আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেষাংশটুকু বদলাতে হবে

মহাখুশি আমি!কাল যে কী খুশির দিন গেলো আমার বাসায়,মনে হচ্ছিলো কোন উৎসব!ঘটনা বলি:আমার বুয়ার নাম বানু। সে আজ ৩৪ বছর আমার কাছে আছে!স্বমী পরিত্যাক্তা ২০-২২বছরের এই মেয়েটি তার ৫বছরের ছেলেটিকে নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটানোর সময়,আমার কাছে চলে আসে!ছেলেটি তার নানীর কাছ ছাড়া হতে চায়নি,ওর নাম ইমামুল । একটু বড় হয়ে সেও চলে আসে আমার কাছে। অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছেলেটিকে আমি কিছুতেই পড়াশোনায় মন বসাতে পারিনি!তার এক অদ্ভূত ক্ষমতা ছিলো,মুহূর্তে সে মানুষকে তার সুন্দর যশোরের ভাষায় কথা বলে বশ করে ফেলতে পারতো!আর পারতো বানিয়ে বানিয়ে সত্যির মত করে অজস্র মিথ্রে বলতে,অবশ্য নির্দোষ মিথ্যে!ওওকাথাও বেশিদিন থাকা তার ধাতে ছিলো না!রবীন্দ্রনাথের অতিথি গল্পের ছেলেটির মত সে সবার আদর কেড়ে পালিয়ে যেতো!বারবার পালাতো আর আমরা খুঁজে খুঁজে ধরে অনতাম!তারপরও ওর ওপর কখনো রাগ করতে পারিনি!২৫বছর বয়সে ঢাকায় এসে সে হোটেলে কাজ নিলো । প্রতি ঈদে আমার বাসায় আসতো ঈদ করতে!এক রোজার ঈদে এলো,কোরবানীর ঈদে এসে গরু,খাসি কিনবে বলে চলে গেলো!সেই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া !১২বছর ওর আর কোন খোঁজ পাইনি ! কত জায়গায় যে খুঁজেছি!বানুর কান্নাকাটি আরপীর ফকিরের কাছে যাওয়াও প্রশ্রয় দিয়েছি!এইতো ৩বছের আগে বানু গেলো মগবাজারের এক মহিলা পীরের কাছে!১৪টি বড় মোমবাতি,২কেজি মিষ্টি আর ১০০০টাকা দিয়ে এলো!মহিলা পীর বানুকে আয়নার ভেতর রক্ত দেখালো,তার মানে ইমামুল আর বেঁচে নেই!কত বড় প্রতারনা আর মানুষের মনকে ব্ল্যাকমেইল করা!আমার মেয়ে বললো এইসব মহিলাকে চাবকানো উচিৎ।

বানু কাঁদে আর বলে,‘ও বেঁচে নেই গো আপা। ’আমি দৃঢ়তার সাথে বলি,‘ও বেঁচে আছে,ভালো আছে,বিয়ে শাদী করে সংসার করছে। আমি ওকে চিনি,ও সবসময় তার মানিব্যাগে সবার নাম ঠিকানা,ফোন নম্বর,কার্ড রাখতো। মরে গেলে এইসব নম্বরে ফোন আসতোই!আর ও যা চালাক,কখনো অপঘাতে মরবে না!মিথ্যা গল্প বানিয়ে হয়তো বলেছে‘আমি বিরাট ববড়লোকের ছেলে,বাবা মা প্লেন ক্রাসে মরে গেছে,কেও নেই আমার!এইসব কাহিনি বলে কোথাও বিয়ে করে সংসার পেতেছে। মানুষ মরে গেলে যেভাবেই হোক খবর আসবেই।

’বানু কি আর আমার কথা বিশ্বাস করে?তার কান্না শেষ হয়না!কাল ১২ববছর পর ইমামুলের খোঁজ পেলাম আমরা!সে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসনে হোটেল মালিক,বিয়ে করেছে,১ছেলে,১মেয়ের বাবা হয়েছে!সুখে আছে। মোবাইলে কথা বললাম। প্রথমে আমি। ও আমার নম্বর তো জানে না,অথচপেরিচয়ও দিইনি,ফো ন করেই বললাম,ইমামুল?ও সাথে সাথে বললো,‘খালাম্মা,কেমন আছেন?’আমি হতবাক!‘চিনলি কী করে রেেএই ১২বছর কোথায়,কেন লুকিয়ে ছিলি?কেমন আছিস?’ও হাসে আর বলে,‘কেমন আছেন খালাম্মা,আপনি আগে বলেন?’েএই ছেলের ওপর কি রাগ করে থাকা যায়?আমিরা সবাই খুব ভালোবাসতাম ওকে!আমার পরে,আমার স্বামী,তারপর বানু,আমার ছেলে সবাই কথা বললাম ওর সাথে!’কী যে খুশি সবাই আমরা!এই বানুকে নিয়ে ২০০৮-এ আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম,কবিতাটি নিচে দিয়ে দিচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে কবিতার শেষাংশটুকু বদলাতে হবে !কাল থেকে আমি সব আত্মীয় বন্ধুদের ফোন করে এই খবরই জানাচ্ছি!মেয়ে,মেয়ের জামাই ফিলিপিন থেকে এইমাত্র ফোন করে সব জানতে চাইলো!ওরাও খুশি,বলছে,‘ও এল একটা থাপ্পড় দিবা আগে!’!৩০মার্চ,২০১২।

একজন ফুলবানু স্বামী পরিত্যক্তা পাঁচ বছরের শিশু কোলে, পঁয়ত্রিশ বছর পূর্বে এসেছিল এক সকালে । পরনে ময়লা শতচ্ছিন্ন এক চিলতে কাপড়, টেনেটুনে কোনমতে ঢেকেছে গতর, হাঁটুর উপর! নিজ সন্তানকে কোল থেকে নামিয়ে, বুকে তুলে নেয় মনিবের মেয়ে! মানুষ করে আদর –যত্ন পরিচর্যায় গড়ে তোলে, তিন বেলা ভাত-কাপড় আর সামান্য টাকার বদলে । আপন সন্তান অযত্নে অবহেলায় দূরে, অনাদরে দরিদ্র নানীর আশ্রয়ে ওঠে বেড়ে । আর সব বস্তিবাসী টোকাই ছেলের মতো, তারপর বড় হয়ে, মাস্তানী আর সন্ত্রাসীতে রত । এরপর একদিন কোথায় হারিয়ে যায়, একমাত্র পু্ত্রের কোনই খবর নাই! মনিব সাহেব, বেগম সাহেব প্রয়াত হয়েছে, সেই কাজের বুয়া এখনও বেঁচে আছে! বযসের ভারে ন্যুব্জ, চোখে দেখে না, কানে শোনে না, তবুও আগলিয়ে রেখেছে মনিবের সংসার, আজও ছাড়ে না! মনিব পুত্র-কন্যা আজ প্রবাসী ডাক্তার, যত্নেই রেখেছে, বিদেশ থেকে খোঁজ রাখে বুয়ার ।

সেই পঁচিশ বছরের যুবতী, নাম ছিল ফুলবানু, আর সে বৃদ্ধা কাজের বুয়া, শুধুই বুয়া বানু! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.