গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে ২ জুন পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৬ জুন হাইকোর্ট তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসন তাঁকে এখনো ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেই বহাল রেখেছে। অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, পদত্যাগ করার পর জাহাঙ্গীর আলম প্রতীক পেয়েছেন। তিনি কোনোভাবেই আর আগের পদে নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ জুন জাহাঙ্গীরের বাসন সড়কের ঠিকানায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। জাহাঙ্গীর আলম কেন উপজেলা পরিষদের সভায় নিয়মিত থাকছেন না, তার কারণ জানতে চেয়ে এর ব্যাখ্যা দাবি করা হয়।
জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নানা চক্রান্ত হচ্ছে। আর সে কারণেই তাঁর পদত্যাগপত্র নিয়ে এত নাটক চলছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হওয়ার পর তাঁকে আর কোনোভাবেই আগের পদে রাখা যায় না।
আর সেই চেষ্টা করাও আইনত অপরাধ।
হাইকোর্টে জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ ও নির্বাচনসংক্রান্ত মামলার আইনজীবী রফিক-উল হক গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি তো আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আদালত তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এর পরই তাঁকে প্রতীক দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও এখনো তিনি বৈধ প্রার্থী।
তার মানে, তিনি কোনোভাবেই আর ভাইস চেয়ারম্যান নেই। একজন পদত্যাগ করা লোককে আবার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে চিঠি দেওয়া তো পরস্পরবিরোধী। এসব নাটক বন্ধ হওয়া দরকার। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি। তাই তিনি এখনো ভাইস চেয়ারম্যান।
’ আদালত তো তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন? এ প্রশ্নে আবু আলম বলেন, ‘আদালতের কাগজপত্র আমরা এখনো পাইনি। ’
জানা যায়, ৩ জুন জাহাঙ্গীরের পদত্যাগপত্রে সই করেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব। কিন্তু তারপর সেই নথি মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকে। এরই মধ্যে ৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র-সম্পর্কিত কাগজপত্র পাওয়া যায়নি জানিয়ে ১০ জুন মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
পরদিনই এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেন তিনি। ১৩ জুন সেই আপিলও খারিজ হয়ে যায়।
এরপর হাইকোর্টে যান জাহাঙ্গীর। ১৬ জুন হাইকোর্ট তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দেন।
১৮ জুন প্রতীক পেয়েই তিনি জোরেশোরে প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু ওই রাতেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর চার দিন তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই সময় শাসক দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, তিনি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আদালতে পদত্যাগপত্র গ্রহণের তিন দিন পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-১ শাখা থেকে ১৯ জুন চিঠিটি পাঠিয়েছেন একজন উপসচিব।
জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও সদরের নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ ধরনের একটি চিঠি পেয়েছি। ’ চিঠিতে কী লেখা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না। আমি তো পদত্যাগ করেছি। এখানে আমার কী করার আছে।
দয়া করে এসব বিষয়ে আমার সঙ্গে আর কথা বলবেন না। ওপরওয়ালাদের সব জিজ্ঞাসা করুন। আমি বেঁচে থাকতে চাই। ’
গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া রহমান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম পরিষদের বৈঠকে থাকেন না। এ কারণেই তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
’ তিনি তো পদত্যাগ করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ফৌজিয়া বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে যেহেতু কোনো নির্দেশনা আসেনি, কাজেই তিনি তো ভাইস চেয়ারম্যান। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।