আমি কিছুই না..... আবার অনেক কিছু । লেখাটি পড়তে হলে আপনার একটি কাজ করতে হবে, মাউস দিয়ে ক্লিক করতে হবে লিংকের উপর। ক্লিক যখন করছিই, চলুন , জানি সেই লোক টার কথা যিনি এটা আবিষ্কার করে নিভৃতেই দিন কাটাচ্ছেন। যিনি এই মাউস আবিষ্কার করেও তার পেটেন্ট এর জন্য একটি টাকাও নেন নি ।
ডগলাস কার্ল এঙ্গেলবার্ট
একজন আবিষ্কারক, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট পাইওনিয়ার।
১৯২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন ।
কলেজ এ পড়াশোনা করার মধ্যবর্তী সময়ে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকান নৌবাহিনী তে যোগ দেন একজন রাডার টেকনেশিয়ান হিসেবে এবং ২ বছর কাজ করেন ।
এসময় ভ্যানেভার বুশ নামক একজন লেখকের,
তাকে অনুপ্রেরনা জোগায় এবং তিনি দেশে ফেরেন।
তখন তিনি তার স্নাতক ডিগ্রি নেন ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ ।
গবেষকের আবির্ভাব:
১৯৫১ সালে ডগলাস বুঝতে পারেন যে তার কোন লক্ষ্য, নেই ভাল পড়ালেখা আর ভাল চাকুরী করা ছাড়া।
তার ভেতর আবিষ্কারের নেশা টা শুরু থেকেই ছিল ।
তিনি কম্পিউটার সম্পর্কে জানতেন যা ছিল তখনকার সময়ে একটা বিস্ময়কর চিন্তা । কারন মাথায় রাখতে হবে এটা ১৯৫০ এর কথা।
তিনি কল্পনা করেন , বুদ্ধিমান লোকজন একটি " ডিসপ্লে ওয়ার্কিং স্টেশনে" কাজ করছে, সমাধান করছে কঠিন সব ধাধা তাদের তথ্যের সাহায্যে, ভ্রমন করছে বিশাল তথ্য ভান্ডার, অর্থ্যাৎ একটি আধুনিক কম্পিউটারের
এইসব চিন্তা তার জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় যখন কম্পিউটার শুধু সংখ্যা গণক যন্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।
তিনি তার এম.এস এবং পি.এইচ.ডি শেষ করে ফেলেন ১৯৫৫ এর ভেতর ।
গ্রাজুয়েশন এর সময় তিনি ক্যলিফোর্নিয়া ডিজিটাল কম্পিউটার প্রোজেক্ট এ কাজ করেন । এ সময় তিনি অনেক পেটেন্ট বানান ।
পি.এইচ.ডি শেষ করার পর তিনি ২ বছর শিক্ষকতা করেন এবং বুঝতে পারেন এই কাজ করে তিনি তার লক্ষ্য পুরন করতে পারবেন না। কারন তার ভেতরে ছিল আবিষ্কারের নেশা যা শুরু তেই ধারনা পেয়ে যাবেন।
তিনি তখন তার কিছু পি.এইচ.ডি রিসার্চ বানিজ্যিক ভাবে ছাড়া শুরু করলেন, কিন্তু পরে তিনি এটা বন্ধ করেন এবং পরবর্তী তে তিনি ডিভাইস গুলো তার গবেষনার জন্য ব্যাবহার করবেন বলে ঠিক করেন , যার স্বপ্ন তিনি ১৯৫১ সাল থেকে দেখছিলেন ।
১৯৫৭ সালে তিনি স্টানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিউট এ কাজ করা শুরু করেন । তিনি হিউয়েট ক্রেইন এর সাথে ম্যাগনেটিক ডিভাইস নিয়ে কিছুদিন কাজ করেন। এখানে বলাবাহুল্য, ক্রেইন হচ্ছেন পাইওনিয়ার, ইলেকট্রনিক ট্রাকিং সিস্টেম, আই মুভমেন্ট ট্রাকিং সিস্টেম এর, যা এখন সিকিউরিটি সিস্টেমে ব্যাবহৃত হয়। ডগলাস এবং ক্রেইন খুব ভাল বন্ধু ছিলেন।
মাউস আবিষ্কারের শুরুয়াত:
অগমেন্টেশন রিসার্চ সেন্টার এ ডগলাস
স্টানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিউট এ কাজ করার সময় তিনি একটি ল্যাব বানান, " অগমেন্টেশন রিসার্চ সেন্টার" ।
তিনি ১ ডজনের মত পেটেন্ট তৈরী করেন , বেশীর ভাগ তার ডক্টরেট করার সময়ের গবেষনা থেকে।
তিনি সব মিলিয়ে, তার পরবর্তী গবেষনার জন্য কাজ ঠিক করেন এবং নাম দেন " Augmenting Human Intellect: A Conceptual Framework"
তিনি একটি গবেষনা টীম গঠন করেন এবং প্রতিটি গবেষনার পেছনের চালনাশক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন।
১ম কম্পিউটার মাউস হাতে ডগলাস এঙ্গেলবার্ট।
মাউসের কার্যকারিতা উপস্থিত দর্শকদের দেখাচ্ছেন ডগলাস এঙ্গেলবার্ট।
১৯৬৮ সালের ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর অগমেন্টেশন রিসার্চ সেন্টারে ফল জয়েন্ট কম্পিউটার কনফারেন্সে (এফজেসিসি) মার্কিন বিজ্ঞানী প্রথম মাউস ব্যবহার করেন।
