আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণেষের মাথাটা হাতির মাথা হল কি করে? - বিজ্ঞানী ফেল্টু দা!

পথ্য তো রোগীরও লাগে না ভালো! যদিও এটা তার রোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে,তথাপিও! "গণেষের জন্মের কথা মহাভরতের কোন জায়গায় উল্লেখ নাই। গণেষ কি করে পার্বতীর (উমা, দূর্গা) সন্তান হল সে বিষয়েও মহাভারতে কিছু বলা নাই। তবে পুরাণে গণেষের জন্মের নানাবিধ বৃত্তান্ত পাওয়া যায়। শিব পুরাণে বলা হযেছে, মহামায়া দূর্গা (পার্বতী) মহাদেব শিবের কাছে সন্তান কামনা করলে শিব পুত্র উৎপাদনে অস্বীকৃতি জানান। কারণ মহাদেব শিব যেমন তেজস্বী ছিলেন, মহামায়া পার্বতীও তেমনি তেজস্বেনী ছিলেন।

তাই তাদের মিলনে উৎপন্ন সন্তান হবে অধিক তেস্বজী আর সে তেজে তিভুবন ভস্ম হয়ে যাবে। তাই অন্যান্য দেবতারা মহাদেবকে পার্বতীর সাথে মিলিত হতে বারণ করেন। ত্রিজগতের কল্যানের কথা ভেবে মহাদেবও সন্তান উৎপাদন থেকে বিরত থাকলেন। কিন্তু মহামায়া পার্বতী আপন সন্তনলাভে বঞ্চিত হয়ে ঐসব দেবতাদেরকে অভিশাপ দিলেন। এরপর মহামায়া দূর্গা নিজেই জলের পাক থেকে গণেশকে সৃষ্টি করেছিলেন।

আবার কিছু কিছু গ্রন্থ বর্ণনা করেছে, মহামায়া দূর্গা নিজ দেহের ঘমর্াক্ত থেকে গণেষ কে সৃষ্টি করলেন। " "গণেষের মাথা কি করে হাতির মাথা হল। এ নিয়ে অনেক গল্প-কথা আছে ধর্মীয় গ্রন্থ গুলোতে। কথিত আছেঃ মা দূর্গা বালক গণেষকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে দায়িত্ব দিলেন যে, যখন তিনি স্নান (গোসল) করবেন তখন কেউ যেন বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। গণেষ তার দায়িত্ব পালনে ব্রত হলেন।

এমতাবস্থায় ভগবান শিব বাড়ি ফিরলেন এবং গণেষ কর্তৃক বাধা প্রাপ্ত হলেন। ভগবান বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রাগে বিহ্বল হয়ে পড়লেন। এক কোপে গণেষের ধর থেকে মাথাটা বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। কিন্তু পরক্ষণে ভাবলেন, একজন ভগবান হিসেবে এমন ব্যবহার- অপ্রত্যাশিত। সকল জীবের মধ্যে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ভগবানের কাজ।

তাই তিনি গণেষের মৃত দেহে আবার প্রাণের সঞ্চার কররেন-হাতির মাথা জুড়ে দিয়ে। " (সূত্রঃ সনাতন সোসাইটি ডটকম এবং মহাভরতের চরিতাবলী, সূর্যদাস গুপ্ত) - যে ভগবান ছিন্নমুন্ড গনেষের গর্দানে হাতির মাথা জুড়িয়ে দিয়ে প্রাণের সঞ্চার করতে পারেন, সে ভগবানকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মডেল বলা যেতে পারে। কিন্তু আমার ভবনা একটাই, এমন কাজ ভগবান কি করে করলেন? মানুষের গর্দানের তার গুলোর সাথে হাতির তারগুলো কিভাবে জোড়া দিয়েছিলেন? তাছাড়া, হাতির লম্বানাসিকাসহ মাথাটার দৈর্ঘ্য- ব্যাস-বাসার্ধ্য শিশুর মাথার চাইতে নিশ্চয় কিঞ্চিত ছোট্ট নয় আবার সমানও নয়! সেই যদি সম্ভব হত তবে আজ বিজ্ঞান মন্ডুছিন্ন ব্যক্তিদের অনুরোধে ভগবান শিবের নিকট প্রশিক্ষন গ্রহণ করতেন। এর চাইতে ছিন্নকৃত মন্ডুটাই জুড়ে দেওয়া ভগবানের জন্য সহোজ ছিল নাকি? - যে শিব নিজের স্ত্রীকে সন্তান দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করে, স্বয়ং পতি থাকতে পার্বতীকে নিজ দেহের ঘর্মাক্ত থেকে সন্তান সৃষ্টি করতে হয়; সেই অক্ষম দেবতার লিঙ্গ পুজা করে আদৌ কি সন্তান লাভ করা যায়? - ধরে নিলাম ভগবান সৃষ্টির প্রতি করুণা করে সন্তান জন্ম দেবার জন্য মহামায়া দেবীর সাথে মিলিত হননি; কিন্তু এতগুলো ভগবান মিলে কেন পারলেন না তাদের সৃষ্ট ত্রিজগতকে রক্ষা করতে? একজন ভগবান তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকলেই যে ত্রিভুবন নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়; সেখানে ৩৬০ জন ভগবান মিলে কেন সেই কাজটি করতে পারলেন না? কেন অপর ভগবানের এবং ভগবান পত্নীর মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে হল? আমি ভেবে পাই না, এরপরও কেন শিব লিঙ্গের পুজা করা হয়। হয়ত শিব সম্পর্কে পদ্ম পূরাণের এই সব অলৌকিক কাহিনীর জন্যেই...।

