হাতুড়ি মারা উচিত জ্ঞানপাপী শাহরিয়ার কবিরসহ অনেকেই বলছে নাস্তিকদের কোন দুনিয়াবী শাস্তি ইসলামে নেই । এদিকে হেফাযতে ইসলামের নামে মুসলিম জনগন চাচ্ছে আল্লাহ ও রাসুল(সাঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ আইন । জনতা শ্লোগান দিচ্ছে ‘নাস্তিকদের বিচার চাই’ ।
‘নাস্তিক’ মানে সহজ বাংলায় ‘যে স্রষ্টায় বিশ্বাস করেনা’ । পৃথিবীর ধর্মগুলোর মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘স্রষ্টার’ ধারণা ।
সে কারণে ‘নাস্তিকের’ আসলে কোন ধর্ম থাকেনা । একজন নাস্তিক না মুসলিম, না হিন্দু, না বৌদ্ধ, না খ্রিষ্টান । তার বিশ্বাসকে কেবল ‘নাস্তিকতা’ বলে চিহ্নিত করা যায় । ঈমানের জন্য যে মৌলিক সাতটি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস দরকার তা না থাকায় এরা স্পষ্টতই ‘কাফের’ ।
এই অর্থে ‘নাস্তিক’দের দুনিয়াবী কোন শাস্তি নেই ।
আল্লাহ তা’লার ওপর ঈমান আনা না আনার স্বাধীনতা মানুষকে দেয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকেই । এদের শাস্তি হবে আখেরাতে এবং তা হবে কঠোর ও চরম লাঞ্চনার ।
( সুরা বাকারা ৯০, ১৯১, আল ইমরান- ১৭৮, সুরা নিসা- ১৫১, ১৬১, হামীম সাজদা- ২৭, আশ শুরা-২৬, আল মুজাদালাহ-০৪, ০৫ )
কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কে যারা গালমন্দ করে, বিদ্রুপ করে তাদের জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি । রাসুল(সাঃ) নিজেই এর নজির রেখে গেছেন । বিশ্বাসের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই ।
একজন হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ কিংবা সাধারণ নাস্তিক যে আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে , সর্বময় প্রভু হিসেবে মেনে নেয় নি তার ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট । সে আখিরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে । কিন্তু দুনিয়ায় যদি সে ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকও হয় তবু তার জন্য কোন শাস্তি তো নয়ই বরং নিরাপত্তা থাকবে । কিন্তু যদি কেউ আল্লাহ তায়ালাকে , রাসুল(সাঃ) কে নিয়ে নোংরামী করে , ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় , ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখেছে ইসলাম ।
কয়েকটি নজির দেখুনঃ
কা’ব বিন আশরাফ ছিল মদিনার এক ইহুদী ।
এই ব্যক্তি কবি ছিল । উস্কানিমূলক কবিতা লিখে মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতো । বদর যুদ্ধের পর মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের উত্তেজিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল । সে আল্লাহ্র রসুলকে অপমান করে এবং মুসলিম নারীদেরকে নিয়ে অশ্লীল কবিতা লিখত । এমনকি উম্মুল মু’মিনীনদের নিয়ে অশ্লীল কবিতা লিখত ।
বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থেই তাকে হত্যা করার ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে একত্রিত করে একদিন বলেন, কা’ব বিন আশরাফ আল্লাহ্ তায়ালা এবং তার রসুলকে কষ্ট দিচ্ছে । কে আছে যে তার সাথে বোঝাপড়া করতে পারবে?
