.............।
তৃতীয় শতকে শ্রীলংকার শাসক ছিলেন রাজা ‘মহাসেন’। তার নামানুসারেই জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা ‘ইইএন এস্কেপে‘ নামকরণ করেন উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ‘ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে’র নাম। তথ্য সংরক্ষণ ও বোঝানোর সুবিধার জন্য অনেক আগে থেকেই এ ঝড়ের নাম নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। যেমন, পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘পাইহলিন’।
সংগঠনটির ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার শাহাজাহান দৈনিক আজাদীকে জানান, সার্কভুক্ত সাতটি দেশের ঘূণিঝড় পর্যবেক্ষণ করেন এসএমআরসি ( সার্ক মেট্ট্রোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার) নামের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা। এ অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে যে সব ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তার পূর্বাভাস এবং নামকরণ এ এসএমআরসি’র আবহাওয়াবিদরাই করে থাকেন।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ : এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা ‘ইইএন এস্কেপে’র ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটিই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকেন। উত্তর ভারতীয় মহাসগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকেন ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ।
বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, মায়ানমার এবং ওমানের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেল হচ্ছে এস্কেপে। ২০০০ সালে স্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য। এখান থেকেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয়। উইকপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাধারণত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয় বিভিন্ন ঝড়গুলোর। তবে ইদানিং জটিলতা এড়াতে এবং সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তভাবে নামকরণ করা হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভয়ংকরতার দিক থেকে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য প্রায় একই। তবে স্থানীয়ভাবে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ‘সাইক্লোন’ বলা হয় ভারত মহাসগরীয় অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে। প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় টাইফুন।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণ : আবহাওয়াবিদদের সাথে কথা বলে এবং উইকপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সমুদ্রে চারটি প্রভাবকের উপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।
এর মধ্যে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকতে হবে এবং ৫০ মিটার গভীর হতে হবে। এছাড়া বায়ুমণ্ডলের নিম্ন ও মধ্যস্তরের অধিক আদ্রতা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। একইসাথে পৃথিবীর ঘুর্ণনের কারণে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে এ অঞ্চলে বাতাস সোজা প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বেঁকে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড়ের।
এ অঞ্চলের কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় : ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আবহাওয়াবিদরা অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছেন মেয়েদের নামানুসারে।
যেমন ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমী, বিজলি। শত শত বছর পূর্বে থেকে এ রীতি চলে আসছে। যেমন, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি ঝড়ের নাম ছিল আনান, সান্তা, স্যান ফেলিপ (প্রথম), স্যান ফেলিপ (দ্বিতীয়)। পরবর্তীতে এসে ছেলেদের নামেও ঘূর্ণঝড়ের নাম রাখা হয়েছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।
জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে সর্বশেষ প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল ২০০৯ সালের ২৫ মে। ভারত মহাসগর থেকে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়ের করাল গ্রাসের শিকার হাজারো মানুষ এখনো জীবন কাটাচ্ছেন যাযাবরের মতো। জানা গেছে, জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা ‘ইইএন এস্কেপে কর্মরত মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা ঘূর্ণিঝড় ‘আইলার’ নামকরণ করেছিলেন । ‘আইলা’ শব্দের অর্থ ডলফিন। ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কি.মি. বেগ সম্পন্ন এই ঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার লোকজন।
২০০৮ সালের ৩ মে উত্তর ভারত মহাসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘নার্গিস’। এটি আঘাত হেনেছিল প্রতিবেশি দেশ বার্মার উপকূলে।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ‘সিডর’। ফলে বাংলাদেশের প্রায় ৯৬৮,০০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় ২১০০০ হেক্টর ফসলি জমি।
মারা যায় ২৪২০০০ গৃহপালিত পশু এবং হাঁসমুরগী। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব রাজধানীসহ সারাদেশে পড়েছিল। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সৃষ্ট প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বিরান ভূমিতে পরিণত করেছিল দেশের ১৫ জেলার ২৫৭ টি ইউনিয়নকে। এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
সেদিন বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার। সমুদ্রে পানির উচ্চতা ছিল প্রায় ২৬ ফুট।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৫৮৪ সালেই বাংলাদেশ প্রথম ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হানা এ ঝড়ে প্রায় ২ লাখ লোক প্রাণ হারান। পরবর্তী ১৮৪৭ সালে সৃষ্ট ঝড়ে প্রাণ হারায় ৭৫ হাজার মানুষ।
একই বছরে অন্য একটি ঝড়ে ৮০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। মেঘনা নদী তীরে ১৮৭৬ সালে আঘাত হানা ঝড়ের নাম ছিল ‘দি গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন’। এই ঝড়ে এবং ঝড় পরবর্তী বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ২ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যান।
বাংলাদেশের ভূখন্ডে ১৯৬০, ১৯৬৩ এবং ৬৫ সালে তিনটি সাইক্লোন আঘাত হেনেছিল। এর মধ্যে ’৬০ সালের ঝড়ে মারা যায় ৬ হাজার মানুষ।
৬৩ সালে ২২ হাজার এবং ৬৫ সালেও বহুলোক মারা গিয়েছিল। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের অপর এক ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লোক মারা গিয়েছিল। মোট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ছিলো সেসময়ের হিসেবে ৮৬.৪ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন=১০লাখ) মার্কিন ডলার এর সমপরিমাণ। ১৯৪২ সালের ১৬ অক্টোবর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান ৪৫ হাজার মানুষ।
সূত্র ঃ Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।