আমি আমার মতই বাঁচি, আমি বিহঙ্গ, নিঃসঙ্গ পাখি । Rain drops are falling on my head
ল্যাব থেকে বের হবার সময় বুঝিনি আকাশের অবস্থা এই রকম হবে । কেউ বলবে না এখন মাত্র ৫ টা বাজে । বুঝলে হয়ত আর আগেই বের হতাম । তার উপর চারদিকে ধূলোর ঝড় শুরু হয়েছে ।
রাজশাহীর গ্রীষ্মের এই অংশটা আমার পুরোপুরি অপছন্দের । যত গর্জে তত বর্ষে না, এই কথাটা বোধহয় রাজশাহীর জন্য হবে, শুধু গর্জে বর্ষে না । একরাশ ধূলা চোখে মুখে ঠেকছে । বিরক্তি ঝেড়ে সায়েন্স বিল্ডিং থেকে প্যারিস রোডের দিকে হাঁটছি । হঠাত করেই ঝড়টা থামলো ।
এইটা ভালো লক্ষণ । তার মানে বৃষ্টি হবে । মুনের কাথার সাথে সায় জানিয়েই বোধহয় তিন-চারবার মেঘ ডাকলো । আজ ভিজবো । কিন্তু কাঁধে যে ব্যাগ ? ব্যাগে প্র্যাক্টিকেল খাতা, পকেটে মোবাইল মানিব্যাগ ।
তাতে কি ? ভিজতে চাইলে শুধু ভিজতেই হবে । অন্য কিছু মাথায় আনা যাবে না ।
বাতাস ঠাণ্ডা হওয়া শুরু হয়েছে । মনে হচ্ছে বৃষ্টি ভালোই হবে । অন্তত আকাশ তাই বলে ।
বছরের প্রথম বৃষ্টি । ইংরেজি না বাঙলা বছরের প্রথম বৃষ্টি । ও এখন পাশে থাকলে বলত “বৃষ্টি বৃষ্টিই, বছরের প্রথম আর শেষ কি?” ।
ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল এমনই এক বৃষ্টির দিনে । ফোন দিলাম ওকে ।
রিং বাজছে । এদিকে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়া শুরু হয়েছে । আশেপাশের লোকজনের মধ্যে অন্যরকম ব্যাস্ততা । দোকানদার মামারা যে যার মত দোকান গোছাতে ব্যাস্ত । রাস্তার লোকজন কোনো না কোনো আশ্রয় খুজতে ব্যাস্ত ।
হ্যালো, কি করছো?
ঘুমুচ্ছিলাম ।
কেন ? এই বিকেলে কেনো ?
সকাল থেকে ৩টা পর্যন্ত টানা ক্লাস ছিল । তাই একটু ক্লান্ত ছিলাম।
বৃষ্টিতে ভিজবে না ?
হুম, ভিজবো ।
তারাতারি রুম থেকে বের হও, আমি আসছি ।
১০ মিনিট ।
হুম নামছি ।
কথা শেষ করে মোবাইল পকেটে রেখে ওর হলের দিকে যাচ্ছি । বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা এখন ছোট ছোট হয়েছে আর বৃষ্টির বেগও বেড়েছে । বৃষ্টির ছাঁটে আমার চশমা ঘোলা হয়ে আসছে আর ঘোলা চোখে ভাসছে ওর সাথে প্রথম পরিচয় হওয়ার দৃশ্য ।
সেদিনও এই রকম বৃষ্টি হচ্ছিল । লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে সোজা প্যারিস রোডের দিকে দৌড় দিলাম । কারন একটাই প্যারিস রোডে বৃষ্টিতে ভিজবো । ভিজছি আর মনের আনন্দে চিৎকার করে গান ধরেছি
Rain drops are falling on my head
I just like the guy
Whose feet are too long for his bed
Nothing seems to fit
Those Rain drops are falling on my head
They keep falling.
‘কুশল ..... এই কুশল .........’
ডাক শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি এক রিক্সা থেকে কে যেন ডাকছে । দেখে চেনার উপায় নাই ।
রিক্সার প্লাস্টিকে পা ঢাকা আর ছাতা দিয়ে মুখ । সামনে গিয়ে দাড়াতেই মুখের সামনে থেকে ছাতা সড়ালো । দেখি আশা, আমার ক্লাসমেট বান্ধবী, রিক্সায় আর তার পাশে অচেনা একটি মেয়ে বসে আছে । ছোট্ট মুখ, গোলগাল চেহারা ।
ও তুই, এত সুন্দর বৃষ্টি রেখে রিক্সায় বসে আছিস কেন ?
