মন্দটাই মনে রাখে মানুষ। ভালোটা হাড়গোড়ের সঙ্গে মাটিতে মিশে যায় স্বাধীনভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করার বিষয়টি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে দেওয়ার মাধ্যমে অর্জন করা যায় বৈদেশিক মুদ্রা। বেশ কয়েক বছর ধরে আউটসোর্সিং নামের এ কাজের সঙ্গে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম জড়িত এবং সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে ইন্টারনেটে ভালো আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসের (কাজ পাওয়ার ওয়েবসাইট) পাশাপাশি চালু হয়েছে বেশ কিছু ওয়েবসাইট, যেগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের নামে প্রতারণা চলছে।
এ ধরনের সাইটে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করার আগেই নিবন্ধনের নামে নেওয়া হয় বড় অঙ্কের টাকা। পরবর্তী সময়ে বলা হচ্ছে, আগ্রহী মুক্ত পেশাজীবীরা (ফ্রিল্যান্সার) কমিশন-প্রথার মাধ্যমে নতুন নতুন ক্রেতা তৈরি করে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং
গতানুগতিক চাকরি বা ব্যবসার বাইরে ইন্টারনেটে বসে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করাটাই ফ্রিল্যান্সিং। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন সহজেই যে কেউ মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে একদিকে যেমন রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজ বাছাই করার স্বাধীনতা।
আয়ের দিক থেকেও এখানে আছেঅভাবনীয় সম্ভাবনা। ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে, যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেয়। এগুলোকে বলা হয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এসব মার্কেটপ্লেসে প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন কাজ আসছে। এসব জায়গায় প্রোগ্রামিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েবসাইট, গেম তৈরি, অ্যানিমেশন, ডেটা এন্ট্রি, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ নানা বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রতারণা
নানা কাজের বিশ্বস্ত কিছু ওয়েবসাইটের বাইরে বেশ কিছু ওয়েবসাইটে চলছে প্রতারণা। এসব সাইট পরিচালনা করা হয় বাংলাদেশ থেকেও। এখনো আমাদের দেশের তরুণেরা আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস থেকেই কাজ করছেন। বাংলাদেশে এখনো তেমন ভালো কোনো মার্কেটপ্লেস গড়ে না উঠলেও এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন একদল ফ্রিল্যান্সার—জানালেন ফ্রিল্যান্সার ও ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জাবেদ মোর্শেদ। তিনি জানান, কয়েকটি বিষয় সহজেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রতারণামূলক সাইটগুলোকে চিনে নিতে সাহায্য করে।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কখনোই টাকা দিয়ে কিছু কেনা কিংবা কোনো প্যাকেজ বা এ ধরনের বিষয় থাকে না। এ ছাড়া শুরুতে এসব সাইটে নিবন্ধনের জন্য কোনো টাকাও পরিশোধের প্রয়োজন পড়ে না। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু বাড়তি সুবিধার জন্য এক ধরনের সদস্যপদের জন্য অর্থ দিতে হয়, তবে সেটা পরে কেউ যদি নিতে চান সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনো দক্ষতার প্রয়োজন নেই, আর অল্প পরিশ্রমের মাধ্যমে বেশি আয় করা যায়—এ বিষয়টিই এসব সাইটে বেশি করে তুলে ধরা হয়। এ ধরনের অল্প কিছু সাইট নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
জাবেদ মোর্শেদ জানান, ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের কাজ বলতে সাধারণত বোঝানো হয়, নিজের কোনো দক্ষতার বিনিময়ে স্বাধীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাজ করা। এর বাইরে যদি বলা হয়, ফ্রিল্যান্সিং মানে কোনো ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন নেই, আর নিবন্ধনের জন্য নির্দিষ্ট ফি লাগবে তা হলেই বুঝতে হবে, ওই সাইট কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করছে। এ ছাড়া থাকতে পারে একাধিক ব্যক্তিকে যুক্ত করার (রেফারেল) মাধ্যমে আয়ের বিষয়টি। অনেক ভালো সাইটে রেফারেল বিষয়টি থাকলেও সেটিই সে সাইটের মূল ব্যবসা নয়। তাই যদি কোনো ওয়েবসাইটে শুধু রেফারেল পদ্ধতিকেই কাজ বলা হয়, সেটি অবশ্যই প্রতারণামূলক সাইট।
