আমার ব্লগ আমি আমার ডায়েরীর মতো করে ব্যবহার করি। এখানে আমি একটা গল্প অথবা কবিতা লিখতে পারি, অথবা আজকে কিসের তরকারী দিয়ে ভাত খেলাম, সেইটাও লিখতে পারি। । সাধারনত মেয়েরা ছেলেদের মাথায় লম্বা লম্বা চুল পছন্দ করে কি না, মাখনের জানা নেই। তবে ব্যাপারটা মাখনের একদম ভাল্লাগেনা।
তবুও মাখনকে চুলগুলো লম্বা লম্বা রাখতে হয়েছে একমাত্র প্রেমিকার চাপে। ছেলেদের মাথায় লম্বা লম্বা চুল, মাখনের প্রেমিকার মারাত্মক পছন্দ। ইদানিং মাখনের কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। লম্বা লম্বা চুল থাকলে, রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় নিজেকে কেমন যেন মেয়ে মেয়ে লাগে। রাস্তার লুলু পাবলিকেরা মেয়ে মনে করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কিনা, সেই দুশ্চিন্তায় রাতে মাখনের ঘুম হয়না।
গভীর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে, মাখন হিজরা হয়ে গেছে। অতঃপর এলাকার যুব সমাজকে টিজিং করে চলছে। এই দুঃস্বপ্ন দেখে মাখনের ঘুম ভেঙে যায়। ধড়মড় করে লাফিয়ে ওঠে ঘুম থেকে। বুকটা হাঁসফাঁস করে।
মাথার বিরক্তিকর চুলগুলো মুখের সামনে ঝুলতে থাকে। হালকা ডিমলাইটের আলোতে চুলগুলোকে কেমন সোনালী সোনালী লাগে।
রিক্সায় মাখন বসে আছে। পাশে তাঁর সুন্দরী প্রেমিকা। মৃদু বাতাসে মাখনের চুলগুলো বারবার গার্লফ্রেন্ডের গোলাপী রঙের নরম গালে গিয়ে লাগছে।
মাখনের গার্লফ্রেন্ড, চুলের হালকা ছোঁয়া পেয়ে ঢুলুঢুলু চোখে মাখনের দিকে তাকায়। মাখনের কাছে মনে হয়, কোনো ছেলে বুঝি তাঁর দিকে বদ নজর দিচ্ছে। মাখন আর কালবিলম্ব না করে, রিক্সা থেকে হুট করে নেমেই পেছন দিকে দেয় এক দৌড়! মাখনের গার্লফ্রেন্ড ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে যায়। ঢুলুঢুলু চোখে মাখনের দৌড়ে চলে যাওয়া পথের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রাতে মাখন পড়ে যায় মহা বিপদে।
জানালার পর্দা দেখে মনে হয়, বাতাসে লম্বা লম্বা চুল দুলছে। ফ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখে, চুল ঘুরছে। বুক শেলফের দিকে তাকিয়ে দেখে, গোছা গোছা চুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাখন চিৎকার করে মেঝেতে বসে পরে। মাথার ঝাঁকুনিতে লম্বা লম্বা চুলগুলো তাঁর চোখের সামনে এসে পরে।
তাই দেখে মাখন আবারও চিৎকার দেয়। মাখন কি করবে বুঝতে পারেনা। এই অবস্থার জন্য একমাত্র গার্লফ্রেন্ডকেই দায়ী করে। একশ একটা গালি দেয় গার্লফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে। গার্লফ্রেন্ডের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।
মাখন সিদ্ধান্ত নেয়, এইরকম প্রেমিকা তাঁর দরকার নেই। সেই রাতেই মাখন তাঁর মাথাটাকে ন্যাড়া করে ফেলে। একটা বিদায়ী ছ্যাকানামার সাথে চুলগুলোকেও একটা প্যাকেটে ভরে। তারপর পাঠিয়ে দেয় মাখনের কালনাগিনী প্রেমিকার উদ্দেশ্যে। ন্যাড়া হয়েও মাখনের চুলভীতি দূর হয়না।
মাখন অদৃশ্য যন্ত্রনা পেতেই থাকে।
আজকে বোধহয় পূর্ণিমা রাত। হালকা বাতাস বইছে। মাখনের প্রেমিকা বারান্দায়, একটা চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়েছে। আকাশে মেঘেদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।
বৃষ্টি হতে পারে। তবে চাঁদটাকে খুব ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। মাখনের প্রেমিকার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে, আজকের চাঁদের আলোটা নীল। মাখনের প্রেমিকা যেখানে বসে আছে, তার সামনে একটা ছোট্ট চায়ের টেবিল। টেবিলের ওপর মাখনের লম্বা লম্বা চুলগুলো রাখা।
চাঁদের নীল আলোতে চুলগুলোকেও কেমন নীলচে দেখাচ্ছে। মাখনের প্রেমিকার কয়েক ফোটা চোখের জল, টুপ টুপ করে মাখনের চুলের ওপর আছড়ে পড়ে ভিজে যাচ্ছে। আজকে একবছর, মাখন যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পৃথিবী থেকে চলে গেছে। রেখে গেছে একগোছা চুল অথবা একটা লুতুপুতু গল্প।
ওদিকে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
ঝুম বৃষ্টি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।