ভাঁড় মে যাক দুনিয়া, মেরা কেয়া ! ২০০৪ সালের মার্চ মাসের ঘটনা।
তখন আমরা সবাই চিটাগাং থাকতাম। আব্বু সে বছর হ্বজে গিয়েছিলেন। হ্বজে যাবার আগে মুরুব্বিদের কাছ থেকে দোআ নিতে হয়, এরকম একটা ব্যাপার আছে, তাই আমরা সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যাই। আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানায়।
আত্বীয়স্বজন সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়া হলে, আব্বু আমরা ৩ ভাই আর আম্মুকে গ্রামের বাড়িতে রেখেই ঢাকায় হ্জ ক্যাম্পে চলে যান। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।
ছোটোবেলা থেকে কখনই খুব একটা গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি, তাই সেবার খুব লম্বা সময় ছিলাম গ্রামে, প্রায় এক মাস।
ঘটনা টা তখনি ঘটেছিলো।
আমার ফুফুর বিয়ে হয়েছিলো আমাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরের এক গ্রামে।
উনি সে সময় মেলান্দহ উপজেলায় জমি সহ একটি বাড়ি কিনেন। গ্রামের বাড়িতে একটা প্রচলন আছে, কেউ যদি ভিটা বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়ি করে সেখানে উঠতে চায়, তবে আত্বীয় স্বজন সবাইকে ডেকে এনে খাওয়াতে হয়। আমরা সবাই সে সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলাম বলে, উনি ঠিক করেন আমরা গ্রামে থাকতে থাকতেই, উনি গ্রাম থেকে মেলান্দহের নতুন বাড়িতে উঠবেন।
আর তাই আমরা সবাই উনার শ্বশুরবাড়িতে যাই।
আমার ফুপা সে সময় দেশের বাইরে ছিলেন বলে বাসার জিনিসপত্র পুরোন বাড়ি থেকে নতুন বাড়িতে শিফট করা থেকে শুরু করে, আত্বীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাবস্থা করা, পুরোটাই আমার মেঝো কাকা দেখাশোনা করেছিলেন।
সব আয়োজন শেষ হয়ে গেলে রাতে আমরা সবাই আমার ফুফুর শ্বশুর বাড়িতেই ঘুমাই। আর আমার মেঝো কাকা কাচারি ঘরে ঘুমাতে যান। গ্রামে মূল বাড়ি থেকে আলাদা করে বাইরের উঠানে আরেকটি ঘর থাকে, সেটাকে কাচারি ঘর বলে।
মাঝরাতে আমার কাকার ঘুম ভাঙলে, উনি উঠানের বাইরে গোয়াল ঘরের পাশে প্রসাব করতে যান। প্রসাব করা শেষ হলে উনি সেই অন্ধকারে বসেই একটি বিড়ি ধরান।
হঠ্যাৎ করেই পেছন থেকে শুনতে পান, "কে ওখানে?"। তখন আমার কাকা, আমি বলে জবাব দিলে দেখতে পান, আমার ফুফুর শ্বশুর কে।
আমার মেঝো কাকা খুব লাজুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি গ্রামে জমি দেখাশোনা করতেন আর সংসার করতেন। আমার ফুফুর শ্বশুরকে দেখে তিনি দেখে জিজ্গাসা করেন, তাউই সাহেব, এতো রাতে আপনি? তখন উনি জবাব দেন, হঠ্যাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় উনি গরুগুলোকে দেখতে এসেছেন।
সেসময় খুব চোরের উপদ্রব ছিলো। তারপর আমার ফুফুর শ্বশুর আর আমার মেঝো কাকা একসাথে সেই উঠানের অন্ধকারে বসেই বিড়ি খান। আর জমিজমা সংক্রান্ত অনেক আলাপ করেন। যেমন, ঐ গ্রাম এইবার নদি ভেঙে নিয়ে যাবে, ঐ গ্রামের জমিতে এইবার ধান চাষ করে লাভ হবে না, কারন বন্যায় সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। এইরকম কিছু একটা।
কথা বলতে বলতেই হঠ্যাৎ করেই আমার কাকার মাথায় আসে, "আমি কার সাথে বসে কথা বলছি, তাউই সাহেব না দু বছর আগে মারা গেছেন?" এই চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই আমার কাকা উঠান থেকে আম্মাগো বলে চিৎকার দিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দেন। আর এক দৌড়ে তিনি আমার ফুফু আর আমার দাদি যে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সে ঘরের দরজায় এসে খুব জোরে জোরে কড়া নাড়েন। সে শব্দ শুনে আমার দাদি, ফুফুসহ বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়।
আমার দাদির কোলে শুয়ে আমার কাকা মারা যান। মারা যাবার আগে উনি প্রলাপের মতন উপরের সব ঘটনা নিজের মুখে বলে যান।
ডাক্তার উনার মৃত্যু হার্ট এটাকের কারনে হয়েছে বলে জানায়। আমি পরদিন সকালে আমার আব্বুকে সৌদি আরবে হ্বজ করা অবস্থায় আমার কাকার মৃত্যু সংবাদ দেই।
***আমার কাকা আর আমার ফুফুর শ্বশুরের কথোপকথনের ব্যাপারটা কিছুটা অতিরন্জিত হতে পারে। বাকি ঘটনার পুরোটাই আমার নিজের চোখে দেখা। সুস্থ সবল অনেককেই ঘুমের ভেতর মারা যেতে শুনেছি, কিন্তু ঐবারই প্রথম নিজের চোখে দেখলাম।
গ্রামের বাড়ি বলেই হয়তো ব্যাপারটা অনেক রহস্যময় মনে হয়েছিলো। এছাড়াও পরে জেনেছি আমার ফুফুর পুরোন বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে উঠা টা করে অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। এটাও শুনেছি, যে নতুন বাড়িটা আমার ফুফু কিনেছে, ওটাতে কোনো দোষ আছে, সে কারনেই আমার কাকা মারা যায়।
ঐ ঘটনার পর বহুবার আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি, আর গ্রামে গেলেই ফুফুর নতুন বাড়িতে গিয়ে বহুবার থেকেছি। কখনও কোনো সমস্যায় পড়িনি।
তবে ঐ বাড়িতে উঠার ১/২ বছরের মধ্যেই, ৩ মেয়ের পর আমার ফুফুর একমাত্র ছেলেটি পানিতে ডুবে মারা যায়। তবে আমি মনে করি, দুটি ঘটনাই বিছিন্ন। ***
নদী
*ভূত এফএমের জন্য লেখা ইমেইল থেকে
নুরুল ইমরান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।