রাধানাথ রায় চৌধুরীর পদ্মপুরাণের ভূমিকায় বলা আছেঃ "একদিন পুষ্পবনে গিয়ে শিব শ্রীফল দেখে মুগ্ধ হলেন। সেই ফল ভক্ষণ করার পর শিবের অঙ্গ কামানলে দগ্ধ হতে লাগল। তিনি বাহ্য জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়লেন। সেই সময়ে তার বীর্যপাত হল। বজ্রমুষ্টিতে ধরে সেই বীর্য তিনি পদ্মবনে নিক্ষেপ করলেন।

" "সেই বীর্য হতে জন্মগ্রহণ করলেন এক অপরুপ সুন্দরী কন্যা। তার নাম হল পদ্মবতী। " "সহসা শিবের বীর্য মাটিতে পড়ে এক কন্যার জন্ম হল যার নাম নেতা। " (পদ্ম পুরাণঃ রাধানাথ রায় চৌধুরী, প্রকাশক- শ্রীঅরুণচন্দ্র মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড, ২১ ঝামাপুকুর লেন, কলিকাতা-৯, পৃষ্ঠা নং-১১) - পদ্মবতী, শিব ও পার্বতীর কাছে সন্তানের পরিচয় দিলে তারা অস্বীকার করেন। কিন্তু কেন? ভগবান কি জগতের সকল বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত ছিলেন না।

তিনি কি জানতেন না তার সহসা স্খলিত বীর্য থেকে পদ্মবতীর ও নেতার জন্ম হবে? তাহলে পদ্মবতীকে সন্তান হিসেবে অস্বীকার করার কারণ কি হতে পারে? - স্ত্রীলিঙ্গ ছাড়া কেবলমাত্র পুরুষের বীর্যেই জন্ম লাভ করল পদ্মবতী ও নেতা। এ পর্যায়ে নিশ্চয় বলবেন না মহাদেব শিব- নারী ছিলেন। অথবা তিনি নারী-পুরুষ উভয়ের বীর্য ধারণ করেছিলেন। সেই যাই হোক, জীনতত্ত্বের জনক গ্রেগর যোহান ম্যান্ডেলা শিবের সমসাময়িক সময়ে আসলে নিশ্চয় মহাদেব শিবের উপর বিশেষ গবেষণা চালানোর পর জেনেটিক্সের সূত্র গুলো প্রকাশ করতেন। আর বেঁচে থাকলে হয়ত মহাদেব শিবকে মন্ত্র বলে তুষ্ট করে তার নিকট প্রকট, প্রচ্ছন্ন জীনের পাশাপাশি শিব আবিষকৃত নতুন 'শিবজীনের' শিক্ষা গ্রহণ করতেন।

