খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... গ্যাজপ্রমের কারণে বাপেক্স দেউলিয়া হয়ে পড়বেনাতো?
হাসান কামরুল
রাশিয়ার রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। শুধু রাশিয়াই নয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও গ্যাজপ্রম কাজ করছে। গ্যাজপ্রমের যেমন খ্যাতি রয়েছে তেমনি রয়েছে নানান অঘটন ঘটানোর রেকর্ড। সম্প্রতি রাশিয়ান এই প্রতিষ্ঠানের সহিত বাংলাদেশি রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার চুক্তি হয়েছে। চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকটি নিবন্ধ লিখেছি ভোরের কাগজ, সংবাদ ও যুগান্তরে ।
গ্যাজপ্রমের চুক্তি নিয়ে বললে অনেক কথাই বলা যায়। যা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত নিবন্ধগুলোতে সবিস্তারে নিবন্ধীত হয়েছে। চুক্তিটি যে আদতে খুব একটা অর্থবহ চুক্তি সেটা বলা যাচ্ছেনা। কারণ গ্যাজপ্রমকে এ সেক্টরে ডেকে আনা হয়েছে। তাদের কোন বিনিয়োগ নেই।
অর্থাৎ গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসছেনা। আসছে টাকা বানাতে। অনেকটা গ্যাজপ্রমকে দিয়ে দেশিয় কতিপয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠির টাকা বানানোর কাজটিও সম্পুর্ণ হবে। যাই হোক কি হবে না হবে তা হয়তো সামনের দিনগুলোতেই আরো বেশি স্পষ্ট হবে। কথা ছিল গ্যাজপ্রমকে দিয়ে ১০ টা উন্নয়ন কূপ খনন করানো হবে।
যার জন্য বাংলাদেশকে প্রতিটি উন্নয়ন কূপের পিছনে ২শ কোটি করে টাকা খরচ করতে হবে। ১০ টা কূপের জন্য ২ হাজার কোটি টাকা গ্যাজপ্রমকে দিতে হবে। অতিপ্রচলিত একটা প্রবাদ এ দেশে চালু আছে তা হলো ছেলের মরছে বউ আর মেয়ের মরছে জামাই যা গেছে তা পরের উপর দিয়েই গেছে। অতএব এসব নিয়ে আপসোস করতে নেই। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব যে কতো দুর পৌছাইছে তা গ্যাজপ্রমের চুক্তি দিয়ে কিছুটা অনুমান করা যায়।
সরকার মুখে বলছে দেশিয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে শক্তিশালীকরণের কথা আর ভিতরে ভিতরে সিন্ডিকেট দিয়ে জনগণের ভ্যাট ট্যাক্সের টাকায় বাপেক্সের কাজ দেয়া হচ্ছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে। যে কাজ বাপেক্সকে দিয়ে করালে প্রতিটি উন্নয়ন কূপের পিছনে খরচ হতো ২কোটি টাকা। সেই কাজই করানো হচ্ছে ২শ কোটি টাকা দিয়ে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাপেক্সের কর্মকর্তাদের সহিত কথা বলেছি তারা আমাকে বলেছে বাপেক্সের বর্তমানে যে ক্যাপাসিটি বা কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে একাজ বাপেক্স দিয়ে অনায়াসেই করানো যেত। বাপেক্সের কাজ অন্যকে দিয়ে করানোর কোন জাস্টিফিকেশন বা উপযোগীতা নেই।
বাপেক্সের কূপ খননের জন্য বাহির থেকে কোম্পানী ডেকে আনাকে বাপেক্সের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারাও ভালো চোখে দেখছেনা। এক্ষেত্রে বাপেক্সেরও করার কিছু নেই। কারণ বাপেক্স পেট্রোবাংলার সাবসিডিয়ারি কোম্পানীমাত্র। পেট্রোবাংলা যে সিদ্ধান্ত দিবে বাপেক্স সেটা পালন করবে। এর বেশি কিছু বাপেক্সের হাতে নেই।