তখন মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (রাঃ) , আব্বাদ বিন বিশর (রাঃ), আল হারিস বিন আওস (রাঃ) , আবু আবস বিন হিবর (রাঃ) এবং কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাই আবু নায়েলা ওরফে সালকান বিন সালামাহ(রাঃ) স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব পালনের জন্য এগিয়ে আসেন। মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ) বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ (সাঃ) আপনি কি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বলেন, হ্যা। তারপর মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ) বলেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন তার সাথে যে কোন ধরণের কথা বলার ।
তিনি বলেন, তুমি বল (যা তোমার বলা প্রয়োজন)।
তৃতীয় হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১৪ তারিখ রাতের বেলায় আল্লাহ্র রসুলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহ্র নাম নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন, আর আল্লাহ্র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সফলতার জন্য আল্লাহ্র কাছে দোয়া করতে থাকেন।
তারা রাতের বেলায় গিয়ে তাকে ডাক দেন। তাদের ডাক শুনে সে নেমে আসে, যদিও তার স্ত্রী তাকে এই বলে সতর্ক করেছিল যে, ‘আমি কেমন যেন মৃত্যুর গন্ধ পাচ্ছি’। সে তাকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে এ তো শুধু মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ) আর আমার দুধ ভাই আবু নায়লা (রাঃ) , তাছাড়া কোন ভদ্র লোককে রাতের বেলায় ডাক দিলে তার অবশ্যই সাড়া দেয়া উচিৎ তাতে যদি সে তলোয়ারের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় তবুও।
এদিকে আবু নায়লা তার সাথীদেরকে আগেই বলে রাখেন যে আমি যখন ঘ্রান শোঁকার ভান করে তার মাথা ধরবো তখন তোমরা তোমাদের কাজ সেরে ফেলবে।
সে নেমে আসার পর তাঁরা তার সাথে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন গল্প গুজব করেন । তারপর তাকে তাঁরা একটু বাহিরে গিয়ে চাঁদনী রাতে কিছু সুন্দর সময় কাটানোর আহবান জানান ।
বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আবু নায়লা(রাঃ) তাকে বলেন যে, আরে তোমার মাথা থেকে তো চমৎকার ঘ্রান আসছে! কা’ব উত্তরে বলে যে আমার এমন একজন রক্ষিতা আছে যে আরবের সবচেয়ে সুগন্ধিনি নারী। আবু নায়লা(রাঃ) বলেন আমি কি একটু তোমার মাথাটা শুঁকে দেখতে পারি? সে বলে, অবশ্যই।
নাও শুঁকে দেখ। আবু নায়লা(রাঃ) তার মাথা ধরে প্রথমে একবার শুঁকে ছেড়ে দেন, একটু পর তিনি আবার তার মাথার ঘ্রান শোঁকার কথা বলে (চুল ধরে) তার মাথাটা নিচু করে ধরে তার সাথীদেরকে বলেন যে, নাও এবার তোমাদের কাজ সেরে ফেল । তখন তাঁরা তাকে হত্যা করে ফেলে। সাহাবীদের দলটি তাদের মিশন সফল করে ফিরে আসেন ।
অসতর্কতায় একজন সাহাবী হারিস বিন আওস(রাঃ) তাদেরই তলোয়ারের আঘাতে আহত হন এবং তার রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
তারা বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে এসে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর ধ্বনি দেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের তাকবীর শুনেই বুঝে ফেলেন যে তারা আল্লাহ্র শত্রুকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। তারা আল্লাহ্র রসূলের কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলেন তোমাদের চেহারা উজ্জল হোক! জবাবে তারাও বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ আপনার মোবারক চেহারাও উজ্জ্বল হোক। অতঃপর তারা তার ছিন্ন মস্তক আল্লাহ্র রসূলের কাছে হস্তান্তর করেন । রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সফলতার জন্য আল্লাহ্র প্রশংসা করেন।
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন সীরাত গ্রন্থ ইবনে হিশাম ২য় খন্ড পৃ- ৫১, আর রাহীকুল মাখতুম পৃ- ২৪৮, সহীহ বুখারী ১ম খণ্ড পৃ- ৩৪১,৪২৫, ২য় খন্ড পৃ- ৫৭৭, সুনানে আবু দাঊদ ২য় খণ্ড পৃ- ৪২, ৪২)
উম্মু ওয়ালাদ দাসীর ঘটনাঃ
একজন অন্ধ ব্যক্তির অধীনে একজন দাসী ছিল, যার নাম ছিলো উম্মু ওয়ালাদ। এই মহিলা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অভিশাপ দিত । এবং তাকে তার মনিব তা না করার জন্য সাবধান করার পরেও সে বিরত হতো না!
