আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শরীয়তে সম্পদ বণ্টনের নীতি

সম্পদ বণ্টনের পূর্বে করনীয়ঃ শরীয়তের নীতি এই যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে প্রথমে শরীয়তানুযায়ী তার কাফন-দাফনের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। এতে অপব্যয় ও কৃপণতা উভয়টি নিষিদ্ধ, এরপর তার ঋণ পরিশোধ করা হবে। যদি ঋণ সম্পত্তির সমপরিমান কিংবা তারও বেশী হয়, তবে কেউ ওয়ারিসী স্বত্ব পাবেনা এবং কোন ওছিয়্যত কার্যকর হবেনা। পক্ষান্তরে যদি ঋণ পরিশোধের পর সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে কিংবা ঋণ একেবারেই না থাকে, তবে সে কোন ওছিয়্যত করে থাকলে এবং তা গোনাহর ওছিয়্যত না হলে অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা কার্যকর হবে। যদি সে তার সমস্ত সম্পত্তি ওছিয়্যত করে যায় তবুও এক তৃতীয়াংশের অধিক ওছিয়্যত কার্যকর হবেনা।

এমনটি করা সমীচীন নয় এবং ওয়ারিসদের বঞ্চিত করার নিয়তে ওছিয়্যত করা পাপ কাজও বটে। ঋণ পরিশোধের পর এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তিতে ওছিয়্যত কার্যকর করে অবশিষ্ট সম্পত্তি শরীয়তসম্মত ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। ওছিয়্যত না থাকলে ঋণ পরিশোধের পর সমস্ত সম্পত্তি ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। যদি স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা না হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মতই প্রথমে মোট ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে মোহরানা পরিশোধ করার পর ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টন করা হবে। মোহরানা দেয়ার পর স্ত্রী ওয়ারিসী স্বত্বে অংশীদার হবার দরুন এ অংশও নেবে।

মোহরানা পরিশোধ করার পর মৃত স্বামীর সম্পত্তি অবশিষ্ট না থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মত সম্পূর্ণ সম্পত্তি মোহরানা বাবদ স্ত্রীকে সমর্পণ করা হবে এবং কোন ওয়ারিসই অংশ পাবেনা। কন্যাদেরকে অংশ দেয়ার গুরুত্বঃ কোরআন পাক কন্যাদেরকে অংশ দেয়ার প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছে যে, কন্যাদের অংশকে আসল ভিত্তি সাব্যস্ত করে এর অনুপাতে পুত্রদের অংশ ব্যক্ত করা হয়েছে। এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমপরিমাণ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। অনেকেই বোনদেরকে অংশ দেয়না এবং বোনরা একথা চিন্তা করে অনিচ্ছাসত্ত্বেও চক্ষুলজ্জার খাতিরে ক্ষমা করে দেয় যে, পাওয়া যখন যাবেই না, তখন ভাইদের সাথে মন কষাকষির দরকার কি। এরূপ ক্ষমা শরীয়তের আইনে ক্ষমাই নয়, ভাইদের জিম্মায় তাদের হক পাওনা থেকে যায়।

যারা এভাবে ওয়ারিসী স্বত্ব আত্মসাৎ করে, তারা কঠোর গোনাহগার। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নাবালেগা কন্যাও থাকে। তাদেরকে অংশ না দেয়া দ্বিগুণ গোনাহ। এক গোনাহ শরীয়তসম্মত ওয়ারিসের অংশ আত্মসাৎ করার এবং দ্বিতীয় গোনাহ এতীমের সম্পত্তি হজম করে ফেলার। এরপর আরও ব্যাখ্যা সহকারে কন্যাদের অংশ বর্ণনা করে বলা হয়েছেঃ যদি পুত্র সন্তান না থাকে, শুধু একাধিক কন্যাই থাকে, তবে তারা ত্যাজ্য সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে।

এতে সব কন্যাই সমান অংশীদার হবে। অবশিষ্ট তিন ভাগের এক অন্যান্য ওয়ারিস যেমন মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা, স্ত্রী অথবা স্বামী প্রমুখ পাবে। কন্যাদের সংখ্যা দুই বা তার বেশী হলে দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যে তারা সমান অংশীদার হবে। স্বামী ও স্ত্রীর অংশঃ মৃতা স্ত্রীর যদি কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওছিয়্যত কার্যকর করার পর স্বামী তার সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। অবশিষ্ট অর্ধেক থেকে অন্যান্য ওয়ারিস যেমন মৃতার পিতা-মাতা, ভাই-বোন যথারীতি অংশ পাবে।

মৃতার যদি সন্তান থাকে, এক বা একাধিক- পুত্র বা কন্যা, এ স্বামীর ঔরসজাত হোক বা পূর্ববর্তী কোন স্বামীর ঔরসজাত, তবে বর্তমান স্বামী ঋণ পরিশোধ ও ওছিয়্যত কার্যকর করার পর মৃতার সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। অবশিষ্ট তিন-চতুর্থাংশ অন্য ওয়ারিসরা পাবে। পক্ষান্তরে যদি স্বামী মারা যায় এবং তার কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওছিয়্যত কার্যকর করার পর স্ত্রী মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর যদি মৃত স্বামীর সন্তান থাকে, এ স্ত্রীর গর্ভজাত হোক কিংবা অন্য স্ত্রীর, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওছিয়্যত কার্যকর করার পর স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও উপরোক্ত বিবরণ অনুযায়ী এক অংশ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমহারে বন্টন করা হবে।

অর্থাৎ, প্রত্যেক স্ত্রীই এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশ পাবেনা, বরং সবাই মিলে এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশে অংশীদার হবে। উভয় অবস্থাতে স্বামী অথবা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তাদের অন্যান্য ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টন করা হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।