আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।
আমরা সবাই জানি যে আমাদের সবাইকে একদিন মৃত্যু বরণ করতেই হবে - তারপরও আমরা আমাদের মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করিনা । আমরা এই জীবন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে - পরকালের জীবন যে কত দ্রুত আগাইয়া আসতেছে তার প্রতি আমাদের কোন ভ্রক্ষেপ নাই ।
আমরা দিন রাত ছুটছি এই জীবনকে সুন্দর ও আরমদায়ক করার জন্য ।
অথচ এই জীবন যে কোন সময় শেষ হয়ে যাবে । কোন নোটিশ ছাড়া যে কোন সময় আজরাঈল চলে আসবে । আমাদের হুশ নাই - আমরা দিনে কত বার স্মরণ করি যে মৃত্যু আমাদের কত নিকটে ? একবারও কি স্মরণ করি ?
আমাদের এই দুনিয়ার জীবনটা হলো অনেকটা কচু পাতার পানির মত । কচু পাতার পানি যেমন যে কোন সময় পড়ে যাবে তা নিশ্চিত এবং তার উপর পানি যত বাড়ুকই না কেন তার আসলে কোন মূল্য নাই কারণ - তা হলো ক্ষণস্হায়ী । অনুরূপ ভাবে আমাদের এই দুনিয়ার জীবনের বাড়ি-গাড়ি - জায়গা সম্পত্তি যা কিছুই করিনা কেন তা সব এখানে রেখে যেতে হবে - কোন কিছুই নিয়ে যাওয়া যাবেনা ।
সুতরাং আপনি কেন না বুঝে এত সবের পিছনে এত এত কষ্ট করছেন ? কারণ আপনি এক ধোকার মধ্যে আছেন ।
অপর পক্ষে পরকালের জীবন কতটুকু ? বলা হয়েছে - সেই জীবনের শূরু আছে কিন্তু কোন শেষ নাই । অনন্ত এক সময় - যা কোন দিন শেষ হবেনা । এখন আপনি কি সেই জীবনের কথা মনে রেখেছেন ? না , কারণ আপনি দুনিয়ার জীবন দেখছেন আর ওটা দেখেন নি - তাই সেটা নিয়ে চিন্তিত না । ছাত্র অবস্হায় যারা পড়াশুনায় অবহেলা করে তাদের ভবিষ্যত কেমন হবে - আমার সবাই তা জানি ।
অনুরূপভাবে যারা পরকালের জন্য প্রিপারেশন নেয় না তাদের অবস্হা কেমন হবে বলে আপনাদের মনে হয় ? একটু সময় নিয়ে আমরা কেন পরকালের জীবনের কথা ভাবিনা ?
কোরআন ও হাদিসের কথায় আমাদের বিশ্বাস এত কম কেন ? আমরা কেন আমাদের বিশ্বাসকে --ঠিক করার জন্য একটু চেষ্টা করিনা ? আমরা যে কি হারাচ্ছি তার খবর কি আমাদের আছে ? আমরা যদি বুঝতাম সামনে যে সীমাহীন জীবন আসছে তার প্রস্তুতি গ্রহন করা দরকার তাহলে এই দুনিয়ার সমস্যাও অনেক কম হত ।
আমরা মানুষতো আসলে জীবনে সুখী হতে চাই - অনন্তকাল বাচতে চাই । তার কোনটাই কি এই জীবনে পুরো পাওয়া সম্ভব ? না । কিন্তু আমরা তা চিন্তা করেও দেখিনা । চোখের পলকের মত সময় চলে যাচ্ছে - আমাদের হুশ হয় না ।
হাদীছ শরীফে আছে, যে মুসলমান পরকালকে আপন লক্ষ্য বস্তু বানাইবে আল্লাহ পাক তাহার অন্তরকে চিন্তুামুক্ত ও উদার করিয়া দিবেন এবং দুনিয়া অপদস্ত হইয়া তাহার নিকট আসিবে । আর যে ব্যক্তি দুনিয়াকেই আপন লক্ষ্যবস্তু রূপে গ্রহণ করে সে নানাবিধ পেরেশানীতে গ্রেফতার হয় এবং দুনিয়া হইতে যতটুকু তাহার ভাগ্যে লিখিত আছে তার চেয়ে অধিক সে পাইতে পারে না । অতঃপর হুজুর (ছঃ) বলেন, আল্লাহপাক এরশাদ করিয়াছেন যে, হে আদম সন্তান ! তুমি আমার এবাদতের জন ঝামেলা মুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে চিন্তামুক্ত করিয়া দিব এবং তোমার অভাবকে দূর করিয়া দিব । আর যদি তা না কর তবে তোমার অন্তরকে শত শত পেরেশানী দ্বারা ভর্তি করিয়া দিব এবং দারিদ্রতাও দূর করিব না ।