বাপেক্স চাইলেও এসব চুক্তির বিরোধিতা করতে পারবেনা। কারণ বাপেক্সের কন্ট্রোলিং পাওয়ার পেট্রোবাংলার হাতে। আবার পেট্রোবাংলাকে নিয়ন্ত্রন করছে মন্ত্রী উপদেষ্টারা। তাই আমলাতন্ত্রের জটিলতায় পুরো গ্যাস সেক্টর। তারপরও আশার কথা এ আমলে বাপেক্সের হাতে কাজ আছে।
বাপেক্সের টিমগুলো এখন ফিল্ডে রয়েছে। অর্থাৎ বাপেক্সের কেউ অলস বসে নেই।
গ্যাজপ্রম বাপেক্সের ৫ টা কূপ খনন করবে। কূপগুলো হলো কুমিল্লার দাউদকান্দির মুরাদনগরে সদ্য আবিস্কৃত হওয়া শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ডের একটি, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ফিল্ডে একটি, ও সুন্দলপুরে একটি, সেমুতাংয়ে একটি ও ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে একটি মোট পাচটি উন্নয়ন কূপ খনন করবে গ্যাজপ্রম। এজন্য গ্যাজপ্রমকে ১ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে।
যেহেতু বাপেক্সের নিজস্ব ফান্ডের অব¯হা ততটা ভালোনা তাই পেট্রোবাংলা বাপেক্সকে এই ১হাজার কোটি টাকা ঋন হিসেবে দিবে । যার জন্য প্রতিমাসে বাপেক্সকে সুদ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করতে হবে। আর সম্পুর্ণ টাকা পরিশোধের মেয়াদকাল হচ্ছে ১০ বছর। বাপেক্স প্রতিবছর সুদ বাবদ পরিশোধ করবে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থাৎ কিস্তি পরিশোধের মেয়াদশেষে বাপেক্স এর মোট পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ দাড়াবে প্রায় ১১শত কোটি টাকা। যার কারণে বাপেক্স দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে।
কারণ বাপেক্স একটি সায়েন্টিফিক প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন ¯হানে তেল গ্যাস অনুসন্ধানই বাপেক্সের কাজ। বাপেক্সের নিজস্ব কোন গ্যাসক্ষেত্র নেই যা থেকে বাপেক্সের আয় হতে পারে। যেটা বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল গ্যাজপ্রম চলতি মাস অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ড্রিলিং কাজ শুরু করবে কিন্তু যতোটুকু জানা গেছে তাতে গ্যাজপ্রমের ড্রিলিং ইন্সট্রুমেন্ট বা খনন যন্ত্রপাতিই এখনো বাংলাদেশে পৌছায়নি। চুক্তি অনুযায়ী গ্যাজপ্রমের যন্ত্রপাতি আনা নেয়া বাবদ যতোটাকা লাগবে তা পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে।
গ্যাজপ্রমের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে বাংলাদেশে খনন যন্ত্রপাতি রিগ ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতি শিপমেন্টের জন্য রাশিয়াতে বিডিং কল করা হয়েছে। বিডিং প্রক্রিয়া শেষ করে যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে পৌছাইতে আরো মাস তিনেক লাগতে পারে বলে পেট্রোবাংলা আন-অফিসিয়ালি জানিয়েছে। বিজিএফসিএল ও এসজিএফএলের পাচটি কূপ খননে পেট্রোবাংলা নিজস্ব উৎস থেকে ১ হাজার কোটি টাকা প্রদাণ করবে। সেক্ষেত্রে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে কোন প্রকার সুদ বা ইন্টারেস্ট গুনতে হবেনা। কিন্তু বাপেক্সকে দিতে হবে।
আর এ বিষয়টি নিয়ে বাপেক্সের কর্মকর্তারা পেট্রোবাংলা ও মন্ত্রনালয়ে দেনদরবার করেও কোন সুরাহ করতে পারেনি।
