আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনস্টাইন এবং আমি

তুমি যদি প্রতিটি দিন এটা ভেবে পার কর যে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সঠিক হবে। আইনস্টাইন আংকেলের সঙ্গে আমার খাতির বেশ ভালো। আমি পদার্থবিজ্ঞানের আগামাথা কিছুই বুঝি না। তার পরও নতুন কিছু আবিষ্কার করলে আংকেল আমাকে সব বোঝানোর চেষ্টা করেন। আমার মাথায় কিছুই ঢোকে না।

তবে যেখানে মাথা নাড়ানো দরকার সেখানে মাথা নাড়াই, যেখানে চোখ সরু করা দরকার সেখানে চোখ সরু করি। বেশির ভাগ সময়ই এসব করতে গিয়ে প্যাঁচ লাগিয়ে দিই। যেমন, যে জায়গায় এসে চোখ সরু করার কথা সেখানে এসে দেখা যায়, আমি হে হে করে হেসে দিয়েছি। আমার বোকামি দেখে আইনস্টাইন আংকেল বেশি রাগ করেন না। তবে মাঝেমধ্যে ভেংচি কাটেন।

আংকেল হাসিখুশি মানুষ। রসিকও বটে! এত জটিল জটিল জিনিসপত্র নিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু তাঁকে খুব একটা চিন্তিত দেখা যায় না। তবে কিছুদিন যাবৎ ওনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি মূর্খ ছেলে, তাঁকে তাঁর চিন্তিত থাকার কারণ জিজ্ঞেস করিনি সাহস করে। তিনি বিজ্ঞানী মানুষ।

চিন্তাভাবনা তো করবেনই। তিনি না করলে করবেটা কে? ভেবেছিলাম এসব নিয়ে তাঁকে ঘাঁটাবটাটাব না। কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় আইনস্টাইন নিজেই আমাকে ডাকলেন, ‘রাজি, একটা সাংঘাতিক জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছি মনে হয় রে!’ আমি অত্যন্ত কৌতূহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী, কী?’ হালকা উদাস গলায় আইনস্টাইন আংকেল বললেন, ‘সময় ধ্রুব নয় হে বালক। এটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। ’ আমি কিছুই বুঝলাম না।

তার পরও বললাম, ‘কী সাংঘাতিক! কী সাংঘাতিক!!’ : দাঁড়া, তোকে বোঝাই। আংকেল খাতা আর কলম নিয়ে আমার সামনে বসলেন। : ধর, দুটি জড় কাঠামো...এর মাঝে একটা স্থির। একটির সাপেক্ষে অন্যটি ধ্রুব বেগে গতিশীল। হালকা থামলেন আইনস্টাইন—‘কিরে! কিছু বুঝলি?’ আমি কিছুই বুঝলাম না, তার পরও বললাম, ‘ক্লিয়ার।

একদম ক্লিয়ার। আপনি বলতে থাকেন। ’ : গুড বয়। তাহলে এবার ধর, প হচ্ছে আলোর গতি। আইনস্টাইন আংকেল কিছুক্ষণ অঙ্ক করলেন।

সবশেষে একটা অত্যন্ত জটিল সমীকরণ লিখলেন। আমি বরাবরের মতোই কিছু বুঝলাম না। কিন্তু অনেক জোরে মাথা নাড়ালাম। আমার মাথা নাড়ানো দেখেই হয়তো আইনস্টাইন আংকেল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বুঝলি, বল দেখি!’ খাইছে! এভাবে বিপদে পড়ে যাব বুঝিনি। আমি আমতা আমতা করা শুরু করলাম।

আমার অবস্থা দেখে আইনস্টাইন আংকেল আবার ভেংচি কাটলেন। তাঁর সেই বিখ্যাত ভেংচি। তারপর বললেন, ‘তুই কিছুই বুঝিসনি, গাধা। দাঁড়া। সহজ করে বলি।

ধর, তুই আর আমি যমজ ভাই...। ’ আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘আপনি আমি যমজ ভাই হতে যাব কোন দুঃখে?’ : আরে বলদ, ধরে নে না! এখন ধর, তুই আলোর কাছাকাছি গতির কোনো রকেটে করে পুরো এক বছর মহাশূন্যে চক্কর দিয়ে এলি। এসে দেখবি আমি বুড়ো হয়ে গেছি। কিংবা আমি হয়তো বুড়ো হতে হতে মরে গেছি। আপেক্ষিক সময় তত্ত্বের এটাই হলো মূল কথা।

আমি সব বুঝে গেছি এমন ভাব করে বললাম, ‘আপনি তো এমনিতেই বুড়ো। বুড়োরা তো আগে আগে মরবেই। সোজা হিসাব। এখানে আপেক্ষিক-ফাপেক্ষিকের কী হলো?’ আইনস্টাইন এবার বিরক্ত হলেন মনে হয় কিছুটা। : তোর মাথায় কি গোবরও নেই নাকি রে বলদ? এই জিনিস বুঝিস না ক্যান! আইনস্টাইন আমার দিকে হতাশ ভঙ্গিতে তাকালেন।

আমি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলাম। আইনস্টাইন আংকেল আবার বোঝানো শুরু করলেন। আমি তাঁর অ্যানার্জি দেখে অবাক হলাম। বিজ্ঞানীদের এত ধৈর্য! : আচ্ছা, তোকে সহজ করে বলি, শোন। : আচ্ছা, বলেন।

: ধর, তুই কোনো সুন্দরী মেয়ের পাশে বসে আছিস। তখন তোর এক ঘণ্টা সময়কে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আবার যদি আগুনের ওপর হাত রাখিস, তাহলে পাঁচ মিনিট সময়কে মনে হবে এক ঘণ্টা। এটাই হলো আপেক্ষিক সময় তত্ত্ব। এবার বুঝলি? আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘এবার বিষয়টা পুরো ক্লিয়ার।

আসলে ঘড়ি নষ্ট থাকবে। এ জন্যই এক ঘণ্টাকে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আর পাঁচ মিনিটকে মনে হবে এক ঘণ্টা। হে হে। ’ আমার কথা শুনে গর্জে উঠলেন আইনস্টাইন আংকেল।

: খামোশ! তোকে আমি আর বোঝাতে পারব না। আমার দ্বারা তোকে এই জিনিস বোঝানো সম্ভবও না। তোকে ২০১২ সালে এই জিনিস বুঝিয়ে দেবেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৪৮ ঘণ্টা যে কত লম্বা হতে পারে হাড়ে হাড়ে টের পাবি তখন। এখন আমার সামনে থেকে ফোট।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.