আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত (মাওঃ) ইউসুফ (র) এর বয়ান (১৯৬১ সাল)

রোলেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আদত ও কুদরত আল্লাহ পাক এই দুনিয়াকে পরীক্ষার জন্য দুই ভাবে পয়দা করেছেন। এক ভাগের নাম আদত এবং অপর ভাগের নাম কুদরত। আদত দেখা যায় কুদরত দেখা যায় না। কাজ করে কুদরতে,আদতে নয়। কুদরত বিশ্বাস করা যায় পক্ষান্তরে আদত বিশ্বাস করা হারাম।

কিন্তু আমল করা জায়েয। জমিন,দোকান,ব্যবসা ইত্যাদি আদত তাহার ভিতরে কাজ করে কুদরত। আদত কুদরত ব্যতিত অচল, কিন্ত আদত ব্যতিত কুদরত অচল নয়। যেমন:-দেখা যায় হারিকেন জ্বলে তেলে কিন্তু তেল দেখা যায় না। সব হারিকেন তেল ছাড়া অচল কিন্তু তেল হারিকেন ছাড়া অচল নয়।

তাই আশি টাকার হারিকেন এক টাকার তেলের মোহতাজ। কিন্তু এক টাকার তেল আশি টাকার হারিকেনের মোহতাজ নয়। কিন্তু আদত কুদরতের নিকট মোহতাজ। আজ আমরা আদতের পিছনে মেহনত করে কুদরত হারাইয়াছি। তাই বিপদে পড়েয়াছি।

মুদি দোকানে বিক্রি হয় তেল আর মনোহারি দোকানে বিক্রি হয় হারিকেন। তদ্ধ্রপ মাঠে বিক্রি হয় আদত আর মসজিদে বিক্রি হয় কুদরত। মাঠে যান দিতে রাজি কিন্তু মসজিদে আসতে রাজী নয়। দাওয়াত মানুষকে শিক্ষা দিতেছে যে, টাকা দেয় কুদরতে দোকানে নয়, সুখ দেয় কুদরতে টাকায় নয়, ফসল দেয় কুদরতে জমিনে নয়। সুতরাং ওই দিকে অন্তর ঘুরাইলে কোন কাজ হইবে না, বরং দোযগে জ্বলিতে হইবে।

*দাওয়াত ও ইবাদত* হুজুর পাক (সাঃ) দাওয়াত দ্বারা আরবের বদদ্বীনীকে খতম করিয়াছেন। আর দাওয়াত না থাকায় রাসিয়ার ইবাদতকে বদদ্বীন খতম করিয়াছেন। দুনিয়ার নিয়ন্ত্রনের পেছনে যদি মিলিটারী ক্যান্টনমেন্ট না থাকে তাহা হইলে শত্র“র ধাক্কায় জজ কোর্ট হাই কোর্ট উড়িয়া যাইবে। তদরুপ দাওয়াত না থাকিলে মসজিদ, মাদ্রাসা, খান্কা শয়তানের ধাক্কায় উড়িয়া যাইবে। তাই হুজর পাক (সাঃ) সহ সাহাবী (রাঃ) সর্ব প্রথম দাওয়াতের ক্যান্টনমেন্ট বসাইয়াছেন।

এই হইতে সাহাবীরা ছিলেন প্রত্যেকে দায়ী, পরে আলেম তারপর আবেদ। বর্তমানে আমরা দায়ী আনা মেহনত ছাড়িয়া দিয়া মাদ্রাসার আলেম, খানকায় আবেদ, আর মসজিদ খালি। এই জন্য চায়ের দোকানের ফাসেক, মোনাফেক, জালেম ইত্যাদি তৈরী হইয়াছে। ফাসেক জানেনা মানেওনা। বর্তমানে দায়ী তৈরীর জন্য ”তিনটি” সেন্টার খোলা হইয়াছে।

ঢাকায় প্রাইমারী লাহোরে হাইস্কুল, দিল্লীতে কলেজ, মদিনায় ইউনিভার্সিটি। সেখান খেকে নকল বাহির হইতেছে। যাহা ১৪০০ বৎসর আগেও ছিল,ইহা নতুন কোন আবিস্কার নয়। পার্থক্য শুধু এই, সেই সময় কাফেরদে কে দাওয়াত দেওয়া হইতো আর এখন মুসলমানদের নিকট দাওয়াত দেওয়া হয়। কারণ মুসলমান আছে কোরআনে আর মুসলমানী কিতাবে আর আমরা আছি মাঝখানে।

