নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক
ব্রিটিশ ভল্লুকদের আদালত বসেছিল একবার করাচীর কাবিনা হলে। বিচারের আসনে ইংরেজ জজ। আসামীর কাঠগড়ায় রেশমি রুমাল আন্দোলনের নেতা শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান (রহ) এর সাগরেদ এবং তার মাল্টায় নির্বাসিত জীবনের সঙ্গী ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের সিংহপুরুষ শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ)। ইংরেজ জজের সোজা প্রশ্ন- হুসাইন আহমদ, আপনি ফতোয়া দিয়েছেন-ইংরেজ ফৌজে ভর্তি হওয়া হারাম। হযরত মাদানীর খাড়া জবাব- হ্যাঁ, আমি ফতোয়া দিয়েছি তোমাদের ফৌজে ভর্তি হওয়া হারাম এখনো ফতোয়া দিচ্ছি,তোমাদের বাহিনীতে ভর্তি হওয়া হারাম।
হযরত শাইখুল ইসলাম মাদানীর নির্ভীক ফতোয়া শুনে উপস্থিত সকলেই ভীত কম্পিত। কারণ,বেইমান হিংস্র হায়েনা ব্রিটিশদের চরিত্র সবাই জানে। বিপ্লবী নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলী জাওহার কাবিনা হলের মধ্যেই আবেগে হযরত শাইখুল হিন্দের পা জড়িয়ে ধরেন। ধরা কণ্ঠে আবদার করেন- আল্লাহর দোহাই! আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। হযরত মাদানীর সাফ কথা- জাওহার! যদি আজ আমি আমার কথা বদলে ফেলি তাহলে ঈমান বদলে যাবে।
কথা বদলাবার কোন সুযোগ নেই।
এই আমাদের শাইখুল ইসলাম। দুশমন ইংরেজ একবার তাঁকে প্রকাশ্যে গুলির নির্দেশ দিয়েছিল। মানুষ ধরে নিয়েছিল, হযরত শাইখুল ইসলাম আর কোনদিন স্টেজে উঠবেন না। এদিকে চলছে ইংরেজ বিরোধী তুমুল আন্দোলন-বিপ্লব।
খেলাফত আন্দোলনের কনফারেন্সে ডাকা হয়েছে করাচীতে। স্বাধীনতার পক্ষে উত্তাল আন্দোলন মুখর মুসলিম সমাজ। নেতৃত্বে আলেম সমাজ। করাচী টানটান উত্তেজনার আন্দোলিত। নয় লাখ জনতার বিশাল কনফারেন্স।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে যথা সময়ে কনফারেন্সে উপস্থিত হযরত মাদানী। পশ্চাতে গুলির হুকুম;বগলে সংরক্ষিত কাফনের কাপড়,ময়দানের চারদিক ইংরেজ ফৌজ দ্বারা পরিবেষ্টিত,তোপ দাগিয়ে প্রস্তুত। আর প্রবল বিক্রমে স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন হযরত মাদানী। জনতার শ্বাস উৎকণ্ঠায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হযরত সোজা চলে যান মাইকের সামনে।
ভরাট নির্ভয় দরাজ দুঃসাহসী কণ্ঠে আবৃত্তি করেন কবির ভাষায়-
"লিয়ে ফেরতি হ্যায় বুলবুল চোঁচ মে গুল"
চঞ্চুভরা পুষ্প নিয়ে বুলবুলিরা উড়ছে হেথা।
কবিতার এই একটি পঙক্তি উচ্চারিত হবার সাথে সাথেই চিত্র বদলে যায় খেলাফত কনফারেন্সের। শ্লোগান শ্লোগানে কেঁপে উঠে মাটি ও অন্তরীক্ষ। উত্তাল শ্লোগান চলে টানা আধ ঘণ্টা ব্যাপী। জনতা ফিরে পায় রক্তে লোকানো সাহস।
ভুলে যায় দানব ইংরেজদের তোপ-কামানের কথা। হযরত মাদানী পুনরায় উচ্চারণ করেন-
"লিয়ে ফেরতি হ্যায় চোঁচ মে গুল
শহীদে নাম কী তুরবত কাঁহা হ্যায়। "
চঞ্চুভরা পুষ্প নিয়ে বুলবুলিরা উড়ছে হেথা
ভাগ্যাকাশে 'তারা' যারা শহীদানের কবর কোথা।
ইতিহাসের এই স্মৃতি আজো মথিত করে আমাদের। নড়ে উঠে বিশ্বাসের পাতায় পাতায় লুকায়িত সাহস।
সেদিন ইংরেজ হায়েনাদের তোপ হাঁটু ভেঙে বসে পড়েছিল হযরত মাদানীর সাহসের সামনে। পালাতে বাধ্য হয়েছিল ভারত ছাড়তে।
হযরত মাদানী আজো ঘুমিয়ে আছেন ভারতের মাটিতে। দেওবন্দের কাসেমী সমাধিশালায়- আপন শায়খের সান্নিধ্যে।
বাংলাদেশেরর একজন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা যাইনুল আবেদীন, হযরত মাদানীর কবর জিয়ারতের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে লিখেন-
"কী আশ্চর্য! যতবার গিয়েছি হযরত মাদানীর কবর জিয়ারতে ভেতরে অনুভব করেছি প্রবল সাহস।
তাঁর কবরের পাশে দাঁড়ালে বরাবরই মনে হতো হিম্মতে বুকটা যেন উঁচু হয়ে উঠেছে। "
সত্যিই আজো উল্কার উল্কি রেখায় আমদের পূর্বপুরুষদের সাহসের কাহিনী পড়ে হৃদয়ে সাহসের ফুল্কি ছুটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।