আল -কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-
'যাহার ক্ষণস্হায়ী দুনিয়ার প্রত্যাশী, আমি দুনিয়াতেই তাহাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা এবং যত খানি ইচ্ছা দিয়া থাকি ।
অতঃপর তাহার জন্য তৈরী জাহান্নামে সে পর্যদুস্ত ও অপদস্হ হইয়া প্রবেশ করিবে । আর যাহারা আখেরাতের প্রত্যাশা করে এবং উহার জন্য ঈমান সহকারে যথোপযুক্ত চেষ্টাও করে তাহাদের চেষ্টার মর্যাদা রক্ষা করা হইবে । (১৫ পারা - ২ নং রুকু )
একটু চিন্তুা করে দেখুন - ভাবুন । ইহকাল ও পরকাল এর জীবনে কত পার্থক্য - ।
১. অনন্ত জীবন এবং অতি ক্ষুদ্র জীবন কাল ।
২. নিরোগ স্বাস্হ্য এবং রোগ শোকে আক্রান্ত দেহ ।
৩. সবল ও শক্তিশালী দেহ এবং দুর্বল দেহ ।
৪. পরকালে কামাই রোজগার করার কোন চিন্তা নেই ।
৫. পরকালে ঘর বাড়ী তৈরী - পোলাপান মানুষ করা - কোন কিছু নিয়েই কোন চিন্তা নেই - কোন কষ্ট নেই।
৬. মন মত সঙ্গী ।
৭. সর্ব নিম্ন প্রাপ্ত স্হান বা থাকার জায়গা - তাও দশটি দুনিয়ার সমান ।
৮. সর্ব অবস্হায় বিরাজমান সুন্দর ও স্বাস্হ্যকর আবহাওয়া ।
... উপরোক্ত সবই পাবেন যদি আপনি জান্নাতে যেতে পারেন । এগুলো প্রতিটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ । একটু চিন্তা করে দেখেন - এগুলোর জন্য আপনাকে দুনিয়ার জীবনে কত কষ্ট ভোগ করতে হয় ।
যে কোন একটা পয়েন্ট নিয়ে ভাবেন । তারপর সব গুলো বিষয় নিয়ে - বুঝতে চেষ্টা করেন - এই দু্ই জীবনের কেমন আকাশ পাতাল তফাৎ ।
যারা পরকালের জীবন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে - তারা কিন্তু দুনিয়া সম্পর্কে উদাস হয়ে গিয়েছে । দুনিয়ার জন্য তারা ততটুকু সময়ই দিয়েছে যতটুকু না হলেই নয় - বাকীটা সময় তারা পরকাল তৈরীতে ব্যয় করেছে ।
যেমন - আপনি যদি সাহাবীদের জীবন ঘেটে দেখেন - উনারা দুনিয়ার জীবনকে কত অবহেলা করেছে ।
এরপর বিভিন্ন ওলী আল্লাহর জীবন ঘেটে দেখেন - উনারা দুনিয়ার জীবনে কত সাধারণভাবে পার করে দিয়েছেন । উনারা পরকালের জীবনকে বুঝতে পেরেছিলেন বলেই এমন হয়েছিলেন - উনারা আমার আপনার মতই মানুষ ছিলেন - তাদেরও আশা- আকাংখা ও চাহিদা ছিলো । কিন্তু উনারা সেটা আখেরাতে পাবেন - সেই বিশ্বাস পূর্ণ ছিলো বিধায় - দুনিয়ার জীবনে অযথা সম্পদের পিছনে দৈাড়ান নি ।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে, সেই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান যে বেচে থাকতেই মৃত্যু পরবর্তী জীবনের তৈরী করে ।
............কারণ কি - ? কারণ অস্হায়ী জীবনের পিছনে না লেগে স্হায়ী জীবনকে সুন্দর করার প্রয়োজনীয়তা বেশী নয় কি ? সেটাই কি সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমানের কাজ নয় ?
