আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

০৬মার্চ ২০১২ তারিখের দৈনিক যায়যায়দিনে আমার লেখা আর্টিকেল

আমি নিজের মাঝে খুজে পেতে চাই আমার আমাকে। যেতে চাই বহুদূর। ফৌজদারি মামলায় আপসযোগ্য অপরাধ সাধারণত ফৌজদারি অপরাধগুলো সমাজের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় বলে অপরাধের বিচার সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি চাইলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি সহজে বিচার থেকে অব্যাহতি পায় না। কিন্তু দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সব ধরনের মামলার জন্য আদালতের বাইরে এসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ব্যবস্থা রয়েছে, যা আমাদের দেওয়ানি কার্যবিধিকে এক চমৎকার বিশেষত্ব প্রদান করেছে।

ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও এমন কিছু অপরাধ রয়েছে; যেগুলোর নিষ্পত্তি পক্ষদ্বয়ের পারস্পরিক সমঝোতা বা চুক্তির মাধ্যমে করা যায়। ফৌজদারি কার্যবিধিতে এর নাম দেয়া হয়েছে 'কম্পাউন্ডিং অফেন্স' বা 'আপসযোগ্য অপরাধ'। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৩৪৫ নং ধারায় 'আপসযোগ্য অপরাধ' বিষয়ক যাবতীয় বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এটি এমন একটা বিধান যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও অভিযুক্ত ব্যক্তি পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে ও ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে কিংবা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে মামলা নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কম্পাউন্ডিং অফেন্সের ক্ষেত্রে আইনের নীতি হলো এই যে, যেসব অপরাধ তুলনামূলক কমমাত্রার ভয়াবহ এবং যেগুলোয় রাষ্ট্রের স্বার্থের তুলনায় কেবল ব্যক্তিস্বার্থই ক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, সেসব অপরাধের বিচার আপসের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি হতে পারে।

উল্লেখ্য, এভাবে মামলা আপস করার অর্থ মামলা প্রত্যাহার করা নয়। কারণ, মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী আদালতের শরণাপন্ন হয় এবং আদালতের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে মামলা প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে ফৌজদারি মামলায় আপসের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। মামলা আপস করার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি মামলা থেকে রেহাই পেয়ে থাকে। এ কারণে কোনো মামলা একবার আপোস করা হলে পুনরায় একই বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ নং ধারায় দ-বিধির অপরাধগুলোকে আপসযোগ্যতার ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে ১৭টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় কলামে উলি্লখিত ব্যক্তি আপস করতে পারবে। আর দ্বিতীয় ভাগে আছে আরো ৪৪টি অপরাধের তালিকা, যেগুলো আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কলামে উলি্লখিত ব্যক্তি আপস করতে পারে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ নং ধারার উল্লেখ নেই, এমন কোনো অপরাধ আপস করা যাবে না। বিশেষ আইনে উলি্লখিত অপরাধগুলোও অনাপসযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

যদি কোনো অনাপোসযোগ্য অপরাধ আইনের বিধান লঙ্ঘন করে আপস করা হয়, তাহলে তা কার্যবিধির ২১৩ ও ২১৪ ধারা আনুযায়ী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। অপরাধের আপস সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির তরফ থেকে করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি নাবালোক হয় তবে তার আইনানুগ অভিভাবকও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আপসের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে। মামলার যেকোনো পর্যায়েই আপসের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এমনকি মামলা হাইকোর্ট বিভাগ বা সেশন কোর্টে আপিলরত অবস্থাতেও আপস করা যেতে পারে।

তবে কোনো আপস যদি ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্ররোচনা বা জোরপূর্বক করা হয়, তবে তা আপস হিসেবে বিবেচিত হবে না। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে ১৯৭২ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতে আপসযোগ্য অপরাধের আওতা অনেক বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে রিভিউ বা রিভিশনরত অবস্থাতেও মামলার আপস করা যায়। এমনকি মৃতব্যক্তির উত্তরসূরিরাও মামলা আপস করতে পারে। এতে আদালতে মামলাজট কমেছে এবং সুবিচারপ্রাপ্তির হার বেড়েছে।

আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ সালে আপসযাগ্য অপরাধ বিষয়ে ১৯৮২ সালের সামান্য সংশোধনী ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সমপ্রতি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকরণের আওতা বাড়ানো হবে। এ বক্তব্য অনুযায়ী আপসযোগ্য অপরাধের আওতা বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। আপসযোগ্য অপরাধের পরিধি বিস্তৃত করতে আদালতের বাইরে গিয়ে কোনো অপরাধকে 'আপসযোগ্য' হিসেবে গণ্য করার কোনো সুযোগ নেই। ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাইকোর্ট ও কেন্দ্রের সুপ্রিমকোর্টে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি মামলায় বলা হয়েছে যে, অপরাধের মাত্রা কম ও ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক হওয়ায় অনাপসযোগ্য বেশ কয়েকটি অপরাধকে 'আপসযোগ্য' হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

আমাদের দেশে আপসযোগ্য অপরাধের আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে পক্ষের সম্মতি ও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ ও অপেক্ষাকৃত ঘৃণ্য অপরাধ ছাড়া সব অপরাধকে আপসযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা প্রয়োজন। এছাড়া দ-বিধি, ১৮৬০-এ উলি্লখিত যেসব অপরাধ টর্ট আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সেসব মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর 'বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি' বা এডিআর-এর নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। এ নিয়ম অনুসারে মামলার কাজ শুরু হওয়ার আগে আদালত বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে জানতে চাইবেন যে, তারা আপসে আগ্রহী কিনা। এছাড়া আপসযোগ্য অপরাধবিষয়ক বিধি-বিধান পরিচালনার জন্য কোনো একটা বিচারিক হাকিমের আদালতকে নির্দিষ্ট করে দেয়া যেতে পারে। এতে আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বেশ গতিশীল হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।