যেমন ছাগলের যদি ৩টি বাচ্চা হয় ২টি বাচ্চা দুধ পান করে ১টি বাচ্চা দুধের অভাবে লাফাইয়া প্রাণ হারায়। দাওয়াত কুফরীর বিরুদ্ধে, কাফেরের বিরুদ্ধে নয়। যেমন ঔষধ রোগের বিরুদ্ধে, রোগীর বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু খাওয়াতে হয় রোগীকে। সাবান ময়লার বিরুদ্ধে, কাপড়ের বিরুদ্ধে নয়।

কিন্তু লাগানো হয় কাপড়ে। বর্তমানে কুফুর কাফেরদেরকে ছাড়াইয়া মুসলমানদের মধ্যে আশ্রয় নিয়াছে। যেমন নামাজ ছাড়িলে কুফরি, কিন্তু কাফের নয়। যে কাফের সে চিরদিন দোজগী। কিন্তু কুফরী বহুদিন দোজগে জ্বলার পর বেহেস্তে যাইবে।

এক ওয়াক্ত নামাজের জন্য“দুই কোটি ৮৮ লক্ষ” বছর দোজগে জ্বলিবে। তাই আল্লাহ পাক বলেন তোমরা সকল মুসলামান ভাই ভাই। তাই একে অপরকে দোজগের আগুন বাচাইয়া রাক। মুসলামান যখন নামজে দাঁড়াইবে তখন বিধর্মির নিকট দাওয়াত হইবে। আজ সকল মুসলামান নামাজে দাঁড়াইলে কাল সকল কাফের কালেমা পাঠ করিয়া মুসলমান হইবে।

বর্তমানে দুনিয়ার নব অমুসলিম লোকেরা ইসলাম বোঝে কিন্তু মুসলমানদের জন্য প্রবেশ করিতে পারে না। বর্তমানে বিশ্বে ১০০ কোটি মুসলমান এবং ৪০০ কোটি বিধর্মি। এই ১০০ কোটির মধ্যে ৯০ কোটি বেনামাজী। এদের একপা ঘরে অন্য পা বাহিরে। যদি দুই পা নামাজে দাড়ায় তা হইলে ৪০০ কোটি বিধর্মি আমাদের ধর্মে প্রবেশ করবে।

আইন হইল, দাওয়াত চলিতে থাকিলে কাফেরের সন্তান নামাজী হইব আর দাওয়াত বন্ধ হইলে মুসলমানের ছেলে কাফের হইয়া যাইবে। দাওয়াত শিখা বিহিন আগুনের মত। আগুনের উপর কাঁচা গোস্ত উঠাইলে কিছুক্ষনের মধ্যে চালুন হইয়া যায়। ঐ আগুন থেকে দূরে রাখলে পাকা গোস্ত গান্ধা হইয়া যায়। কোরমা গান্ধা হইলে কুকুরও খায় না।

তদরুপ মোসলমানের ছেলে কাফের হইবে দাওয়াত এর অভাবে। বিধর্মির ছেলে আল্লাহর ঘরের সামনে আসলে রেডিও ক্যাসেট বন্ধ করে। কিন্ত মুসলমানের ছেলে বন্ধ করে না। সোয়া লক্ষ সাহাবীর দাওয়াত এর তেজে ১০০ কোটি মুসলমান আছি। এ ১০০ কোটি মুসলমান বিধর্মি হইয়া গিয়াছে।

আর ৪০০ কোটি বির্ধমি আছে। আইন করিয়াছেন চাষের পরিবর্তে ফসল, আর দাওয়াতের পরিবর্তে হেদায়েত। চাষ বান্ধার জিম্মায় আর হেদায়েত আল্লাহর জিম্মায়। হেদায়েত কোন নবীর হাতে দেন নাই। আমরা ফসলের জন্য চাষ করিতে রাজী।

