টেষ্ট ম্যাচের উইকেটে বেহায়া সরকারের লাঠিপেটা
আহত ক্রীড়া সাংবাদিক, নিহত ক্রিকেট ভাবমূর্তি
- প্রসন্ন হক।
অবশেষে সাংবাদিক নির্যাতনের সর্বশেষ দৃষ্টান্তটি স্থাপন করলো ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার। গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-অষ্ট্রেলিয়া টেষ্টের প্রথমদিন ক্রিকেট বিশ্ব প্রত্যক্ষ করলো ক্রীড়াসাংবাদিক প্রহারযজ্ঞ যার কয়েকটি দৃশ্য বন্দী হয়ে রইলো অসি অধিনায়ক রিকি পন্টিং-এর ব্যক্তিগত ডিজিটাল ক্যামেরায়। ‘ক্রিকইনফো’র ওয়েবসাইটে সারা দুনিয়ার তাবড় ক্রিকেটপ্রেমী অবাক চোখে দেখলো ক্রিকেট ইতিহাসের সবচাইতে লজ্জাস্কর বর্বরতা। অষ্ট্রেলিয়া, বৃটেন, ভারত ও পাকিস্থানের পত্রিকাগুলোতে ফলাও করে প্রচার হয়েছে এই দুস্কর্মের সংবাদ।
একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টেষ্টে স্বাগতিক দেশের পুলিশ কোন কারণ ছাড়াই পিটিয়েছে সেই দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের। দেশের সিনিয়র ফটো সাংবাদিকদের একজন পুলিশের বুটের আঘাতে লুটিয়ে পড়ছেন মাঠের মধ্যে। আরেকজন মহিলা ফটোসাংবাদিকের দিকে সদলবলে বীরদর্পে তেড়ে এসেছে কাপুরুষ পুলিশ হাতের রাইফেল নিয়ে। বিদেশী স্পোর্টস চ্যানেল, অষ্ট্রেলিয়া দল ও দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের সামনে আর্তনাদ করে উঠেছেন সেইসব সাংবাদিকরা যারা শুধুমাত্র পেশাই নয়, খেলার প্রতি অদম্য নেশা আর টিম বাংলাদেশকে ভালোবাসার টানে ছুটে বেড়ান এই ভূগোলের সর্বত্র তাদের হাতের ক্যামেরা ও ল্যাপটপকে সঙ্গী করে।
ক্রিকেট ইতিহাসে জোট সরকারের রেকর্ড
সাবাশি অবশ্যই প্রাপ্য বিএনপি-জামাত জোট সরকারের।
সাবাশি প্রাপ্য ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের। বিগত সরকার ক্রিকেটে টেষ্ট ষ্ট্যাটাস এনে দিয়েছিলো বটে, তবুওতো বাংলাদেশ ছিলো দশম ও সর্বশেষ টেষ্টখেলুড়ে দেশ। কিন্ত এবার সরকার কাজ করলো বটে একখানি! প্রথমবারের মতো টেষ্ট ভ্যেনুতে সাংবাদিক পেটানো। তাও হাজার হাজার দর্শকের সামনে, ষ্টারস্পোর্টসের ক্যামেরার উপস্থিতিতে। এই বিশ্বরেকর্ডের জন্য আগামী দিনগুলোতে ক্রিকেট ইতিহাসের রেকর্ডবইয়ে বাংলাদেশের নাম কলংক ও ঘৃণার সাথে লেখা রইবে।
বলিহারি দিতে হয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের। তারা নাকি এই জঘণ্য ঘটনার কিছুই জানতেননা। বিকেলের দিকে তারা খবর পেয়েছেন।
অর্থাৎ এই লবী-শাহীন-মাহবুব আনাম গংরা নিজের দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত টেষ্টম্যাচের হালহকিকত সম্পর্কেও কিছুই জানেনা! সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা তারা বিকেলে জানে! তার মানে সারাদিনে বাংলাদেশ কতো রান করেছে বা কয়টি উইকেট পেয়েছে তাও তারা জানতেননা? নতুবা এতোবড়ো ঘটনা সম্পর্কে এরা অন্ধকারে থাকেন কিভাবে? এতোটাই অপদার্থ আমাদের ক্রিকেট কর্তারা?