১. মুস্তাওরেদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, আমি রাসূলূ্ল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম ! আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত কেবল এতটুকু-ই যেমন, তোমাদের কেউ নিজেদের আঙ্গুল সাগরে চুবিয়ে দিল ।
এবার সে দেখুক, এ আঙ্গুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে আসে । - মুসলিম
২. হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল (সাঃ) একটি কানহীন মৃত ছাগলছানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেটা রাস্তায় মৃত অবস্হায় পড়া ছিলো । তিনি তার সাথীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে এ ছাগল ছানাটি কেবল এক দেরহামের বিনিময়ে ক্রয় করা পছন্দ করবে ? তারা উত্তরে বলল, আমরা তো এটা কোন মূল্যের বিনিময়েই কিনতে রাজী নই । এবার হুযুর (সাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম ! তোমাদের নিকট এ ছাগল ছানাটি যত তূচ্ছ ও মূল্যহীন , আল্লাহতায়ালার নিকট দুনিয়াটা এর চেয়েও অধিক তূচ্ছ ও মূল্যহীন । - মুসলিম
৩. হযরত সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলূ্ল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার কাছে যদি দুনিয়ার মূল্য একটি মশার ডানার সমানও হতো, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে এখান থেকে এক চুমুক পানিও পান করতে দিতেন না ।
- মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি ।
৪. হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি দুনিয়াকে নিজের প্রেমপাত্র ও ইপ্সিত লক্ষ্য বানিয়ে নিবে , সে অবশ্যই নিজের আখেরাতের ক্ষতি করবে । আর যে ব্যাক্তি আখেরাতকে নিজের প্রেমপাত্র ও লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নিবে , সে নিজের দুনিয়ার ক্ষতি করবেই । অতএব তোমরা ক্ষণস্হায়ী দুনিয়ার পরিবর্তে চিরস্হায়ী আখেরাতকে অবলম্বন কর এবং এটাকেই প্রধান্য দাও । - মুসনাদে আহমাদ ।
৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন , দুনিয়াতে এমনভাবে থাক যে, তুমি যেন একজন প্রবাসী অথবা পথচারী মুসাফির । - বুখারী
৬. হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) একদিন একটি ভাষণ দিলেন । সে ভাষণে তিনি বললেন, তোমরা শুনে রাখ , এ দুনিয়া হচ্ছে একটি উপস্হিত অস্হায়ী পণ্য । এতে প্রত্যেক পূণ্যবান ও পাপাচারীর অংশ রয়েছে । তাই পূণ্যবাণ ও পাপী সবাই এখান থেকে আহার পায় ।
পক্ষান্তরে আখেরাত হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে আগত এক বাস্তব সত্য । আর সেখানে বিচার কার্য পরিচালনা করবেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান বাদশাহ (আল্লাহ)। মনে রেখ, সকল কল্যাণ ও সুখের ঠিকানা হচ্ছে জান্নাত আর সকল অকল্যাণ ও দুঃখ রয়েছে জাহান্নামে । অতএব, তোমরা অন্তরে আল্লাহর ভয় রেখে আমল করে যাও । তোমরা বিশ্বাস কর যে, তোমাদের আমলসহ তোমাদের আল্লাহর দরবারে উপস্হিত করা হবে ।