আর সন্তানের জন্য বিবাহ করিতে রাজী কিন্তু হেদায়েত পাওয়ার জন্য দাওয়াত করিতে রাজী নই। আমরা বলি আল্লাহ হেদায়েত দিবেন কিন্তু দাওয়াত দিব না। তবে আল্লাহ ফসল দিবেন তাহলে চাষ করিও না। চাষের ফসল দিবেন কোন ওয়াদা নাই। কিন্তু দাওয়াতে হেদায়েত দিবেন ওয়াদা আছে।

তাই কাজ না করিলে শাস্তি হইবেনা কিন্তু দাওয়াত না করিলে শাস্তি হইবে। এমনকি এবাদত না করিলে ইসলাম থেকে নাম কাটা যাইবেনা কিন্তু দাওয়াত এর জন্য বাহির না হইলে ইসলাম থেকে নাম কাটা যাইবে। দেখা যায় জমি চাষ না করিলে জমি হাত ছাড়া হইয়া যায় না শুধু ফসল পাওয়া যায় না। কিন্তু খাজনা বন্ধ করিলে জমি হাত ছাড়া হইয়া যায়। তদ্রুপ দাওয়াত খাজনার মত।

এ কাজ না করিলে ইসলাম হাত ছাড়া হইয়া যাইবে। এই ভয়ে সাহাবা গন দাওয়াতের জন্য নিজেদের প্রাণ দান করিতেন। যদি তাহারা শুধু ইবাদাত করিতেন তবে তাহাদের জীবন নাশ হইতনা। আমরা আজ দাওয়াত বন্ধ করিয়াছি, আর সাহাবাগন গর্দান দিতেন কাফেরের ছেলেকে মুসলমান বানাইবার জন্য। আমরা শরীরের ঘাম দেওয়া বন্ধ করিয়াছি, মুসলমানের ছেলেদের বেদ্বীন করিতেছি।

কিন্তু সাহাবাদের শরীরের এক ফশমের সমানও আমরা হইনাই। অথচ কাজ বন্ধ করিয়া বেহেস্তের আশায় বসিয়া আছি। উনারা বলিতেন মুসল্লি পাকা হোক আমরা বলি মসজিদ পাকা। বর্তমানে আমরা দেখি ট্রাকে করে গরু কসাই খানায় নেওয়া হয়। তখন গরু মনে করে আমাকে বেহেস্ত নিচ্ছে যদি বুঝতে পারি তো আমাকে জবেই করিতে নিতেছে তাহা হইলে পালাইয়া যাইতো।

তদ্রুপ শয়তান আমাদিগকে পাকা মসজিদ বানাইয়া দোযখে নিতেছে। সাহাবাগন পাকা মসজিদ ছাড়াই সবাই দাওয়াতের ময়দানে জান মাল সময় নিয়া লাপাইয়া পড়িত। পক্ষান্তরে যাহারা বোঝে না তাহারা ইহা দিগকে পাগল বলে। এখানেও এক রহস্য আছে দাওয়াত এবং তাবলীগের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। আল্লাহপাক দাওয়াতের বদলে হেদায়েতের ওয়াদা করিয়াছেন তবলীগের বদলে নয়।

এবাদত ও ঈমান ঈমান সম্বন্ধে বুঝাইবার নাম দাওয়াত আমল সম্বন্ধে বুঝাইবার নাম তাবলীগ। পূর্বেকার উম্মতের নিকট তাবলীগ ছিল কিন্তু দাওয়াত ছিলনা। আজানের মধ্যে প্রত্যেকটাই দাওয়াত একটা মাত্র তাবলীগ। এই জন্য দাওয়াতে তায়াম্মা বলা হয়। হাইয়্যালাস সালাকে তবলীগ বলঅ হয়।

দাওয়াত ব্যতীত তাবলীগ করিলে কোন লাভ হইবে না বরং বিপদে পতিত হইবে। যেমন পাম্প ব্যতীত বলে লাথি দিলে বল উড়িবে না বরং পায়ে ব্যাথা পাইবে। এই জন্য হুজুরে পাক (সাঃ) ১২ বৎসর শুধু দাওয়াত দিয়েছন কোন তবলীগ করেন নাই। পাম্প ব্যতিত একটি সুইও উপরে উঠিবে না। আর পাম্প দিলে হাজার হাজার মন লোহা উপরে উঠে।