পরে যদি বাপেক্স দেনার দায়ে র্জজরিত হয়ে পড়ে তাহলে বাপেক্সের কর্মস্পৃহায় ভাটা পড়বে। বাপেক্সকে ১হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে। এতে করে বাপেক্স হয়তো ঝিমিয়ে পড়বে। বাপেক্সের তরুন বৈঙ্ঞানিকদলটির ভবিষ্যতও হুমকির মুখে পড়বে।
বেতন ভাতার দায় মেটাতে গিয়ে বাপেক্স না জানি দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এমন ভয়টাও মন থেকে তাড়ানো যাচ্ছেনা। আর সত্যি সত্যি যদি বাপেক্স অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় তাহলে এই সেক্টর বহুজাতিক কোম্পানী নির্ভর হয়ে পড়বে যা কোনভাবেই শুভ সংবাদ হতে পারেনা। তাই বাপেক্সকে রক্ষা করতে হবে। গ্যাজপ্রমকে কাজ দিতে গিয়ে বাপেক্সের সর্বনাশটা যেন না হয় তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। আমরা চাই বাপেক্স শক্তিশালি হোক এবং বাপেক্সকে শক্তিশালী করতেই হবে।
কারণ বাপেক্স নির্ভর গ্যাস সেক্টর নিয়ে জাতি ক্রমশই আশাবাদি হয়ে উঠছে। আর এই আশাবাদকে জিইয়ে রাখতে হবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। আর যেকাজ বাপেক্স করতে পারে সেকাজে বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানোর মনমানসিকতা পরিহার করতে হবে। বাপেক্সের কর্মস্পৃহায় জাতি উদ্ভাসিত হোক এমন প্রত্যাশা এদেশের সকল মানুষের। মনে রাখতে বাপেক্স ধীরে ধীরে গণমানুষের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।
তাই এর গতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকারকে আরো বেশি বাপেক্স নির্ভর মনোযোগ দিতে হবে।
পাদটিকা: দৈনিক ভোরের কাগজে গত ৮ অক্টোবর প্রকাশিত “
শ্রীকাইল-সুনেত্র গ্যাস ফিল্ড ও কামতার ভবিষ্যৎ“ নিবন্ধ নিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড: হোসেন মনসুর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আমার ব্যক্তিগত মেইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের পাঠানো বার্তাটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:
প্রিয় হাসান কামরুল ১৫ অক্টোবর ২০১২ সময় দুপুর: ১২:২৩ মিনিট
ভোরের কাগজে গত ৮ অক্টোবর ২০১২ ইং তারিখে প্রকাশিত আপনার লেখায় আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়েছে। ধন্যবাদ গ্যাস সেক্টর নিয়ে আপনার পজেটিভ রিপোর্ট করার জন্য। আপনি কামতার ভবিষ্যৎ ও রুপগঞ্জ স্ট্রাকচার বা অবকাঠামো নিয়ে দুশ্চিন্তিত।
প্রথমে কামতা কূপ ফ্লাকন্ড এলাকা হওয়ায় তা ক্রেস্টাল জোন থেকে অনেক দূরে অব¯িহত এবং কামতা কূপ-১ এ ভূগর্ভ¯হ পানি চলে আসায় আমরা তা পরিত্যক্ত ঘোষনা করা করেছি। রুপগঞ্জে কূপ খনন করা হবে পুরো স্ট্রাকচার বা অবকাঠামোর ক্রেস্ট জোনে। তাছাড়া আমরা ইতিমধ্যেই রুপগঞ্জে কূপ খননের কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে তা বৃষ্টির জন্য কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। বাখরাবাদ কূপ-৯ এ কাজ সম্পুর্ণ হওয়ার পর ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রুপগঞ্জে পুণরায় খনন কার্য শুরু হবে ।
আবারো আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
হোসেন মনসুর, চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা।
হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলামলেখক।
যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।