আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছুমিত এবং ফেসবুক প্রেম

I m not WIERD, I m just a LIMITED ADDITION কাজী পাড়ায় ছুমিতের বেশ নামডাক। ছুমিত পান-বিড়ি খায় না, চা-কফি খায় না, লাল পানি খায় না এমনকি মাঝে মাঝে ফ্রেশ পানিও খায় না। পাড়ার মুরব্বিদের কাছে ছুমিত রীতিমত জনপ্রিয় এক নাম। এইতো সেদিন পাড়ার মুদি দোকানদার আবুল কাকা তার সদ্য জন্ম নেয়া মেয়ের নামও ছুমিত রেখে দিলেন। সবাই হা হা করে ছুটে এল, "আরে কর কি, কর কি? মেয়ের নাম কোনদিন ছুমিত হয়?" কাকাও বলে দিলেন, "কবে না কবে ছেলে হয়, আদৌ হয় কি না, সে জন্যে কি বসে থাকব?" নাহ, অকাট্য যুক্তি।

সবাই চুপ করে গেল। এই যখন অবস্থা তখন পাড়ার ছেলে মেয়েদের কাছে ছুমিত হল বিরক্তি এর সমার্থক শব্দ। ছেলেমেয়েরা খেতে পারে না। মা বলে, "ছুমিতের মত হও। " খেলতে পারে না।

বাবা বলে, "ছুমিতের মত হও। " এমনকি ঘুমাতে গেলেও মা-বাবা চিত্‍কার দিয়ে বলে, "ছুমিত তো এত তাড়াতাড়ি ঘুমায় না, তুমি ঘুমাও কেন?" মা-বাবার এহেন যন্ত্রণা অন্য সবার চেয়ে আমাকেই বেশী সহ্য করতে হয়। কারণ ছুমিত যে আমার ক্লাশমেট। আমার মা তো সারাদিন ছুমিত ছুমিত করে। ভয় হয় কোনদিন না আবার নিজের ছেলের নামই ভুলে যায়।

এই ছুমিতের জন্য আমরা ফেসবুকেও ঠিকমত টাইম দিতে পারি না। কারণ ছুমিতের কোন ফেবু আইডি নাই । এক বিকেলে আমরা মানে দেশ ও জাতি এবং কাজী পাড়ার ভবিষ্যত্‍ কর্ণধারেরা ঠিক করলাম যেভাবেই হোক ছুমিতের একটা ফেবু আইডি খোলাই লাগবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে, মানে ছুমিতকে রাজি করাবে কে? সে তো ফেসবুকের ঘোর বিরোধী। অতঃপর এক রুদ্ধদার বৈঠকে অনেকগুলো আলুপুরি আর শিংগাড়া, কড়া লিকারের দুধ চা খেয়ে সিদ্ধান্ত হলো যে ছুমিতের ফেবু আইডি খোলার দায়িত্ব আমার কাধেঁ।

রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নাই। কয়েকদিন পর এক বিকেলে ছুমিতের সাথে দেখা। আমি তখন কানে হেডফোন দিয়ে আমার ইয়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। ছুমিত আমার পাশে ধীরে সুস্থে বসলো, আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল। তারপর বেশ গাম্ভীর্যের সাথে ঘোষণা দিল, "দোস্ত, আমি তো ফেসবুকে আইডি খুলছি।

" আমি প্রথমে টাস্কিত হলাম, নিজের গায়ে চিমটি কাটলাম, তারপর তার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে কোনমতে বললাম, "কস্কি মমিন? কেমনে কি?" ছুমিত শুরু করল, "আরে আমার খালাত বোনের একটা বান্ধবী আছে না, ঐ যে ছোট মামার বিয়েতে যারে দেখলি, সে ই খুলে দিছে। তারপর নিজেই আমারে ফ্রেন্ড রিকু পাঠাইছে। এখন প্রায়ই আমরা চ্যাট করি। " আমি বললাম, "শালা, সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিংকিং ওয়াটার, তলে তলে এদ্দুর? আর আমরা কিছু জানি না। " "আরে না, বেশিদিন হয় নাই।

