আমার ফেসবুক লিঙ্কঃ www.facebook.com/Tushar.016
সকাল ৮টা বাদে ঘর থেকে বেরিয়েছি, নিজের কিছু কাজ ছিল গুলশান - ১ এর ব্র্যাক ব্যাংক এর শাখায় গেলাম। গিয়ে দেখি ব্যাংক বন্ধ সকাল ৯টা নাগাদ খুলবে। অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে দাঁড়াতে হলো। এমন সময় আরো দুই যুবক সেখানে এসে উপস্থিত। তাদের দুজনের পরনে জিনসের প্যান্ট আর এক জনের পরনে গেঞ্জি আর অন্য জনের গায়ে লম্বা ফুল হাতা শার্ট।
সময় গড়িয়ে চলেছে, এমন সময় একটা লোক এলো সে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে চলে গেলো এই বলে যে উনার নাকি অত্যধিক গরম লাগছে, বাইরে হাওয়া খেতে যাবেন।
অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পরে ঐ দুজন লোক নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো। জিজ্ঞাসা করে : "দেশের যে অবস্থা, তাতে মানুষের বড়ই কষ্ট হচ্ছে, কি বলেন ?" আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম, কিন্তু কিছুই বললাম নাহ।
গেঞ্জি পরিহিত লোকটা চেঁচিয়ে উঠলো, "আরে ভাই যে ব্যক্তি অলস সেই লোকেরই কেবল কষ্ট যে লোক কর্মঠ সেই লোকের আবার কিসের কষ্ট ? আসলে বাঙ্গালী অলস জাতি, দেশে দুনিয়ার কাম আছে কিন্তু মানুষ করতে চায় নাহ"
এবার গেঞ্জি পরিহিত লোক আর ফুল হাতার মাঝে গল্প জুড়ে গেলো আমি ঘটনা চক্রে নিরব দর্শক কেবল শুনছি তাদের কথাঃ
গেঞ্জিঃ ভাই, এই দেখেন একটু আগে এক লোক চলে গেল! উনার নাকি গরম লাগে, হালায় বাপের বাড়ির আবদার পাইছে এখন সব খানে উনার লিগা এসি রুম বানাইতে হইবো! এই হইলো বাঙ্গালী বুঝলেন ? এরা হইল জনমকারের আইলস্যা! এদের জন্য দেশ পিছাইয়া আছে।
ফুলহাতাঃ একদম ঠিক বলেছেন ভাই, দেশে কত কাম কাইজ আছে একবার চিন্তা কইর্যা দেখেন ? বাঙ্গালী জাতি বেশি খাইতে চায়।
Masters পাশ কইর্যা মানুষরে ৫০০০ টাকা বেতনের চাকরী দিলে করতে চাইবো নাহ, আবার ফাউতালে বাপের টাকা ভাইঙ্গা বিড়ি খাইতে জানে !
গেঞ্জিঃ এই রকমই হইছে অবস্থা, আর কইয়েন নাহ আমার পাশের বাসায় থাকে আমার ফুফাতো ভাই। প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে পাশ কইর্যা এখন চাকরী পাইলে করতে চায় নাহ আগেই নাক সিটকায়! উনার যে ডিমান্ড তাতে তারে কেডা চাকরী দিবো ? সারাদিন পুটকীটা আকাশের দিকে ছুইড়্যা দিয়া ঘুমায় !
ফুলহাতাঃ বিদেশের কথা চিন্তা করেন তারা কত কর্মঠ,
আর আমরা হইলাম অলস আমড়া কাঠের ঢেঁকি - বাসার সামনে থেকে এক পা হাটতে চাই নাহ। রিক্সা, সিনজি অথবা গাড়ি ছাড়া চলতেই চাই নাহ ! অভাব আমাদের হবে না তো কাদের হবে ?
