আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাকদীরের ভালো-মন্দের উপর ঈমান

দেশ প্রেম ঈমানের অংগ, দেশের জন্য জীবন দিতে পারি সাদরে। আজকে আমরা ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যার অস্বীকারকারীর কোনো আমলই আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। তা হলো, ঈমান বিল কদর বা তাকদীরের উপর ঈমান। এটা ঈমানের রুকনসমূহের একটি অন্যতম রুকন। এর দ্বারা মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি আসে এবং অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলে।

তাকদীর একটি ব্যাপক বিষয়। গোটা মহাবিশ্বই তাকদীরের বলয়ে ঘূর্ণয়ণমান। রাব্বুল আলামীন সবকিছুকেই সৃষ্টি করেছেন সুনির্দিষ্ট ও পরিমিতরূপে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ ‘আমি প্রতিটি বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি’ (সূরা কামার: ৪৯)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى. الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّى. وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَى. ‘আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন, যিনি সৃষ্টি করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।

এবং যিনি সুপরিমিত করেছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন’ (সূরা আলা: ১-৩)। আরো ইরশাদ হয়েছে : تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا . الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا . ‘ পরম কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয়। তিনি হলেন সে সত্তা যার রয়েছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব। তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি। রাজত্বে তার কোনো অংশীদার নেই।

তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে শোধিত করেছেন পরিমিতভাবে’ (সূরা ফুরকান: ১-২)। এ বিষয়ে আরো অনেক আয়াত আছে। আছে সহীহ হাদীসও। যেমন একটি হাদীসে আছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় দীন সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য মানবাকৃতি ধারণ করে জিবরীল আ. আগমন করলেন।

তারপর কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি যেসব প্রশ্ন করেছিলেন, তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল এই: ‘আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। ’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: الْإِيْمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَبِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ، قَالَ جِبْرِيْلُ: صَدَقْتَ ‘ ঈমান হলো, আল্লাহ তাআলা, সমস্ত ফেরেশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, সকল নবী-রাসূল, কিয়ামত দিবস এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। ’ জিবরীল আ. বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। এ হাদীসের শেষ দিকে আছে তোমরা কি জানো প্রশ্নকারী লোকটি কে? সাহাবীগণ বললেন, ‘না, আমরা জানি না, হে আল্লাহর রাসূল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তিনি হলেন জিবরীল।

তিনি তোমাদেরকে দীন শেখাতে এসেছিলেন’ (মুসলিম)। এতে বুঝা গেল যে, এই রুকনগুলোসহ আরো যেসব বিষয় এ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে অবগতি লাভ করা দীনের অন্তর্ভুক্ত। কোনো জিনিস অস্তিত্বে আসার আগেই আল্লাহ তাআলার সে সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া এবং ঐ জিনিসটি কিরূপে অস্তিত্ব লাভ করবে তা বিস্তারিত লিখে রাখার নাম তাকদীর। আর তাকদীর সংক্রান্ত একাজটি সম্পন্ন হয়েছে আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই। তাকদীদের উপর ঈমান আনার ক্ষেত্রে একথাটিও মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার অধীনে এবং এগুলোর ক্ষেত্রে কেবল তাঁর ইচ্ছাই কার্যকরী হয়।

সে হিসেবে তাকদীরে বিশ্বাসের অর্থ হবে: যেকোনো বিষয় সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহর চিরন্তন ইলমে তা রয়েছে, এ কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এও বিশ্বাস করা যে, এ মহাবিশ্বে এমন কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই, যা আল্লাহ তাআলার চিরন্তন ইলমের সীমার বাইরে ঘটছে। আল্লাহ তাআলা চেয়েছেন ও জেনেছেন, অতঃপর তাঁর চাওয়া ও জানা অনুযায়ী সকলকিছু ঘটছে এবং ঘটবে। তাকদীরে বিশ্বাস করার মধ্যে একথাও রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুলের ভাগ্য, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন। সহীহ হাদীসে এ রকমই রয়েছে।

আল কুরআনেও এ দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে: إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ‘ নিশ্চয় তা কিতাবে, আর তা আল্লাহর জন্য অতি সহজ’ (সূরা আল হজ: ৭০)। তাকদীরে বিশ্বাসের মধ্যে এ বিষয়টাও রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা যা চেয়েছেন তা হয়েছে। আর যা চননি, তা হয়নি। এ পৃথিবীর সমগ্র মানুষ যদি একত্রিত হয়ে, আল্লাহ যা চাননি তা সংঘটিত করতে চায়, তবে তারা তা পারবে না। বরং কেবল তাই সংঘটিত হবে যা আল্লাহ চান, যা তিনি ইচ্ছা করেন।

