খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... সরকারি মালিকানাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০টি ডেভেলপম্যান্ট কূপ ও ২ টি অনুসন্ধান কূপ খননের কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। রাশিয়ান জায়ান্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় গ্যাজপ্রম অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক সম্পদ তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে কাজ করছে। ইউরোপের অনেক জায়গায় বিশেষ করে পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, বৃটেন, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডে গ্যাজপ্রমের সরব উপ¯িহতি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ক্ষেত্রগুলোতেও গ্যাজপ্রম কাজ করছে।
ভেনিজুয়েলা, ভারত, ভিয়েতনাম, বলিভিয়া, লিবিয়া ও আলজেরিতেও গ্যাজপ্রম প্রকল্প ভিত্তিক কাজ করছে। গ্যাজপ্রমের অভিঙতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক এ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে প্রচলিত গ্যাস ফিল্ডগুলোর উন্নতিকরনের কাজ করাতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়ার সফরেই বিষয়টির অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার বন্ধুপ্রতীম সাহায্য আমরা অবনত মস্তকে স্বীকার করি।
হয়তো এই জন্যই প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়ার প্রতি অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে। কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই গ্যাজপ্রমকে ডেকে আনা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায় যেহেতু আওয়ামীলীগ একটা নির্বাচিত সরকার এবং জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচিত। তাই যেকোন প্রকল্প গ্রহনের পূর্বে দেশের স্বার্থটাকে বিবেচনা আনাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে প্রতীয়মান। গ্যাজপ্রমকে দিয়ে কাজ করানো দুষের কিছু না।
আন্তর্জাতিক মানের এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের লদ্ধ ঙান প্রয়োগে গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন করতেই পারে। তবে যেহেতু একটা চুক্তির মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করতে আসছে। নিশ্চয়ই সে চুক্তির যথার্থতা নির্নয় প্রথম পক্ষ মানে বাংলাদেশের সরকারেরই দায়িত্ব। গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তিতে প্রতিটি উন্নয়নমুলক কূপ খননে সরকারকে ২০০ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে। তার মানে ১০টি ডেভেলপম্যান্ট কুপ খননে গ্যাজপ্রমকে ২০০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে গ্যাজপ্রমের নিজস্ব কোন বিনিয়োগ নেই। তাছাড়া কূপ খননের পূর্বে ও পরে কোন প্রকার র্দুঘটনা ঘটলে তার দায় দায়িত্ব কে নিবে? গ্যাজপ্রম না সরকার? অনেকটা দায়ছাড়া ভাবে গ্যাজপ্রমকে কাজ দিতে সরকারের বিশেষ মহল উঠে পড়ে লেগেছে। এতো বড়ো একটা কাজে কোন টেন্ডার নেই। গ্যাজপ্রমের চুক্তিতে ক্ষতিপুরন শব্দটির কোন প্রয়োগ নেই। তবে ক্ষতি পুরনের পরবর্তীতে এককোটি ডলারের বীমা করার একটি ক্লজ রাখা হয়েছে ।
আসলে পৃথিবীর কোন দেশেই তেল গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে বীমার ব্যাপারটি নেই। বাংলাদেশ বীমার সুযোগ রাখা একটি হাস্যকর যুক্তির পায়তারা ছাড়া অন্য কিছু নেই। ২০০০ কোটি টাকার কাজে মাত্র ৭০ কোটি টাকার সেফটি বীমা। এটাতো পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়। গ্যাজপ্রম দিয়ে কেন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়ন কূপ খনন করতে হবে? তা বোধগম্য নয়।
