ছন্দহীন জীবন বড়ই নীরস আগের পর্ব ঈদুল মিয়ার টয়লেটকর্ম
ঈদুল মিয়া যখন কনফারেন্স হলে পৌঁছলো, সে দেখতে পেলো, হলের সবাই কেমন করে যেন তার দিকে তাকাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েগুলো। এই মুহূর্তে ভাব দেখাতে হবে। ভাব না দেখালে মেয়েগুলোর শিক্ষা হবে না। সে সোজা তাকিয়ে হলের মাঝখানের একটা খালি সিটের সিটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো।
উফ, আপনি কোন দিকে তাকিয়ে হাঁটছেন? এভাবে হাতের কনুই দুদিকে ছড়িয়ে গেলে চলবে?
ঈদুল মিয়া কিছু না বলে মুচকি হাসতে হাসতে তার সিটে গিয়ে বসলো। মনে মনে বললো, আমার সাথে ভাব দেখাবা আবার এসে গায়ে পড়ে বলবা, কোন দিকে তাকাইয়া হাঁটি?
কনফারেন্স শুরু হতে হতে প্রত্যেককে একটা করে প্যাড আর একটা করে কলম দেয়া হলো। কাগজ-কলম দেখে তার মনে মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক হলো, এখানে আবার অঙ্ক করাবে না তো? যেহেতু আজ অতি অল্প সময়ে অর্থ উপার্জন নিয়ে বক্তৃতা হবে, সেহেতু অঙ্ক করাতেও পারে। টাকাপয়সার সাথে হিসাবের ব্যাপার আছে। হিসাব মানেই অঙ্ক।
অঙ্ককে সে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে। তার শুধু একটা জিনিসই ভালো লাগে—হাতে টাকা গোনা।
না, অঙ্ক করতে হলো না। স্টেজে বিদেশী লোকটা বকবক করে গেলো, ঈদুল মিয়াও জোশ একটা ঘুম দিলো। বক্তৃতা শুনতে শুনতে যে মজার ঘুম হয়, এমন মজা অন্য কোনো ঘুমে পাওয়া যায় না।
সপ্তাহে একদিন এই মজাটা পাওয়া যায়। সেটা হলো জুমার দিনের খুতবার সময়।
ঘুম থেকে জেগে সে শুনতে পেলো, এখন নামাজ এবং খাওয়ার বিরতি। খাবার গ্রহণের সময় সবাইকে লাইনে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ করা হচ্ছে।
বেশ লম্বা লাইন।
ফাজিল মেয়েগুলো আগেই লাইনে দাঁড়িয়েছে। চল্লিশ পঞ্চাশ জনের পরে লাইনের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ঈদুল মিয়া যখন খাবার গ্রহণের জন্য হাত বাড়ালো, তাকে বলা হলো, আপনার পাশটা প্লিজ?
কীয়ের পাশ?
ছোট্ট একটা টোকেন দেয়া হয়েছিলো, যাতে লেখা আছে খাইবার পাস।
ও, খাইবার পাস? আমি তো ভাবছিলাম এইডা এই জাগায় ঢুকনের কারণে লটারিতে খাইবার পাস ভ্রমণ করার টিকিট জিতছি।
ওটা আনতে হবে যে!
ধুর মিয়া, ওইডা তো সিটের নিচে ব্যাগের মধ্যে যতœ কইরা রাইখ্যা দিছি।
যাই হোক, ঈদুল মিয়া খাইবার পাস নিয়ে আবার যখন লাইনে সবার শেষে এসে দাঁড়ালো, তাকে বলা হলো, খাবার তো শেষ হয়ে গেছে; আমরা দেখি কোনো ব্যবস্থা করতে পারি কি না।
আপনি একটু অপেক্ষা করুন।
কিন্তু যে লোকগুলো এ কথা বলেছিলো, সেগুলোর আর দেখা পাওয়া গেলো না। এর মধ্যে আবার কনফারেন্সের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে গেলো। এবার প্রশ্নোত্তরের পালা। কার কার প্রশ্ন আছে, জানতে চাওয়াতে ঈদুল মিয়াও হাত তুললো।
তার কাছে যখন মাইক এলো, সে জানতে চাইলো, পাঁচশো ট্যাকা নিয়া আবার আমার খাওন মাইরা খাইছেন? আমার ট্যাকা ফেরত দ্যান।
স্টেজ থেকে কী যেন বলা হলো, ঈদুল মিয়াকে যে এই কনফারেন্সে আসার দাওয়াত দিয়েছিলো, সেই লোক এসে তাকে উঠিয়ে নিয়ে হলের বাইরের দিকে চললো।
গেটের কাছে এসে সে বললো, ঈদুল ভাই, আপনি দাঁড়ান। আমি একটু ভেতর থেকে আসি। আমিও খুব ভালোভাবে খেতে পারিনি।
আপনার সাথেই খাবো।
দশ মিনিট হয়ে গেলেও তার ফেরার নাম নেই। ঈদুল মিয়া যা বোঝার বুঝে ফেললো। সে ভেতরে গিয়ে তার সাইড ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। আবারো ঢোকার সময়ের মতো দৃশ্য।
ফাজিল মেয়েগুলো তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে তার ক্ষুধা তাদের জন্য উৎসর্গ করে দিয়ে এগুতে থাকলো। গেটের কাছে এসে দারোয়ানকে বললো, মামা, গেট আটকান তাড়াতাড়ি। ভিতরে গ্যাঞ্জাম, স্যারে কইছে কাউরে বাইর ওইতে দ্যাওন যাইবো না।
দারোয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো।
ঈদুল মিয়া দারোয়ানকে গেটের বাইরে টেনে এনে বললো, তাড়াতাড়ি আটকান। দারোয়ান তালা দেয়ার সাথে সাথে সে তার নিজের ব্যাগের চেইন আটকানোর তালাটাও গেটে লাগিয়ে দিয়ে বললো, আমি যাইতাছি পুলিশ আনতে। আপনে কিন্তু গেট খুলবেন না। আপনের উপরে যাতে কেউ কিছু করতে না পারে, এল্লাইগা এই তালাডাও মারলাম।
মনের সুখে সে রাস্তায় এসে সদরঘাটের বাসের অপেক্ষা করতে থাকলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।