- শিব যিনি সৃষ্টিকর্তা নন, যাকে বলা হয় জগতের সংহারকর্তা। জগতের সমুদয় বস্তুর (জড়-জীব, প্রাণী-অপ্রাণী) সৃষ্টিকর্তা হলেন ব্রহ্মা। জগতের তাবত বস্তুর পালনকর্তা হলেন বিষ্ণু। তাহলে শিব কিভাবে নিজ দেহ হতে সহসা স্খলিত বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি করলেন? এ পর্যায়ে মহাদেব শিবকে আধুনিক জেনেটিক্সের জনকও বলা যেতে পারে। যে দেবতার বীর্যে সহসা পদ্মবতী ও নেতার জন্ম হয়, সেই মহান দেবতার লিঙ্গ পুজা করলে সন্তান পাওয়ার সম্ভাবনা তো থাকবেই? আর এ জন্যেই হয়ত নিঃসন্তান নারীরা শিব লিঙ্গের পুজা করে, শিব মহা রাত্রি যাপন করে।

তাছাড়া ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণের বিধান মতে যে ভগবান বিষ্ণু ও মহাদেব শিবের লিঙ্গ পূজা করবে না সে নির্দ্বিধায় ব্রহ্মহত্যা পাপে পাপিষ্ঠ হয়। আর ধর্মে পাপের মধ্যে সবচাইতে গুরুতর পাপ হল ব্রহ্মহত্যা পাপ। এ সম্পর্কে ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণের প্রকৃতিখন্ডের অষ্টাবিংশ অধ্যায়ের ২০৩ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- বিষ্ণু আর শিবলিঙ্গে পূজা নাহি করে। ব্রহ্মহত্যা-পাপী হয় পৃথিবী-ভিতরে \\ (ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, পৃষ্ঠা -২০৩, অনুবাাদক - সুবোধচন্দ্র মজুমদার, প্রকাশক- শ্রীঅরুণচন্দ্র মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড, ২১ ঝামাপুকুর লেন, কলিকাতা-৯) ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণ মতে কেবল মহাদেব শিবের লিঙ্গ নয় বরং ভগবান বিষ্ণুর লিঙ্গ পূজাও ধর্মের বিধান। সূত্রঃ "ভ- তে ভগবান, ল- তে লীলা" লেখকঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান http://www.oneallah.org/books.php জন্মকথা § শিবপুরাণ – শিবপুরাণ-এ উল্লিখিত উপাখ্যান অনুসারে, পার্বতী একদিন নন্দীকে দ্বারী নিযুক্ত করে স্নান করতে যান।

এমন সময় শিব সেখানে উপস্থিত হলে, তিনি নন্দীকে তিরষ্কার করে পার্বতীর স্নানাগারে প্রবেশ করেন। এতে পার্বতী অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জল থেকে পাঁক তুলে একটি সুন্দর পুত্রের মূর্তি নির্মান করেন ও সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর নিয়োগ করেন। এরপর একদিন এই কুমারকে দ্বারী নিয়োগ করে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব তথায় উপস্থিত হন। কুমার শিবকে যেতে বাধা দেন।

এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন নারদের পরামর্শে বিষ্ণু কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন। এই সংবাদ শুনে পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে বিশ্বসৃষ্টি বিনষ্ট করতে উদ্যোগী হন। নারদ ও দেবগণ তাঁকে শান্ত করেন।

পার্বতী তাঁর পুত্রের পুনর্জীবন দাবি করেন ও ইচ্ছা প্রকাশ করেন যেন এই পুত্র সকলের পূজ্য হয়। কিন্তু কুমারের মুণ্ডটি তখন আর পাওয়া যায় না। শিব তখন প্রমথগণকে উত্তরমুখে প্রেরণ করেন এবং যাকে প্রথমে দেখা যাবে তারই মস্তক নিয়ে আসতে বলেন। তারা একটি একদন্ত হস্তিমুণ্ড নিয়ে উপস্থিত হন ও দেবগণ এই হস্তিমুণ্ডের সাহায্যেই তাঁকে জীবিত করেন। অনন্তর শিব তাঁকে নিজপুত্র রূপে স্বীকার করেন।

দেবগণের আশীর্বাদে এই কুমার সকলের পূজ্য হন ও গণেশ নামে আখ্যাত হন। [৩৮] § স্কন্দপুরাণ – স্কন্দপুরাণ-এ গণেশের জন্ম বিষয়ে একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণের গণেশ খণ্ডে আছে, সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে। কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ তাঁকে ঘটনাটি জানান।

নারদ এরপর তাকে এর একটি বিহিত করতে বললে, সে নিজের তেজে গজাসুরের মস্তক ছিন্ন করে নিজের দেহে যুক্ত করে। স্কন্দপুরাণ-এর ব্রহ্মখণ্ডে আছে, পার্বতী নিজের গাত্রমল থেকে একটি সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ পুতুল নির্মান করে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পার্বতী তাঁকে নিজের স্নানাগারের দ্বাররক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। শিব স্নানাগারে প্রবেশ করতে গেলে বালক-কুমার তাঁকে বাধা দেন। শিবের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয় ও শিব ত্রিশূলে তাঁর মস্তক ছিন্ন করেন।