আমদের সরকার যখন জনগণের ট্যাক্সের টাকায নিজেদের ভাবমূর্তি মেকআপ করতে লবিষ্ট নিয়োগ দিচ্ছে তখন আহত সাংবাদিক জহিরুল হকের একটি ছবিই কি যথেষ্ট নয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কবর রচনা করতে ? আর তাই যদি হয় তবে সরকার কিভাবে এই ঘটনার দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারে?
ঘটনা যেভাবে ঘটলো --
গুরুত্বপূর্ণ এ টেস্ট ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে দৈনিক প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শামসুল হক টেংকু একটি সিএনজি চালিত বেবিট্যাক্সিযোগে সাগরিকা বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার মুখে পুলিশ বাধা দেয়।
টেংকু সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিসিবির সরবরাহকৃত গাড়ি পার্কিংয়ের স্টিকার এবং প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাঁকে ভেতরে প্রবেশে বাধা প্রদান করে কর্তব্যরত এক সার্জেন্ট।
সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরও তাঁকে প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশের সার্জেন্ট আনোয়ার টেংকুকে টেনেহিঁচড়ে ট্যাক্সি থেকে বের করে আনে। শুরু করে টেংকুকে বেধড়ক পিটানো । টেংকুকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করতে দেখে সহযোগী সাংবাদিকরা দ্রুত ছুটে এসে তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করে।
এ সময় ওই সার্জেন্ট আনোয়ার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে যায় সহযোগী সাংবাদিকদের প্রতি। এ সময় সার্জেন্ট আনোয়ার আরও কয়েক সাংবাদিককে পিটায়।
এএফপির বাংলাদেশস্থ ফটো সাংবাদিক ফারজানা হক গোধূলিকেও লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়। এ খবর দ্রুত অন্য ক্রীড়া সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সকলের মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা ও ক্ষোভের। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা দায়ী সার্জেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আয়োজক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানালে তারা রহস্যজনকভাবে নীরবতা পালন করতে থাকে।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তব্যরত সকল সাংবাদিক বাধ্য হয়ে একযোগে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে অংশ নেন। সকাল ১০টায় খেলা শুরুর মুহূর্তে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্ধ শ’য়েরও বেশি সাংবাদিক তাৎক্ষণিকভাবে উইকেটের আশপাশে বসে পড়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
ম্যাচ পরিচালনার জন্য দুই আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিমদার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইয়াং হাওয়েল মাঠে নেমে অবস্থা বেগতিক দেখে ম্যাচ রেফারিকে গুরুত্বসহকারে ঘটনা অবহিত করেন। নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ রেফারি জেএফক্রো মাঠে নেমে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের বুঝিয়ে সুজিয়ে জানান, এ ব্যাপারে বিহিত ব্যবস্থা করতে তিনিও সহায়তা করবেন। তিনি জানান, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় ক্ষতি হতে পারে। বরং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে ব্যবস্থা নিতে তিনি সহায়তার আশ্বাস দিয়ে খেলা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন।
সিদ্ধান্ত হয় মধ্যাহ্ন বিরতির সময় দুই পক্ষ বসে এ ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝির নিষ্পত্তি ঘটাবে।
বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা জেএফক্রোর অনুরোধে মাঠ ছাড়লে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর সোয়া ১০টায় খেলা শুরু হয়।
মধ্যাহ্ন বিরতির সময় সিএমপির ডিসি হেডকোয়ার্টার হুমায়ুন কবির, বিসিবির ভেন্যু কো-অর্ডিনেটর কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ দস্তগীর চৌধুরী, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার শাহীন আফতাবুর রেজাসহ ক্রীড়া সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকদের মিডিয়া বক্স প্রান্তের সাইড লাইনে এসে সকালের ঘটনার নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। একপর্যায়ে ডিসি হেডকোয়ার্টার ও দুই পক্ষের লোকজনের অনুরোধে সিদ্ধান্ত হয় সাংবাদিক নাজেহালের জন্য দায়ী ওই সার্জেন্ট আনোয়ার তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে এসে দুঃখ প্রকাশ করবেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে ডিসি (বন্দর) আলী আকবর (এক সময়ের ছাত্রদল নেতা ও ঢাকায় বিরোধীদলীয় নেতাদের উপর নির্যাতন চালানোর নায়ক) এসে সব ভণ্ডুল করে দেন। তিনি জানান, সার্জেন্ট এসে ক্ষমা চাইবেন না।