গেঞ্জিঃ রঙ্গপুর-দিনাজপুর-রাজশাহীর মানুষের কথা চিন্তা করেন ওরা কেবল ঢাকা শহরে আসে গরম ভাতের আশায়, ওদের তো কাজের অভাব নাই! কই ওরা তো কেউ বেকার নাই ! আসলে কাজ করার মনমানসিকতা থাকতে হবে ! নাইলে জীবনেও কাজ জুটবে নাহ।
এতক্ষন তাদের কথা শুনতে ছিলাম তাই এবার কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলাম, ওনাদের দুইজনকে লক্ষ্য করেই বললাম: "ভাই, আপনি বললেন আপনার ফুফাতো ভাই প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে পাশ করে এখন মনমত চাকুরী না পাইলে করে নাহ, সারাদিন নাকি পুটকী ঊঁচা করে ঘুমায়। তো প্রাইভেট ভার্সিটি কোনটা থেকে পাশ করেছে সেইটা জানতে চাইলাম নাহ, তবে এটুকু ধরুন তার ইন্টারমিডিয়েটের পরে বিবিএ এবং এমবিএ পাশ করতে কমছে-কম ১০ লক্ষ টাকা খরচ হইছে সব কিছু বাবদ, কি হয় নাই ?
গেঞ্জিঃ জ্বি তা হইছে, হবে না কেন ! প্রাইভেট ভার্সিটি মানেই তো টাকার খেলা!
আমিঃ তো, যে ব্যাটা পড়াশুনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা খরচ করল, সেই ব্যাটা কি কেবল দুবেলা দুই মুঠো গরম ভাতের আশায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে ? ব্যাঙ্কে ১০ লক্ষ টাকা ডিপোজিট করলেই তো পারতো মাস গেলে ১০,০০০ টাকা পাইতো।
ব্যাংক গুলো তো চরম সুবিধা দেয়ঃ লাখে ১ হাজার টাকা মাসে রেমিটেন্স দেয়।
গেঞ্জিঃ আপনি কি বলতে চান ? [একটু রাগান্বিত]
আমিঃ যা বলতে চাই যদি আপনার বুদ্ধি থাকে তো এতক্ষনে বুঝে যাবেন। আর না বুঝলে এখন আপনিও আপনার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে পুঁটকি উঁচা কইর্যা ঘুমান। আপনি বোধ হয় পড়াশুনা করেন নাই, করলে একটা Masters অথবা এমবিএ পাশ করা ছেলেকে কোনদিন ৫০০০ টাকা মূল্যের বেতন অফার করার কথা চিন্তাও করতে পারতেন নাহ। আমি নিজে একটা সামান্য স্টুডেন্ট কেবল এইচ এস সি দিলাম কয়দিন আগে আমি নিজেই ২টা বাচ্চা পড়ায়ে মাসে তার দুই গুন টাকা আয় করতে পারি।
আর আপনি কন এমবিএ পাশ করা পুলা ৫০০০ টাকা মূল্যের বেতনের চাকুরী পায়া পুঁটকী খাড়া কইর্যা ঘুমায়! আপনি কি মনে করছেন, ইউনিভার্সিটিতে যারা পড়ে তারা সবাই কি ঠেলা গাড়িওয়ালা নাকি দিন মজুর যে ওদের ৫০০০ টাকা বেতন দেবার কথা বললেন ? আপনার লজ্জা করে নাহ ?
.
.
আর কিছু বলতে পারলাম নাহ, এতক্ষনে একটা সিকিউরিটি গার্ড করিডোরে চলে এসেছে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে লোকটা বলল, ভাই এইটা একটা ব্যাংক আপনারা এই সব আলাপ বাইরে গিয়ে করুন। চিৎকার চেঁচামেচির জায়গা এইটা নাহ।
আর কিছু বললাম নাহ, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঐ গেঞ্জিওয়ালা লোকোটাকে দেখে পেটাইতে মন চাইতেছিলো ! এই রকম মানুষও দুনিয়াতে আছে ? ছি ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।