তাশফী মাহমুদ
ঐশ্বরিয়া, তাবাসসুম, তানিশা, তাপসী- আবারও কখনও তিনি তানিয়া আশরাফি। পুলিশের খাতায় ওই সুন্দরী এখন মোস্ট ওয়ান্টেড। তার মাথায় ঝুলছে ৬টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। রাজধানী জুড়ে তার প্রতারণার জাল। উত্তরা, শান্তিনগর, বারিধারা, মিরপুর, ধানমন্ডিতে রয়েছে অফিস।
তিন মাসের বেশি কোন অফিস স্থায়িত্ব পায় না। নিজের সুন্দর চেহারাকে পুঁজি করে হয়েছেন কোটিপতি। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হলেও এখন তিনি সমাজের উঁচু শ্রেণীদের অন্যতম। তার
পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকে। এ সংখ্যা শতাধিক।
ইমিগ্রান্ট ভিসা দেয়ার লোভ দেখিয়ে সর্বস্বান্ত করেছেন অনেককে। বেকার যুবক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাও রয়েছেন এ তালিকায়।
তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৪ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এক থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে ছয়টি প্রতারণার মামলা। এসব মামলায় এরই মধ্যে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।
তাই হন্যে হয়ে খুঁজছে রমনা থানা পুলিশ। গোপনে একের পর এক রেইড দিচ্ছেন তারা। তবে প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত অবস্থান পরিবর্তন করছেন ওই প্রতারক। তাই বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।
এরই মধ্যে ৮ থেকে ১০ বার রেইড দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ভাওড়া গ্রাম। সেখানে তার হদিস পায়নি পুলিশ। এদিকে প্রতারক সুন্দরীর মোবাইলের কললিস্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ। কললিস্টের সূত্র ধরে সর্বশেষ গত শনিবার গভীর রাতে উত্তরার একটি বাসার বেশ কয়েকটি ফ্লাটে অভিযান চালায় তারা।
তবে আগে থেকে টের পেয়ে চম্পট দেয় ওই সুন্দরী।
রমনা থানা পুলিশ জানিয়েছে, তার কথিত স্বামী ইউনিপেটুইউ-এর এমডি মুনতাসির হোসেন ইমনকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। দু’জনের মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড থেকে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানা গেছে। এদিকে পুলিশি অভিযানের পর প্রতারক সুন্দরীর মোবাইল ফোন (০১৭৫৭৩৩৪৪৬৬) খোলা থাকলেও তা রিসিভ করা হচ্ছে না। একই সঙ্গে তার কথিত স্বামী ইমনের ফোন নম্বরও (০১৭৫৮৭৪০৩৮১) ধরছেন না কেউ।
গতকাল এ প্রতিবেদক ওই দুই মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা রিসিভ করা হয়নি। পরে পরিচয় দিয়ে ওই দুই নম্বরে এসএমএস পাঠানো হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, নিজের নামের পাশাপাশি বাবা, মা’র নাম ব্যবহারেও ছল-চাতুরির আশ্রয় নেন তিনি। কখনও পিতার নাম- শফিউদ্দিন চৌধুরী, মাতা- শেফালি চৌধুরী আবার কখনও আলী ইমাম ও সুফিয়া খানম ব্যবহার করা হয়। তার একাধিক অফিসের মধ্যে পুলিশ দু’টি অফিসের সন্ধান পেয়েছে।
এর মধ্যে একটি বিজয়নগরের ১৫/৫ আকরাম টাওয়ারের ছয় তলা, অপরটি ৪৯২/৫, নিউডিওএইচএস, বারিধারার চার তলা। পুলিশ যাওয়ার পর অফিস দুটি তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে তার অফিসে ধর্না দিয়েছেন সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা।
তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। কানাডায় যাওয়ার জন্য ইমিগ্রান্ট ভিসা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।
পরে র্যাব ও পুলিশের চাপে কয়েক মাসের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি চেক দেয়া হয় ওই কর্মকর্তাকে। পরে টাকা তুলতে গেলে দেখা যায় ওই একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণা মামলার পাশাপাশি অনেকে মৌখিকভাবে থানা-পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। এদিকে এক বছর আগে মাঝে মধ্যে রমনা থানায় ওই প্রতারক সুন্দরী আসতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রমনা থানার এসআই সোহেল রানা বলেন, তখন তার বিরুদ্ধে কোন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না।
উল্টো একেক দিন থানায় এসে ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে তিনি সাধারণ ডায়েরি করতেন। যখনই থানায় আসতেন তখনই এসব ডায়েরি করা হতো। প্রতারিত হওয়ার পর যারা তার কাছে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিতো তাদের বিরুদ্ধেই তিনি জিডি করে রাখতেন। এভাবে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি জিডি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ( পত্রিকা থেকে সংগৃহীত সংবাদ ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।