সমকাল প্রতিবেদক ঃঃঃঃঃ----
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক সমুদ্রজয় নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। নিজেরা কেবল নিতে জানবেন, জনগণকে কিছুই দিতে জানবেন না_ এটা হতে পারে না।
সংবিধানবিরোধী শক্তি আর যেন ক্ষমতায় এসে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আমাদের দায়িত্বই হচ্ছে, এদেশে সংবিধান লঙ্ঘন করে আর কেউ যেন ক্ষমতা দখল করতে না পারে, মানুষের যে ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি, সেটা যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে। বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে
সমুদ্রজয় উপলক্ষে যুবসংগ্রাম পরিষদের যুব-গণসংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সমুদ্রজয় বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতার নেতিবাচক ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্য, বিএনপি নেত্রী ধন্যবাদ দিয়েও ফিরিয়ে নিলেন। এখন তিনি সমুদ্রজয়ে কী পেলাম না পেলাম, সেটা নিক্তি দিয়ে মাপার চেষ্টা করছেন। অথচ তিনি ক্ষমতায় থাকতে জনগণের অধিকার আদায়ের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। কিছুই অর্জন করতে পারেননি। আজ যখন আমরা অর্জন করলাম, তখন এটা নিয়ে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় যেমন কার্যকর হয়েছে, তেমনি মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শেষ করে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে দেশবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন তিনি।
শেখ হাসিনার এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে বর্ণাঢ্য এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। গোটা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ সংলগ্ন এলাকাকে রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও বেলুন দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। স্টেডিয়ামের ভেতরে বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চটিও ছিল মনোরম সাজে সজ্জিত।
তিন স্তরের মঞ্চের পেছনের দিকসহ স্টেডিয়ামের ভেতরে কয়েকটি বিশাল এলসিডি স্ক্রিনের সাহায্যে গোটা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। স্টেডিয়ামের বাইরে সমবেত মানুষকে অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ দিতে কয়েকশ' মাইক স্থাপন করা হয়।
দুপুর ২টায় মূল সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হলেও দুপুর ১২টা থেকেই সংবর্ধনা মঞ্চে গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরও আগে থেকেই সারাদেশের যুবলীগসহ যুবসংগ্রাম পরিষদভুক্ত সাত যুব সংগঠন এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। হাজার হাজার সাধারণ মানুষও এতে যোগ দেন।
বিকেল নাগাদ মানুষের ভিড় স্টেডিয়াম উপচে আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেল সাড়ে ৪টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা মঞ্চে এসে পেঁৗছানোর সঙ্গে সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে রঙিন কাগজ, বেলুন ও শত শত পায়রা উড়িয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। উচ্ছ্বসিত মানুষ দাঁড়িয়ে ও করতালি দিয়ে সমুদ্রজয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। এলসিডি স্ক্রিনে সমুদ্রজয়সহ প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন এবং তার বিশ্বশান্তির দর্শন বিশ্ব অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে যুবলীগের প্রচার কার্যক্রমের ওপর নির্মিত ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। এ সময় অনিক ও তার দলের আকর্ষণীয় নৃত্যের সঙ্গে 'দেশ দিয়েছে জাতির পিতা, সাগর দিলে তুমি' শীর্ষক স্বাগত সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাবিনা ইয়াসমীন ও অ্যান্ড্রু কিশোর।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মানপত্র পাঠ ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম। শেখ হাসিনার হাতে সম্মাননা স্মারকও তুলে দেওয়া হয়। সমুদ্রজয়ের অর্জন সফল করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে যুবসমাজের শপথ গ্রহণ ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক।
মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের মীমাংসা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া ও ঐতিহাসিক সমুদ্রজয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ বিজয় বাঙালির বিজয়, দেশের জনগণের বিজয়। এর মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
২০০৮ সালে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন ও জনগণের সেবা করার সুযোগ দিয়েছিল বলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কর্মকর্তা ও বিদেশি আইনজীবীসহ জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজের এ গণসংবর্ধনার মাধ্যমে দেশের জনসাধারণকেই সংবর্ধিত করা হয়েছে।
বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ না নিয়েই তারা বিভিন্ন গ্যাস ব্লক ভাগ করে জনগণকে ভাঁওতা দিয়েছিল। এখন অধিকার প্রতিষ্ঠার পর এ বিশাল অঞ্চলে সব সম্পদের মালিক দেশের জনগণ। এখন সমুদ্রে নতুন করে গ্যাস ব্লক ও তেল ব্লক নির্দিষ্ট করে অনুসন্ধান ও আহরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কেউ আর আমাদের বাধা দিতে আসবে না।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালেই আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে গঙ্গাচুক্তির মাধ্যমে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির নায্য হিস্যা আদায় করেছিল। অথচ ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির নায্য হিস্যার কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন।
সরকারের তিন বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করেছে, যাতে জনগণের স্বার্থ রক্ষা হয়। আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।
ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ একদিন ক্ষুধা ও দারিদ্র্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ হয়ে বিশ্বসভায় মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম. যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুবমৈত্রী সভাপতি কিশোর রায়, জাতীয় যুব জোট সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আখতার, জাতীয় যুব ঐক্য সভাপতি খায়রুল আলম এবং যুব আন্দোলন সভাপতি মোশাহিদ আহমেদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।