দাওয়াতের উপাদান মোটামুটি ১১ টি, আল্লাহর বড়াই, আল্লাহর কুদরত , আল্লাহর আদত, মউত, কবর, হাশর, মিজান, পুলসিরাত, বেহেস্ত, দোজখ। যেমন প্রথমে মোয়াজ্জিন দাওয়াত লাগায় পরে তাবলীগ করে তারপরে এবাদতে যোগ দেয়। নামাজ পড়ামোয়াজ্জিনের গুন, যাহা দ্বারা মোয়জ্জনী আজান তাহার কাজ যাদ্বারা সে বেতন পায়। আইন বলে গুনে কাজ, কাজে বেতন। তদ্রুপ এবাদত উম্মতের গুন যা দ্বারা উম্মত প্রমানিত হয়।

আর দাওয়াত উম্মতের কাজ যাতে সে বেহেস্ত পায়। যদি এবাদতে বেহেশত পাওয়া যাইত তবে ছাহাবাগন মাইর খাইতনা। সাহাবাগনদের কাফেররা বলিয়াছিল তোমরা এবাদত করিতে পার কিন্তু দাওয়াত দিতে পারিবে না। তাহারা বলিয়াছিলেন যদি দাওয়াতের জন্য আমাদের গর্দান যায় তবু আমাদের জন্য সস্তা। কাফেররা বলিয়াছিল তোমাদের দাওয়াতে আমাদের ক্ষতি হয়, এবাদতে ক্ষতি হয় না।

দাওয়াতে আমাদের লোক তোমাদের সাথে চলিয়া যায়, তাই আমরা বিপদে পড়ি। ঐ বিপদ হইতে মুক্তির জন্যই তোমাদের সাথে লড়াই করি। আল্লাহর সৃষ্টির গোলামী হইতে বান্দাকে বের করে আল্লাহর গোলামীতে লাগাইয়া দেওয়াই দাওয়াত। দাওয়াতে বেহেশত পাওয়া যাবে আর এবাদতে বেহেশেতের নেয়ামত। যেমন দলিলের পরিবর্তে ফসল।

তদ্রুপ ইসলামের মেহনতের পরিবের্তে বেহেশত আর এবাদতের পরিবর্তে বেহেশতের নিয়ামত। দলিল না করিয়া ফসলের চাষ করিলে ফসলের মালিক হয় না। তাই ঈমান ঠিক না করিয়া এবাদত করিলে বেহেশতের নেয়ামত পাওয়া যাইবেনা। তাই হুজুর (সাঃ) বলিয়াছেন কাল কিয়ামতের দিন লোক পাহাড়ের সমান নেকী লইয়া দোজগে পড়িয়া যাইবে। সাহাবাগন আরজ করিলেন- হুজুর “তাহারা কি নামাজী হইবে না? হুজুর (সাঃ) বলিলেন তাহারা নামাজী, রোজাদার এমনকি তাহাজ্জুদ পড়েন ওয়ালা হইবে কিন্তু তাহেদের সামনে যখন দুনিয়ার ধন দৌলত ও মান সম্মান আসিত তখন উহার উপর ঝাপাইয়া পড়িত।

জায়েজ না জায়েজ পরোয়া করিত না। হুজুর (সাঃ) বলেন মানুষ যখন মরিবে তখন তাহাকে ঈমানের প্রশ্ন করা হইবে, আমলের প্রশ্ন করা হইবে না। আমলের প্রশ্ন আসবে হাশরের ময়দানে। ঈমানের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পােিরলে দোজগের ফয়সালা হইবে। এই জন্য সাহাবাগন ১২ বৎসর যাবৎ ঈমান শিখিয়াছিলেন।

এক সাহাবী বলেন আমরা প্রথমে ঈমান শিখিয়াছি পরে কোরআন শিখিয়াছি। বর্তমানে আমরা ঈমান শিখা বন্ধু করিয়াছি আর কোরআন শিখা শুরু করিয়াছি। কোরআন শিক্ষার জন্য ১০/১২ বৎসর লাগাই ঈমান শিক্ষার জন্য এক বৎসর লাগাইতে রাজী নই। জমিন দলিল না করিয়া চাষ আর পানি ও সার ফসল ফলাইলে আমার কি লাভ হইবে? আমি তো ফসলের মালিক হইবনা। ।