কিন্তু একটা সমস্যা, মেয়ে এখন দেখা করতে চায়। " আমরা ঘাগু ফেসবুকার, বিনামূল্যে উপদেশ দিলাম, "টাইম এন্ড টাইড ওয়েট ফর নান। সুযোগ থাকতে আরো কিছু মেয়েরে এড রিকু পাঠায়া দে। তারপর এই মেয়ের সাথে দেখা করিস। " এরপর দুই সপ্তাহ ছুমিতের কোন দেখা নাই।

গেলাম তার বাসায়। তার চেহারা দেখে আঁতকে উঠলাম সবাই। দেবদাস ছবিতে কেন যে শাহরুখরে কাষ্ট করছে বুঝি না? ছুমিতের এই চেহারা দেখলে পরিচালকেরা দেবদাসের রিমেক বানানোর জন্য পাগল হয়ে যাবে। সবাই ধরলাম, "কাহিনী কি রে?" ছুমিত বলল, "কাহিনী বেশি কিছু না। আমি একটা বহুভুজ প্রেমে পড়ছিলাম।

আমি যারে ভালবাসতাম সে বাসে আরেক ছেলেরে, ঐ ছেলে আরেক মেয়েরে, ঐ মেয়ে আরেক ছেলেরে, ঐ ছেলে আরেক মেয়েরে, ঐ মেয়ে আরেক....." আমরা বলি, "হইছে, থাম এইবার। শোন কবি বলেছেন- বাস, ট্রেন আর নারী এই তিনের পিছনে দৌড়ায়া লাভ নাই, একটা গেলে আরেকটা আসে। তুই নতুন একটা ধর। " ছুমিত আবার নব উদ্দোমে প্রেমের খাতায় নাম লিখাল। এবার সে কাজী পাড়ার হার্টথ্রব সুন্দরী মীরাকে ফেবুতে এড মারল।

কিন্তু ব্যাটা বিসমিল্লায়ই ফেল। আমরা অনেক চাপাচাপি করেও আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারি নাই। শেষে মীরাকে গিয়ে ধরতেই থলের কালো বিড়াল বেড়িয়ে আসল। ছুমিত নাকি মীরাকে মেসেজ দিয়েছিল- "tumi onek sundor. tomar hasi dekhle ami thik thakte pari na. i love u mira. plz, plz, aapu amar love rqst accpt koro." ছুমিতকে আমরা সান্তনা দিলাম, "মীরার সাথে তোর লাক খারাপ ছিল। বেটার লাক নেক্সট টাইম।

আবার ট্রাই কর। কবি কি বলেছেন?- "পরাজয়ে ডরে না বীর, ছ্যাঁকায় ডরে না প্রেমিক। " ছুমিত আবারো ফেবুর এক সুন্দরীর প্রেমে পড়ল। ঐ সুন্দরীকে ট্যাগ মেরে রোমান্টিক ষ্ট্যাটাস দেয়, নিজের হিরো মার্কা ছবিতে ট্যাগ দেয়। এমনকি তার কষ্টে গড়া পেজ "ভালবেসে কেউ দেউলিয়া হয় না" এর এডমিনশিপও ঐ মেয়েকে দিয়ে দিছে ।

কিন্তু অনেক অনুনয় করেও মেয়ের সাথে দেখা করতে পারে না। অবশেষে একদিন মেয়ে দেখা করতে রাজি হয়। ছুমিত ফুলবাবুটি সেঁজে, গায়ে AXE বডি স্প্রে মেখে যায় দেখা করতে। আমরা অধীর আগ্রহে বসে থাকি কখন ছুমিত আসবে। ছুমিত আসে ঠিকই, কিন্তু তার মুখে হাসি নাই, গায়ে শার্ট নাই, পড়নে প্যান্ট নাই।

"ঘটনা কি রে?" "দোস্ত ঐটা ফেক আইডি ছিল। বুঝতে পারি নাই। এক পোলা ঐ আইডি চালাইত। আমারে পুরা খুইল্যা দিছে। " আমরা বললাম, "থাক ঐটা ভুইল্যা যা, নতুন আরেকটা......." "ঐ শালারা থাম, আর যদি কেউ প্রেমের নাম নিছস আমার সামনে, কুপামু তারে।

" অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা আর কিছু বলে ভাগলাম। অনেকদিন পর ছুমিতের প্রোফাইলে ঢুকেছিলাম সেদিন। আইডি নাম "কাজী ছুমিত সারোয়ার" এর জায়গায় লেখা "কাজী ছুমিত এখন ছারখার। " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.