চাই মাতৃভূমির সমৃদ্ধি।
মানুষ যেমন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ঠিক তেমনি জটিলতম জীব। বাইরের আপাতদৃষ্টিতে সভ্য মানুষের ভিতরের আসল রূপটা কিরকম তা সে নিজেও জানে না। এক গাদা আবেগ আর নানা ধরণের কুরিপু মানুষকে আরো জটিলতর প্রাণীতে পরিণত করেছে। কিন্তু এই সব কুরিপু আর নানান আজব কিসিমের - কখনো বা পুরোপুরি অযৌক্তিক আবেগ থাকার পরো মানুষ কি করে তামাম দুনিয়ার মাঝে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবী করে?? কারণ মানুষের আছে বিবেক আর আছে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি।
মানুষ হচ্ছে বাচ্চা ছেলের হাতের ঘুড়ির মত - যার নিয়তি অনেকটাই তার নিজের হাতে নেই। কিন্তু বিবেক, স্বাধীন ভাবে চিন্তা করা আর স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা গোটা মানব জাতিকে করেছে মহা শক্তিধর। এই ক্ষমতার বলে মানুষ তার ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারুক আর নাই পারুক, মানুষ বলে নিজেদের পরিচয় দেবার অধিকার অর্জন করে। আর এখানেই একজন ব্যাক্তির মানুষ হিসেবে জন্ম গ্রহণ করার সার্থকতা।
লিখতে বসলাম The Devil's Advocate
মুভির রিভিউ কিন্তু লিখে ফেললাম বেশ দুলাইন কথা।
আপাতদৃষ্টিতে উপরের কথা গুলো অফ টপিক মনে হতে পারে কিন্তু এই মুভিটা দেখার পর আপনারো বোধ হয় সবার আগে উপরের লাইন গুলোই মনে পড়বে। আপনার মননে এবং চিন্তারাজ্যে কঠিন একটা ধাক্কা দিবে এই মুভি। হয়ত ভাবতে বসে যাবেন নিজেকে নিয়ে বা এই সমাজ নিয়ে। ভাবতে চাইতে পারেন শুভ আর অশুভর চিরন্তন দ্বন্দ নিয়ে। কিন্তু যত যাই ভাবুন না কেন, একটা বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, এই মুভি দেখার পর যে কোন ধরনের লোভের হাতছানি থেকে আপনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে চাইবেন।
কে না জানে ' লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু' ?? কিন্তু এই অপ্তবাক্য এত নিখুঁত ভাবে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে আনতে দেখিনি এর আগে। মাত্রাতিরিক্ত লোভ সব সময় অমঙ্গল ডেকে আনে, কিন্তু এর পরিণাম এত জ্যান্ত হয়ে দৃশ্যমান অন্য কোন মুভিতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
আসুন দেখি কি আছে এই মুভিতে। কেভিন লোম্যাক্স ((Keanu Reeves) একজন তরুণ মেধাবী ডিফেন্স অ্যাটর্নী। তার কাছে নীতি নৈতিকতার মূল্য নেই বললেই চলে।
ক্লায়েন্টই আসল অপরাধী কিনা বা একজন ঘৃণ্য অপরাধীকে সে আইনের ফাঁক - ফোকর গলে বের করে আনছে কিনা এসব তার দেখার বিষয় না। ক্লায়েন্ট তাকে টাকা দিচ্ছে মামলা থেকে খালাস করে দেবার জন্য, সে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সুষ্ঠুভাবে এবং নিখুঁতভাবে - কোন মামলায় হেরে যাওয়ার রেকর্ড তার নেই!!!