ঈমান ঠিক না করিয়া ভাল আমল করিলে কী লাভ হইবে। ইহা আমাদের বুঝ নাই। এই বুঝ সাহাবাদের ছিল। এই জন্য সাহাবাগন ঈমানের জন্য গর্দান দিয়াছেন। ঈমান আমল ছাড়াও, এবাদত কিন্তু আমল ঈমান ছাড়া নয়।

যেমন লবন ছালুন ছাড়াও লবন। কিন্তু ছালুন লবন ছাড়া ছালুন নয়। যেমন গোসতের সের ১০০ টাকা হইলে গোসত না কিনলেও ছলে আর লবনের সের ৫০০ টাকা হইলেও তা না কিনলে চলে না। দাওয়াত হিজরত, সবর দ্বারা ঈমান তৈরী হয়। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ঈমান নয়।

ইহা ঈমানের বীজ। লাউয়ের বীজ লাগাইতে হয় মাটিতে চাষ সার ও পানি দিয়া তেমনি ঈমানের বীজ লাগাইতে হয় দাওয়াত, হিজরত সবর দিয়া। তাই আবু বকর (রাঃ) ১২ বৎসর যাবৎ দাওয়াত, সবর করার পর হিজরতের দিন গুহায় কবুতর ছাড়া ডিম ও মাকড়সা ছাড়া জাল দেখে ঈমান পাকা হয়। আল্লাহ পাক কবুতর ছাড়া ডিম ও মাকড়সা ছাড়া জাল তৈয়ারী করিতে পারেন। দোকান ছাড়া টাকা আর টাকা ছাড়া শান্তি দিতে পারেন।

এই বুঝার নাম ঈমান। এই ঈমানের জন্য তবুকের যুদ্ধে আবু বকর (রাঃ) সমগ্র দন দান করিয়াছেন। হুজুর (সাঃ) বলিয়াছেন পরিবারের জন্য কি রাখিয়াছ। তিনি উত্তর দিলেন আল্লাহ ও রাসুলের নাম রাখিয়াছি। দুধ নাড়ানো দ্বারা মাখন হয়।

না নাড়াইলে মাখন হয় না। তদ্রুপ শুধু আলোচনা দ্বারা ঈমান পাকা হয় না। তাই দাওয়াতের জন্য হিযরত সকলের জন্য ফরজ করা হইয়াছে। কিন্তু ইবাদতের জন্য হিজরত সকলের জন্য ফরজ করা হয় নাই। আল্লাহ পাক ঈমান পাকা করিয়া দাওয়াতের কাজে পাঠান।

আবু বকর (রাঃ) ১৩ বৎসর দাওয়াতের পর হিজরতের দিন ঈমান পাকা করেন। যে লাইন যান বাহনের ১) রেল গাড়ী (২) উড়োজাহাজ যেখানে আগে টাকা দিয়ে পরে উঠিতে হয়। আর রিকশা নৌকায় পার হইয়া পরে টাকা দিতে হয়। আম্বিয়া (আঃ) রেলগাড়ি উড়োজাহাজের মত আর উম্মত রিক্স ও নৌকার মতো। আম্বিয়া (আঃ) গনের ঈমান আগে পাকা, দাওয়াত পরে আর উম্মতের দাওয়াত আগে, ঈমান পরে।

আমরা এখন দাওয়াত ছাড়া ঈমান পাকা চাই। তাই বলেন সেই জন্য আমাদের ঈমান পাকার জন্য দাওয়াতে বাহির হইতে হবে। ইহার পর আল্লাহ পাকের তরফ হইতে শান্তি মিলিবে। ইহা আল্লাহ পাকের চিরস্থায়ী বিধান। যেমন শুক্ত পরিক্রম করায়।

