আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: শিরোনামহীন খোলাচিঠি ........বরাবর প্রিয়তমেষু

তারিখ: ১০ এপ্রিল,'১৩ ইং আমার চিঠির কোন সম্বোধন দিলাম না ইচ্ছে করেই, ও জায়গাটা রইলো ফাঁকা। তোমার আমার সম্বন্ধটার মতই ঐ জায়গাটা রহস্যঘেরা, ব্যাখাতীত। তা থাক, এই চিঠির তাতে কোন গরজ নেই, ও তো ডাইরীর একখানা সাদা পাতায় লেখামাত্র, তাই থাকবে চিরকাল, প্রেরকের দরজায় অজানা ডাকপিয়নের সওয়ার হবে না কখনোই। তোমাকে যেদিন দেখি ঐদিন কি অন্যরকম কিছু ছিল? সাহিত্যের ভাষায় বললে আকাশটা কি একটু বেশি রঙিন ছিল অথবা গাছের পাতা একটু বেশি সবুজ?জানি না। ....... তোমাকে প্রথম দেখাতেই চোখে পড়ে তোমার সুদর্শন চেহারা আর ঝকঝকে স্মার্টনেস, তবে সত্যি বলছি সেটা আমার মনে তোমার প্রতি তাৎক্ষণিক কোন আক্র্ষণের সৃষ্টি করেনি।

ডিপার্টমেন্টে যেদিন প্রথম এলে ঐদিন তোমাকে সবার সাথেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল,তোমার বেলায়, -আমার মতো হয়নি, নিশ্চিতই জানি তোমার নজরে পড়েছিলাম আমি। কোথায় যেন, সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদের লেখায় পড়েছিলাম- মেয়েদের এসব ব্যাপারে তৃতীয় ইন্দ্রিয় কাজ করে। ডিপার্টমেন্ট একই হলেও তোমার আমার ডিপার্টমেন্ট বিশেষায়ণের বৃত্তটা আলাদা। তোমার আগ্রহটা আমি কিভাবে বুঝতে পারতাম জানো? নানা বাহানায় আমার আশেপাশেই থাকতে চাইতে তুমি, তোমার লুকোন চাহনিতে, আমার কলিগদের সাথে অকারণ বৃথা তর্কে মেতে উঠে তুমি যে স্রেফ আমার আশেপাশে থাকার অজুহাত খুঁজতে তা আমি বেশ বুঝতাম। তুমি যখন কেমিষ্ট্রির যে শাখায় আমার বিচরণ, ঐ বিষয়ে জানার মেকি আগ্রহ নিয়ে আমার কাছে আসতে তখন তোমার অপলক চাহনিতে তুমি মুহূর্তেই ধরা পড়ে যেতে।

মনে মনে হাসতাম কেবল। আমি তোমাকে যে কবে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তা দিন তারিখের সীমানায় ধরা পড়েনি। চেহারায় নয়, তোমার অন্তরের ঐশ্ব্র্যর্যই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। 'লাভ এট ফার্স্ট সাইট' কথাটা ছেলেদের বেলা যতটা, মেয়েদের বেলা ততটা খাটে না বলেই আমার ধারণা, পদস্থলনে মেয়েদের দূর্র্গতি বেশি, তাই পদচারণে সাবধানতার বিকল্প নেই। ভালোবাসি, বুঝলাম,.......।

যখন একবার অসুস্থ হয়ে তুমি চারদিন ভার্সিটিতে এলে না। মাত্র চারদিনই তো, কিন্তু মনে হল একযুগ দেখিনি তোমায়। কিন্তু তা হলে কি হবে?আমি নিরুপায়। এ সমাজে মেয়েদের বুক ফোটে তো মুখ ফোটে না,- একথা না মানলেও কোথা থেকে অজানা দ্বিধা, নারীসুলভ অহম ইত্যাদি ইত্যাদি মাথা তুলে দাঁড়াতো। তাছাড়া আমি কোন আবেগে জর্জর কিশোরী নই- ভার্সিটির লেকচারার, স্ক্যান্ডালের ভয় তো ছিলই।

