আমি নতুন কিছু লিখবো Click This Link থেকে বঙ্গোপসাগরের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠা হলো বাংলাদেশের। এ ছাড়া ২০০ নটিক্যাল মাইল ছাড়িয়ে মহীসোপানের বাইরের সামুদ্রিক সম্পদেও বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত হলো। সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।
জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ইটলস গতকাল বুধবার এই রায় দিয়েছেন। জার্মানি থেকে পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাসের বার্তায় বলা হয়েছে, ২১-১ ভোটে স্বীকৃত এই ১৫১ পৃষ্ঠার রায় ইটলসের সভাপতি জোসে লুই জেসাস পড়ে শোনান।
রায়ের মাধ্যমে তেল-গ্যাসসমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমানা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হলো। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই নিকট প্রতিবেশীর তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিরোধেরও নিষ্পত্তি হলো। সালিসি আদালতে দুই বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধের রায়টি দেওয়া হলো।
দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে চলে আসা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো ফলপ্রসূ সমাধান না পাওয়ায় বাংলাদেশ ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর মিয়ানমারের বিপক্ষে আলোচ্য আইনি কার্যক্রমের সূচনা করে। ট্রাইব্যুনালের এই রায় চূড়ান্ত।
আপিল করা চলবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ঐতিহাসিক এই রায়ের ফলে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের অনেকখানি সুরাহা হলো। আর সমতা ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় একই পন্থা অনুসরণ করে ভারতের সঙ্গে বিষয়টি সুরাহার দাবিও জোরালো হলো।
গতকালের রায়ের ফলে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ও সমুদ্রের তলদেশের সম্পদে বাংলাদেশের দাবির পথ সুগম হলো।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমার যে দাবি করা হচ্ছিল, তাতে ১৩০ নটিক্যাল মাইলে আটকে যাচ্ছিল।
এর ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকায় সামুদ্রিক সম্পদে বাংলাদেশের কোনো অধিকার থাকত না।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ইটলসের দেওয়া রায়ের বিরোধিতা করে বলা হয়েছে, উপকূলের যেকোনো এক পাশ থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশকে অধিকার দেওয়ার সুযোগ ট্রাইব্যুনালের নেই। অবশ্য ইটলস মিয়ানমারের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের উপকূলের এক পাশে আছে ভারত, অন্য পাশে মিয়ানমার।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরের সীমানা অর্থাৎ যা ‘মহীসোপানের বাইরের অংশ’ হিসেবে পরিচিত, সেটা নির্ধারণে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের এটাই প্রথম রায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: বঙ্গোপসাগরের জলরাশি ও তলদেশের সম্পদে দেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের ও আনন্দের। রায় হওয়ার পর প্রথম আলোকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এই মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। তিনি গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হামবুর্গ থেকে এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ‘ইটলস ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। ফলে সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা যা যা চেয়েছি, তার সবই পেয়েছি। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রায়ের ফলে সম্প্রসারিত মহীসোপানে সার্বভৌমত্বের সুরাহা হয়ে গেল।
এখন মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণবিষয়ক জাতিসংঘ কমিটিতে (সিএলসিএস) বাইরের সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেলে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সমুদ্রবক্ষে তেল-গ্যাসসহ সম্পদ আহরণে এখনই কাজ শুরু করতে পারে বাংলাদেশ।
এই রায়ের ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘সুদীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রসীমা নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। আমার বিশ্বাস, এই রায়ের ফলে বিষয়টির সুরাহা হওয়ায় অতীতকে পেছনে ফেলে আগামীতে দুই প্রতিবেশীর পথচলা আরও মসৃণ হবে। ’
প্রেক্ষাপট: বঙ্গোপসাগরে দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অমীমাংসিত থাকায় দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সমুদ্র সম্পদ আহরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রায় তিন দশক বিরতির পর ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে আবার আলোচনা শুরু করে। এই প্রক্রিয়া অবশ্য এগোয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্র আইনবিষয়ক জাতিসংঘের কনভেনশন (আনক্লস) মেনেই বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ইটলসে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে ইটলসে মামলা দাখিল করে বাংলাদেশ।
এরপর এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে ইটলসের বিচারিক এখতিয়ার মেনে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মতৈক্য হয়। ২০১০ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ নিজের পক্ষে সব দালিলিক প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করে। আর মিয়ানমার তাদের প্রমাণ জমা দেয় সে বছরের ১ ডিসেম্বর। মিয়ানমারের দাবির বিপক্ষে বাংলাদেশ বক্তব্য উপস্থাপন করে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ। বাংলাদেশের যুক্তির বিপক্ষে মিয়ানমার তাদের বক্তব্য তুলে ধরে ২০১১ সালের ১ জুলাই।
গত বছরের ৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দফায় মৌখিক শুনানিতে নিজেদের পক্ষে দাবিগুলো তুলে ধরে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।