উদাহরন সরূপ বুঝিতে পেরেশানী বাজারে ব্যবসায়ী ইবাদাতে রিজিক বাড়ায়, এবাদতে শান্তি, তেমনি আম্বিয়া (আঃ) কে আল্লাহ শান্তি দান করিয়াছেন এবাদত করার জন্য, বুদ্ধি দান করিয়াছেন দ্বিন বোঝার জন্য। আজ মানুষ এই দুইটি রিজিক ঠিক করার জন্য লাগায়। কুদরতের অর্থ আল্লাহ পাক যখন যাহা বলেন তাহা হইয়া যায়। যেমনি বলেন তেমনি হইয়া যায়। যখন বলেন তখন হইয়া যায়।

লাগেনা চিন্তা, লাগেনা সময়, লাগেনা চেষ্টা, লাগেনা জিনিস। দুনিয়ার সকল বুদ্ধিমান লোকেরা একত্র হইয়া একটি ভাত বানাইতে পারিবেনা। আর আল্লাহ পাক এক বার বলিবে আর এই দুনিয়ার মত কোটি কোটি দুনিয়া হইয়া যাইবে। লাগবেনা চিন্তা, লাগবেনা চেষ্টা, লাগবেনা জিনিস। ইহাকে বলে কুদরত।

হুঁজুরে পাক (সাঃ) সাহাবা (রাঃ) গনকে দাওয়াতের কাজে লাগাইয়া ঈমানের মেহনত করিয়া ঈমান পাকা করাইয়াছেন। তারপর নামাজ ও ইবাদত শিখাইয়াছেন। এই নামাজ ইবাদত পাইয়া সাহাবা (রাঃ) এত খুশি হইয়াছেন যেমন মানুষ ঈদের চাঁদ দেখিয়া খুশি হয়। আমরা ঈমানের কমিতে ইবাদত দেখিয়া ভয় পাই। ইবাদত যেমন চা চামুচের পানির মত, চা চামুচের পানি দ্বারা ওজু করা যায় না।

আর দাওয়াত হইল সাগরের পানি যাদ্বারা জাহাজ চালানো যায়। ইবাদত দেখা যায় ঈমান দেখা যায় না। রূহ ছাড়া শরিরের মূল্য একপয়সাও নয়। তদ্রুপ ঈমান চাড়া এবাদতের কোন মূল্য নাই। ইবাদতের মধ্যে একটি এবাদত হচ্ছে হজ্ব।

যদি উম্মতকে বলা হয় হজ্জ্বে যাবেন কে কে ১০০০ টাকা লাগবে। তখন সকলেই তৈয়ারীরর চেষ্টায় লাগিবে। আর যদি বলা হয় ঈমান শিখার জন্য ১০০ টাকা আর ১০ দিন সয় লাগিবে তখন বলিবে আমাকে মাফ কর। অর্থ্যাৎ আমার কোন জ্ঞানই নাই। সাহাবাগনকে যখন বলা হইত ঈমান শিখতে যাইবে তাহাতে গর্দান যাইবে।

তাহলে ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত দাঁড়াইা যাইত। অর্থ্যাৎ সেই পরিবেশ সৃষ্টি হইয়াছিল। বর্তমানে ওই পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তাবলীগ জামাত চেষ্টা করিতেছে। অতি তাড়াতাড়ি এই লাইন হাতে আসিয়া যাইবে। যখন হাতে আসিয়া যাইবে তখন সমস্ত কাফের মুসলমানের পায়ের নীচে আসিয়া যাইবে।

এই লাইন হাত ছাড়া হওয়াতে মুসলমানের ছেলে কাফের মুশরেকের পায়ের নিচে আসছে। বর্তমানে তালিম আছে মাদ্রাসার, জিকির আছে খানকায় কিন্তু কাহার কাজে আসে না। যেমন ইলিশ মাছ আছে ৩ কুড়ি আর লবন আছে ৩ বস্তা আর একখানে মরিচ আছে ৩ বস্তা। কিন্তু কাহারও কোন কাজে আসিতেছেনা। বর্তমানে তাবলীগ সব একত্র করিতেছে।

