আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেহরান করিমি নাসেরি : যিনি ১৮ বছর চার্লস ডি গ্যল বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিলেন এবং স্পিলবার্গের দ্যা টার্মিনাল

আমি কিছুই না..... আবার অনেক কিছু । আপনি যদি একটি দূর্দান্ত বিশ্লষনধর্মী একটি মুভি রিভিউ পড়ার জন্য এই পোষ্ট টি পড়তে বসেন, আপনাকে হতাশ হতে হবে. আমি মুভি রিভিউ লিখি না. কারন ভাল খারাপ লাগা আপেক্ষিক ব্যাপার. আমি সেইসব মুভি গুলো নিয়ে লিখি, যার পেছনে সত্য ঘটনার ছোয়া রয়েছে. যেই মুভি টি নির্মিত হয়েছে একটি সত্য কে অবলম্বন করে. দ্যা টার্মিনাল । স্টিভেন স্পিলবার্গের একটি কমেডি ড্রামা ফিল্ম ২০০৪ এ মুক্তি পায় ছবিটি । টম হ্যাঙ্কস মূল চরিত্রে ছিলেন । মূল কাহিনী হিসেবে এখানে দেখানো হয়, টম হ্যঙ্কস নিউইয়র্ক এর জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্ট এ আটকা পড়েন, তিনি কল্পিত দেশ করখজিয়ার নাগরিক, কিন্তু তিনি এমন এক পরিস্থির মুখোমুখি হন যে এয়ারপোর্ট কাস্টমস তাকে নিউইয়র্কে ঢুকতে অথবা তার নিজ দেশে ফিরেও যেতে দিতে পারেন না ।

ফলে, তাকে থাকতে হয় টার্মিনালে অনির্দিষ্ট কাল এর জন্য । এই মুভি টা মূলত একজন মানুষের জীবন কে নির্ভর করে । তার নাম মেহরান করিমি নাসেরি । তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর প্যারিস এর চার্লস ডি গ্যল বিমানবন্দরে ছিলেন । ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনি ওই টার্মিনালে আটকা পড়েছিলেন ।

মেহরান করিমি নাসেরি , চার্লস দ্যা গল বিমানবন্দরে। ১৯৭৭ সালে তাকে ইরান থেকে বহিস্কার করা হয় শিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ফলস্বরুপ । তার মা ইংল্যান্ডের নাগরিক ছিলেন, তাই ইংল্যান্ডে আবাস গড়তেই তিনি ইউরোপ এ পাড়ি জমান । কিন্তু ফ্রান্স এ এসে তিনি তার পাসপোর্ট এবং অন্য কাগজপত্র হারান । ফ্রান্স থেকে বিমানে তাকে ইংল্যান্ড নিয়ে গেলেও সেখানে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দিতে না পারায় তাকে আবার ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ফ্রান্সে পৌছানোর সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে যেহেতু আইন সিদ্ধ ভাবে তিনি ফ্রান্স বিমান বন্দরে পৌছেন সেহেতু ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় তাকে কোন দেশের নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে সেখানে পাঠাতেও পারছিল না ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ। অবশেষে বিমান বন্দরের এক নম্বর টারমিনালের বাসিন্দা হিসাবে বসবাস আরম্ভ করেন। তাকে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা রা খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র দিতেন । তিনি পড়ালেখা করেই সময় কাটাতেন ।

তার এই টার্মিনাল জীবনের শেষ হয় ২০০৭ এ, তিনি গুরতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাবার পর । দ্যা টার্মিনাল মুভিটি তার জীবননির্ভর হলেও তা কোথাও সেভাবে প্রকাশ পায়নি । বলে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছিল, স্পিলবার্গ নাসেরির কাছ থেকে ২,৫০,০০০ ডলারে এর স্বত্ত কেনেন । গার্ডিয়ান ও একই কথা উল্ল্যেখ করে. টার্মিনাল ছবিটি বানানোর কিছু কথা. স্পিলবার্গ পুরো পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন এমন একটা এয়ারপোর্ট পাওয়ার জন্য যা তার মনের মত হবে. তবে তিনি ব্যার্থ হন তা খুজে পেতে. অবশেষে স্পিলবার্গ করে ফেললেন সেই অসাধ্য সাধন. কারন পরিচালকের নাম না কিন্তু স্পিলবার্গ. পুরো বিমানবন্দরের সেট বানিয়ে ফেললেন তিনি. পামডেল রিজনাল এয়ারপোর্টে বৃহৎ হ্যাঙ্গারে তিনি তার সেট টি বানান. হ্যাঙ্গার টি ইউএস এয়ার ফোর্সের বোম্বার বিমান তৈরী তে ব্যবহার করা হত. পামডেল রিজনাল এয়ারপোর্ট. সেটের ডিসাইন খুব খেয়াল করে এর ডিজাইনে খেয়াল রাখা হয়. যা জন এফ কেনে ডি বিমান্দরের সাথে যেন মেলে. এবং যা যা ছিল, সব কিছু ছিল রিয়েল. খাবার, কাপড় এমন কি এসকেলেটর ও তিনি ভাড়া করেন যাতে কোথাও খুত না থেকে যায়. বাইরের প্লেন টেক অফ এর শট গুলো মন্ট্রিল থেকে নেয়া হয়, এমন কি স্পিল বার্গের অফিস ও ব্যাবহার করা হয় অফিস শুটিং এর জন্য. কস্টিউম মানে ইনিফর্ম, গাড়ি সব নিখুত ছিল. বোয়িং ৭৪৭ দেয় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স. মুভির জন্য নির্মিত সেট বলে রাখা ভাল খারখোজিয়া নামে কোন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই বলা হলেও বলা হয়ে থাকে এর নাম করা নামকরন করা হয়েছে স্পিলবার্গের ফ্রিয় শহর পোল্যান্ডের করকোভ থেকে. এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তবে টম হ্যাংকস কোন ভাষায় কথা বলেছিলেন. এটার একসেন্ট বুলগেরিয়ান. টমের স্ত্রী রিটা উইলসন এর বাবা একজন বুলগেরিয়ান এবং তিনি শুটিং এর সময় টম কে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন. যে কিভাবে বুলগেরিয়ান ভাষা ব্যাবহার করতে হয়. আর টমের পাসপোর্ট যেটা সে দেখিয়েছিল , ওটা অনেকটা রাশিয়ান পাসপোর্টের আদলে বানানো ছিলো. নাসেরির জীবন নিয়ে আরও কয়েকটি চলচিত্র তৈরী হয় এবং কয়েকটি বইও প্রকাশ হয় । স্পিলবার্গ দ্যা টার্মিনালে নাসেরির জীবন কাহিনী দিয়ে আয় করেন ২১৯,৪১৭,০০০ ডলার ।

মুভি পোষ্টারের সামনে নাসেরি. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।