কেন বাপেক্সকে দিয়ে এ কাজ করানো যায়না? বাপেক্সেরতো ৫টি ডেভেলপম্যান্ট ও ২টি অনুসন্ধান রিগ রয়েছে। যা দিয়ে অনায়াসে দুই তিন বছরের কর্ম পরিকল্পনায় ১০টি উন্নয়ন কূপ খনন করা যায়। ক্ষতি পুরন বিষয়ক গ্যাজপ্রমের প্রস্তাবে স্বয়ং বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এবং পুরো বিষয়টি আরো পরিস্কার করার জন্য মন্ত্রনালয় প্রস্তাবটিকে পেট্রোবাংলায় ফেরত পাঠায়। কিন্তু পেট্রোবাংলা প্রতিমন্ত্রীর দেয়া আপত্তিকে আমলে নেয়নি।
যে দরে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়া হচ্ছে তা অন্য যেকোন কোম্পানী থেকে বেশি। সূত্র মতে, গ্যাজপ্রম প্রথমে বাপেক্সের ৫টি অনুসন্ধান কূপ খননে দর নির্ধারন করে ৯৫ কোটি ১১ লাখ ডলারের কিছু বেশি। প্রতিটি কূপের জন্য গড়ে খনন ব্যয় ধরা হয় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পেট্রোবাংলার অন্যদুটি কোম্পানী বিজিএফসিএল ও এসজিএফএল‘র ৫টি কূপের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ২৪ লাখ ডলার। প্রতিটি কূপ খননের গড় দর ২০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
তবে এ দর নিয়ে খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় আপত্তি জানালে গ্যাজপ্রম পরবর্তীতে ২ শতাংশ দর হ্রাস করে নতুন প্রস্তাব পেশ করে। আর নির্ধারিত হ্রাসকৃত দরেই গ্যাজপ্রম ও পেট্রোবাংলার চুক্তিটি করা হয়েছে। চুক্তিটি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছে তেল গ্যাস বন্দর বিদ্যুত রক্ষা কমিটি। স্বয়ং মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীমহোদয়েরও আপত্তি রয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। তাই চুক্তিটির স্বচ্ছতা নিরুপনে কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।
যেখানে বাপেক্সকে দিয়ে কাজ করানো যায় সেখানে বাইরের কোন কোম্পানীকে সংযুক্ত না করাই ভালো। সেটা যতো ভালো কোম্পানীই হোকনা কেন। খবরে প্রকাশ, সেভরন বাপেক্সকে দিয়ে তাদের কয়েকটি কূপ খননে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যেখানে সেভরন বিদেশী কোম্পানী হয়ে কূপ খননে বাপেক্সের সাহায্য চাচ্ছে বা বাপেক্সকে কনসালটেন্ট হিসেবে পেতে চাচ্ছে। সেখানে বাপেক্সের কূপ খননে বাইরের কোম্পানী নিয়োগ দেয়ার কি যথার্থতা রয়েছে তা বোধগম্য নয়।
তারপরও যদি বিষয়টিতে একাধিক কোম্পানীর প্রতিযোগীতার মাধ্যমে উপযুক্ত কোম্পানীকে বেছে নেয়া হতো তাহলে ভিন্ন ব্যাপার ছিল। প্রাকযোগ্যতা যাচাই বাছাই না করে গ্যাজপ্রমকে কাজ দেয়া কতোটা প্রাসঙ্গিক তা হয়তো ভবিষ্যতেই জানা যাবে। আমরা রাষ্ট্রিয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর সংস্কার চাই। কেননা এসব ক্ষেত্রগুলোতে অধিক পরিমানে প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। ঠিকমতো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ও পুরাতন কূপগুলোর অপর্যাপ্ততার কারনে চাহিদামতো গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছেনা।
তাই নতুন কূপ খননে ভালো মানের মজুদ প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলবে। কিন্তু বিশাল অংকের অর্থের বিনিময়ে বিদেশি কোম্পানীকে দিয়ে কাজ করানো কতোটা আর্থিকভাবে সফলতা বয়ে আনবে তা প্রশ্নের মুখোমুখিই রেখে দিয়েছে ভবিষ্যতকে।
হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলামিস্ট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।