একই ব্যাক্তি দাওয়াত দিবে, হিজরত করিবে, তালিম করিবে, সবর করিবে ও জরুরত পুরা করিবে। পরে তার বুঝে আসিবে এই কাজ মওত পর্যনত করিলে কাজ হাতে আসিবে। ৪ মাস বাংলাদেশে, ৪ মাস লাহোরে, ৪মাস দিল্লিতে দেড় বৎসর আারবে। ঢাকায় শিখানো হয় দায়ীর এলেম, লাহোরে শিখান হয় দায়ীর আখলাক, দিল্লিতে শিখানো হয় ঈমান। আরবে গিয়ে মার্জিত করা হয়।

আরবের মাটিতে এখনও ১৪শত বৎসরের আগের তেজ রহিয়াছে। আমরা মউত পর্যন্ত চেস্টা করিলেও তাদের সমান হইতে পারিব না। কাজেই যে দিন আরব কাজ হাতে নিবে সেই দিন সমস্ত দুনিয়ায় দ্বীন ছড়াইয়া যাইবে। কলা গাছ দরিয়া সাঁতার শিখিলে লাভ হইবে না। আগে দুই হাত কলাগাছ ছাড়তে হবে।

১ম ৪ মাসে দায়ীর এলেম শিক্ষা করা হয়। দায়ী কখনও রাগ হবেনা। রাগকে দমিয়ে রাখবে। কখনও হতে দিবেনা। রাগ করলে সাথী ও কাজ বিগড়ে যায়।

দায়ীর মাটির মত সবর থাকতে হবে। উটের মত কষ্ট সইতে হবে। উট এক দিন খেয়ে কয়েকদিন চলতে পারে। পাহাড়ের মত অটল থাকতে হবে। পাহাড় যেমন সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজের জায়গায় অটল থাকে, তেমনী দায়ীকে সকল অবস্থাতে কাজের উপর অটল থাকতে হবে।

কোন হালতই যেন তাকে কাজ থেকে সরাতে না পারে। দায়ীর মন আঁকাশের মত উদার হবে, সমুদ্রের ন্যায় বিশাল হবে। গ্লাসের পানির ন্যায় হবে না। এক পোটা পেসাব গ্লাসের পানিকে নষ্ট করে দেয়। কিন্তু শত শত গ্লাসের পানি সমুদ্রের পানিকে নাপাক করতে পারে না।

তদ্রুপ কাহারো খারাপ ব্যবহারে মনকে খারাপ করবে না। সাথেিদর ছোট খাট দোষ উপেক্ষা করে চলবে। দায়ী নিজেকে ছোট মনে করবে, অপরকে বড় মনে করবে। নিজের দোষ দেখা এবং অন্যের গুণ দেখা। হয়ত আমি কোন দোষের কারণে কিয়ামতের দিন আটকিয়ে পড়ব আর সে কোন গুণের কারণে নাজাত পেয়ে যাবে।

দুনিয়াতে যত নাফরমানি হচ্ছে আমার ফিকির ও মেহনতের কমির কারণেই হচ্ছে। দায়ী দাওয়াতের কাজে কখনও কানায়াত করবেনা। কানায়াত অর্থ অল্পে তুষ্টি। দুনিয়ার ব্যাপারে কানয়াত করব ঠিকই, কিন্তু আখিরাতের ব্যাপারে কানয়াত করবনা। দুনিয়ার ব্যাপারে নিজের চেয়ে কম দরজার লোকের প্রতি নজর রাখা আর আখিরাতের ব্যাপারের নিজের চেয়ে উপরের দরজার লোকের প্রতি নজর রাখা।

দায়ী এক মূহূর্ত ও গাফেল থাকবেনা এবং অযথা সময় নষ্ট করবেনা। নিজেকে কোন না কোন নেক আমলে মশগুল রাখবে। সাদা সিধা জীবন যাপন করবে। হুজূর (সাঃ) ওয়ালা আখলাক হওয়া চাই। কারো অনিষ্ট করা না চাই।

দায়ী যখন হাসি মুখে শক্রর উপকার করবে, তখন বলিতে হইবে তাহার মধ্যে আখলাক এসেছে। মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত ইসলামী তরিকায় হইতে হইবে। মোয়ামেলাত হইল লোকের সাথে উঠা বসা, লেনদেন। আমার দেনা দিয়ে দেওয়া আর পাওনার জন্য কাড়াকাড়ি না করা। মোয়াশেরাত হইল ব্যবসা, বানিজ্য, কায়কারবার যাহা আছে এসব ইসলামী তরিকায় করা যাদ্বারা মানুষের ফায়দা পৌছে।

