়ে কাব্যিক হয়ে যায়। পিয়াল সাহেবতো সমাজের বিরাট মাথা। রুবী কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল -সে কি করে স্যার? এখন রাত দুটা বাজে। কাল সকালে আসি? রুবীকে বাজে একটা গালি দিলেন পিয়াল সাহেব।

রুবী অবশ্য এ পরিস্থিতির সাথে পরিচিত। অনেক রাতে তার মালিক মাতাল হয়ে তাকে ফোন দিয়েছে। আসতে বলেছে,খিস্তি খেউড় করেছে। রুবীকেও খিস্তি খেউড় করার জন্য জোর করেছে। একসময় রুবী নিজেই ফোন কেটে পিয়াল সাহেবের যৌন কামনায় বাঁধা দেয়।

রুবীর সাথে পিয়াল সাহেবের এসব করার অনুমুতি আছে আও প্রায় দুবছর আগ থেকে। নিজের অফিসে রুবীর সাথে কখনই কথা বলেন না। ছুটির দিনে গাজীপুরে রেষ্ট হাউজেই তিনি রুবীকে নিয়ে মেতে উঠেন। দুই ঘন্টা হতে চলল রতনের কোন খোঁজ নেই। সিগারেট শেষ হয়েছে বহু আগে।

এক ধরনের ফালতু ফিলিংস হচ্ছে। নেশাটা বৈঈমানি করা শুরু করেছে বোধহয়। নিজের মনে মনে খিস্তি আউড়ালেন। সোফা থেকে উঠে দাড়াতে গিয়ে খেই হারিয়ে ধফাস করে আবার সোফায় বসে পড়লেন। সিগারেটের জন্য মস্তিস্কও উন্মাদ হয়ে গিয়েছে।

সাথে নারীর নেশার অপ্রাপ্তিতে পিয়াল সাহেবের উন্মাদ মস্তিস্ককে ট্রিগারবিহীন পিস্তল হয়ে গিয়েছে। রতনের মোবাইলে আবার ফোন দিলেন “ওই খানকির পোলা তুই এখন কই? -স্যার কাউরে পাই নাই,সবাই বাইরে অথবা ব্যাস্ত। -খানকিরা সব উদাও হইয়্যা গেল,যা রাস্তা থেইক্যা একটা ধইরা আন,এক আধ দিন রাস্তার মাগী হইলে কিছু হয় না। পিয়াল সাহেব আবার মোবাইল ঘাটলেন। অনেকের নম্বর ডায়াল করলেন, কেউ ধরল না।

কাউকে ম্যানেজ করিয়ে দেয়ার আশায় পিএ বসিরের নম্বরে ফোন দিলেন। বসিরও ধরল না। এক রাতেই সবাই বেঈমান হয়ে গেল। সিগারেটের নেশা আরও বাড়ল। একেতো হুইস্কি পড়েছে পেটে,তার উপর সিগারেটের অভাব।

অভাব সবসময় চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। এসিতেও ঘামে একাকার হয়ে উঠে দাড়ালেন। সিগারেট খুঁজে বের করতে হবে। বাসায় বাবুর্চিসহ মাত্র তিনজন মানুষ থাকেন। তাই এই রাতে পিয়াল সাহেবের হাহাকার কেউ শুনছেন না।

টলতে টলতে নিজের রুমের আলমারি,ওয়্যারড্রপ সব খুঁজে একাকার করে ফেললেন। কিন্তু একটা সিগারেটের কোন অস্তিত্বই পাওয়া গেল না। হাতের লাইটার দিয়ে কাগজ পুড়ে ধোঁয়া খাবেন কিনা চিন্তা করছেন পিয়াল সাহেব। না এতটা নিচে নামা ঠিক হবে না। আর যাই হোক তিনি রাস্তায় পড়ে থাকা নেশাখোর না।

সমাজে তার একটা জায়গা আছে। একটি রাজনৈতিক দল তার অর্থ ছাড়া বেকার। এটা তার গোপন ব্যবসা। হঠাৎ মনে পড়ল গতকাল গাড়ীতে এক প্যাকেট সিগারেট রেখেছিলেন। সমস্যা হল সে সিগারেট আনতে এখন গ্যারেজে যেতে হবে।

রতনকে ফোন দিলেন আবার “স্যার রাস্তায় নাই,সকাল হইয়্যা গেছেতো সব চইলা গেছে” এবার কিছুটা শান্ত পিয়াল সাহেব “সিগারেট নিয়ে চলে আয়” হুইস্কিকে পাশ কাটিয়ে নিজেই গ্যারেজের দিকে রওনা হলেন পিয়াল সাহেব। রতনের জন্য আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। নেশা যখন মাথার উপরে চটে যায় তখন মাতাল করা মদও চলার শক্তি যোগায়। ডুপ্লেক্স বাড়ীর নিচতলায় নামার পর অসচেতনভাবেই ড্রয়িং রুমের সোফার দিকে এগুলেন তিনি। অথচ তিনি যাচ্ছিলেন গ্যারেজের দিকে।

নির্বাচনে ভোট নির্ধারণ করা শক্তিশালী শমসের শরীফ পিয়াল নিজের অক্ষমতার জন্য নিজেকেই ভৎসনা করলেন। সোফায় নিজেকে এলিয়ে দিলেন। চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ঘোর চিন্তায়। সে চিন্তায় এক গোডাউন সিগারেট মজুদ করার চিন্তাও আছে, একটি কম বয়সি কাজের মেয়ে রাখার চিন্তাও আছে। চিন্তা তলিয়ে গেলেন পিয়াল সাহেব।

পরিদিন সকাল ৯টায়। পিএ বসিরের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো পিয়াল সাহেবের। “স্যার দশটায় মিটিং আছে” “ওহো” বলে সোফা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে গেলেন। পতিতা অথবা সিগারেটবিহীন গতরাতের কথা একবারও ভাবলেন না। সারারাত ঘুমিয়ে সকালে উঠে অফিসমুখী মানুষের মতই তিনি স্বাভাবিক।

এমনকি পিএ বসির যে ফোন ধরেনি এ ব্যাপারেও কথা বললেন না। খাবার টেবিলে রতনের সাথে খাবার বিষয়ক দু একটা কথা বললেন কেবল। গতকাল রাতে রতনের রহস্যময় আচরন নিয়েও একবার কিছু বললেন। রাতের রাতেই শেষ করে একটি সাফল্য মন্ডিত ভোর শুরু করলেন। এখন তিনি একজন বিখ্যাত ব্যাবসায়ী,অঢেল টাকা ঢালা এক রাজনৈতিক রহস্যময় চরিত্র।

পরেরবার জ্যানিফাররা যখন পিয়াল সাহেবের বিছানায় আসবেন পিয়াল সাহেব একবারও গতকাল রাতে তাদের অবস্থানের কথা জিজ্ঞেস করবেন না। যাদের ভবিষতে প্রাচুর্য তারা কখনই অতীত ঘাঁটেন না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.