জীবন নিয়ে ভাবি, কিন্তু কক্ষনও সিরিয়াস না।
( বা থেকে ) লাকি,জুয়েল,জয়া,লিমন,ববি,আফসারা,সঞ্চরা,সুমি
কিছুদিন আগে ভুটান ঘুরে এলাম। আমরা টিমে প্রায় ১৫ জন ছিলাম। ভুটানে একটি সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম করা ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। আমাদের রুট ছিল "বুড়িমারি - জয়গা - ফুন্টসিলং - থিম্পু - পুনাখা - পারো - জয়গা - বুড়িমারি - ঢাকা"।
ওদের সংস্কৃতি দেখে এলাম, আমাদের সংস্কৃতি দেখিয়ে এলাম। ওরা অনেক বেশী বন্ধুবৎসল। যদিও আমাদের ট্যুর ব্যাক্তিগত ছিল, তারপরও ভুটান মিনিস্ট্রি যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আপ্যায়নে ও কমতি ছিল না। আমাদের হোটেল থেকে শুরু করে সকল দিকেই ছিল তাদের সুনজর।
মিনিস্ট্রি থেকে টুরিস্ট বাস দিয়েও সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশ থেকে আমাদের টিমের ভিসা পেতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। দু-একজনকে ভারতীয় এম্বাসি একটু জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল তবে ডবল ট্রানজিট ভিসা হয়ে গেছিল সবার। আমি, ববি ( আমার স্ত্রী ), আফসারা (আমার মেয়ে), সুমি আপা, সুমন ভাই (সুমি আপার হাসবেন্ড ), সঞ্চরা ( সুমি আপার মেয়ে ), লিমন ভাই, জুয়েল ভাই, লাকি, জয়া, বাবু ভাই ( গানের শিল্পী ), অভিনেতা সানবিম, লুৎফর স্যার ( আমাদের এই ট্যুর এর আহবায়ক এবং নিয়ন্ত্রক ) এবং ওনার পুরো পরিবার মিলে আমরা গিয়েছিলাম বাই রোডে।
রাত ১০ টার মধ্যে শ্যামলীর বি.আর.টি.সি কাউন্টার গিয়ে উপস্থিত হলাম।
১০ই সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১২টায় যখন গাড়ি ছাড়ল, তখন অন্যরকম একটা রোমাঞ্চ কাজ করছিলো। সেদিন ছিল চাঁদ রাত, মোবাইল এর এফ.এম. এ বেজে উঠছিল "রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ। "
বুড়িমারি বি.ডি.আর. ক্যাম্পে আমি ও আমার পরিবার
বুড়িমারিতে পৌঁছলাম পরদিন অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে, সেদিন ছিল ঈদুল ফিতর এর দিন। সেইদিন ই প্রথম ঈদ এর নামাজ পরতে পারলাম না। বাংলাদেশ বর্ডার অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করার সময় একটা আশ্চর্য অনুভূতি কাজ করছিলো, একই রকম মাটি, ঘাস, বাতাস, কিন্তু পার্থক্য ছিল একটি সীমানা।
নো-ম্যান্স ল্যান্ড এ গিয়ে অবাক হচ্ছিলাম, এখন আমি কারো না। না ভারতের না বাংলাদেশ এর। এটাই দেশের বাইরে প্রথম যাওয়া তাই হয়তো একটু বেশিই অবাক হচ্ছিলাম।
সীমান্ত থেকে জলপাই গুড়ি হয়ে চলে এলাম জয়গা চেক পোস্ট এ। এখান থেকে ক্লিয়ারএন্স নিয়ে সোজা চলে এলাম ভারত ভুটান সীমান্তে।
আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো, তাই ফুন্তসলিং এ হোটেল পেলজরলিং এ খাওয়া দাওয়া করে রওনা হলাম থিম্পুর দিকে। একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, ভুটানে ঢুঁকে বাংলা বা ভারতীয় খাবার আশা করা বোকামি। তাই ওখানে যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে খাবার সেরে নিতে হয়েছে। এগুলো এক কথায় অখাদ্য। ভারতীয় যে খাবার গুলো ওরা রান্না করে তা ভালো কিন্তু ...........................