বান্দার ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীন। ইরশাদ হয়েছে : وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا ، يُدْخِلُ مَنْ يَشَاءُ فِي رَحْمَتِهِ ‘ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোনো অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি যাকে ইচ্ছা তার রহমতে দাখিল করেন’ (সূরা দাহর: ৩০-৩১)। ইসলামে আকীদায়ে জবর অর্থাৎ মানুষ যা করছে আল্লাহ তাআলা তা করতে বাধ্য করেন, এ জাতীয় কোনো আকীদার স্থান নেই।

প্রকাশ্যভাবে নেই, অপ্রকাশ্যভাবেও নেই। বরং ইসলামী শরীয়ত ও আকীদা অনুযায়ী মানুষ স্বাধীন। মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছায় ভালো ও মন্দের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেয়। যেকোনো একটি পথ বেছে নেয়। আল্লাহ তাআলা ভালো ও মন্দ উভয় পথই পরিষ্কার করে বাতলে দিয়েছেন, দেখিয়ে দিয়েছেন।

যেমন ইরশাদ হয়েছে: وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ ‘আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি’ (সূরা বালাদ: ১০)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا. وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا . ‘যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করল সে সফল হলো। আর যে নিজেকে কলুষিত করল সে ব্যর্থ হলো’ (সূরা শামস: ৯-১০)। কোনো কিছু সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার পূর্ব-অবগতি এবং পূর্ব থেকে লিখে রাখা কোনো অর্থেই বান্দাকে বাধ্য করা নয়। বরং এর অর্থ হলো কোনো কিছু হওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই জানেন এবং তা হবে বলেই তিনি তা লিখে রেখেছেন।

বরং তা বান্দার উপর হুজ্জত বা প্রমাণ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং এ জন্য যে, আল্লাহ তাআলার সুপরিব্যাপ্ত ইলমের বাইরে কোনো কিছুই ঘটেনা, কখনো ঘটবেও না। আমাদের সমাজে এমন একটি দল আছে যারা গুনাহ করার পর তকদীর দ্বারা দলীল দিয়ে থাকে। নিজের পাপের জন্য তাকদীরকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায়। অর্থাৎ তারা মনে করে যে, কোনো গুনাহের কর্ম তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে বলেই তা সংঘটিত হয়। ফলে তারা যা ইচ্ছে তাই করে।

পরে যখন তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয় কিংবা তিরস্কার করা হয় তখন বলে, এটা তাকদীরের ফয়সালা। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, সবকিছুই আল্লাহর চিরন্তন ইলম ও ফয়সালা অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু গুনাহের কাজ করে তাকদীরকে অজুহাত হিসাবে পেশ করা কখনো উচিত নয়, এটা সুস্পষ্ট গোমরাহী। কারণ : ১. তাদের প্রত্যেকেই হয়তো তাকদীরকে বান্দার জন্য হুজ্জত বা দলীল মনে করে অথবা করে না।

তাকদীর যদি বান্দার জন্য হুজ্জত হয় তবে তা সমস্ত মানুষের জন্য হুজ্জত হবে। কারণ তারা সকলেই তাকদীরের মধ্যে শরীক। এমতাবস্থায় এমন কাউকে কোনো প্রকার বাধা দেওয়া যাবে না, যে কারো উপর অত্যাচার করছে, কাউকে গালি দিচ্ছে, কারো সম্পদ লুণ্ঠন করছে, কারো চৌহদ্দীকে নষ্ট করছে, মারামারি করছে এবং কারো সন্তান-সন্ততি বা সম্পদ ধ্বংস করছে। এ দলের লোকেরা সবাই মিথ্যুক। কারণ তাদের প্রত্যেকেই উপরে বর্ণিত কাজগুলোকে নিন্দা ও অপছন্দ করে এবং এগুলোর বিরোধিতা করে।

এই নিন্দা ও বিরোধিতার ক্ষেত্রে কেউ তাদের বাধা দিলে তারা রাগ- গোসসায় ফেটে পড়ে এবং তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। হারামকর্ম সম্পাদনকারীর জন্য তাকদীর যদি প্রমাণ হতো তাহলে তাকে নিন্দা না করার প্রয়োজন ছিল। কারো ব্যাপারে বলা যেতো না যে, সে জালেমÑ সে যাই করুক না কেন, যত অন্যায়ই করুক না কেন! আর এরূপ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কেননা মানুষ যদি এরূপ করা শুরু করে তাহলে বিশ্বজগত ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং প্রমাণিত হলো, এ দলের বক্তব্য যুক্তি ও শরীয়ত উভয় দৃষ্টিতেই কুফরী।