তো তার ব্যাপক সাফল্যের খবরে উৎসাহিত হয়ে নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত ল' ফার্ম Milton, Chadwick & Waters তাকে বিশাল অঙ্কের টাকা অফার করে তাদের হয়ে কাজ করার জন্য। লোভে পরে সে রাজি হয়ে যায়। ধর্মপ্রাণ মায়ের শত বাধা উপেক্ষা করে প্রিয়তমা স্ত্রী মেরী অ্যান (Charlize Theron)কে নিয়ে সে হাজির হয় নিউ ইয়র্ক সিটিতে - ভবিষ্যৎ বিপুল সমৃদ্ধির রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে।
নিউ ইয়র্কে এসে সে যথারীতি মামলা জিততে থাকে নিয়োগদানকারী ল' ফার্মের হয়ে।
পরিচয় হয় ফার্মের অন্যতম প্রধাণ জন মিল্টন (Al Pacino) এর সাথে। জন মিল্টন অত্যন্ত রহস্যময় চরিত্র। ভয়ংকর অশুভ এক জগত আর শয়তানের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি যেন!! মারাত্মক সব অতিমানবীয় ক্ষমতার বলে নিজের প্রতিদ্বন্দীদের সে নিমিষেই তার পথ থেকে সরিয়ে দেয়। মিল্টনের অশুভ প্রভাব পরতে শুরু করে কেভিন আর তার স্ত্রীর উপর। কেভিন দিন দিন আরো ব্যাস্ত হতে শুরু করে মামলা নিয়ে।
আর তার নিঃসঙ্গ স্ত্রীর মাঝ দেখা দিতে শুরু করে মানসিক রোগের লক্ষণ। কেভিন যতই সাফল্যের লোভে, অর্থের লোভে তার স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে ততই সে আরো ভালোভাবে বাঁধা পড়ে মিল্টনের ভয়ানক চক্রান্তের জালে। কি সেই চক্রান্ত?? কেভিন কীভাবে মোকাবেলা করবে এই ফাঁদ?? মিল্টন কি আসলে মানুষ নাকি মানুষ রুপী সাক্ষাৎ শয়তান?? অতীত ও বর্তমানের কেভিন কি মিল্টনের খেলার ঘুঁটি মাত্র?? যদি ঘুঁটি হয়েই থাকে তাহলে এই খেলার পরিণতি কি?? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে আপনাকে দেখে ফেলতে হবে মুভিটা!!
অভিনয় করেছেন আল পাচিনো, কিয়ানু রিভস আর শার্লিজ থেরন। আল পাচিনোর অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। শুধুমাত্র তার অভিনয় শৈলী দেখার জন্য আপনি মুভিটা দেখতে পারেন।
আল পাচিনোয় মুগ্ধ আমি গোটা একটি পোস্টই দিয়েছিলাম তাকে নিয়ে। দেখতে পারেন এখানেঃ আল পাচিনোঃ অন্য জগতের এক মহান অভিনেতা
দি ম্যাট্রিক্স খ্যাত অভিনেতা কিয়ানু রিভস এর চমৎকার অভিনয় আর শার্লিজ থেরনের সাবলীল উপস্থিতি নিঃসন্দেহে মুভিকে করেছে আরো বেশী উপভোগ্য।
শেষ করি ক্যামেরার পিছনের কিছু চমৎকার ফ্যাক্টস দিয়েঃ
১। মুভিতে জন মিল্টনের ডেস্কের পিছনে যে ভাস্কর্য আছে সেটা অনেকটাই মিলে যায় ফ্রেডরিক হার্ট এর তৈরি 'এক্স নিহিলো' ভাস্কর্যের সাথে। এই মিলের কারণে মুভিটিকে মুক্তির আগে এবং পরে আইনগত ঝামেলা সামলাতে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রস মুভির ডিভিডিতে ফ্রেডরিক হার্টের কৃতিত্ব স্বীকার করে আলাদা স্টিকার লাগায়।
২। জন মিল্টন নামটা নেয়া হয়েছে বিখ্যাত ইংরেজ কবি জন মিল্টনের নাম থেকে। মিল্টনের সবচেয়ে মশহুর কাব্যগ্রন্থের নাম 'প্যারাডাইস লস্ট' যেখানে দেবতা আর শয়তান এর মাঝে দ্বন্দ তুলে ধরা হয়েছে। মুভিতে জন মিল্টনের চরিত্র রুপক ভাবে শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করে।
তাই এই নামকরন।
আমার রেটিং ঃ 8.5/10
ডাউনলোড লিঙ্কঃ মিডিয়াফায়ার
The Devil's Advocate (1997) DVDRip ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।