সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ মন্ত্রী হিসাবে আর বহাল নেই। সংবিধানের ৫৮(১) (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। ফলে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসাবেও তাদের মন্ত্রিসভায় রাখার কোন সুযোগ নেই। এমনকি মন্ত্রীর পদমর্যাদার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ, গাড়িতে-বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন সকল কিছুই অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ অভিমত আইন বিশেষজ্ঞের।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারি-স্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পদত্যাগ করামাত্র মন্ত্রীর পদ শূন্য হয়ে যায়। আইন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক ইউনিভার্ির্সটির স্কুল অব ল’র পরিচালক ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগপত্র নাকচ করার কোন সুযোগ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নেই।
গত ১৬ এপ্রিল রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধির ৩(৪) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। যদিও মন্ত্র্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে কার্যপ্রণালী বিধির ৩(৪)এর যে ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে উক্ত বিধিতে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার কোন বিধান নেই।
ওই বিধিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী একটি বিভাগ বা মন্ত্রণালয়কে একাধিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিতে পারবেন। ওই বিধিতে দায়িত্ব দেয়া বা দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার কোন ক্ষমতা নেই।
অন্যদিকে তিন বছর আগে ২০০৯ সালের ৩১ মে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সরকারি নথি এবং লেনদেনের খাতায় তিনি এখনো প্রতিমন্ত্রী হিসাবে বহাল রয়েছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জানিয়েছেন, ওনার ( সোহেল তাজ) পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি।
এজন্যে তিনি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে বহাল আছেন।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার কৃষক লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর না করেন, ততক্ষণ রেলমন্ত্রী তার পদে থাকবেন। কিন্তু আমরা তা করিনি। তাকে সরিয়ে দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেছি। সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাইনি।
তিনি এখনো দপ্তরবিহীন মন্ত্রী রয়ে গেছেন।
তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই মন্ত্রী যেদিন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন, সেদিনই তাদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি - (ক) তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন। ’
ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সংবিধানের ৫৮(১)-এর (ক) অনুচ্ছেদটি খুব স্পষ্ট। এখানে বিতর্কের কোন সুযোগ নেই।
যে কোন মন্ত্রী তার পদ থেকে পদত্যাগ করামাত্রই তার এই পদ শূন্য হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানে যেসব শপথধারী (সাংবিধানিক) পদ রয়েছে তাদের কোন যোগদানপত্র দিতে হয় না। মন্ত্রী হিসাবে শপথই তাদের যোগদানপত্র। তিনি বলেন, তারা যে ভাষায়ই লিখেন না কেন ‘পদত্যাগ করলাম’ এ শব্দকটি থাকলেই পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং পদ শূন্য হবে। যে কারণে মন্ত্রীরা পদত্যাগ করামাত্র পতাকা নামিয়ে বাড়ি ফেরেন।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখানে পদত্যাগপত্র গ্রহণ বা নাকচের কোন সুযোগ নেই। প্রজ্ঞাপন জারি করে পদ শূন্য করা করণিক কাজ। এক কাজ করা হয় জনগণকে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে অভিহিত করার জন্য। করণিক কাজ সম্পাদনে বিলম্বের জন্যে পদের শূন্যতা অপেক্ষায় থাকে না।
এটি সরকারি চাকরি নয়। পদত্যাগ করেলই সাংবিধানিক পদ শূন্য হয়। তিনি বলেন, কেউ পদত্যাগ করলে তাকে পুনরায় মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিতে সংবিধান কোন বাধা নয়। কিন্তু পুনরায় নিয়োগের পর তাকে আবার শপথ নিতে হবে। শপথ ছাড়া মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ কার্যকর হয় না।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, দেশটা কারো জমিদারি নয়। একজন লোক পদত্যাগ করলেন আর তার পদত্যাগপত্র ঝুলিয়ে রাখা হলো- জনগণের করের টাকায় যে ব্যক্তি তার পদে নেই তাকে বেতন এবং সুযো- সুবিধা দেয়ার অধিকার কারো নেই। যদি কেউ সেটি করেন, তাহলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে।
(লেখক: সালেহ উদ্দিন, দৈনিক ইত্তেফাক থেকে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।