আমি ফিফা চেয়ারম্যান হতে চাই। চেয়ারম্যান হলে আমার নাম হবে জন ফু সোহেল
হারুন-অর-রশিদ
ইতিবাচক সমালোচনা_ একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন ৪২ বছরেও সম্ভব হল না কেন? এ প্রশ্ন এসে যায়। যারা ডেসটিনির বিরুদ্ধে গত এক সপ্তাহ ধরে লিখে চলেছেন, সেই গতিতে তাঁরা যদি বিগত এক সপ্তাহ ধরে সম্মিলিতভাবে মিডিয়ার স্বনামধন্য কর্মীরা বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে লিখতেন তাহলে একটি কাজের কাজ হতো। মালয়েশিয়া যদি ২২ বছরে এশিয়ার উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রথম কাতারে তাদের অবস্থান দৃঢ় করে নিতে সক্ষম হয়, সেখানে বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণ কী।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আমরা শুধু পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছি, সম্পদ নষ্ট করেছি, কিন্তু দেশমাতৃকার সার্বিক উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কাজ সফলতা এনে দেয় না। তখন সফলতা এগোয় কচ্ছপগতিতে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই থিমটি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে বলেই আমরা পিছিয়ে রয়েছি এবং তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আরো পিছিয়ে যাব। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা ডাইরেক্ট সেলিং ব্যবসার কনসেপ্টটি বিশ্বে চালু রয়েছে অর্ধশতাধিক বছর আগে থেকেই।
১৯৫৮ সালে এই কনসেপ্টটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সভায় অধিকাংশ সদস্যের ভোটাধিকারের বলে আইনে পরিণত হয় এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। দুঃখজনক ব্যাপারটি হল, ডেসটিনি ২০০১ সাল থেকে সরকারের অনুমোদন নিয়েই জয়েন্ট স্টক কোম্পানির আদলে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা ডাইরেক্ট সেলিং ব্যবসাটি শুরু করে। এই ১২ বছর সময়ের মধ্যে তিনটি সরকার ক্ষমতায় আসে পর্যায়ক্রমে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। একই বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি ২০০১-২০০৬)।
এরপর ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সূত্র ধরে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ধরে (২০০৭-২০০৮) সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। এরপর নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগের একক নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এই সরকারের মেয়াদ এখনো দেড় বছরের মতো বাকি আছে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, এই দীর্ঘ সময় ধরে পরপর তিনটি সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় কেন সরকার অনুমোদিত ওপর এম.এল.এম. কোম্পানিগুলোর আইনগত প্রক্রিয়ার বিধি-বিধান বা কার্যবিধি প্রণয়ন করতে পারেনি। যেখানে একটি সংসদ দুটি গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেই কার্যকর ছিল।
পত্রিকায় উঠেছে মন্ত্রিসভায় বিলটি বলতে গেলে অনুমোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকার নেপথ্য কারণটি মিডিয়াকর্মীরা একবারও কি তলিয়ে দেখেছেন? না, দেখেননি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ডেসটিনি সম্পর্কে অসত্য বলতে তাদের এত উৎসহ কেন? ডেসটিনি প্রসঙ্গে যাঁরা 'জনদরদী' সেজে কল্পকাহিনী প্রচার করছেন এক সপ্তাহ ধরে তাদের প্রথমে যে কাজটি করা উচিত ছিল_ সেটি হল সরকার কেন ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতির ব্যবসাটি আইনগত রূপ দেওয়ার দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের নেপথ্য কারণটি খুঁজে দেখা।
'জ্ঞানী'রা কেউ কেউ ব্যাংকের তারল্য সংকটের জন্য ডেসটিনিকে দায়ী করেছেন। কী হাস্যকর অভিযোগ। মূলত ব্যাংকের তারল্য সংকটের মূল কারণ গত দেড় বছর ধরে পুঁজিবাজারের ধস।
মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যাংক থেকে সরিয়ে ফেলেছেন শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়করা। সরকারি তদন্ত রিপোর্টে এ কথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ আছে। দুঃখজনক যারা তারল্য সংকটের জন্য দায়ী, বাজারে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী, ডলার সংকটের জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে বড় ধরনের ভূমিকা নেয়া উচিৎ ছিল মিডিয়ার তাহলেই একসময়ের চরম দারিদ্র্যক্লিষ্ট দেশ মালয়েশিয়ার মতো অর্থনৈতিক উত্থানটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারতো। আমাদের মিডিয়া, আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ, সরকারের জনপ্রতিনিধি, দুদক ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন খুব কমই আসল জায়গায় হাত দেয়। কলসিতে যদি ছিদ্র থাকে সেই কলসিতে যতই পানি দেই না কেন তা কখনো পূর্ণ হবে না।
মূল জায়গায় গলদ অর্থাৎ আইনের দুর্বলতা চোখ-কান খোলা রাখলে এসব বিষয় কারো অজানা থাকার কথা নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন দীর্ঘ ৪২ বছর পরও সম্ভব হয়নি। গত ৩১ মার্চ শনিবার বৈশাখী চ্যানেলে 'জিরো আওয়ারে' ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল আমীন জোরালোভাবে এ কথা বলেছেন। ৩ এপ্রিল রাতে ইন্ডিপেন্ডেট চ্যানেলেও নানা মতের ভোক্তা, এজেন্ট ও পরিবেশকদের বক্তব্যের উত্তর দিয়েছেন তিনি সাবলীল ভাষায়। আমরা দেখেছি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের ব্যবসার কাহিনী নিয়ে একটি মহল একসময় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে_ যেটা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ঠিক একইভাবে ট্রান্সকম কোম্পানি এবং বসুন্ধরা কোম্পানির মধ্যেও তাদের নিজস্ব মুখপত্র মিডিয়ার মাধ্যমে বাগ্যুদ্ধ দীর্ঘ বছর ধরে চালিয়ে আসছে। আমরা শুধু একে অপরের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে লেগেই আছি। গণতন্ত্রের সুবাদে যা ইচ্ছা তাই করে যাব_ এটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক আচরণে পড়ে না। সব কিছুই একটি নীতিমালা অনুসরণের মধ্যেই সুশৃঙ্খলভাবে গঠনমূলক সমালোচনা করাই উত্তম বলে সুধী মহলে বিবেচিত।
সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে যতগুলো ব্যবসা, তারা কেউই ব্যাংকিং নিয়মে তা পরিচালিত করে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় দৈনিকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এও বলেছে, সরকার অনুমোদিত সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে কোনো বাধা নেই। তাহলে ডেসটিনি বা অন্যান্য ডাইরেক্ট সেলিং কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করাও অবৈধ নয়, যদি তারা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে। ডেসটিনির কোনো ভুল নেই_ এ কথা আমরা বলব না। কিন্তু সেই ভুলটি যুক্তিযুক্তভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করাকে সবাই সাধুবাদ জানাবে।
পাশাপাশি ডেসটিনির পরিচালক পরিষদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ত্রুটিগুলোর বস্তুনিষ্ঠ তথ্যগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করাও অযৌক্তিক নয়। কিন্তু কান চিলে নিয়ে গেছে বা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো বক্তব্য, অনেকটা না জেনে না শুনে মনগড়া অভিযোগ প্রচার করাটা মিডিয়ার নূ্যনতম নৈতিকতার প্রতিকূল আচরণ বলে বিবেচিত হয়। পত্রিকায় দেখেছি_ ডেসটিনির ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা ৪৫ লাখ প্লাস। এদের মধ্যে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত যারা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে লাখ লাখ টাকার স্বপ্ন দেখেন। তাঁরা জানেন না যে 'ড্রিম' তখনই বাস্তবায়িত হয় যখন ড্রিমের সঙ্গে থাকে 'অ্যাকশন'।
কাজ না করলে মাইনে পাওয়া যায় না মাসের শেষে। প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে অথবা ডিগ্রি নিয়ে কাজ না করলে অর্থ উপার্জন করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। আমরা অলস প্রকৃতির জাতি বলেই পড়শি দেশগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে। সৌদি আরবে দেখেছি বাঙালিরা যেখানে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজ বলে আমরা যাকে মনে করি সেই নগর পরিষ্কারের কাজটি তারা সেখানে অতি নিষ্ঠার সঙ্গে করছে। ওই ধরনের কাজগুলো যদি বাংলাদেশে আমরা করতাম তাহলে দেশের উন্নতির ধারা আরো বেগবান হতো।
সমালোচনা ভালো, কিন্তু তা হতে হবে গঠনমূলক_ হিংসাত্মক নয়। বাস্তবতার নিরিখে যেটা সত্য সেটা প্রকাশ করা এবং যা মিথ্যা তা থেকে বিরত থাকা_ এই হোক আমাদের নৈতিকতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।