... সেদিন বিকালেই আয়শা মসজিদ গিয়ে আবার নতুন করের এহরাম বেঁধে আরেকটি ওমরাহ করে ফেলি। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন খুব একটা ভীড় ছিলনা। তবে হাজরে আসওয়াদে চুমো খাবার জন্য সবসময়ই ভীড় লেগে থাকে। চিন্তা করলাম এবারই যা করার করতে হবে, পরে আর নাও হতে পারে। ভীড় ঠেলে সামনে আগালাম, সাথে দিবা’র আব্বাও আছে।
এত ভীড়ের মাঝে কিভাবে যে হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌছে গেলাম, জানিনা। হাজরে আসওয়াদের বাহিরে দু’হাতে ধরে ভেতরে চুমো খেলাম। কালচে খয়েরি রংয়ের পাথর, গোল হয়ে গর্ত হয়ে গেছে। একটা সুগন্ধীও মাখানো আছে। ফেরার পথে পড়লাম সমস্যায়, ভীড়ের জন্য বের হতে পারিনা।
উপরের এহরাম গলার মাঝে ফাঁসের মতো লেগে যাচ্ছে। ... কোনমতে বের হলাম। দেখি দিবা’র আব্বা দাঁড়িয়ে আছেন, ভীড়ের কারনে সামনে এগুতে পারেননি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রথম চেষ্টাতেই পেরেছি।
... মসজিদুল হারামের পাশেই হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মস্থান।
এখন এটা লাইব্রেরি করে রাখা হয়েছে। সৌদি সরকার এসব জিয়ারতের ব্যাপারে সবসময় নিরুৎসাহিত করে। তারপরও মানুষের ভীড় লেগে থাকে।
মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মস্থান (নীচের বিল্ডিং)
চারপাশে এখন কন্সট্রাকশন কাজ চলছে। মসজিদের জায়গা বাড়ানো হচ্ছে, বড় বড় হোটেল হচ্ছে।
হজ্জ্বের সময় দেখেছি, তাওয়াফ করতে কতটা ভীড় হয়। ৩০/৪০ লক্ষ লোক অল্প একটু জায়গায় একসাথে তাওয়াফ করতে আসে। আমি আমার এক সৌদি স্টুডেন্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- তাওয়াফের জায়গাটা আরেকটু বড় করলেইতো পারে, এতটা কষ্ট হয় না। সে বলল, “তাওয়াফের জায়গা কোনভাবেই সাফা-মারোয়া’র সীমানা অতিক্রম করতে পারবেনা। ” তখন বুঝলাম আসলেই এটা সম্ভব নয়, সুযোগ থাকলে অনেক আগেই সীমানা বাড়ানো হতো।
তাই এখন উপরের দিকে ফ্লোর বাড়ানো হচ্ছে।
মক্কায় এখন রেললাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, হজ্জ্বের সময় মীনা হতে খুব সহজেই মক্কায় আসা যাবে।
... আমরা যখন মক্কায় যাই তখন সন্ধ্যায় সবাই মিলে মসজিদুল হারামের বাহিরের প্যাভমেন্টে বসে খাবার খাই। অনেকেই তাই করে। রুটি/আলু পারোটা’র সাথে মাংস, আর দুপুরে হাটতে হাটতে আইসক্রীম খাওয়া কখনো ভুলবার নয়।
দুপুরে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট “হোটেল এশিয়া” হতে ভাত, মাছ, আলু ভর্তা আর ডাল।
মসজিদুল হারামের বাহিরের প্যাভমেন্টে
মসজিদুল হারাম
মসজিদুল হারামের ভেতরে
শুক্রবার জুম্মা’র নামাজের ১/২ ঘন্টা পর আমাদের বাস ছাড়ে, আবহা পৌছতে পৌছতে রাত ১টা। বাসে দেখলাম এক পাকিস্তানি কেঁদে কেঁদে টাকা উঠাচ্ছে, তার নাকি সব খোয়া গেছে- সাহায্য চায়। অনেকেই সাহায্য করলো। ৩ মাস পর যখন আবার ওমরায় গেলাম, দেখলাম সেই পাকিস্তানি আবারো কেঁদে কেঁদে টাকা উঠাচ্ছে।
ভেবে পেলাম না আল্লাহ’র ঘরের পাশে কিভাবে এত বড় জালিয়াতি করতে পারে।
মক্কা একটা পাথুরে শহর। চারপাশে পাহাড়। এর মাঝেও রাস্তাগুলোতে সুন্দর করে গাছ লাগানো। মক্কা হতে ফেরার পথে মাইলের পর মাইল মরুভূমি।
দেখতে দেখতে চোখ ব্যথা হয়ে যায়। প্রথমবার যখন যাই, কেমন রুক্ষ ছিল। পরের বার দেখলাম মাইলের পর মাইল মরুভূমিতে তরমুজ ফলে আছে। সৌদিরা গাড়ি থামিয়ে ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনছে। সৌদি’র মরুভূমিতে তরমুজ হতে পারে তা কল্পনাও করিনি।
পরে খেয়ে দেখেছি, লাল টকটকে তরমুজ মিষ্টি রসে ভরা।
মক্কা'র রাস্তার পাশে
বিস্তীর্ণ তরমুজ ক্ষেত
সেবার মদীনা যাওয়া হয়নি। মদীনা গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির সেমিস্টার ব্রেকে। (চলবে)
নোটঃ বাংলায় হজ্জ্ব ও ওমরাহ গাইড পেতে এখানে http://www.online-bookcase.blogspot.com/ ঘুরে আসুন।
কাবা শরিফের ভেতরেঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।