উল্টো তিনি শুরু করেন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি।
একপর্যায়ে প্রেস বক্সের নিচে গ্যালারি থেকে সশস্ত্র ও লাঠিধারী পুলিশদের এ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিতর্কিত ডিসি আলী আকবর। ডিসি হেডকোয়ার্টারের অনুরোধের পরও আলী আকবর ধৃষ্টতা দেখিয়ে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এহেন কর্মকাণ্ডে আকস্মিকভাবে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন বিসিবির দুই কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও উপস্থিত সকলে। কর্মকর্তারা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন।
ডিসি আলী আকবরের নির্দেশ পেয়ে পুলিশের অর্ধ শ’য়েরও বেশি সদস্য ঝাঁপিয়ে পড়ে সাংবাদিকদের উপর।
শুরু করে বেধড়ক লাঠিপেটা, কিল, ঘুষি, লাথি এবং বন্দুকের বাঁট দিয়ে গুঁতো। একপর্যায়ে রাইফেল থেকে ফায়ার করতেও প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। প্রায় ১০ মিনিট ধরে মাঠজুড়ে পুলিশ সদস্যরা তাণ্ডবে মেতে উঠে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর। শুধু তাই নয়, ডিসি পোর্ট নিজেই এলোপাতাড়ি লাথি ঘুষি মারতে থাকেন ফটো সাংবাদিকদের ওপর।
অনেকটা সন্ত্রাসী স্টাইলে তাঁর ঘুষিতে মারাত্মকভাবে আহত হন বাংলাদেশের প্রবীণ ফটো সাংবাদিক ও ভারতের আজকাল পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আলহাজ জহিরুল হক। তাঁকে রক্ষা করতে অস্ট্রেলীয় এক ফটো সাংবাদিক এগিয়ে গেলে পুলিশ তাঁর দিকেও তেড়ে যায়। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা দিগি¦দিক ছুটে পালাতে থাকেন। পুলিশী হামলা থেকে বাঁচতে অনেকে বাউন্ডারি লাইনের বোর্ডের নিচে লুকাতেও বাধ্য হন। অনেকে উপায়ন্তর না দেখে ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুমে পর্যন্ত উঠে যান।
তারপরও থামেনি পুলিশের এ মধ্যযুগীয় স্টাইলের বর্বরতা। সাংবাদিকদের পিটাতে দেখে অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক রিকি পন্টিংও হতভম্ব হয়ে পড়েন। তাঁকে নিজের ক্যামেরায় এ ঘটনা ধারণ করে রাখতে দেখা যায়। আহতদের সাহায্যার্থে দ্রুত এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়কসহ অনেকে। তারপরও থামেনি পুলিশী তাণ্ডব।
প্রায় ১০ হাজার দর্শকের সামনে প্রতিবাদকারী সাংবাদিকদের দেখে দেখে ইচ্ছামতো পিটিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ দর্শকরাও গগনবিদারী চিৎকার করতে থাকে। এ ঘটনায় বাউন্ডারি লাইন তছনছ হয়ে যায়। আবারও খেলা শুরুতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকরা বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মাঠ ও প্রেসবক্স ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে বাউন্ডারি লাইন ঠিক করে মধ্যাহ্ন বিরতির পর খেলা নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট দেরিতে শুরু হয়। পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে দৈনিক পূর্বকোণের ফটো সাংবাদিক অনুরপ দাশ টিটুর মাথা ফেটে যায়। তাকে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছেন। এ ছাড়া মারাত্মকভাবে জখম হন যায়যায় দিনের রুহুল আমিন রানা, যুগান্তরের সাইদুর রহমান শামীম, আরটিভির মাহমুদুর রহমান শামীম।
বহু ক্রীড়া ও ফটো সাংবাদিকের ওপর ঝাঁক বেঁধে পুলিশী লাঠিপেটায় অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফ্রাকচার হয়। এছাড়া আহত হয়েছে বিভিন্ন দৈনিকের সাংবাদিকের মধ্যে রাজেশ চক্রবর্তী, অভিজিত ধর, উজ্জ্বল ধর, তুহীন, জাহিদ হোসেন, জাফর ইকবাল, অঘোর মণ্ডল, প্রণব বল, তাপস বড় য়া রুমু, আরিফুর রহমান বাবু, মাসুদ পারভেজ, নাজমুল হক তপন। তাঁদের স্টেডিয়ামের মেডিক্যাল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ভাংচুরের পর পুলিশ প্রকাশ্যে বিভিন্ন সাংবাদিকের আরও ক্যামেরা কাড়াকাড়ি করতে দেখা যায়। অনেকের ক্যামেরার লেন্স ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ছিনিয়ে নেয় কতিপয় উশৃঙ্খল পুলিশ সদস্য।
