আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেরনার নতুন নাম ‘টিম টাইগার্স.......।

...............................................................................................................................................................। এ লেখিটি যে আমাদের ক্রিকেটারদের চোখে পড়বে না তা মোটামুটি নিশ্চিত,তবে পড়লে বোধহয় ভালোই হত। যদিও পত্রপত্রিকায় এর চেয়েও বেশি লেখা হয়েছে এবং তা তাদের চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে। তবুও ক্রিকেট প্রেমী হিসেবে নিজের অনুভুতিকে সামলাতে না পেরেই লেখাটি লিখা। ক্রিকেট দুনিয়ার আর কোন দেশে আমাদের মত এত ক্রিকেট প্রেমী আছে বলে মনে হয় না।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জনগন তাদের যতই ক্রিকেটপ্রেমী বলুক আমি বলবো আমরাই সেরা। কত সমস্যায় জর্জরিত ছোট্ট এ দেশ। যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে,রাজনৈতিক অস্থিরতা যে দেশে প্রকট,একদিকে দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে স্বল্পবেতনে চাকুরি,বেকারত্বের অভিশাপ তো আছেই,রাজনৈতিক কোন্দলের কারনে মানুষও আজ দু দলে বিভক্ত,কারনে অকারনে খুন,হত্যাও বন্ধ হয়ে নেই। সবকিছু মিলিয়ে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন ধারা থেকে বিচ্যুত। ঘানি টানার মত করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন।

তবুও ক্ষনে ক্ষনে তারা এক সুতোয় গেথে আনন্দ উদযাপন করছে কিংবা দুঃখ ভাগাভাগি করছে,কী অপুর্ব মিলবন্ধন। এসবকিছুই কেবল ক্রিকেটের কল্যানে। একমাত্র ক্রিকেট-ই এ হাসি আনন্দের বড় উপকরন। কোন রাজনৈতিক শক্তির বিজয় এসব জনমনে এত আনন্দ বইয়ে দিতে পারেনা। যা কেবল ক্রিকেটই পারে।

পরিসংখ্যানে নিচের সারিতে থাকলেও আমাদের ক্ষুদ্র অর্জনগুলোই হয়ে উঠে আনন্দের উপকরন। যখনি ক্রিকেটাররা আমাদের এক জয় উপহার দেন সঙ্গে সঙ্গেই সবভুলে সব শ্রেনীর জনগন আনন্দে মেতে উঠে। ক্ষুধার যন্ত্রনা ভুলে রাস্তার পাশের বস্তিতে থাকা ছোট ছোট ছেলেগুলোও বাংলাদেশের জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে আনন্দে রাস্তায় নেমে পড়ে। এত আনন্দ!!চারিদিকে শুধু বাংলাদেশ ধ্বনি,সাকিব,তামিম ধ্বনি। আবার পরাজয়েও ব্যাথিত হয়ে পড়ে।

সমগ্র দেশ যেন স্থবির হয়ে পড়ে। যেমনটা হয়েছিল গতকাল,যে স্থবিরতা এখনো কাটেনি। ক্রমাগত উন্নতির দিকে গেলেও উন্নতির ধারাবাহিকতা থেকে আমরা সবসময় বিচ্ছিন্নই ছিলাম,অনেক প্রতীক্ষার পর এক জয় ফেলেও আবার অপেক্ষায় থাকতে হত আরেক জয় কখন আসবে সেই প্রত্যাশায়?প্রতি সিরিজের মত এবার এশিয়া কাপেও ভালো কিছু করার প্রত্যয় নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল মুশফিক বাহিনী। আর আমরা বাঙ্গালীরা বরাবরের মতই আশাবাদী। আমরা জানি আমাদের ভালোর দিনে,আমাদের সেরার দিনে জয় আমাদের আসবেই আসবে,সেই ভালো দিনের প্রত্যাশায় সবারই চোখ পড়ে থাকে খেলার মাঠে।

প্রথম ম্যাচে হারলেও সবার বাহবা কুড়াতে সক্ষম হয়েছিল মুশফিক বাহিনী তাদের লড়াকু মনোভাবের কারনে। প্রথম ম্যাচের পর যেন আমাদের আত্নবিশ্বাস আরো বেড়ে গেল,এবং তার প্রতিফলন ঠিকই দেখাতে সক্ষম হয়েছে মুশফিক বাহিনী তাদের অসাধারন জয়ের মধ্য দিয়ে। সেদিন প্রান ভরে হেসেছে বাংলার আকাশ বাতাস,উল্লাস করেছে পাখিরাও। তারই ধারাবাহিকতায় তারা পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে শ্রীলংকাকেও,সেই সাথে প্রথম বারের মত ঠাই করে নিল ইতিহাসের পাতায় এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে। সমস্ত দেশ যেন তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ক্রিকেট উল্লাসে মেতে উঠেছে,সবার মুখে ক্রিকেট আলোচনা,মন,চোখ সব পড়ে রয়েছে মাঠে।