[৩৯] এরপর গজাসুরকে সামনে পেয়ে শিব তার মস্তক ছিন্ন করেন তার মস্তক কুমারের স্কন্ধে যুক্ত করেন। স্কন্দপুরাণ-এর অর্বুদ খণ্ডে বলা হয়েছে, পার্বতী গাত্রমল দিয়ে একটি মুণ্ডহীন পুতুল তৈরি করেন। তারপর স্কন্দকে বলেন, পুতুলটির মাথা তৈরির জন্য একতাল কাদা আনতে; এই পুতুল হবে তাঁর ভাই। স্কন্দ কাদা না পেয়ে একটি হাতির মাথা কেটে আনেন। পার্বতী আপত্তি করলেও দৈবযোগে এই মুণ্ডটিই পুতুলের স্কন্ধে যুক্ত হয়।

এরপর শক্তিরূপিনী পার্বতী পুতুলটির জীবনদান করেন। গজমুণ্ডযুক্ত পুতুলের দেহে এক বিশেষ নায়কের ভাব ফুটে ওঠে। এই কারণে শিবের বরে ইনি ‘মহাবিনায়ক’ নামে পরিচিত হন। শিব বলেন, এই কুমার গণাধিপতি হবে ও সকল কাজের আগে এঁর পূজা না করলে কার্যসিদ্ধি হবে না। স্কন্দ এঁকে অস্ত্র কুঠার দান করেন, পার্বতী দেন মোদকপূর্ণ সুগন্ধযুক্ত ভোজনপাত্র।

মোদকের গন্ধে ইঁদুর এঁর বাহন হয়। § বৃহদ্ধর্মপুরাণ – বৃহদ্ধর্মপুরাণ মতে, পার্বতী পুত্রলাভে ইচ্ছুক হলে শিব অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। অগত্যা পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শিব পার্বতীর বস্ত্র টেনে সেটিকেই পুত্রজ্ঞানে চুম্বন করতে বলেন। [৪০] পার্বতী সেই বস্ত্রকে পুত্রের আকার দিয়ে কোলে নিতেই সেটি জীবিত হয়ে ওঠে। তখন শিব পুত্রকে কোলে নিয়ে বলেন, এই পুত্র স্বল্পায়ু।

উত্তরদিকে মাথা করে শায়িত এই শিশুর মস্তকও তৎক্ষণাৎ ছিন্ন হয়ে যায়। পার্বতী শোকাকুল হন। এমন সময় দৈববাণী হয় যে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে আছে এমন কারোর মাথা এনে জুড়ে দিলে তবেই এই পুত্র বাঁচবে। পার্বতী তখন নন্দীকে মস্তকের সন্ধানে পাঠান। নন্দী ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের মাথা কেটে আনেন।

দেবতারা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন। এই মাথাটি জুড়ে শিব পুত্রকে জীবিত করেন। শিবের বরে, ইন্দ্র ঐরাবতকে সমুদ্রে ফেলে দিলে সে আবার মস্তক প্রাপ্ত হয়। শিব ও পার্বতী গণেশকে স্নান করাচ্ছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর কাংড়া চিত্রকলা § ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ – ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী কৃষ্ণকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পার্বতী অনুরূপ একটি পুত্রকামনা করেন। কৃষ্ণও তাঁকে ইচ্ছাপূরণের বর দেন।

এরপর একদিন যখন শিব-পার্বতী স্বগৃহে ক্রীড়ারত ছিলেন, সেই সময় কৃষ্ণ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে ভিক্ষা চাইতে আসেন। পার্বতী তাঁকে ভিক্ষা দিতে গেলে শিবের বীর্য পতিত হয় ও কৃষ্ণ শিশুর বেশে পালঙ্কে আবির্ভূত হন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ অন্তর্হিত হন। পার্বতী তখন পালঙ্কে ‘শতচন্দ্রসমপ্রভম্’ এক শিশুকে শয্যায় দেখতে পেয়ে আনন্দিত হন। এরপর দেবতা ও ঋষিগণ কুমারকে দেখতে শিবের ভবনে আসেন।