প্রায় ৯০ মিনিট ধরে তিনি ও স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা মাউসের কার্যকারিতা উপস্থিত দর্শকদের দেখান। সেদিনের সেই মাউসটি ছিল কাঠের তৈরি এবং তাতে শুধু একটি বাটন ছিল। এঙ্গেলবার্টের সহায়তায় ১৯৬৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার মাউসের প্রটোটাইপ উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানী বিল ইংলিশ। পরে ১৯৬৫ সালে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ড. জেফ রুলিফসন। ১৯৬৮ সালে মাউসের উদ্বোধন করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে ১৯৮১ সালে।
মাউসের পেটেন্ট এটা কে তিনি "X-Y position indicator for a display system" বলেন তার পেটেন্ট এ । ডগলাস এঙ্গেলবার্ট এটাকে মাউস হিসেবে আখ্যা দেন, কারন এটার পেছনে লেজ এর মত ছিল, যদিও তার গবেষনা টীম এটাকে বাগ ডাকতেন ।
এটার পেটেন্ট তৈরী তিনি করলেও তিনি কোন রয়ালিটি পান নি ।
তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি তখন জানতেন না এটার মূল্য, পরে তিনি শুনতে পান স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এটার লাইসেন্স অ্যাপল এর কাছে ৪০,০০০ ডলারে বিক্রি করেছে।
১৯৭৬ সালে অন্ধকারে পরেন ডগলাস , তার ল্যাব এর রিসার্চার রা আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে তাকে ছেড়ে এবং যোগ দিতে থাকে Xerox PARC কোম্পানী তে।
মতের অমিল শুরু হয় তরুন প্রোগরামার দের সাথে ।
গবেষনায় বাধা
১৯৭৬ সালে অন্ধকারে পরেন ডগলাস , তার ল্যাব এর রিসার্চার রা আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে তাকে ছেড়ে এবং যোগ দিতে থাকে Xerox PARC কোম্পানী তে। মতের অমিল শুরু হয় তরুন প্রোগরামার দের সাথে
ভিয়েতনাম এর যুদ্ধ এবং নাসার অ্যাপোলো অভিযানের পর সরকার তার ল্যাব এর গবেষনার জন্য অর্থ প্রদান কমানো শুরু করে ।
এর ফলে বন্ধ হওয়ার পথে চলে যায় তার ল্যাব, পরবর্তী তে তা আর্টিফিসিয়াল রিসার্চার দের হাতে তুলে দেয়া হয় তার গঠিত ল্যাব । ডগলাস কে কাজ করতে হয় তাদের অধীন এ, অনেকটা নিজ ঘরে পরবাসী এর মত ।
গবেষনার থেকে তাদের বানিজ্যিক উদ্দেশ্য ছিল বড় ।
ল্যাব এর নামও পরিবর্তন করে ফেলে টাইমশেয়ার করা হয় ।
একইসময়ে ডগলাসের বাড়ি তে আগুন লাগে, যা তাকে আরও দূর্বল করে দেয় ।
আরও বিভিন্ন কারনে , ডগলাস এঙ্গেলবার্ট ১৯৮৬ সালে আর কাজ করবেন না বলে জানান কারন বানিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকলে তিনি তা অনেক আগেই শুরু করতে পারতেন । কাজ পাগল এই লোকের হাতে পেটেন্ট এর অভাব ছিল না ।
আবিষ্কারের নেশা, একটু বেশীই ছিল তার ভেতর । কিছুদিন পর তিনি তার মেয়ে কে নিয়ে শুরু করেন বুটস্ট্রাপ ইনস্টিউট, এখান থেকে তিনি তার আইডিয়া, রিসার্চ নিয়ে ১৯৮৯-২০০০ পর্যন্ত স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে সেমিনার করে আসছিলো নিয়মিত ।
তিনি এখনও গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন, লিখেছেন বই, তার আইডিয়া নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার করছেন ।
অনেকটা নিরবেই....... হয়তো অনেকটা নিরবেই চলে যাবেন..... আর আমরা, মাউসের ক্লিক করবো, তার নাম জানবো ও না...তাই লিখে ফেললাম তার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে..
আগ্রহী দের জন্য ইউটিউবের কয়েকটি ভিডিও লিংক দিলাম, এতে ৯০ মিনিটের একটি পাবলিক ডেমোনস্ট্রেশন দেখতে পারবেন "অনলাইন" ধারনা কে কেন্দ্র করে।
সূত্র: স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ওয়েবসাইট/উইকি/গুগল ইমেজ/পত্রিকা/ইউটিউব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।