আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি-জি) মুঠোফোন এখন সবার হাতে হাতে, তা দিয়ে কাজ সেরে নেওয়া যায় ........................................................................................... যুবকদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্বের হতাশা। .

০ ০ ০ ০ ০ ০ ০ ০ ০ ০ ০ ‘মোবারক হো, ঘর কি সামনে কাম হো গয়ি’ (অভিনন্দন, বাড়ির সামনেই কাজ হয়েছে। ) গত বছরের ১৬ আগস্ট ভোপালের মানবাধিকার কর্মী শীলা মাসুদকে খুনের পরই এ কাজে মধ্যস্থতাকারী সাকিব আলী মুঠোফোনে এভাবেই নিশ্চিত করেন বিষয়টি। গান্ধীবাদী আন্না হাজারের সমর্থক শীলাকে খুন করে ভাড়াটে খুনিরা। শীলা ছাড়াও মুম্বাইয়ের সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে, চেন্নাইয়ের মানবাধিকারকর্মী এস ভুবনেশ্বরন, পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ী হিরা আনসারীও ভাড়াটে খুনির হাতে খুন হন। মুম্বাই অপরাধ জগতের ভাড়াটে খুনের কাহিনি নিয়েই ২০০২ সালে রাম গোপাল ভার্মা তৈরি করেন ‘কোম্পানি’ ছবিটি।

অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রকেরা নিজে না করে ভাড়াটে লোক দিয়ে খুন করাচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশ ও বিহার ভাড়াটে খুনির অভয়ারণ্য। পুরো প্রক্রিয়াটি কীভাবে হয় তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে। এখন এ পেশায় নেই এমন ভাড়াটে এক খুনির মুখেই শোনা যাক সেই লোমহর্ষক কাহিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভাড়াটে খুনি জানান, অপরাধীচক্র মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারে এমন লোকদের ভাড়া করে।

তারা এ কাজের জন্য কমিশন পায়। মধ্যস্থতাকারী খুনের জন্য যাবতীয় আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করে। এসব অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায় বিহারের মুঙ্গেরে। শীলাকে খুনের জন্য মধ্যস্থতাকারী সাকিব নেন তিন লাখ রুপি। উত্তরপ্রদেশের তিনজন বন্দুকধারী মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল শহরে বাড়ির সামনেই পয়েন্ট থ্রি টু বোরের পিস্তল দিয়ে শীলাকে হত্যা করে।

ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার জাহিদা পারভেজকে। অথচ ভারত জুড়ে একের পর খুনের ঘটনা ঘটলেও রাজ্য পুলিশ ভাড়াটে খুনের কোনো তথ্য নথিভুক্ত করে না বা এ খুনের জন্য অর্থের পরিমাণ যে দিনকে দিন বাড়ছে তার তথ্যও পুলিশের কাছে নেই। শীলার খুনের ঘটনায় আটক হয়েছেন ইরফান। নানা অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে কানপুরের বিভিন্ন থানায় প্রায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে। কানপুরের মোলগঞ্জের ব্যবসায়ীর ছেলে ইরফান হিরোইন পাচারের সঙ্গেও জড়িত।

সতীশ কালিয়া, আরেক ভাড়াটে খুনি। কাজ করেন মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছোটা রাজনের হয়ে। তিনি সাংবাদিক জ্যোতির্ময়কে হত্যা করে। কালিয়া নিজ রাজ্য কেরালা ছেড়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করতেই মুম্বাই যান। খুনিরা যাকে খুন করবে বলে ঠিক করে তাদের গতিবিধি ও বাসভবনের আশপাশে কয়েক দিন ধরে নজর (রেকি) রাখে।

আশিকের ভাড়া করা লোক ইরফান এবং তাঁর দুই সহযোগী শানু ও সেলিম খুনের তিনদিন আগ থেকে শীলার ওপর নজর রাখছিলেন। কালিয়া গত বছরের জুনে রাজনের কাছ থেকে স্লোভাকিয়ার তৈরি একটি পিস্তল সংগ্রহ করে। এরপর মুম্বাই গিয়ে জ্যোতির্ময়ের অফিস ও বাড়ির ওপর নজর রাখেন। ১০ জুন রাজনের সহযোগী বিনোদ আসরানী জ্যোতির্ময়কে চিনতে সাহায্য করে। পরদিন বাড়ির সামনেই জ্যোতির্ময়কে গুলি করে খুন করা হয়।

কাজ শেষে খুনিরা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দেখা করে টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয়। সাংবাদিক জ্যোতির্ময়কে খুন করে কালিয়া তাঁর ছয় সহযোগীকে নিয়ে বিভিন্ন শহরে ‘তীর্থযাত্রায়’ যান। আবার অনেক সময় চুক্তির পরও নতুন তথ্য যুক্ত হলে বেড়ে যায় চুক্তির টাকা। যেমনটা ঘটেছিল জ্যোতির্ময়ের বেলায়। প্রথম অবস্থায় তাঁকে সরাতে কালিয়ার সঙ্গে দুই লাখ রুপির চুক্তি হয়।

কিন্তু টিভি দেখে কালিয়া জানতে পারেন জ্যোতির্ময় নামী সাংবাদিক। তখনই চুক্তির অর্থ বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ রুপিতে। শহর ও ঝুঁকি ভেদে টাকার অঙ্কের হেরফের হয়। উত্তরপ্রদেশে ৫০ হাজার থেকে শুরু হয়ে তা ঠেকে পাঁচ লাখ রুপিতে। ওই একই কাজ তামিলনাড়ুতে শুরু হয় ১০ হাজারে।

আনসারীকে খুনের জন্য ভাড়াটেরা নেন ৫০ হাজার রুপি। টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের (সামাজিক বিজ্ঞান) সুমিতা সরকার ও অরবিন্দ তিওয়ারি, মুম্বাইয়ের দুই হাজার সংঘবদ্ধ অপরাধের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য হলো ৬০ শতাংশ ভাড়াটে খুনির বয়স ৩৫-এর নিচে এবং এর ৯৬ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক গণ্ডি পেরোতে পারেননি। চেন্নাই হাইকোর্টের অপরাধবিষয়ক আইনজীবী ভি. বালু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এখন ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি-জি) মুঠোফোন এখন সবার হাতে হাতে, তা দিয়ে কাজ সেরে নেওয়া যায়।

কাজ শেষে তাদের অর্থ জমা হয় ব্যাংক হিসাবে। ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক কে এল গুপ্ত বলেন, ‘এর মূল কারণ রাজ্যের বিশেষ করে পূর্বের জেলাগুলোতে যুবকদের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্বের হতাশা। ’ রাজ্য ভেদেও ভাড়াটে খুনের টাকার হেরফের হয়। মুম্বাই পুলিশের অপরাধ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, উত্তরপ্রদেশের কোনো ভাড়াটে খুনি দিল্লিতে গিয়ে খুন করলে পায় পাঁচ হাজার রুপি। ওই কাজ মুম্বাইয়ে করলে তার পকেটে যায় ১৫ হাজার রুপি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একজনকে হত্যার জন্য মুম্বাইয়ে ভাড়াটে খুনিদের দাবি ২৫ লাখ রুপিতে গিয়ে ঠেকে। ’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।