এক রাতে সে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিশাপ দিয়েই যাচ্ছিলো। তখন তার মনিব একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন এবং ভিতরে চাপ দিতে থাকলেন যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় !
সকালে আল্লাহর রসূলের নিকট খবর পৌঁছল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকজনকে একত্র করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে তোমাদের আদেশ করছি যে কাজটি করেছো উঠে দাড়াও।
অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন,“হে আল্লাহর রসূল! আমিই সেই ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং তাকে বিরত থাকার কথা বলার পরও সে বিরত হতো না! তার হতে আমার মুক্তার মতো সন্তান আছে এবং সে আমার প্রতি খুব সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে আপনাকে অভিশাপ দিতে লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করলাম এবং তাকে মেরে ফেললাম!”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“জেনে রেখো যে তার রক্তের কোন মূল্য নেই। ”
(দেখুন আবু দাঊদ – ৪৩৬১, সুনানে নাসাঈ -৪০৮১)
আবুল হাকিক ওরফে আবু রাফের ঘটনাঃ
সালাম ইবনে আবুল হাকিক ওরফে আবু রাফে’ ছিলো খায়বার অঞ্চলে বসবাসকারী একজন ইহুদী নেতা, হিজাযের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ।
এই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে কষ্ট দিয়েছিলো । এছাড়া সে ছিলো সেসব লোকদের অন্যতম যারা মক্কার মুশরিদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উস্কানি দিতো । সে খন্দক যুদ্ধে মক্কার মুশরিকদেরকে উস্কানি দাতাদের অন্যতম হোতা । ৫ম হিজরী সনের যুলকা’দাহ কিংবা যুলহজ্জ মাসে রাসুল (সাঃ) এর অনুমতিক্রমে আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক(রাঃ) তাকে হত্যা করেন । ( বিস্তারিত পড়ুন আর রাহীকুল মাখতুম পৃ – ৩২১, ফাতহুল বারী সপ্তম খন্ড পৃ-৩৪৩ )
মক্কা বিজয়ের পর সবাইকে ক্ষমা করা হলেও যারা রাসুল (সাঃ) কে কষ্ট দিত, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করত তাদেরকে ক্ষমা করা হয়নি ।
এমনকি কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে থাকলেও তাদের হত্যা করার অনুমতি দেয়া হয় ।
এছাড়া আসমা বিনতে মারওয়ান নামক একজন মহিলাকে প্রাণদন্ডের কথা জানা যায় যে তার কবিতার মাধ্যমে কুৎসা রটাতো এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতো । (সুত্র নির্ভরযোগ্য নয় । )
নিজে আল্লাহকে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে মানা না মানার অধিকার সবার আছে । কিন্তু আল্লাহর পথ থেকে অন্যদের বিচ্যুত করার চেষ্টা, দাওয়াতের কাজে বাধা সৃষ্টি করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলদের নামে কুৎসা রটনা, মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত করার অধিকার কারো নেই ।
যে ব্যক্তি এসব কাজ করবে সে ‘তাগুত’ হিসেবে চিহ্নিত হবে । আর তাগুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
হেফাযতে ইসলামের পক্ষ থেকে শাহবাগি কুলাঙ্গারদের শাস্তি দাবি করা হচ্ছে । এই দাবি অবশ্যই যৌক্তিক । শাহবাগি ব্লগাররা শুধু ‘নাস্তিক’ নয় , তারা আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছে ।
সুতরাং এদের জন্য ইসলাম নির্ধারিত শাস্তি রয়েছে এবং তা সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে । - (Collected)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।