আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরুষরাই রুখবে নারী নির্যাতন

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির- কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর অর্থাৎ সুন্দর পৃথিবী গঠনে নারী পুরুষের সমান ভূমিকা রয়েছে। এই সমাজে পুরুষের যেমন স্বাধীনতা রয়েছে, নারীদেরও রয়েছে তেমন স্বাধীনতা। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো দেখা যায়। পুরুষশাসিত এই সমাজে নারীরা প্রতিক্ষেত্রে নির্যাতিত, বঞ্চিত। পুরুষদের বিকৃত মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা চেতনার ফলে নারীরা যৌতুক, বাল্যবিবাহ, ইভ-টিজিংএর মত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

ফলে নারীদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দেশ তার প্রবাহমান গতিধারা হারিয়ে ফেলছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একটি সামাজিক সমস্যা যৌতুক। বহুদিন ধরে যৌতুক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা হলেও এখনো এটি বিদ্যমান। এখনো বিভিন্ন পরিবারে বিবাহের সময় যৌতুক দাবি করা হয়।

যৌতুক না দিলে এর দ্বারা নারীরা শারীরিক, মানসিক এমনকি দৈহিক নির্যাতনের শিকার হন। একজন বিবাহিত মেয়ের নির্ভরযোগ্য মানুষটি হচ্ছে তার স্বামী। কিন্তু বিকৃত মানসিকতার এই স্বামীই তাকে যৌতূকের দাবিতে নির্যাতন করে। ফলে গত কয়েক দশকে যৌতূকের কারণে অনেক নারীকে আত্মহত্যা, অগ্নিদগ্ধ, দৈহিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এটি যে শুধু নিরক্ষর বা সমাজের নিচু স্তরের মানুষের মধ্যে দেখা যায় তা নয়।

অনেক উচ্চ শিক্ষিত, ধনী পুরুষদের দ্বারাও এমন ঘটনা ঘটাতে দেখা যায়। শুধুমাত্র আইন বা আন্দোলন করে যৌতূকের নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য আমাদের পুরুষ সমাজকে জাগ্রত হতে হবে। পুরুষদের শিক্ষা, মূল্যবোধকে কাজে লাগাতে হবে। বুঝতে হবে নারীরা আমাদের অর্ধাঙ্গী, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একমাত্র পুরুষদের ভুমিকায় অগ্রগণ্য।

গত কয়েক বছরে নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন কিছুটা সফলের দিকে আগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু কিছু সমস্যা এই অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারে দেখা দিয়েছে ইভ-টিজিং। সবচেয়ে বেশি ইভ- টিজিং এর শিকার হন ছাত্রীরা। রাস্তায় কোন মেয়েকে দেখলেই একদল পুরুষের মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে উঠে।

তারা অকারণে মেয়েদের উদ্দেশে গালিগালাজ, অশ্লীল মন্তব্য করে। গত কয়েক বছরে নারীদের উপর এসিড নিক্ষেপের যত ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি ঘটেছে ইভ- টিজিংয়ের ঘটনা। আমাদের সমাজের মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল। উন্নত বিশ্বের মত এখানে সুযোগ সুবিধা কম। পুরুষশাসিত এই সমাজের পুরুষরা তাদেরকে ইভ- টিজিং থেকেও রেহাই দেয় না।

ফলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মস্থলে যাওয়ার পথে তারা ইভ-টিজিংয়ের শিকার হন। এর সঠিক বিচার তারা পায় না। কারণ এই সমাজে পুরুষরায় অধিক শক্তিশালী। ফলে বিচারের নামে উল্টো নারীকেই দোষারোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাকে গৃহবন্দী বা একঘরে করে রাখা হয়।

যার অপমান সইতে না পেরে বেছে নেই আত্মহত্যার পথ। কিন্তু আমরা পুরুষ সমাজ চেয়ে চেয়ে দেখি। এক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে, সচেতন হতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে নারীদেরও আমাদের মত এই সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। আমাদের সমাজে নারীরা নির্যাতনের শিকার পরিবার থেকেই।

যদিও অনেক পরিবারে এখন সমান সুযোগ দেওয়া হয় তবে বঞ্চিত পরিবার কম নয়। পরিবারে নারী নির্যাতনের একটা বড় উদাহরণ বাল্যবিবাহ। এখনো অনেক পরিবারে মেয়েদেরকে উপযুক্ত বয়সের পূর্বেই বিবাহ দেওয়া হয়। সমাজের কিছু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এর প্রধান কারণ। এতে একজন মেয়ের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্তেও সে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে না।

তাকে বাঁচতে হয় গৃহে বন্দী গৃহিণী হয়ে। এমনকি তার কাছে নিজের অধিকারও অজানা থাকে। অনেক পরিবারে মেয়েদের অনিচ্ছাতে জোরপূর্বক শ্বশুরালয়ে পাঠানো হয়। ফলে সে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সে সারাজীবন নিজেকে পুরুষের দাস হিসেবে ভাবতে শুরু করে।

কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে হবে। পুরুষরাই পারে তা প্রতিষ্ঠা করতে। এর ফলে নারীরা স্বাধীনচেতা হবে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হবে। শিক্ষিত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। বহুল আলোচিত না হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কর্মক্ষেত্রে নারীরা নির্যাতিত।

অনেক্ষেত্রে একটি মেয়ে যখন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় তখন থেকেই নির্যাতিত হয়। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এমন ঘটনা অনেক। একজন ছাত্রী তার বন্ধুর সহযোগিতা কামনা করবে এটাই স্বাভাবিক। নোট লেখা, গ্রুপ পড়াশোনা, প্রজেক্ট তৈরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার পুরুষ বন্ধুর সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। এখানেও দেখা যায় সে বঞ্চিত হয়।

আবার কিছু বিকৃত মানসিকতার বন্ধু দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা শিক্ষকদের দ্বারা মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে অনেক। একজন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এখানেও সে সহকর্মী দ্বারা নির্যাতিত হয়।

অনেক ক্ষেত্রে তাদের অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের জন্য সফলতা বয়ে এনেও প্রশংসিত হন না। যা তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর কাজ করে একমাত্র নারী হওয়ায় তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে তার পুরুষ সহকর্মীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

এখানে মূলত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। নারী-পুরুষ মিলিত আমাদের সমাজে নারীরা সবসময় উপেক্ষিত। গত কয়েক বছরে কিছুটা পরিবর্তন হলেও বেশিরভাগই আগের মত চলছে। এখনও নারীরা সমানভাবে নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত। আসলে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরায় যেন শাসক।

তাই নারী নির্যাতন রোধে পুরুষদেরকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। পুরুষদের চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গী, মূল্যবোধের পরিবর্তন করতে হবে। পুরুষদের ভাবতে হবে নারীরাও আমাদের মত এই সমাজের মানুষ। সঠিক সুযোগ সুবিধা পেলে তারা সমাজের জন্য সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারে। নারীদের এই সুযোগ পুরুষদেরকেই তৈরি করে দিতে হবে।

তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাদের মেধার ও অবদানের মূল্যায়ন করতে হবে। আর তাতেই এ সমাজ থেকে নারী নির্যাতন রোধ হবে এবং আমরা পাবো নারী পুরুষ সম্মিলিত এক সমৃদ্ধ সমাজ, উন্নত দেশ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।