Bolero গাড়ি
যাই হোক, একটা বোলেরও গাড়ি ভাড়া করে রাতেই রওনা দিলাম।
আমাদের ড্রাইভার এর নাম ছিল আমিন। চমৎকার একটি ছেলে। ওর কাছে পথে যেতে যেতে ভুটান এর কিছু বর্ণনা শুনলাম। পথে বেশ কয়েক স্থানে চেক পোস্ট ছিল, আমরা সেইখানে গাড়ি থামিয়ে পাসপোর্ট চেক করিয়ে নিলাম। রাতে পাহাড় বেয়ে গাড়ি উঠছিল, সে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
সারাদিনের জার্নিতে সবাই ক্লান্ত কিন্তু ঘুম আসছিল না কারো, তার বদলে সবাই ঝিমুচ্ছিলাম।
গেদু, পাহাড়ের কোলে বার
এমন সময় ড্রাইভার আমিন কে জিজ্ঞেস করলাম, আশেপাশে ভালো কোন চা খাওয়ার মতো জায়গা আছে কি না? জিজ্ঞেস করে আবার নিজেই চিন্তা করলাম এই পাহাড়ে চায়ের দোকান আসবে কোত্থকে, কিন্তু আমিন বলল, চিন্তা করবেন না একটু সামনেই গেদু নামক একটা জায়গা আছে যেখানে চা পাওয়া যায়। গেদু পৌঁছালাম প্রায় রাত ১২টায়। এখানে পেলাম পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটা এলাকা। ভুটানে প্রায় প্রতিটি দোকানই বার, যেখানে বিয়ার থেকে শুরু করে কিছু লোকাল এবং কিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়।
আসলে পাহাড়ের উপরে বলে ওখানে ঠাণ্ডা বেশী পরে তাই ওরা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ার এবং অন্যান্য আল্কহলিক পানীয় গ্রহন করে। হয়ত এ জন্যই আমাদের গাড়ির সামনে লেখা ছিলো "Life is risky after whiskey"। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভুটানে অ্যালকোহল খুবই সহজলভ্য কিন্তু কোথাও সিগারেট পাওয়া যায় না।
যাই হোক চা পাওয়া গেল, কিন্তু মুখের কাছে এনে দেখি শুঁটকির গন্ধ। আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।
দেখলাম অন্য সবাই খেয়ে ভালই বলছে। আমিও তখন একটু চেখে দেখলাম, আমার কিছুটা পেট ব্যাথা করছিলো, চায়ে চুমুক দেয়ার ১০ সেকেন্ড এর মধ্যে ভালো হয়ে গেল। পরে জেনেছিলাম ওটা ছিল হারবাল সবুজ চা।
থিম্পুতে হোটেল টেনডিন
থিম্পু পৌঁছালাম রাত ২টায়। হোটেল টেনডিন এ বুকিং দেয়া ছিল আগেই, তবে হোটেলে গিয়ে কোন খাবার পেলাম না।
কি আর করা না খেয়েই রুম এ ঢুকলাম। কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম। এমনিতেই দুই দিনের জার্নিতে ক্লান্ত, ঘুম আসতে সময় লাগলো না। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোছল করে জামাকাপড় পরে চলে এলাম হোটেল এর ডাইনিং এ।
হোটেল রুমে আমি ও আমার স্ত্রী ববি
হোটেল টেনডিন এর ডাইনিং
আমি ও ববি
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই মিলে ঘুরতে বের হলাম।
উদ্দেশ্য শুধু ঘোরা নয়। প্রথম অনুষ্ঠানের ভেন্যু দেখে আসা। বের হয়ে থিম্পুর রুপ দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০০ ফুট উচ্চতায় চমৎকার সাজানো গোছানো একটা শহর, মনে হয় যেন রুপকথার রাজ্য। চারপাশে পাহাড়।
পাহাড়ের চুড়ায় মেঘ যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। বাতাসে বৃষ্টি ও মেঘের মিশ্র একটা গন্ধে মৌ মৌ করছে। সবাই ছবি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। আমরাও ঝটপট কিছু ছবি তুলে নিলাম। সমস্যা হলো ফটোগ্রাফার কম।
মডেল বেশী। তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজেই ফটোগ্রাফার হয়ে গেলাম। রেজাল্ট হলো এই পুরো যাত্রায় সবচেয়ে কম ছবি আমার এবং যাও দু একটা আছে তাও মন মতো হয়নি।
ছবি তোলা শেষ করে আমরা গেলাম ভেন্যু দেখার জন্য। ভেন্যু দেখে সবাই মিলে সিধান্ত নিলো যে স্টেজ রিহার্সাল করে তারপর হোটেলে যাবে।
আমার তাই কোন কাজ ছিল না তাই আফসারাকে ( আমার একমাত্র মেয়ে ) নিয়ে একটু ঘুরতে বের হলাম। ভেন্যুটা খুবই সুন্দর অনেকটা দেখতে চীনা শাওলিন টেম্পলের ( মার্শাল আর্ট শেখার স্কুল ) মত। ঘোরাঘুরি শেষ করে দুপুরের একটু পরে হোটেলে ফিরলাম। ফিরে একটু বিস্রাম নিয়ে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের জন্য সবাই প্রস্তুত হতে লাগল।
সন্ধ্যায় মনমাতানো একটা অনুষ্ঠান উপহার দিলো আমাদের শিল্পীরা।
নাগিন বীণ মিউজিক এর পরিবেশনা
ভারতীও, বাংলা এবং ফিউশন মিউজিক এর পরিবেশনা
বাংলার ছয় ঋতু নিয়ে একটি চমৎকার পরিবেশনা
থিম্পুর পারফরমান্স এর পর বাংলাদেশী আম্বাস্যাডর( সর্ব ডানে ) এর সাথে
থিম্পুর এই অনুষ্ঠানটি থিম্পুর টি.ভি চ্যানেল গুলোতেও প্রচার করা হয়েছিল। ভুটান এর কুএংসেল নামক সংবাদপত্রেও ছবি ছাপা হয়েছিল। ছবিটি ছিল, ববির পরিচালনায় ববি ও জুয়েল ভাই এর নাগিন বীণ মিউজিক এর সাথে একটি চমৎকার নাচের। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।