তারপর.....মাঝে কতগুলো দিন পার হয়ে গেল, তোমার কাছ থেকে তিন শব্দের ম্যাজিক বাক্যটি শোনার আশায় আশায়। বৃথাই......তোমার নির্বাক চোখের ভাষা বুঝতে কি আমি ভুল করেছি? প্রকাশহীন নিশ্চুপ তোমার একি নিছকই মোহরূপী আকর্ষন? ভালোলাগাকে ভালোবাসা নাম দিয়ে ফেলি নি তো? আশাহীনতার নির্ঘুম রজনী কাটে আমার। পরিবারের বড়, তাই দিবারাত্র বিয়ের চাপ-এতদিন ঠেকিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু তোমার স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশযাত্রার তোড়জোড়ের খবরে চূড়ান্ত ধৈর্যচূতি হল আমার। প্রবল হতাশার আর কষ্টের সাগরে নিমজ্জিত হলাম আমি। ভালবেসে এত যন্ত্রণা কে জানত!নিজেকে প্রবঞ্চিত আর অপমানিত মনে হল আমার।

পাত্র দেখতে শুরু করলাম একের পর এক, ছেলেমানুষী এক জেদ মনে- তুমি যাবার আগেই হাতে তুলে দেব রাঙাবরণ বিয়ের কার্ড। কি জানি তখন ভুল করেছি নাকি এখন। অভিমানী অবিশ্বাসী মন, কেবলই বলে,.....যদি আছেই কিছু .....তবে কেন সে .....একবার বলল না? মনের মাঝে অবিরত খচখচ কে বাজে বিষকাঁটা । অবশেষে আমার সম্বন্ধটা স্থির হয়েছে, শুনেছি তোমার যাবার বেলাও। প্রতিহিংসা নয়, শেষমেষ মনে আছে তোমার প্রতি ভালোবাসাই।

এই চিঠি কোনদিনই পৌঁছাবে না তার গন্তব্যে, তবু .......শুভকামনা জানাই তোমাকে, যেখানেই থাকে ভালো থেকো। ইতি , মৌমিতা ভার্সিটির সাহিত্য পাতায় ছাপা হওয়ার পর থেকেই সহকর্র্মীদের কাছ থেকে প্রশংসাবন্যায় ভেসে যাচ্ছে তৃণা। 'আরে, আপনি রীতিমত এক প্রতিভা,সিরিয়াসলি লেখালেখি শুরু কর উচিত আপনার। ' ষ্টাফ রুম খালি হয়ে গেছে, তৃণাও যাবার জন্য তৈরী হল। এমন সময় রকিবকে দরজায় দাঁড়ানো দেখে থমকে দাঁড়ালো-রক্তশূন্য চেহারা ওর, বললো, 'মৌমিতার বিয়ে কি আসলেই পুরো ঠিকঠাক?' 'হ্যাঁ।

'তৃণার উত্তর। 'বাতিল করা যায় না কোনভাবে?জানেন, কতবার বলতে চেয়েছি আপনাকে, প্রত্যাখান হবার ভয়ে বলতে পারি নি। ' 'বলা উচিত ছিল, কত অপেক্ষা করিয়েছেন আপনি আমাকে ,জানেন? যদি বিয়ে হয়ে যেত "মৌমিতার"?' দুজনেই হাসল। তৃণার হাসিতে বাড়তি আনন্দ, কিছুতেই নিজের অনুভূতির কথা বলতে পারতো না সে, মুখচোরা রকিবের কাছ থেকে মনের কথাটি বের করে আনতে মৌমিতা নামের আড়ালে লেখা তার নিজের গল্পটা এক্ষেত্রে চমৎকার কাজ দিয়েছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.