তাই যে ব্যাক্তি অণূ পরিমাণ সৎকর্ম করবে , সে তা দেখতে পাবে । আর যে ব্যাক্তি অণূ পরিমাণ মন্দ কাজ করবে , সেও তা দেখতে পাবে । - মুসনাদে শাফেয়ী ।
মৃত্যুর পর পরই সবার আফসোস শুরু হয়ে যায় । মৃত্যুর সাথে সাথে ওপারের দরজা খুলে যায় ।
মানুষের সামনে দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে পরকালের জীবন শুরু হয়ে যায় । তখন সে বুঝতে পারে সে এক না ফেরার দেশে চলে এসেছে । দুনিয়ার জীবনে যা সে করেছিলো তার ফল সে যে পরকালে পাবে তা তার বুঝে চলে আসে । অনেক বিশ্বাসীও দুনিয়ার জীবনে পরকালের জীবনের জন্য তেমন কষ্ট করেনা । কোন রকমে জীবন অতিবাহিত করে ।
মরণের পর যারা ভালো কাজ করে ছিলো তারাও দেখে যে সে হয়ত আরো ভালো কাজ কে আসতে পারত । আরো বেশী পূণ্য অর্জন করে তার অনন্ত জীবন আখিরাতের জন্য আরো বেশী সামান নিয়ে আসতে পারত । আর পাপীর তো আফসুসের সীমা নাই । যার ফলে সবাই লজ্জ্বিত হয় । এই বিষয়টাকে লক্ষ্য করেই মহানবী (সাঃ) বলেছেন -
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারই মৃত্যু ঘটে, সেই নিজে নিজে লজ্জ্বিত হয় ।
সাহাবী (রাঃ) গণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! কি কারণে সে লজ্জ্বিত হয় ? নবী করিম (সাঃ) বললেন, সে ব্যাক্তি যদি ভালো কাজ করে থাকে, তাহলে এই ভেবে লজ্জ্বিত হবে যে, আমি কেন আরও ভালো কাজ করলাম না । আর যদি সে খারাপ কাজ করে থাকে তখন সে অনুশোচনায় লজ্জ্বিত হবে যে, হায়! আমি কেন খারাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করলাম না । (তিরমিযি, মেশকাত)
আসুন আমরা পরকালের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে - একীনে পরিণত করি অর্থাৎ যার প্রতি আমাদের বিন্দু মাত্র সন্দেহ থাকবেনা । শুধুমাত্র ভাসা ভাসা বিশ্বাসে আমাদের দুনিয়া এবং আখেরাত দুই-ই ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে এবং বিশ্বাসকে ঠিক করা ছাড়া আমাদের আর কোন রাস্তা নাই । কারণ - মৃত্যু প্রতি মুহুর্তে এগিয়ে আসছে ।
তাই সময় যে কত কম - তা যত তাড়াতাড়ি বুঝব ততই আমাদের জন্য মঙ্গল ।
এখন কিভাবে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে একীনে পরিবর্তিত করব ? কোন আরাধ্য জিনিষই সহজে অর্জিত হয় না - ঈমানও অনেক মূল্যবান বিষয় । শয়তান ও বিরোধী পরিবেশ প্রতিনিয়ত ঈমানদারদের পিছনে লেগে আছে । তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং সব সময় নিজের ঈমানকে তাজা রাখার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে । আল্লাহর বড়ত্ব ও ক্ষমতার আলোচনা করতে হবে এবং মানুষকে সব সময় ঈমানের দাওয়াত দিতে হবে ।
দাওয়াতের ফলে একদিকে নিজের ঈমান বাড়তে আর অন্যদিকে অন্যজনের কাছে ঈমান পৈাছবে । এই কাজ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই । এর জন্য এত বেশী জ্ঞানের প্রয়োজন নেই । সাহাবীদের এত জ্ঞান ছিলোনা কিন্তু তাদের জীবনে ইসলাম ছিলো যতটুকু তারা জানতেন ।
আমরা কি জানি আল্লাহপাক আমদের কিভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং লালন পালন করছেন ?