দল মত নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে মাঠে উপস্থিত হয়েছিল স্বপ্নের ফাইনালে স্বপ্ন পুরুনের ক্ষনকে স্মৃতিতে ধারনের জন্যে। শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পুরুন হয়নি ঠিকই তবে যে নতুন বাংলাদেশ চেহারা আমরা দেখেছি এই বা কম কিসে?সব চাওয়া কখনো হয় না পুরুন। হয়ত এজন্যই আমাদের এ স্বপ্ন পুরন হয়নি,হয়ত এর চেয়ে বড় কোন প্রাপ্তি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বিধায় আমাদের এ স্বপ্ন পুরন হয়নি। এত কাছাকাছি এসে ছিটকে পড়ায় আমাদের বেদনা অশ্রু জলে পরিনতে হয়েছে। জানি শিরোপা না পেলেও আমাদের এই প্রাপ্তি কম নয়,তবুও এত কাছাকাছি এসে ফিরে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারিনি,মেনে নিতে পারিনি আমাদের সাকিব মুশফিকরা,তাইতো তাদেরও অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে মিরপুরের মাটিতে।

গ্যালারি জুড়ে ছিল শুধুই আক্ষেপের দৃশ্য কান্নার রোল। আমার খুব স্পষ্ট মনে পড়ছে বেশ কিছুদিন আগে এই মিরপুরেই ত্রিদেশীয় এক সিরিজে বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে বোনাস পয়েন্ট সহ হারিয়ে ফাইনালে আবার সেই শ্রীলংকার কাছেই জিততে জিততে হেরে গিয়েছিল,জিতিয়েছিল মুরালিধরন,বলে নয়,তার ব্যাটে। সে পরাজয়ের ক্ষনে গ্যালারিতে এক বৃদ্ধের সাথে আসা এক ছোট বালক বড় জোর আট কি নয় বছরের হবে হু হু করে কেদে চলল হাতে তার জাতীয় পতাকা। সাথের বৃদ্ধ হয়ত তার দাদা কি নানা হবে,তিনিও নির্বিকার। এমনিতেই দলের পরাজয়ে চোখ টলমল এই দৃশ্য দেখার পর তো আর সামলাতে পারলাম না নিজেকে।

এই ছোট্ট শিশু কী-ই বা বোঝে,তার আবেগ অনুভুতি বা কতটুকু?এটাতো খেলা মাত্র খেলায় জয় পরাজয়তো থাকবেই, অথচ কাউকে দেখার আগেই তার সে কান্না শুরু করেছে। খেলা আমাদের হৃদয়কে এমন করে ছুয়ে যায়!!!!!!আমরা যখন এতটা ক্রিকেটপ্রেমী আরেকটি ঘটনা না বললেই নয়-এইতো গতকাল আমরা ফাইনাল খেলছিলাম,বন্ধুরা সবাই খেলা দেখছি বাসায় টিভিতে,সাথে একবন্ধুর আত্নীয়। খেলা চলাকালে কিছুক্ষন পর পরই দেখি তার মোবাইল বেজে উঠছে। জানতে পারলাম তার চাচা দেশের বাহিরে থাকে,এখন কাজে খেলা দেখা সম্ভব হচ্ছে না তাই কিছুক্ষন পর পর ফোন দিয়ে স্কোর জানছে,এমন করে চলছেই,খেলা শেষ ওভারে যখন গড়াতে যাচ্ছে তখন আবার তার ফোন এল,যখন জানল আর এক ওভার আছে,তিনি বললেই লাইন কাটার দরকার নাই তুমি লাইনেই থাকো,কি হয় আমাকে বল। খেলার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠিকই তিনি লাইন কাটেননি।

আমি অবাক হয়ে গেলাম,তার ক্রিকেট ভালোবাসা দেখে,ভিন দেশে জীবিকার সন্ধানে কর্ম ব্যাস্ততা তাকে ক্রিকেট থেকে দেশ থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারেনি,এত সবের ভিড়ে এখনো তিনি ক্রিকেটে আনন্দ খুজছেন। এমন অনেক ঘটনা আমাদের আছে। আমি জানি আমাদের ক্রিকেটের প্রতি কত ভালোবাসা তা আমাদের ক্রিকেটাররা জানেন। আর জানেন বলেই সেদিন আবেগে আত্নহারা দর্শকদের মত মিরপুরের মাঠ ভিজিয়েছেন চোখের জলে। তবে এতসব বলার একটাই কারন আমাদের সাধারন জনগন অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চায়না,তারা ক্রিকেটে সুখ পায় বলেই ক্রিকেটে আনন্দ খোজে ক্রিকেটের পরাজয়ে ব্যাথিত হয়।

একটা জয়ে সমগ্র দেশের মানুষের মন খুশিতে ভরে উঠে,এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?যা কেবল তোমাদের দ্বারাই সম্ভব। এ দেশের ভাতৃত্ব বন্ধনকে আবার জোড়া দিতে কেবল তোমরাই পারবে,এই একটি পরাজয় আমাদের যত না হতাশ করেছে,বেদনা জাগিয়েছে তার চেয়েও বেশি খুশিও করেছে,তোমাদের অসাধারন নৈপুন্য আমাদের মনে আত্নবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দিয়েছে,বাড়িয়ে দিয়েছে তোমাদের উপর আমাদের বিশ্বাস,এই অর্জনই বা কম কিসে?আমরা পেয়েছি নতুন এক বাংলাদেশ ‘টিম টাইগার্স’। এগিয়ে যাও তোমরা দুর্বার গতিতে,আমাদের স্বপ্নপুরন একদিন হবেই হবে,আর তা তোমরাই করবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।