ক্লিক করলেই ডলার—এই ঘোষণার প্রলোভনে পড়ে রাজশাহীতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আউটসোর্সিংয়ের নামে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। এতে নিজের বিনিয়োগ ওঠাতে গিয়ে তাঁদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বছর খানেক ধরে রাজশাহী নগরে আটটি প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের (ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে দেওয়া) কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে: ডোল্যান্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, বিডিএস ক্লিক সেন্টার, অনলাইননেট টু ওয়ার্ক, বিডি অ্যাডক্লিক, স্কাইল্যান্সার, শেরাটনবিডি, ইপেল্যান্সার। বিশেষত রাজশাহীর বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লোভে পড়ে আউটসোর্সিংয়ের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে নাম নিবন্ধন করেছেন।
প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে মাসে ন্যূনতম দুই হাজার ১০০ টাকা আয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
ডোল্যান্সার, শেরাটনবিডি ও অনলাইন অ্যাড ক্লিকের সদস্য হতে একজনকে সাত হাজার টাকা এবং বাকি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হতে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা নিবন্ধন ফি জমা দিতে হচ্ছে। এরপর সেই সদস্যকে আয় করার জন্য অনলাইনে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় ঢুকে তাঁদের নির্ধারিত কিছু বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হচ্ছে। এভাবে একজন সদস্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০০টি ক্লিক করলে তাঁর হিসাবে এক ডলার করে জমা হচ্ছে। এই ডলারের হিসাব শুধু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, ওই সদস্যের নিজের অনলাইন হিসাবে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।
আর ওই সদস্যকে এক ডলারের বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ৬৫ টাকা। সেই টাকা সদস্যকে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে নিতে হচ্ছে।
আর যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার নেই, তাঁদের বিভিন্ন সাইবার ক্যাফেতে ভাড়ার কম্পিউটারে বসে ক্লিক করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। এভাবে নিবন্ধনের টাকা ওঠাতে না পেরে সদস্যরা নতুন সদস্য করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, প্রতিষ্ঠান ভেদে নিয়ম অনুযায়ী একজন সদস্য আরেকজন সদস্য ভর্তি করাতে পারলে তাঁকে সদস্যপ্রতি নিবন্ধন ফির কমবেশি ১০ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়।
রাজশাহীতে নিজ উদ্যোগে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন এমন কয়েকজন জানান, আউটসোর্সিংয়ের জন্য অগ্রিম কোনো টাকা জমা দিতে হয় না। কাজ করার পর নিজের অনলাইন অ্যাকাউন্টে সরাসরি ডলার জমা হয়, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ওঠানো যায়। কিন্তু রাজশাহী নগরের ওই সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করা সদস্যদের ডলার শুধু কম্পিউটারে দেখাচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলো বিল দিচ্ছে টাকায়। এরা আসলে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, তিনি প্রথম সাত হাজার টাকা দিয়ে নগরের এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হন। প্রতিদিন ১০০ ক্লিক করে ১০ দিন পরে প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কার্যালয়ে টাকা ওঠাতে গেলে তাঁকে বলা হয়, তিনি নতুন সদস্য না করলে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের নিবন্ধন ফির টাকা ওঠাতে এ পর্যন্ত তিনজনকে সদস্য করেছেন। তিনি জানান, দেড় মাস আগে সদস্য হয়ে তিনি এখনো তাঁর নিবন্ধনের টাকাই তুলতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, সকাল নয়টার পরে ক্লিক করতে গেলে ১০০ ক্লিক করতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যায়।
প্রলোভনে পড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়া রাজশাহীর কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ফাঁদে পড়ে তাঁরা আর বের হতে পারছেন না।
গত সোমবার নগরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশে মডার্ন ছাত্রাবাসের নিচতলার একটি কক্ষে ‘অনলাইন আউটসোর্সিং কনসালট্যান্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ঝুলছে। ভেতরে গিয়ে এর স্বত্বাধিকারী শাহরিয়ার কবিরকে পাওয়া যায়। কার্যালয়ে দুটি কম্পিউটার ও একটি ল্যাপটপ রয়েছে।
তিনি অবশ্য নিজেকে প্রতিষ্ঠানের একজন সদস্য দাবি করে বলেন, তাঁর হাতে যেসব সদস্য রয়েছে তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য তিনি কক্ষটি ভাড়া নিয়েছেন।
সেখানে দেখা যায় রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নওগাঁর মশিউর রহমানকে। তিনি একই সঙ্গে ডোল্যান্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, স্কাইল্যান্সরসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, তাঁর অধীনে প্রায় ২৫০ জন সদস্য রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের কাজ করলে ডলার সরাসরি নিজের অনলাইন অ্যাকাউন্টে জমা হয় না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই দুজনই বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় যাঁরা আছেন এগুলো তাঁরা বলতে পারবেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী করপোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের নামে প্রতারণার কথা শুনে বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
সুত্র: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।