এই যে মহাবিশ্ব, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যা আমাদের সোলার সিষ্টেমের আবাসস্হল এবং আমাদের পৃথিবী, তা অসংখ্য অলৈাকিক নিয়মের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এবং সূক্ষ হিসাব দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে ।
এই সকল নিয়ম এবং ভারসাম্য ব্যবস্হা ডিজাইন করা হয়েছে এবং অলৈাকিকভাবে নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ আছে শুধুমাত্র মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য পরিবেশ তৈরী করার জন্যই ।
আমাদের মহাবিশ্বকে নিয়ে গবেষণার ফলে এটা বুঝা যায় যে মহাবিশ্বের সাধারণ নিয়ম থেকে শুরু করে বস্তুর সূক্ষাতিসূক্ষ বৈশিষ্ট্যসমূহ, সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নিয়ম থেকে সর্বোচ্চ অনুপাতের যে পরিমাপ তার সবই একেবারে সঠিক পরিমাণে রয়েছে । আমাদের আশ্চর্য্য হতে হয় যে , এই মাপের সঠিকতা শুধুমাত্র মানুষের অস্তিত্ব টিকে থাকার জন্যই উপযোগী নয় বরং মানুষের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ লাভের জন্যও সহায়ক ।
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে মিল্কিওয়েতে পৃথিবীর অবস্হান, সূর্যের রশ্মির পরিমাণ (spectrum) থেকে শুরু করে পানির ঘনত্ব (viscosity) পর্যন্ত, পৃথিবী থেকে চাদের দূরত্বের পরিমাণ থেকে বায়ুমন্ডলে গ্যাসের পরিমাণের অনুপাত ইত্যাদি অসংখ্য ফ্যাক্টর সমূহ সম্পূর্ণভাবে মানুষের বসবাসের উপযোগী । এমনকি কোনটার পরিমাণের সামান্য একটু এদিক সেদিক হলে পৃথিবী হয়ে যেত মানুষের বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী ।
মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না কত হাজার হাজার নিয়ামক এবং শর্তসমূহ একসাথে একত্রিত হয়ে অলৈাকিকভাবে মানুষের বসবাসের জন্য পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে ।
আসল কথা হলো - হাজার হাজার অলৈাকিক নিয়ামক এর কথা বাদ দিলেও প্রতিটা নিয়ামক বা শর্ত-ই যেন এক একটা আশ্চার্য্য বিষয় । যা আল্লাহর অসীম জ্ঞানের পরিচয় বহন করে । মহাবিশ্বের প্রতিটা অংশ-ই যেন এক একটা আশ্চর্য্য বিষয় - যা স্রষ্টার অপরিসীম জ্ঞান, ক্ষমতা এবং প্রজ্ঞার পরিচয় প্রকাশ করে ।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এসব নিয়ামক বা শর্ত সমূহের খুবই সূক্ষ পরিমাণ এদিক সেদিক হলে মহাবিশ্ব এবং পৃথিবী আর মানুষের বাসযোগ্য হতো না ।
প্রত্যেকটা বিষয়-ই আছে একেবারে পারফেক্ট পর্যায়ে ।
নাসার মহাকাশবিদ প্রফেসর John O'Keefe বলেছেন, ' আমরা, মহাকাশ বিদ্যার আলোকে দেখতে গেলে অত্যন্ত যত্নের সাথে তৈরী করা এক সৃষ্টি । যদি মহাবিশ্ব একেবারে যথার্থভাবে তৈরী করা না হতো, আমরা কখন-ই অস্তিত্ববান হতাম না । এটা আমার ধারণা যে পারিপার্শ্বিক অবস্হাই তা নির্দেশ করে যে মহাবিশ্ব মানুষের বসবাসের জন্যই তৈরীকৃত আবাসস্হল । '
ব্রিটিশ গণিতবিদ প্রফেসর Roger Penrose বলেছেন, 'আমি বরং বলব এই মহাবিশ্বের তৈরীর পিছনে কোন উদ্দেশ্য আছে ।
এটা কোন ভাবেই বাই চান্স তৈরী হয় নি । '
বর্তমান পর্যন্ত সংগৃহিত সকল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটা অনুধাবন করা যায় যে, এই মহাবিশ্ব আকস্মিকভাবে, কোন পরিকল্পণা ছাড়া হঠাৎ করে এমনি এমনি তৈরী হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় । মহাবিশ্বের শুরু থেকে বর্তমান মহূর্তের সময় পর্যন্ত যখন আপনি এই লেখাটি পড়ছেন, তার সবই সর্বজ্ঞানী এবং সর্বশক্তিমান স্রষ্টা তার জ্ঞান দিয়ে তৈরী করেছেন ।
Astrophysicist Alan Sandage, winner of the Crawford prize in astronomy বলেন যে, আমি এটা অসম্ভব বলেই মনে করি যে এই নিয়ম শৃংখলা কোন পরিকল্পনা ছাড়াই হয়েছে । এর পিছনে অবশ্যই কোন সুসংবদ্ধ নিয়ম কাজ করছে ।
স্রষ্টা আমার নিকট রহস্যের মত কিন্তু অলৈাকিক অস্তিত্বের ইহাই একমাত্র ব্যাখ্যা ..'
