গাছে গাছে ফুল। মাঠে শস্য। কী যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য! বাতাসে চৈত্রের দীর্ঘশ্বাস। এখন বসন্তকাল।
শহরের জ্যামের জীবন থেকে এসেছি পাবনা।
far from madding crowd গ্রামের পথে পথে ছুটেছি। প্রধান বাহন ভটভটি। কোথাও এর নাম নসিমন করিমন ট্রলি। আমার মতে শহর দেখতে হয় পায়ে হেঁটে আর বাংলাদেশের গ্রামের জন্য ভটভটি। ভটভটিতে প্রায় আড়াইশ মাইলেরও বেশি ছুটেছি।
এর গতিটা এমন যে পথের কোন দৃশ্যই আপনি মিস করবেন না। যদি শুধু শব্দটা সহ্য করে নেয়া যায়। আমার প্রায় সয়ে গেছে। ভাড়া অত্যন্ত কম। আমার পকেটের সাথে তাল মিলিয়ে উপযুক্ত একটা বাহন।
বাংলাদেশের প্রায় সব ফুল ফোটে বসন্তকালে। রাস্তার দুপাশে দেখলাম কিছুক্ষণ পরপর দু-একটা গাছ লাল হয়ে আছে। এরা শিমুল পলাশ মাঁদার গাছ। আমার অবশ্য শিমুল পলাশকে আলাদা করতে কষ্ট হয়। পথের দুপাশে বিপুল বনজুঁই সারাটা পথ সাদা সাদা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল্।
কয়েকটা গাছ দেখলাম ফুল ফুলে একেবারে সাদা হয়ে আছে। উচ্চতায় আমগাছ বা মেহগনির সমান। গাছটির নাম জানি না। আম গাছে কচি পাতা, আমের মকুল। কাঁঠাল গাছে মুচি এসেছে।
এক রাস্তার পাশে দেখলাম কলাসমেত কলার থোর ঝুলছে মাথার উপর।
পাবনায় দেখলাম প্রচুর গম চাষ হয়। ইরিধানের সবুজ ক্ষেতের পাশে পাশে গমক্ষেতগুলোয় গম পেকে লাল হয়ে আছে। ধনেক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে সাদা। পেয়াঁজক্ষেতে দীর্ঘ সবুজ পেয়াঁজ পাতায় ভর্তি।
ভটভটিতে যেভাবে চড়বেন
গ্রামের দুপুর। খালি রাস্তায় ভটভটি ছুটে চলেছে তার সর্বোচ্চ গতিতে। যতদূর চোখ যায় ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত। এরপর আবার গ্রাম। রাস্তার দুপাশের গাছগাছালি অতিক্রম করে চলেছেন।
চৈতি হাওয়ায় মনে হবে যেন আপনি ভেসে ভেসে চলেছেন। আর এভাবে যদি আপনার ভ্রমন উপভোগ করতে চান তবে আপনাকে বসতে হবে চালকের পাশের বাড়তি যে রেক্সিন বা কাঠের আসন আছে তাতে। আমার মনে হয় পৃথিবীতে বসার জন্য এরচেয়ে উপযুক্ত আসন আর হয় না। পশ্চাদদেশটা রেক্সিনের আসনে তুলে দিয়ে পা দুটোকে একটু ভাঁজ করে তুলে দিলেন সামনের লোহার উপর। আমার অবশ্য ভাললাগে পায়ের উপর পা তুলে বসা।
কিছুক্ষণ পর ব্যথা বা বিরক্তি লাগলে পা রাখার জায়গা পরিবর্তন করতে পারেন। পা রাখার জন্য নিচে লোহার অসংখ্য পাদানি আছে। বাঁহাত দিয়ে ধরলেন ছাদে সাথে ঝোলানো একটা কাপড়ের রিং। আহ! শরীরটা যেন একেবারে ভারমুক্ত।
একপিস ১৫টাকা
সিরাজগঞ্জের বগুড়া রোড থেকে রায়গঞ্জ যাব।
এখানে হোন্ডা ভাড়ায় চলে। এক হোন্ডাঅলাকে বললাম, ‘ভাড়া কত?’
বলল, ’একপিস ১৫ টাকা’
আমি বললাম, ’আরেক পিস তাড়াতাড়ি খুঁইজা লন’
এই কথায় হোন্ডাঅলা হেসে ফেলল।
ইউক্যালিপটাস ইউক্যালিপটাস
পুরো উত্তরবঙ্গেই ইউক্যালিপটাস আকাশমনি ইত্যাদি গাছের চাষ চলছে দুর্দান্ত গতিতে। সিরাজগঞ্জ মনে হলো এই চাষবাসে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। সারা সিরাজগঞ্জ ইউক্যালিপটাসে ভর্তি।
আমাদের বাড়িঘরের আশপাশের চিরায়ত যে গাছ আম জাম কাঁঠালকে ঢেকে দিয়েছে ইউক্যালিপটাস। ইউক্যালিপটাস জাতের গাছ আমাদের ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করে ফেলছে। যে জমিতে ইউক্যালিপটাস চাষ হয় সেখানে পোকা-মাকড় থাকবে কি করে ওখানে তো ঘাসই জন্মায় না কেবল বালি বালি। কিন্তু এই অর্থকরী গাছ চাষ ধামাবেন কীভাবে? দ্রুত ব্বর্ধনশীল এই ইউক্যালিপটাস দ্রুত বাড়ে আর কাঠমূল্য ভাল।
সিরাজগঞ্জ রোড হোটেলের অভাব
তিনটা হোটেল আছে এখানে।
জায়গা নেই থাকার। ভাড়া বেশি। অত্যন্ত নোংরা পরিবেশ। এই জায়গাটা বোধহয় সিরাজগঞ্জ শহর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সিরাজগঞ্জ রোডে যারা কী ব্যবসা করবেন খুঁজে পাচ্ছেন না।
তারা বোধহয় এই দিকটা বিবেচনা করতে পারেন। এটাই market pain ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।