লিখে খাই, সবার ভাল চাই
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রেখেছেন। বলেছিলেন, ১০ই অক্টোবরের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে। হ্যাঁ, হয়েছে। তবে তিনি জন্ম দিয়ে গেছেন অনেক প্রশ্নের। সংবাদ সম্মেলনে তিনি মোটিভ সম্পর্কে কোন কিছুই বলেননি।
কেন হত্যাকাণ্ড? কিই বা উদ্দেশ্য? নেপথ্যের কারণ কিছুই বলেননি। তবে বলেছেন, তদন্ত চলছে। এখানেও প্রশ্ন? যেখানে তদন্ত চলছে সেখানে এমন রাখঢাক করে সংবাদ সম্মেলনে কি কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন মন্ত্রী? আবার জোর গলায় বলেছেন, আমরা কোন জজ মিয়া নাটক সাজাতে আসিনি। যেন ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’র মতো অবস্থা।
এক বৃদ্ধার কথা মনে পড়ে তিনি গিয়েছিলেন ভারতে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে।
সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম তার। প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে আসা যাওয়া করেন তিনি। তার আত্মীয়রাও তা-ই করেন। বেড়ানো শেষে এপার আসার সময় বৃদ্ধা সুন্দর দেখে দু’টি শাড়ি নিয়ে এসেছেন। তবে এ শাড়ি তো প্রকাশ্য আনা যাবে না।
ওপারে বিএসএফ আর এপারে বিজিবি সতর্ক পাহারায়। কি করা যায়? অনেক ভেবেচিন্তে একটি মিষ্টি কুমড়া নিলেন। কুমড়াটি দুই টুকরা করে ভেতরের অংশ খোলাসা করে ফেলেন। এরপর ভেতরে শাড়ি রেখে আবার দুই টুকরা এক করে বেঁধে এপার আসেন। সীমান্তের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সড়ক।
বৃদ্ধা এক পা দু’পা করে হেঁটে চলেছেন। কিছুদূর গেলেই তার গ্রাম। ওই সময় পাশ দিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিলেন বিজিবি’র একদল সদস্য। তারা বৃদ্ধাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান। একটু সামনে গিয়ে দেখতে পান বৃদ্ধাকে।
তাদের দয়া হয়। গাড়ি আবার পেছনে নিয়ে আসেন। বৃদ্ধার সামনে গাড়ি থামিয়ে বলেন, মাগো আপনি কোথায় যাবেন? বৃদ্ধা বলেন, ওই তো সামনেই আমার গ্রাম। সেখানে যাবো। বিজিবি সদস্যরা বললেন, আমরাও তো সেদিকে যাচ্ছি।
চলুন আপনাকে নামিয়ে দিয়ে যাবো। বৃদ্ধা ‘না না’ করছিলেন। এর মধ্যে এক প্রকার জোর করেই বৃদ্ধাকে গাড়িতে তুলে নিলেন বিজিবি সদস্যরা। তাদের কথাÑ বৃদ্ধা এত কষ্ট করে হেঁটে যাবেন! আমরা তো সেদিকেই যাচ্ছি। পথে নামিয়ে দেবো আপনাকে।
গাড়িতে বসে এক বিজিবি সদস্য জিজ্ঞেস করলেন, মাগো আপনার ছেলে মেয়ে ক’জন। পরিবার কিভাবে চলছে? সবই বললেন বৃদ্ধা। এ সময় এক বিজিবি সদস্য বললেন, আপনার মিষ্টি কুমড়া তো অনেক বড়। সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধা বললেন, না, না বাবা আমার মিষ্টি কুমড়ার ভেতরে কিছু নেই। এই তো ধরা পড়ে গেলেন বৃদ্ধা।
মন্ত্রী যখন বললেন, আমরা জজ মিয়ার মতো কোন নাটক সাজাতে আসিনি। তখন ওই বৃদ্ধার কথাই মনে পড়ে যায়। বাসেও এ নিয়ে যাত্রীদের নানা কথা। ডা. নিতাই চন্দ্র হত্যা আসামিরা সাগর-রুনি হত্যার সঙ্গে জড়িতÑ একথা নিয়ে নানা আলোচনা। আবার পলাতক গার্ডকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণায়ও বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত।
এক যাত্রী বললেন, মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় চালককে উত্তরাঞ্চল থেকে দু’দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারে। আবার নিতাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারে। তবে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ধরতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে কেন? আর দিনক্ষণ দিয়ে এর বিস্তারিত বলারই বা কারণ কি? আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি তিনি যে সার্থক তা প্রমাণ করতে চেয়েছেন? নানা জনে নানা কথা বলছে। আবার সাগর ও রুনির পরিবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।
সাংবাদিক নেতারাও গতকাল এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোন নাটক সাজানোর চেষ্টা করলে দুর্বার আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তারা ১৫ই অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে সময় বেঁধে দেবে। ওই সময়ের মধ্যে প্রকৃত খুনিদের হাজির করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। তাহলে দাঁড়ালোটা কি? সাংবাদিক সমাজও ৯ই অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য বিশ্বাস করছেন না। মন্ত্রী অবশ্য সাংবাদিক নেতাদের বক্তব্য তদন্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মন্তব্য করেছেন।
গতকাল বলেছেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সাংবাদিকদের এমন মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। তাহলে বলতে হয়, যে ঘটনার তদন্তই শেষ হয়নি এখনও, সে ঘটনার এত কিছু মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করে বলা কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে। তিনি কি শুধু কথা রাখার জন্যই তা করেছেন? এ প্রশ্নও সর্বত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।