আরটিভির একটি নতুন ক্যামেরা ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়। সকালের ঘটনা আরটিভির ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে- এ খবর অবহিত হয়ে উমৃল পুলিশের কতিপয় সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যামেরাটি নষ্ট করেছে বলে আরটিভি প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান শামীম অভিযোগ করেছেন।
এদিকে এ বর্বরতা থেকে রেহাই পাননি এ সিরিজের টাইটেল স্পন্সর গ্রামীণফোনের নিজস্ব ফটোগ্রাফারও। তাঁর ক্যামেরা ও যন্ত্রপাতি রাইফেলের বাঁট দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের নারকীয় হামলা দেখে খেলা কভার করতে আসা অস্ট্রেলীয়, ভারতীয় এবং ব্রিটিশ সাংবাদিকরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।
দ্বিতীয় দফার ঘটনার আকস্মিকতায় কর্তব্যরত সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে আবারও ম্যাচ রেফারিকে বিষয়টি অবহিত করেন।
সভা করে তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিকেটের চলমান সিরিজটি বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন সকল সাংবাদিক। সাংবাদিকরা প্রেস বক্স ছেড়ে চলে যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে। প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়।
বিরোধীদলীয় নেতার নিন্দা, প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে আজ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টেষ্ট চলাকালীন সময়ে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর পুলিশী হামলা ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই বর্বর ঘটনার মাধ্যমে বিএনপি-জামাত জোট সরকার সাংবাদিক নির্যাতনকারী হিসাবে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের কদর্য চেহারাকে তুলে ধরেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকরা যখন পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ষ্টেডিয়ামে প্রবেশ করছিলেন তখন কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ তাদের বাধা দেয়, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। উপস্থিত সাংবাদিকরা এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ করলে পুলিশ তাদের উপর নির্বিচারে হামলা চালায়। মাঠে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের লাঠিপেটা করে, গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের আজকের এ গৌরবোজ্জল অবস্থানে উপনীত হওয়ার পেছনে আমাদের সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিলো উজ্জ্বল এবং প্রশংসনীয়।
বিশেষ করে, বাংলাদেশের টেষ্ট স্ট্যাটাস অর্জনের পক্ষে জনমত গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ বর্তমান সরকার তাদের এ ভূমিকার সামান্যতম স্বীকৃতি না দিয়ে প্রকাশ্যে বিদেশী অতিথিদের সামনে লাঠিপেটা করে তাদের অপমান করেছে, দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অপকর্মের কারনে বাংলাদেশ ইতিপূর্বে এশিয়ার মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনে শীর্ষস্থান দখল করেছিলো। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আরএসএফ এই সরকারকে সাংবাদিক নির্যাতনের দায়ে চিহ্নিত করেছিলো। সাড়ে চার বছরের বিএনপি-জামাত দুঃশাসনে ১৪ জন সাংবাদিক নিহত ও আড়াই হাজার সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন।
এই ধারাবাহিকতায় আজ তারা সাংবাদিক নির্যাতনের সর্বশেষ দুস্কর্মটি করেছে।
তিনি আহত সাংবাদিকদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে তাদের আরোগ্য কামনা করেন এবং সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য দায়ী বিএনপি-জামাত জোট সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য সাংবাদিক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদীসহ সবার প্রতি আহবান জানান।
আশ্চর্যজনকভাবে এই বর্বর ঘটনার কনো নিন্দা বা সাংবাদিকদের সান্তনা পর্যন্ত দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি দেশের প্রধানমন্ত্রী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।