যেমন—হতে পারে একসঙ্গে কয়েকজনকে যুক্ত করার মাধ্যমে বেশি আয় করা যায়, যাঁরা নেতৃত্ব দিয়ে বেশি লোক যুক্ত করতে পারবেন, তাঁরা পাবেন বিভিন্ন পুরস্কার—এ ধরনের নানা প্রলোভন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ কেনার কথা বলাও এ তালিকায় পড়ে। আকর্ষণীয় নানা ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে এসব ওয়েবসাইটে বিশেষ বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়। এ তালিকায় রয়েছে পেইড টু ক্লিক (পিটিসি) ধরনের কিছু ওয়েবসাইট।
ফ্রিল্যান্সার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মূলত পিটিসি কাজগুলো আউটসোর্সিংয়ের পর্যায়ে পড়ে না।
এখানে সৃজনশীলতা কিংবা কাজ করার কোনো বিষয় থাকে না। এখানে আয়ের পরিমাণ অনেক কম এবং অযথা সময় নষ্ট। ’ এসব কাজ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া প্রতিটি ফ্রিল্যান্সিং সাইটের রয়েছে ব্যবহারবান্ধব নীতিমালা, যা নিবন্ধন পূর্ণাঙ্গ করার আগে ব্যবহারকারী সহজে বুঝতে পারবেন। প্রতারণামূলক সাইটগুলোতে এসব নিয়মের কথা নিজেদের মনের মতো করে দেওয়া হয়।
এসব সাইটের বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ কে এম ফাহিম মাশরুর জানান, অনলাইনে ভালো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে অনেকেই কাজ করছে। তাই কাজের দক্ষতা অর্জন করে সেসব সাইটগুলোতেই কাজ করা ভালো। একটা বিষয় মনে রাখা উচিত আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে টাকা পাওয়া যায়, এখানে দেওয়ার কোনো বিষয় নেই।
বিশ্বস্ত সাইট
ফ্রিল্যান্সিংয়ের নানা ক্ষেত্রের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নানা ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে। স্বীকৃত এসব সাইটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের অনেকের মতো আমাদের দেশের অনেকেই কাজ করে থাকেন।
এসব সাইট চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে, যার মাধ্যমে সহজে এসব সাইটের বিষয়ে জানা সম্ভব—বললেন ফ্রিল্যান্সার জাকারিয়া চৌধুরী। তিনি জানান, আন্তর্জাতিকভাবেই কিছু স্বীকৃত এবং ভালো পরীক্ষিত ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলোতে যে কেউ কাজ করতে পারেন। এসব সাইটে কাজ করে আউটসোর্সিংয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। এ ছাড়া সাধারণত ওয়েবসাইটের বেশ কিছু তথ্য দেখেও ভালো ফ্রিল্যান্সিং সাইটের খবর পাওয়া সম্ভব—জানালেন ফ্রিল্যান্সার এনায়েত হোসেন। তিনি জানান, ভালো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রকল্প জমা দেওয়া, অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা, কাজের রেটিং, কমেন্ট ইত্যাদি কার্যক্রম দেখেও ভালো ফ্রিল্যান্সিং সাইট সম্পর্কে জানা সম্ভব।
সতর্কতা
অনেকেই আউটসোর্সিংয়ের আজ করতে চান। তাই এসব ক্ষেত্রে নিজে আগে কাজ শিখে তবে কাজে নামা উচিত। এ ছাড়া একটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে যে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো কখনো কোনো অফার দেয় না। তাই কাজ না জেনে প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটের বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব দেখেই মনে করা উচিত নয় যে এটাই ফ্রিল্যান্সিং। বললেন টেকনোবিডি ওয়েব সলিউশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ ইমরাউল কায়ীশ।
তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে নিজেকে আগে নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি কোন সাইট ভালো সে বিষয়ে একটু অ্যানালাইসিস করতে হবে। তারপর মার্কেটপ্লেসে চেষ্টা করলে কাজ করা সম্ভব। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ভালো মার্কেটপ্লেস সাইট রয়েছে, যার বাইরে কাজ না করাই ভালো বলে জানান তিনি। যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এ খাতের কাজ করতে তাই আপনিও সতর্ক থাকুন। প্রতারণামূলক সাইটগুলোকে এড়িয়ে চলুন এবং নিজে কাজ শিখে তারপর ফ্রিল্যান্সিং করুন।
সেরা দশ মার্কেটপ্লেস
http://www.odesk.com
http://www.freelancer.com
http://www.elance.com
http://www.guru.com
http://www.vworker.com
http://www.scriptlance.com
http://www.getacoder.com
http://www.99designs.com
http://www.peopleperhour.com
jobs.freelanceswitch.com
এর বাইরে বেশ কিছু সাইট রয়েছে, যেগুলোতে আপনার গ্রাফিকসের কাজ, অ্যানিমেশনের কাজ, স্ক্রিপ্ট, অডিও এবং ভিডিও বিক্রি করা যায়। এ ধরনের কিছু সাইট হলো:
http://www.themeforest.net
http://www.graphicriver.net
http://www.codecanyon.net
http://www.activeden.net
http://www.3docean.net
http://www.audiojungle.net
http://www.videohive.net ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।