এবং তারা তাদের এ কথায় মিথ্যুক ও প্রতারক যে, তাকদীর বান্দার জন্য হুজ্জত। ২. তাকদীর যদি বান্দার জন্য হুজ্জত হতো তাহলে তো এটা আবশ্যক হতো যে, ইবলীস, ফিরআউন, কওমে নুহ ও কওমে আদসহ যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাদের গুনাহের কারণে ধ্বংস করেছেন তারা সবাই মাযুর বা অপারগ বলে সাব্যস্ত হবে। অথচ তাদেরকে মাযুর মনে করা এমন কুফরী যার ব্যাপারে সকল মিল্লাতের অনুসারীই একমত। ৩. যদি তাকদীর বান্দার জন্য হুজ্জত হতো তাহলে তো এটাও আবশ্যক হতো যে, আল্লাহর ওলী ও দুশমন, মুমিন ও কাফির, জান্নাতী ও জাহান্নামীর মাঝে কোনো ব্যবধান থাকবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: وَمَا يَسْتَوِي الأعْمَى وَالْبَصِيرُ. وَلاَ الظُّلُمَاتُ وَلاَ النُّورُ. وَلاَ الظِّلُّ وَلاَ الْحَرُورُ. وَمَا يَسْتَوِي الأحْيَاءُ وَلا الأمْوَاتُ ‘ দৃষ্টিমান ও দৃষ্টিহীন সমান নয়।

সমান নয় অন্ধকার ও আলো। সমান নয় ছায়া ও তপ্তরোদ। আরও সমান নয় জীবিত ও মৃত’ (সূরা ফাতির: ১৯-২২)। তিনি আরো বলেন: أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ أَنْ نَجْعَلَهُمْ كَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَاءً مَحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ ‘যারা দুষ্কর্ম করেছে তারা কি মনে করে যে, জীবন ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে আমি তাদেরকে এ সব লোকের সমান গণ্য করব, যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে? তাদের বিচার কতইনা মন্দ!’ (সূরা আল-জাছিয়া২৯)। এর দ্বারা বুঝা গেল, কেউ যদি নাফরমানী করে, পাপ ও অন্যায় করে এবং তার পাপ ও অন্যায়কে বৈধতাদানের জন্য তাকদীরের দলীল পেশ করে তবে তা হবে মারাত্মক অপরাধ।

৪. আমরা তাকদীরে বিশ্বাস করি তবে দলীল হিসেবে পেশ করি না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাকদীর দ্বারা দলীল পেশ করে তার দলীল বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি তাকদীরের কথা উল্লেখ করে ওজর পেশ করে তার ওজরও গ্রহণযোগ্য নয়। যদি তাকদীর দ্বারা দলীল পেশ করা গ্রহণযোগ্য হতো তাহলে ইবলীস এবং অন্যদের থেকেও তা গ্রহণ করা হতো। তাকদীর যদি বান্দাদের জন্য হুজ্জত হতো তাহলে কোনো মাখলুককে শাস্তি দেওয়া হতো না।

দুনিয়াতেও না, আখেরাতেও না। এমনিভাবে চোরের হাত কাটা এবং হত্যাকারীকে হত্যার পরিবর্তে হত্যা করাও হতো না। কোনো অপরাধীর উপর হদ্ বা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হতো না। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতো না এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধও করা হতো না। ৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের ঠিকানা জান্নাতে অথবা জাহান্নামে লিখা হয়ে গেছে।

তখন তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে কি আমরা আমল বর্জন করব না এবং আমাদের কিতাবের উপর ভরসা করব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন ‘না, আমল করতে থাকো। আর প্রত্যেকের জন্য ঐ আমল করা সহজ হবে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে (বুখারী ও মুসলিম)। অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ যে আমল করে এবং কষ্ট স্বীকার করে সে ব্যাপারে আপনার কী অভিমত? এ ব্যাপারে কি কলম শুকিয়ে গেছে এবং আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হয়েছে? নাকি তারা যা করছে নতুনভাবে করছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, ‘এ ব্যাপারে কলম শুকিয়ে গেছে এবং আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে আমল করে লাভ কি? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমল করতে থাকো। আর প্রত্যেকের জন্য ঐ আমল করা সহজ হবে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ (বুখারী)।

৬. আল্লাহ তাআলা সবকিছু জানেন এবং তিনি যা জানেন তাই লিখে রেখেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন যে, অমুক ব্যক্তি ঈমান আনবে এবং নেক-কাজ করবে। ফলে সে জান্নাতে যাবে। আবার আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে লিখে রেখেছেন যে, সে গুনাহের কাজ করবে এবং জাহান্নামে যাবে। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা জানেন বলে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, অমুক ব্যক্তি একটি মেয়েকে বিয়ে করবে এবং তার সাথে সহবাস করবে।

ফলে তার সন্তান হবে এবং আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, সে আহার করবে এবং তৃপ্ত হবে। এমতাবস্থায় কেউ যদি একথা বলে যে, আমি যদি জান্নাতী হই তবে তো আমার আমলের কোনো প্রয়োজন নেই, আমল ছাড়াই আমি জান্নাতে যেতে পারব; তাহলে তার একথা বাতিল বলে সাব্যস্ত হবে। কেননা সে জানে যে, সে তার নেক-আমল দ্বারা জান্নাতে যাবে। এখন যদি সে আমল ছাড়া জান্নাতে দাখেল হয় তাহলে তা আল্লাহ তাআলা যা জানেন এবং তিনি যা ফয়সালা করে রেখেছেন তার বিরোধী হবে link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।