তার আগে তুই বল, কতক্ষণ ধরে ভিজছিস ? যদি ঠাণ্ডা লেগে যায় ? তখন কি হবে ।
যা এখন জলদি বাসায় যা ।
তা তো যাবোই। বৃষ্টি শেষ হলেই যাবো। তার আগে চল একসাথে কিছুক্ষণ ভিজি ।
আমি? কখনই না ? আমার ঠাণ্ডা লাগবে, টনসিল ফুলবে আমি ভিজবো না ।
ভিজতে তো তোকে হবেই ।
এই বলে আশার হাত থেকে ছাতা সরিয়ে নিয়ে রিক্সা থেকে নামালাম । যখন বুঝলো প্রতিবাদ করে লাভ নেই । তখন বলল
ঠিক আছে, ভিজবো । তবে এখান থেকে আমার হল পর্যন্ত যেতে যত সময় লাগবে ততক্ষণ ভিজবো ।
ঠিক আছে, তাই হবে ।
এ কথা বলে, রিক্সার দিকে তাকিয়ে দেখি ও খুব কৌতূহল নিয়ে আমার পাগলামি দেখছে। তবে এই কান্ড কারখানায় ও খুব অবাক হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না ।
ওকে বললাম, এই মেয়ে তুমি একা একা হলে যেতে পারবে? তাহলে এই রিক্সায় চলে যাও।
এতক্ষনে আশা বলল, ও তোর সাথে তো ওর পরিচয় এ নাই ।
ও আমার সবচেয়ে কাছের ফ্রেন্ড। আমার হলেই থাকে। ’
‘আমি কি আপনাদের মানে আপনি আর আশার সাথে ভিজতে পারি?’ খুব আগ্রহ নিয়ে মেয়েটি বলল ।
বৃষ্টিতে আমার তোমার বলে কিছু নাই । ইচ্ছে হলে ভিজবা ।
না আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না তো?
কেন হবে ? আমরা কি প্রেমিক প্রেমিকা নাকি ? আর তুমি কি কাবাবের হাড্ডি নাকি ? আমি বলি ।
রিক্সা বিদায় করে তিনজন হাটতে শুরু করলাম । আমার এক হাতে আশা, আশার অন্য হাতে ও । পাশের জারুল গাছ গুলোতে প্রচুর ফুল ফুটেছে । বৃষ্টির জলে ঝরে যাওয়া ফুল সারিবদ্ধভাবে ভেসে যাচ্ছে ।
দেখতে দেখতে এগুচ্ছি আমরা তিন জন। আশা তার ঠাণ্ডা লাগার অভিযোগ ক্রমাগত ভাবে করেই যাচ্ছে ।
হঠাত ও বলল, রিক্সা থেকে নামার আগে শুনলাম আপনি গাইছিলেন । তা এখন চুপ কেন?
ঐ টাকে তুমি গান বলো? আমি তো বলি পাগলের চিল্লাচিল্লি ।
যেটাই হোক, বৃষ্টি যখন সুর দিচ্ছে, পাগলের চিল্লাচিল্লিও মনে হয় মন্দ শোনাবে না ।
তাই নাকি, বলে হেরে গলায় ছেড়ে দিলাম গান,
আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি একেছি,
আমি রোদে পুড়ে, ঘুরে ঘুরে অনেক কেঁদেছি ।
আমার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার খেলা থামেনি,
শুধু তুমি চলে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ।
মনে হয় গানটা ওর পছন্দের ছিলো । ও তখন আমার সাথে সুর মেলাতে লাগলো । তিনজন মানুষ বৃষ্টির মধ্যে একসাথে হাত ধরে চিৎকার করে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে, সুশীল সমাজ দেখলে হয়ত নিশ্চিত ভাবেই বলত “ দেশটা গেলো রসাতলে ।
”
‘আচ্ছা আপনি ঐ গানটা পারেন বলে ও নিজেই গাইতে শুরু করে দিলো,
একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে,
থাকবে না সাথে কোনো ছাতা,
শুধু দেখা হয়ে মাঝরাস্তায়,
ভিজে যাবে চটি জামা মাথা .........
‘শুনেছি, কিন্তু পুরোটা মনে নেই । তাহসানের ঐ গানটা শুনেছো
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তুমি আমি হেঁটে,
পাড় বাধানো এ নদীর তীরে.........
কে না শুনেছে । পাশ থেকে আশা বলল, হাবিবের ঐ গানটা শুনেছিস ।
গান করছি আর হাঁটছি । বৃষ্টিতে হাঁটার একটা সুবিধা আছে ।
ক্লান্তি লাগে না ।
ওদের হলের কাছেই চলে আসতেই আশা বলল, অনেক হাঁটিয়েছিস আর না । এখন সত্যি সত্যি ঠাণ্ডা লাগছে । আজ রাতে আমি নিশ্চিত মারা যাব । আর সুইসাইড নোটে তোর নাম লেখে যাবো ।
আচ্ছা দিস । আর যদি না মারা যাস তা হলে কাল কফি খাওয়াতে হবে, রাজি ?
সে দেখা যাবে । এ কথা বলে আশার থেকে মুখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও খুব করুন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে ।
এই বলে সেদিন তাদের বিদায় দিয়ে ফিরে আসার পর মোবাইলে একটা পরিচিত নাম্বার থেকে এসএমএস আসে । তাতে লেখা ছিলো, চমৎকার একটা বিকাল উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
আপনি তো আমার নাম জানতে চাইলেন না? আমার নাম হৈম । মনে মনে ভাবি, হিম থেকে হৈম, সুন্দর নাম। নামের মাঝে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা একটা ভাব আছে ।
হঠাত মোবাইলের রিং শুনে বাস্তবে ফিরে এলাম ।
কোথায় তুমি? আমি কতক্ষণ ধরে হলের নিচে দাঁড়িয়ে আছি জানো ।
ওর কণ্ঠে অভিযোগ ।
আমি বললাম, আসছি । এইতো আর মাত্র দুই মিনিট ।
আমি প্যারিস রোড ধরে হেঁটে যাচ্ছি হৈমের হলের দিকে । আজ আবার একসাথে ভিজবো ।
আমি গুন গুন করে গান শুরু করলাম
Those Rain drops are falling on my head
They keep falling.
বৃষ্টি এখনো হচ্ছে ।
ছবি, গুগল । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।