আসেন শনি দেবও। শনি নিজের কুদৃষ্টির কথা পার্বতীকে জানান। পার্বতী তবু তাঁকে পীড়াপীড়ি করলে তিনি কুমারকে দেখতে সম্মত হন। কিন্তু শনি সভয়ে বাঁ-চোখের কোণ দিয়ে কুমারকে দেখামাত্র তার মস্তক ছিন্ন হয়ে বৈকুণ্ঠে কৃষ্ণের দেহে গিয়ে মেশে। পার্বতী শোকে মুর্ছিত হয়ে পড়েন।

তখন বিষ্ণু গরুড়ে আরোহণ করে পুষ্পভদ্রা নদীর তীরে এসে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে থাকা এক হাতিকে দেখেন। তার মস্তক ছিন্ন করলে হস্তিনী ও তার শাবকেরা কাঁদতে কাঁদতে বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন। তখন বিষ্ণু ঐ মুণ্ডটি থেকে দুটি মুণ্ড তৈরি করে একটি হাতির স্কন্ধে ও অপরটি গণেশের স্কন্ধে স্থাপন করে উভয়কেই জীবিত করেন। [৪১] শিবের অনুগ্রহে গণেশ সকল দেবতার অগ্রে পূজিত হবার অধিকার প্রাপ্ত হন। পার্বতী ও শিবের বরে গণেশ গণাধিপতি, বিঘ্নেশ্বর ও সর্বসিদ্ধিদাতা হন।

এরপর কার্তিকেয়কে সেনাপতির পদে নিয়োগ করতে গিয়ে ইন্দ্রের হাত স্তম্ভিত হয়ে যায়। তিনি শিবকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণেশকে আগে পূজা না করার জন্যই এমন হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লিখিত আরেকটি মতে, মালী ও সুমালী নামে দুই শিবভক্ত সূর্যকে ত্রিশূল দ্বারা আঘাত করেন। এতে সূর্য অচৈতন্য হয়ে পড়লে বিশ্ব অন্ধকার হয়ে যায়। সূর্যের পিতা কশ্যপ শিবকে অভিশাপ দেন যে শিবের পুত্রে মাথাও খসে যাবে।

এই জন্য গণেশ মুণ্ডহীন হন ও ইন্দ্রে ঐরাবতের মাথা এনে তাঁর মস্তকে জুড়ে দেওয়া হয়। § পদ্মপুরাণ – পদ্মপুরাণ মতে, হরপার্বতী ঐরাবতের বেশে বনে বিহার করছিলেন, তাঁদের সেই মিলনের ফলে গজমুণ্ড গণেশের জন্ম হয়। § লিঙ্গপুরাণ – লিঙ্গপুরাণ মতে, দেবগণ শিবের নিকট উপস্থিত হন ও ব্রহ্মা অসুরদের হাত থেকে নিরাপত্তা চান। শিব তখন নিজ দেহ থেকে গণেশের জন্ম দেন। [৪২] § বরাহপুরাণ – বরাহপুরাণ মতে, দেব ও ঋষিগণ রুদ্রের নিকটে বিঘ্নোপসারণকারী এক নতুন দেবতা চাইলে হাস্যময় শিবের সম্মুখস্থ আকাশে শিবের গণ-যুক্ত একটি কুমারের জন্ম হল।

এই শিশুর রূপে দেবগণ, এমনকি স্বয়ং পার্বতী মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু শিব ক্রুদ্ধ হলেন ও অভিশাপ দিলেন যে এই কুমারের গজমুখ, লম্বোদর ও নাগ উপবীত হবে। এই ক্রুদ্ধ হবার সময় শিবের পদনিঃসৃত ঘাম থেকে অসংখ্য গজমুখ বিনায়ক গণ জন্ম নিলেন। কুমার গণেশ হলেন এঁদের অধিপতি। [৪৩] এখানে কুমার গণেশ ও গণেরা বিঘ্নকর ও গজাস্য বলে উল্লিখিত।

রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত 'ঋদ্ধি সিদ্ধি' চিত্রে সস্ত্রীক গণেশ § দেবীপুরাণ – দেবীপুরাণ মতে, শিবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে তাঁর দুই হাত ঘামতে থাকে এবং সেই ঘাম থেকে গজাননের জন্ম হয়। § মৎসপুরাণ – মৎস্যপুরাণ মতে, পার্বতী চূর্ণক বা বেসম দিয়ে নিজের গাত্রমার্জনা করছিলেন। সেই সময় এই চূর্ণক দিয়ে একটি গজানন মূর্তি নির্মান করে তা গঙ্গাজলে ফেলে দেন। পুতুলটি বিরাট হয়ে পৃথিবী পূর্ণ করতে উদ্যত হলে পার্বতী ও গঙ্গা একে পুত্র সম্বোধন করেন ও ব্রহ্মা একে গণাধিপতি করে দেন। § বামনপুরাণ – বামনপুরাণ মতে, পার্বতী স্নানের সময় নিজের গাত্রমল দিয়ে চতুর্ভূজ গজানন মূর্তি নির্মান করলে মহাদেব তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন।

বলেন, যেহেতু “ময়া নায়কেন বিনা জাতঃ পুত্রকঃ” (আমাকে ছাড়াই পুত্রের জন্ম হয়েছে) সেহেতু এ বিনায়ক নামে প্রসিদ্ধ হবে এবং বিঘ্ননাশকারী হবে। অন্যান্য উপাখ্যান § ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ – ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, পরশুরাম একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করে কৈলাসে শিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে, দ্বাররক্ষক গণেশ তাঁকে বাধা দেন। ফলে উভয়ের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ হয়। পরশুরাম কুঠারের আঘাতে গণেশের একটি দাঁত সমূলে উৎপাটিত করেন। § শিবপুরাণ – শিবপুরাণ অনুসারে, গণেশ ও কার্তিকেয় বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন।

তখন স্থির হয়, উভয়ের মধ্যে যে আগে বিশ্বপরিক্রমা করে আসতে পারবে তার বিবাহ আগে হবে। কার্তিকেয় ময়ূরে আরোহণ করে বিশ্বপরিক্রমায় বের হন; কিন্তু গণেশ শিব ও পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে বলেন, শাস্ত্রমতে তিনি শতবার বিশ্বপরিক্রমা করলেন। এরপর বিশ্বরূপের দুই কন্যা সিদ্ধি ও বুদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিবাহ হয়। সিদ্ধির পুত্র হয় লক্ষ্য ও বুদ্ধির পুত্র লাভ। কার্তিক নারদের কাছ থেকে বিবাহের সংবাদ পেয়ে ফিরে আসেন ও মনের দুঃখে ক্রৌঞ্চ পর্বতে গিয়ে বাস করতে থাকেন।

অন্য একটি মতে, তুলসী নামে এক নারী গণেশকে বিবাহ করতে চাইলে ব্রহ্মচর্যব্রতী গণেশ অসম্মত হন। তিনি তুলসীর চিত্ত বৈকল্যের জন্য তাকে শাপ দেন দানবপত্নী হওয়ার। তুলসীও তাকে শাপ দেন। ফলে পুষ্টি নামে এক নারীকে গণেশ বিবাহ করতে বাধ্য হন। § তন্ত্র – তন্ত্রমতে লক্ষ্মী ও সরস্বতী গণেশের স্ত্রী।

এছাড়াও তীব্রা, জ্বালিনী, নন্দা, সুভোগদা, কামরূপিনী, উগ্রা, তেজোবতী, সত্যা ও বিঘ্ননাশিনী নামে তাঁর নয়জন শক্তির কথাও জানা যায়। § মহাভারত – মহাভারত মতে, কৌরব ও পাণ্ডবদের মৃত্যু হলে ব্যাস ধ্যানে বসেন। মহাভারতের সমস্ত ঘটনা তাঁর মনের মধ্যে ফুটে ওঠে। তখন এই সুবিশাল গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করার জন্য উপযুক্ত লিপিকারের খোঁজে তিনি ব্রহ্মার নিকট যান। ব্রহ্মা তাঁকে গণেশের কাছে যেতে বলেন।

গণেশ মহাভারত লিখতে সম্মত হন বটে, কিন্তু শর্তারোপ করেন, লিখতে লিখতে তাঁর কলম থামতে দেওয়া চলবে না। ব্যাসও পাল্টা শর্তারোপ করেন, কোনও শ্লোকের অর্থ না বুঝে তিনি লিখতে পারবেন না। [৪৪] এইজন্য ব্যাস মহাভারতে ৮৮০০ কূটশ্লোক অন্তর্ভূক্ত করেন, যেন এই শ্লোকগুলির অর্থ অনুধাবন করতে গণেশের বেশকিছুটা সময় লাগে ও সেই অবসরে তিনি আরও কতকগুলি শ্লোক রচনা করে ফেলেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।