যে দাওয়াত দেয় তাকে দায়ী বলে, যাকে দাওয়াত দেওয়া হয় তাকে সাদউ বলে। দায়ীকে যেন অন্য কেহ অন্য কিছুর দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ না পায়, আর দিলেও যেন কবুল না কল্ েদায়ী নামাজে মশগুল হওয়া মানুষের মত। নামাজ রত ব্যাক্তি যেমন সালামের জবাব দিতে পারে না, ঠিক তদ্রুপ দাওয়াতের কাজ যারা করবে তারা অন্য কোন কাজ কবুল করবেনা বা অন্য কোন কাজে নিজেকে জড়াবে না। দায়ীর সব কাজে এখলাস থাকতে হবে। এখলাসের ফতোয়া কোন মুফতি দিতে পারবেনা।

কেবল এখলাসের জিনিস আল্লাহ পাক কেয়ামতের দিন দিবেন। শহীদ, ক্বারী, আলেম, দায়ীর ফতোয়া আল্লাহ পাকই দিবেন। আমল শুধু আল্লাহ পাকের জন্যই। অন্য নাজায়েজ জিনিস শামিল না করা, যেমন চাসতের নামাজের দ্বারা রুজি চিন্তা বা বরকতের চিন্তা না করা। দায়ীরখাছ একিন করতে হবে, দাওয়াতের দ্বারাই সব কিছু পাইবে।

এতটুকু ভয় থাকতে হবে, কত বড় কাজ করিতেছি সেটার খেয়াল যেন থাকে। যে পরিমান জান ও মাল ব্যবহার করিব সে পারিমান গুণ ও সিফাত পয়দা হবে। দাওয়াত মায়ের মত, মা মরিলে সন্তান হওয়া বন্ধ হইয়া যায়, আর যেগুলি থাকে সেগুলি বিগড়াইয়া যায়। যেমন যে সময় রাস্তা তৈয়ার করা হয়, সে সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়। রাস্তা তৈয়ার হওয়ার পর যানবাহন চালু করা হয়।

কিছুদিন পর পর যখন যানবাহনের ধাক্কায় রাস্তা অচল হইয়া পড়ে তখন যানবাহন বন্ধ করা যায় না। তখন অর্ধেক ভেঙ্গে রাস্তা মেরামত করা হয় তখন বাকী অর্ধেক দিয়া অতি কষ্টে যানবাহন চালু থাকে। প্রথম একদিন ঠিক করিয়া পরে বাকী অর্ধেক ঠিক করা হয়। তাই হুযুর (স যখন দিনের রাষ্ট্র তৈয়ার করিতেছিলেন, তখন ইবাদত বন্ধ রাখিয়াছিলেন। ঐ ইবাদতের রাস্তা বর্তমানে অচল হইয়া গিয়াছে।

বর্তমানে তিনটি সেন্টার খোলা হইয়াছে। ১টি ঢাকায়, ১টি লাহরে, ১টি দিল্লিতে। যদি ঐরূপ দায়ী তৈয়ার হয়। তাহলে ইনশআল্লাহ দিনের গাড়ী চালু হইয়া যাবে এবং সমস্ত পৃথিবীর লোক ইনশআল্লাহ দিনের লাইনে আসিয়া বেহেস্তের যাত্রি হইয়া যাইবে। যত লোক উঠিবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছিতে মালিককে টাকা দিতে হয়।

কিন্তু ড্রাইভারকে টাকা দেওয়া লাগে না। বরং সে মোটা অংকের টাকা পায়। কেয়ামতে আলেম, আবেদ সকলেরই হিসাব দিতে হইবে। কিন্তু দায়ীর হিসাব দিতে হইবে না। দাওয়াতে হেদায়েত পাওয়া যাইবে।

আর মোরাকাবেয়ে আল্লাহর দিদার। যেমন দাওয়াতে একের গুণ দশ বাড়ে আর মোরাকাবেয়ে একের গুন একই হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.