যেমন মহাবিশ্ব সৃষ্টির সূচনায় যে মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তার সূচনা হয়েছে তার গতি যদি এক ভগ্নাংশ পরিমাণ ধীর হতো বা এক ভগ্নাংশ পরিমাণ বেশি হতো তাহলে এই মহাবিশ্ব এরূপ অবস্হায় আসতোনা ।
Paul Davies, a renowned Professor of Mathematics and
Physics at Australia’s Adelaide University, made a series of calculations in order to answer this question. The results he obtained were astonishing.
According to Davies, had the expansion rate following the Big Bang been different by one in a billion billions (1/1018), the universe could not have formed! Another
way of stating this figure is: “0,000000000000000001.” Any divergence of such a tiny scale would have meant no universe at all.
কুরআন শরীফের পাতায় পাতায় আল্লাহ মানুষকে এসব অলৈাকি অবস্হা সমূহের কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে তার নিদর্শন সমূহের বর্ণনা দিয়েছেন । তিনি বলেছেন এসব নিদর্শন সমূহ দেখে বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মানুষ স্রষ্টার অস্তিত্ব খুজে পায় ।
"নিঃসন্দেহে মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, আর রাত্রি ও দিবসের বিবর্তনে, আর জাহাজ - যা সাগরের মধ্যে চলাচল করে যার দ্বারা মানুষ মূনাফা করে, আর আকাশ থেকে বৃষ্টির মধ্যে, তারপর তার দ্বারা মৃত মাটিকে প্রাণ সন্চার করেন আর তাতে ছড়িয়ে দেন হরেক রকমের জীব-জন্তু (তার মধ্যে), আর আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে নিয়ন্ত্রিত বাতাস ও মেঘের গতিবেগে, বিশেষ নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান লোকের জন্য । " (সূরা বাকারঃ ১৬৪)
এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহকে দেখা যাবেনা বা ওনার সাথে কথা বলা যাবেনা ।
তবে তিনি মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন এবং অনেক কে ঐশীগ্রন্হ দান করেছেন । ইসলাম হলো আল্লাহ কর্তৃক সর্বশেষ অনুমোদিত ধর্ম , মহানবী (সাঃ) হলেন সর্বশেষ রাসূল এবং কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব ।
'জ্ঞানী লোকেরা আল্লাহপাকের সৃষ্ট জগতের কলা কৈাশল সম্পর্কে চিন্তা ফিকির করিতে গিয়া বলিয়া থাকেন যে, হে আমাদের প্রতিপালক ! তুমি এইসব অনর্থক সৃষ্টি কর নাই । আমরা তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করিতেছি, তুমি আমাদের জাহান্নামের অগ্নি হইতে রক্ষা কর । ' (কুরআন)
আসুন আমরা স্রস্টাকে ওনার নিদর্শন দেখে খুজে পাই এবং উনার প্রেরিত আসমানী কিতাব অনুসারে জীবন পরিচালনা করি ।
এতে করে ইহকাল ও পরকাল - দুই জীবনেই আমরা আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে থাকতে পারব ইনশাল্লাহ ।
আল্লাহপাক সবাইকে ভালো রাখুন । ধন্যবাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।