আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাতভ্রমণ থেকে মধ্যরাতে শয্যাগ্রহণ, অতি সাধারণ থেকে প্রাজ্ঞজন---সর্বত্রই দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা। কথা উঠছে জনগণ কর্তৃক হরতাল গ্রহণ-বর্জন নিয়ে।

গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার। এইমাত্র প্রাতভমণ সেরে এলাম। আমি যেখানে প্রাতভ্রমণে যাই অর্থাৎ ফার্মগেট বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে মহিলা প্রাতভ্রমণকারীর সংখ্যাই বেশী। দলে দলে হাঁটেন তারা। আমি ছয়জনের একটা দলের পাশাপাশি হাঁটছিলাম।

স্বভাবতই তাদের কথাবার্তা কানে আসে। মনযোগী হই তাদের আলোচনার প্রতি। অন্যদিন সাধারণত এই আলোচনায় উঠে আসে তাদের ঘরকন্নার গল্প। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় যতটুকু কানে আসে ততটুকুই। এর বশী মনযোগী হই না।

কিন্তু আজ তাদের কথোপকথন শুনার জন্য তাদের হাঁটার গতির সাথে আমার হাঁটার গতির তাল মিলালাম। কেন এমনটা করলাম তা নীচের লেখাটা পড়লেই বুঝবেন। তাদের খন্ড খন্ড আলাপচারিতা যতটুকু মনে আছে নীচে তুলে ধরলাম। ---এই হরতাল আমরা চাই না। দেশটাকে ছারখার করে ছাড়ল।

---আমরা হাসিনা-খালেদা কাউকেই চাইনা। দুইটাই শয়তান। দেশের কথা কেউ ভাবেনা। ---আসলে এখন দেশের জন্য দরকার একজন পুরুষ মানুষের। এরশাদ আসলে ভালো হয়।

মানুষ এখন ওরে ভোট দিব। ---এরশাদের সময় নাই। আর দাঁড়াতে পারব না। ---ফখরুদ্দিন আসলেই পারে। হাসিনা-খালেদারে কেউ একটা ভোটও দিব না।

---ফখরুদ্দিন আসব কেমনে? ওরে তো মামলা দিয়া দৌড়ের উপর রাখছে। ---মইনুদ্দিন আসুক না। আমরা ভোট দিমু। ---আরে এ ই তো আসল শয়তান। হাসিনারে তো এই ক্ষমতায় আনছে।

আর এখন কি করতাছে দেখেন। সুরঞ্জিতের চুরিরে ধামাচাপা দেবার জন্য এক মহিলার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে। ---আমার সাহেব বলছিল। ইলিয়াস আলীকে নাকি হাসিনার লোকেরাই উঠাইয়্যা নিয়া লুকাইয়া রাখছে। ---ছেলেটার পরীক্ষা।

আর ভালো লাগেনা। দেখেন আজকেও হরতাল দিছে। ---আপনার -আমার অসুবিধা নিয়ে কি হাসিনা ভাবে। হে দেখে নিজের স্বার্থ। ভোটটা নেবার সময় তো আমাদের কাছ থেকে নিয়েই গেছে।

এখন বলে জনগণ তার সাথে আছে। হরতাল প্রত্যখান করেছে। আর একবার ভোটের সময় আসুক না। দেখাইয়া দিমু। ---আর বলে কি হবে ? ভোট তো আমরাই দিছি এদেরকে।

হয় আমি দিছি, না হয় আপনি দিছেন। ----সরকার বললেই হবে। দেখেন নাই কেমন হরতাল হইতেছে। টিভিতে দেখলাম। এয়ারপোর্টের সামনের রাস্তাটা, যেটা সব সময় জ্যাম লেগে থাকে।

কালকে দেখলাম একটা গাড়িও নাই। ---কিন্তু প্রত্যেকদিন হরতাল দিলে কেমনে চলবে। সাহেব কইছে বাজারে জিনিসপত্রের দাম হরতালের কারণে আবার বাড়তাছে। ---এখন না হরতালের কারণে বাড়ল। দেখেন না সরকারের যখনই ইচ্ছা হয় তেলের দাম বাড়াইয়া দেয়, গ্যাসের দাম বাড়াইয়া দেয়, বিদ্যুতের দাম বাড়াইয়া দেয়।

মনে হয় যেন হের বাপে এগুলো কামাই কইরা রাইখা গেছিল। এরপর এই আলোচনা ক্রমে হাসিনা-খালেদাকে ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে রূপ নেয়। সেই আক্রমণের ভাষা অনেকক্ষেত্রেই শালীনতার মধ্যে থাকেনি। তাই আর লিখলাম না। তবে প্রসংগক্রমে আমার ব্যক্তিগত সামান্য মতামত তুলে ধরলাম।

প্রত্যেক সরকারের আমলে আমরা দেখেছি বিরোধী দল হরতাল পালনের পর বলে হরতাল সফল হয়েছে। আর সরকারী দল বলে জনগণ হরতাল প্রত্যাখান করেছে। নিজ নিজ পক্ষে সবাই সাফাই গাইতেই পারে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে তারা সবাই জনগণের প্রতিনিধি। জনগণের ভোগান্তির কথাটাই তাদের আগে ভাবা উচিত।

এটা ভুলে গেলে চলবে না যে তাদের সফলতা-বিফলতা নির্ভর করছে সাধারণ জনগণের উপর। গতকালের হরতালের একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা এ প্রসংগে শেয়ার করতে চাই। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী গতকাল আমার অফিসে আসে একজন ভারতীয় মহিলা। বিমান বন্দর থেকে তাকে আনতে গিয়েছিল আমার এক কলিগ। হরতালের কারণে বিমান বন্দর থেকে রিকশা করে তারা ফিরছিল দিলকুশা অফিসে।

দৈনিক বাংলা মোড়ে আসতেই এক হোন্ডা আরোহী মহিলার ল্যাপটপটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। অথচ চারপাশে তখন অসংখ্য পুলিশ ও র্যাবের কর্মীরা গিজ গিজ করছে। এবার ভাবুন আমাদের কি অবস্থা ? বিদেশী এই মহিলার কাছে দুই দলের অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।